অ্যাবোটাবাদ ডকুমেন্ট সিরিজ
নথি নাম্বার: SOCOM-2012-0000005
-শায়খ মুখতার আবু জুবায়েরকে পাঠানো শায়খ উসামা বিন লাদেনের চিঠি
নথি নাম্বার: SOCOM-2012-0000005
-শায়খ মুখতার আবু জুবায়েরকে পাঠানো শায়খ উসামা বিন লাদেনের চিঠি
নথি নং: SOCOM-2012-0000005
প্রাপক: শায়খ মুখতার আবু জুবায়ের রহিমাহুল্লাহ
আমীর, হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদীন, সোমালিয়া।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِينَ
(সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার জন্য। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন এবং তাঁর সকল সাহাবীর ওপর।)
হামদ ও সালাতের পর, প্রিয় ভাই মুখতার আবু জুবায়ের (হাফিযাহুল্লাহ), আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
আশা করি, এই পত্রটি যখন আপনাদের হস্তগত হবে, তখন আপনি, আপনার পরিবার-পরিজন এবং অন্য সকল ভাই আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো ও সুস্থ আছেন। আমি আপনাদের জন্য আল্লাহভীতি (তাকওয়া) এবং তাঁর নৈকট্য লাভের তৌফিক কামনা করছি।
পর সমাচার এই যে, আপনাদের বরকতময় চিঠিটি আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। চিঠিটি পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। জানতে পারলাম, আলহামদুলিল্লাহ অধিকাংশ মুজাহিদ দল আপনাদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আপনাদের উক্ত চিঠিতে আরও কিছু বিষয় ছিল। তন্মধ্যে আপনারা দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন—
রাষ্ট্র ঘোষণার প্রসঙ্গে:
এ বিষয়ে আমার সুচিন্তিত অভিমত হলো, আমি চাই আপনাদের ওই অঞ্চলে একটি কার্যকর ইমারত (শাসনব্যবস্থা) প্রতিষ্ঠিত থাকুক। তবে কৌশলগত কারণে গণমাধ্যমে এর কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া উচিত হবে না এবং দাফতরিক কাগজপত্রেও এর কোনো প্রমাণ রাখা সমীচীন হবে না; যাতে কোনোভাবে এই তথ্য শত্রুর হাতে পৌঁছালে তা বিপদের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। এটি আমার ব্যক্তিগত রায়। আপনারা মাঠপর্যায়ে আছেন; বাস্তব প্রেক্ষাপট আপনারা আমাদের চেয়ে ভালো বোঝেন। কেননা, ‘উপস্থিত ব্যক্তি যা দেখেন, অনুপস্থিত ব্যক্তি তা দেখতে পান না’। তাই ইমারত ঘোষণা করা বা না করার লাভ-ক্ষতি বিবেচনা করে যা কল্যাণকর মনে হয়, আপনারা সেটিকে প্রাধান্য দেবেন। তবে যদি আপনারা ইমারত ঘোষণা করাটা জরুরি মনে করেন, সেক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো—তা যেন ‘সোমালিয়ান ইসলামী ইমারত’ নামে হয় এবং এর আমীর ‘সোমালিয়ান ইসলামী ইমারতের আমীর’ উপাধি ধারণ করেন।
ঐক্যের বিষয়ে:
আমার পরামর্শ হলো, কোনো প্রকাশ্য ঘোষণা ছাড়াই অত্যন্ত গোপনীয় চিঠিপত্র আদান-প্রদানের মাধ্যমে শরীয়তের এই বাইআত বা ঐক্যের দায়িত্ব সম্পন্ন করা হোক। পাশাপাশি বিষয়টি সোমালিয়ার সাধারণ মানুষের মাঝে প্রচার করা যেতে পারে। তবে আমাদের বা আপনাদের—কারও পক্ষ থেকেই দায়িত্বশীলদের মাধ্যমে এমন কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা বা আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেওয়া যাবে না যে, সাংগঠনিক ঐক্য সাধিত হয়েছে। যদি আপনাদের ভাইদেরকে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়, তবে তারা বলবেন—‘ইসলামী ভ্রাতৃত্বই আমাদের ঐক্যের মূল সূত্র’। মূল প্রশ্নের জবাবে তারা সরাসরি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’—কোনোটিই বলবেন না।
এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে:
- প্রথমত, যদি বিষয়টি প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে জানানো হয়, তবে আপনাদের বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষের তৎপরতা ও ষড়যন্ত্র বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে; ঠিক যেমনটি ইরাক ও আলজেরিয়ার ভাইদের ক্ষেত্রে ঘটেছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, শত্রুপক্ষ বিষয়টি এমনিতেও জানতে পারবে, কারণ এটি পুরোপুরি গোপন রাখা প্রায় অসম্ভব। জনসাধারণের মাঝে জানাজানি হলে শত্রুর কানে পৌঁছানোই স্বাভাবিক। কিন্তু তবুও (আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলে) আইনগত স্বীকারোক্তি বা ‘বড় প্রমাণ’-এর বিষয়টি অনুপস্থিত থেকে যায়। আমরা সেই সুযোগটি শত্রুকে দেব না।
