ভারতে সত্যিই কি হামলা চালাবে তালেবান?
‘ঈদের পরে ভারতে হামলা চালাবে তালেবান’—সম্প্রতি এরকম একটি নিউজ ছড়িয়ে পড়েছে। নিউজটি সত্য নাকি মিথ্যা—এই বিষয়ে অনেকেই দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন, আমাদের কাছে নিউজটির সত্যতা জানতে চেয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে আজ নিউজটির পর্যালোচনা পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করা হলো।
প্রথমত জেনে নেওয়া দরকার নিউজটি কীভাবে ছড়িয়েছে। আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের অফিসিয়াল বার্তার মতো করে তৈরি একটি উর্দু বার্তা অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। বার্তাটিতে বলা হয়, ভারতে ঈদুল ফিতরের পরে হামলা চালাবে তালেবান। প্রথমত টুইটারে ছড়ালেও পরে এই বার্তাটি পাকিস্তানের মূলধারার মিডিয়াতেও প্রচার করা হয়। এভাবে সংবাদটি আলোচনায় উঠে আসে।
আফগানিস্তানের মুসলমানরা শান্তিতে থাকুক এটা ভারত চায় না। ভারত চায় না দখলদার আমেরিকান বাহিনী আফগান ছেড়ে চলে যাক। তাই, তালেবানের সাথে আমেরিকার শান্তি আলোচনার ব্যাপারে ভারতকে শুরু থেকেই নাখোশ দেখা যাচ্ছিল। কেননা আমেরিকা আফগান ছেড়ে যাওয়া মানে আফগানিস্তানের শাসন ক্ষমতা তালেবানদের হাতে চলে যাওয়া, আফগানজুড়ে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হওয়া। আর আফগানে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার মানে হলো—আফগানিস্তানে ভারতের বৃহৎ বাণিজ্যিক ও অন্যান্য স্বার্থ ক্ষুণ্ন হওয়া, হিন্দুত্ববাদী ভারত প্রতিষ্ঠার পথে আফগানিস্তান ইসলামি ইমারত হুমকিরুপে আবির্ভূত হওয়া। এ কারণে আফগানে তালেবানের ইসলামি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সর্বদাই সরব দেখা গেছে ভারতকে।
ভারতের এসব শান্তিবিরোধী কার্যক্রমের প্রেক্ষিতে কিছুদিন আগে তালেবান নেতা শের মুহাম্মাদ আব্বাস স্টানিকজাই বলেছিলেন, ভারত কাবুলের দুর্নীতিবাজ সরকারের পক্ষ নিয়ে সবসময়ই আফগানে নেতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। তাঁর এই বক্তব্যের পরপরই ঈদের পর ভারতে তালেবানের হামলা চালানো বিষয়ক সংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে। তাই স্বাভাবিকভাবেই সংবাদটি পাঠকমহলে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পায়, আলোচিত হয়ে উঠে।
এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষিতে গত ১৮ই মে একটি টুইট বার্তা প্রদান করেন আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের রাজনৈতিক মুখপাত্র মুহতারাম সোহাইল শাহিন হাফিজাহুল্লাহ। সেখানে তিনি ভারতে হামলা করার সংবাদটিকে আফগানিস্তান ইসলামী ইমারতের নীতির সাথে অপ্রাসঙ্গিক আখ্যায়িত করে বলেন, ‘ইসলামী ইমারতের নীতি পরিষ্কার যে, এটি অন্যান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না।’
মুহতারাম সোহাইল শাহিন হাফিজাহুল্লাহ-এর উক্ত বার্তা থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভারতে তালেবান হামলা চালাবে মর্মে যে সংবাদটি ছড়িয়ে পড়েছে, সেটি একটি গুজব। তবে, মুহতারাম সোহাইল শাহিন হাফিজাহুল্লাহ-এর ঐ বার্তাকে কেন্দ্র করে আবার নিকৃষ্টভাবে নিজেদের স্বার্থোদ্ধারে লিপ্ত হয়েছে হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় মিডিয়াগুলো। তারা এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে যে, ‘কাশ্মীরকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেছে তালেবান’। অথচ, সোহাইল শাহিন হাফিজাহুল্লাহ এর বার্তাতে কাশ্মীর শব্দটিরই উল্লেখ নেই। তাঁর দুই লাইনের উক্ত টুইট বার্তার কোথাও এটা বলা হয়নি যে, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বরং তিনি বার্তাটিতে ইসলামী ইমারতের একটি সাধারণ নীতি স্পষ্ট করেছেন মাত্র।
এই নীতির আলোকে এটাই স্পষ্ট হয় যে, তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তান ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত, আফগানিস্তান ব্যতীত অন্য কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাঁরা হস্তক্ষেপ করেন না। যেহেতু কাশ্মীর আফগানিস্তানের অংশ নয়, তাই কাশ্মীর ইস্যুকে কেন্দ্র করে ভারতে হামলা চালাতে চায় না তালেবান। সুতরাং, কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় নাকি পাকিস্তানের, নাকি আলাদা একটি দেশ—এর কোনোটিই মুহতারাম সোহাইল শাহিন হাফিজাহুল্লাহ এর বার্তা থেকে বুঝা যায় না।
তাই এটা স্পষ্ট যে, ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী মিডিয়াগুলো নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যেই মুহতারাম সোহাইল শাহিন হাফিজাহুল্লাহ এর বার্তাটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছে। এক্ষেত্রে হিন্দুত্ববাদী মিডিয়াগুলো হলুদ সাংবাদিকতার জ্বলন্ত উদাহরণ।
যাইহোক, ‘তালেবান ভারতে হামলা চালাবে না’—এটা মূলত আগে থেকেই নিশ্চিত। তালেবান বহুবার তাদের বৈদিশিক নীতি স্পষ্ট করেছে। তবুও নতুন করে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে হিন্দুত্ববাদী ভারত এখন যদিও আনন্দে ভাসছে, তবে আশা করা যায় অচিরেই তাদের এই আনন্দ চির বেদনায় পরিণত হবে, ইনশাআল্লাহ। কেননা, তালেবান ভারতে হামলা না চালালেও তালেবানের অনুগত আল-কায়েদা উপমহাদেশের অধীনস্ত শাখাগুলো হিন্দুত্ববাদী ভারতকে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, বিইযনিল্লাহ। বরং, কাশ্মীরে আল-কায়েদার শাখা আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ হিন্দুত্ববাদী সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে লড়াইও চালিয়ে যাচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ। অতএব তালেবান ভারতে হামলা চালাবে কি না—তা আলোচনার আগে জেনে নেওয়া দরকার যে, ইতোমধ্যেই ভারতে তালেবানের অনুগত আল-কায়েদা উপমহাদেশ শাখা হামলা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং চূড়ান্ত আঘাতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, আলহামদুলিল্লাহ।
লেখক: আহমাদ উসামা আল-হিন্দ, সম্পাদক, আল-ফিরদাউস নিউজ।
Comment