মাযহাব” -
শাইখ আবু ইয়াহিয়া আল লিবি রহিমাহুল্লাহর কিছু উপদেশ যা বাংলাদেশী ভাইদের জন্যও অত্যন্ত জরুরী।
.
بسم الله الرحمن الرحيم
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের উপর। তার পরিবারবর্গ, সাহাবা ও যারা তার সাথে বন্ধুত্ব রাখে তাদের উপরও।
.
এই কয়েকটি উপদেশ ঐসকল মুজাহিদ ভাইদের প্রতি, যারা আফগান মুজাহিদবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত, অথবা যারা স্বীয় ভাইদের সাথে শরীক হতে অচিরেই আফগানবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত হবেন।
প্রিয় ভাইদেরকে অবগত করছি, আমি এখানে যেসমস্ত শরয়ী মাসআলাসমূহ আলোচনা করবো, তার প্রতিটি কথার পক্ষেই আলেমদের উদ্ধৃতি ও শরয়ী দলীল রয়েছে, কিন্তু কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় সেগুলো এখানে আনিনি। তাই আপনি প্রশান্তমনে এগুলো গ্রহণ করতে পারেন।
আমরা আমাদের জন্য এবং আপনাদের জন্য আল্লাহর নিকট সঠিকের দিকনির্দেশনা, তার তাওফীক, কথা ও কাজের সংশোধন এবং তার গ্রহণযোগ্যতা প্রার্থনা করি।
.
#সর্বদা আপনার ভাইদের সাথে মিশে থাকতে আগ্রহী হোন, কোন কথা বা কাজে তাদের সবার থেকে ভিন্নতা অবলম্বন করবেন না। যতটুকু সম্ভব তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখুন। ইজতিহাদী মাসায়েলের ক্ষেত্রে আমির যেটা অবলম্বন করেন সেটাকেই মানা ওয়াজিব। চাই তা মারকাযে থাকাকালীন বা অভিযানে যাত্রাকালীন অথবা অন্য যেকোন অবস্থাতেই হোকনা কেন। এমনকি যদি আপনার মতটি এর থেকে বিপরীত হয়, তবুও। যেমন, নামায আদায়ের সময়, দুই নামায এক সাথে জমা করা, নামায পূর্ণ করা বা কসর করা, জামাতে নামায পড়া বা একাকী পড়া, কোন অভিযান বা কাজের জন্য রোজা বর্জন করা, বা এজাতীয় বিষয়ে।
.
‘তহাবি’ কিতাবের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে আবিল ইজ্জ রহ: বলেন,
“কিতাব-সুন্নাহর বর্ণনাসমূহ ও সালাফের ইজমা প্রমাণ করে, ইজতিহাদের স্থান সমূহে দায়িত্বশীল, নামাযের ইমাম, বিচারক, যুদ্ধের সেনাপতি ও যাকাত উসুলকারী শ্রেণীর কথাই অনুসরণীয় হবে। ইজতিহাদী বিষয়বালীর ক্ষেত্রে তাদের অনুসারীদের আনুগত্য করা তাদের উপর ওয়াজিব নয় বরং তাদের অনুসারীদের উপরই ওয়াজিব হল তাদের আনুগত্য করা এবং তার মতের সামনে নিজেদের মতকে বর্জন করা। কারণ ঐক্য ও সমঝোতার উপকারীতা এবং বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার ক্ষতি শাখাগত মাসআলাসমূহের ব্যাপারগুলো থেকে অনেক বড়।”
.