- দ্বিতীয়ত, এর ফলে কেউ যদি সোমালিয়ার মুসলিমদের জন্য সাহায্য-সহায়তা ও ত্রাণসামগ্রী পাঠাতে চায়, তাদের জন্য সেই সুযোগ উন্মুক্ত থাকবে। তারা প্রকাশ্যে সাংগঠনিক ঐক্যের কথা অস্বীকার করতে পারবে, কারণ এর স্বপক্ষে কোনো অকাট্য দালিলিক প্রমাণ বা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। এভাবেই ইমারতের মূল ভূখণ্ডে এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মুসলিমদের ওপর আরোপিত আন্তর্জাতিক অবরোধ ও বয়কট কিছুটা শিথিল রাখা সম্ভব হবে।
সোমালিয়ার মুসলিমরা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধবিগ্রহের ফলে প্রচণ্ড ক্ষুধা ও খাদ্য সংকটের মুখোমুখি। আমার ইচ্ছা আছে, অচিরেই কোনো একটি বয়ানে উপসাগরীয় অঞ্চলের ব্যবসায়ীদেরকে সোমালিয়ায় কার্যকরী ও গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্বুদ্ধ করব। এটি খুব একটা কঠিন কাজ নয়। ইতিপূর্বে সুদানে আমাদের এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অতএব, আল-কায়েদার সঙ্গে যদি মুজাহিদদের ঐক্যের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দেওয়া হয়, তবে তা সোমালিয়ায় সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহী ব্যবসায়ীদের জন্য সহায়ক হবে এবং তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করবে। এতে সোমালিয়ার সাধারণ মুসলিমদের দুর্দশা লাঘব হবে এবং সাধারণ নাগরিকগণ মুজাহিদদের সঙ্গে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ পত্রে উপস্থাপিত বিষয়গুলো সম্পর্কে এই ছিল আমার কিছু মতামত ও পরামর্শ। চিঠিতে সংযুক্ত অন্যান্য বিষয়ের জবাব শায়খ মাহমুদ (আতিয়াতুল্লাহ) দেবেন। শেষ করার আগে বলি, আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই আপনাদের সংবাদ ও বিজয়ের সুসংবাদগুলো পাচ্ছি। আল্লাহ আপনাদের জিহাদ ও প্রচেষ্টার সর্বোত্তম প্রতিদান দান করুন।
অপারেশন পরিচালনায় সতর্কতা প্রসঙ্গে:
আফ্রিকান বাহিনীর ওপর আক্রমণের ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো—বাকারা বাজারে তাদের ওপর আক্রমণ করার সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত, যেন সাধারণ মুসলিমদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে, তাদের ওপর আপনাদের অ্যামবুশ বা অপারেশনগুলো বিমানবন্দর থেকে ঘাঁটিতে যাতায়াতের পথে করা যেতে পারে। যখন তারা বাজারের ভেতর বা জনাকীর্ণ ঘাঁটিতে অবস্থান করবে, তখন হামলা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। অবশ্য যদি আপনারা কোনো ক্লাসিক্যাল অপারেশন পরিচালনা করেন, অথবা সুড়ঙ্গ খনন করে ক্যাম্পের প্রাণকেন্দ্রে পৌঁছান এবং একইসাথে বাহির থেকে আক্রমণের ব্যাকআপ থাকে, তবে বিষয়টি ভিন্ন। সর্বাবস্থায় আমরা চাই, এ বিষয়ে খুব ভালোভাবে যেন চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা করা হয়। আল্লাহ আপনাদের সঠিক পরিকল্পনা করার তৌফিক দিন, আপনাদের নিশানা লক্ষ্যভেদী করুন এবং সিদ্ধান্তে বরকত দান করুন।
নেতৃত্বের গুণাবলি প্রসঙ্গে:
পরিশেষে, আমি নিজেকে এবং আপনাদেরকে তাকওয়া (খোদাভীতি), সবর (ধৈর্য), অবিচলতা এবং উত্তম আখলাক (চরিত্র) অবলম্বন করার উপদেশ দিচ্ছি। কোনো আমীর বা নেতা যখন এ সমস্ত গুণে গুণান্বিত হন, তখন আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর অধীনস্থ সাথিদের অবস্থাও উন্নত হয়। বিশেষ করে নেতার সহনশীলতা, ক্ষমাগুণ, ন্যায়পরায়ণতা, কষ্ট সহিষ্ণুতা, কোমল আচরণ এবং সাথিদের ওপর সাধ্যাতীত দায়িত্ব না চাপানোর মতো গুণগুলো অর্জনে আমাদের মনোযোগী হতে হবে।
وَآخِرُ دَعْوَانَا أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِينَ
(আমাদের শেষ কথা হলো, সমস্ত প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর ওপর।)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনাদের ভাই, আযমুরায় শুক্রবার, ২৬ শে শাবান ১৪৩৭ হিজরী।
বি:দ্র: ‘নিকাতুল ইরতিকায’ কিতাবটি এর সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কিতাবটি বিষয়বস্তুর দিক থেকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাই এটি প্রকাশ ও প্রচারের ব্যাপারে আপনারা উদ্যোগী হবেন বলে আশা রাখি।
*****
Comment