#আফগান মুজাহিদদের সাথে চলতে গিয়ে এই বিষয়টির প্রতিও লক্ষ্য রাখা উচিত: আফগান মুজাহিদগণ হানাফী মাযহাব মেনে চলেন। এটি আহলুস সুন্নাহর চারটি গ্রহণযোগ্য মাযহাবের একটি। তাই প্রতিটি মুজাহিদ যেন ঘৃণা ও বিভেদসৃষ্টির মত শাখগত মাসআলাসমূহের ব্যাপারগুলোর উপর ঐক্য ও সম্প্রীতির কল্যাণকে প্রাধান্য দেন। এমনকি যদি কোন সুন্নাত বা মুস্তাহাব বর্জন করতে হয় তবুও। কারণ এর বিপরীতে মুহাজিরদের প্রতি তাদের অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি হবে এবং তাদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি হবে। সুতরাং এহেন অবস্থায় রুকুর পূর্বে ও পরে হাত উঠানো ছেড়ে দিলে, তাশাহ্হুদের মাঝে শাহাদাত আঙ্গুল নাড়ানো ছেড়ে দিলে, জোরে আমীন বলা ছেড়ে দিলে, সিজদার জন্য হাতে ভর না দিয়ে হাটুতে ভর দিলে বা এজাতীয় কাজগুলো বিসর্জন দিলে কোনই শরয়ী সমস্যা নেই। বরং যদি এগুলো পরিত্যাগ করার দ্বারা তার উদ্দেশ্য হয় সকলের মনোতুষ্টি ও ইখতিলাফ দূরকরা, তাহলে এর দ্বারা সে সওয়াব প্রাপ্ত হবে। এটাই ফিকহ।
যেমন ইমাম বুখারী রহ: কা’বা ঘর (পুন:নির্মাণের উদ্দেশ্যে) ভাঙ্গার ইচ্ছা ত্যাগ করা সংক্রান্ত হাদীসটির ব্যাপারে অধ্যায় সাঁজিয়েছেন এভাবে- ‘অধ্যায়: যে এই ভয়ে জায়েয বিষয়কে পরিহার করে যে, মানুষ তা বুঝে উঠতে পারবে না, ফলে মানুষ এর থেকেও জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে পড়বে’।
.
#যেসকল ক্ষেত্রে ইসলামের সরাসরি বিরোধিতা হয় না, সেক্ষেত্রে দলের লোকজনের অভ্যাস ও রীতি-নীতির প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। যেমন: কিবলার দিকে দুই পা দিয়ে না ঘুমানো বা এজাতীয় কাজগুলো। সাথে সাথে তাদের আলেমদের সম্মান করতে হবে। কারণ আলেমরা মানুষের অন্তরের চাবিকঠি।
.
নামাযে যথাসম্ভব তাদের কারীদেরকে সামনে দেওয়া, মাযহাবের আলোচনা বা তাদের ইমামদের সমালোচনা না করা এবং তাদের মাঝে যে ফাতওয়া প্রচলিত তাকে হালকা করা থেকে বেঁচে। যদি তাদের কোন আলেম বা তালিবুল ইলমের সাথে আলোচনা উঠে, তাহলে উক্ত আলোচনা হওয়া উচিত বিশুদ্ধ ইলম, শ্রদ্ধাবোধ, শিষ্টাচার ও আন্তরিকতার সাথে। কোন ধরণের উত্তেজনা, মিথ্যা অপবাদ, গালি-গালাজ ও আত্মগর্ব বা অহংকার থাকতে পারবে না।
.
সম্মানিত ভাই!
মনে রাখবেন, এই মহান মাযহাবটি দীর্ঘ শতাব্দী থেকে শতাব্দী পর্যান্ত বহু শ্রেষ্ঠ ইমামগণ মেনে আসছেন। অনেক রাষ্ট্র এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। অনেক কাযী এর মাধ্যমে বিচারকার্য সম্পাদন করেছে। অনেক শাসক এটাকে নিজ মাযহাব হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। হাজার হাজার খণ্ডের কিতাব এই মাযহাবের উপর লিপিবদ্ধ হয়েছে। বরং পৃথিবীতে অন্য কোন মাযহাবের এতটা প্রচার-প্রসার হয়নি, যতটা আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহর মাযহাবের হয়েছে। তাই আপনি একদিনের একটি বৈঠকে বা একটি শাখাগত মাসআলা দিয়ে তাকে ছোট করার চেষ্টা করবেন না।
কারণ হতে পারে, তাহকীক করলে আপনার কথাটিই অপ্রণিধানযোগ্য হবে। আর প্রত্যেক জ্ঞনীর উপরও জ্ঞানী রয়েছে।
আল্লাহ তাআলাই সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক।
.
লিখেছেনঃ আবু ইয়াহ্ইয়া আল লিবি রহিমাহুল্লাহ
শনিবার, ২৫ রবিউসসানি, ১৪৩১হিজরী।
(সংগৃহীত)
শাইখ আবু ইয়াহিয়া আল লিবি রহিমাহুল্লাহ
শাইখ আবু ইয়াহিয়া আল লিবি রহিমাহুল্লাহর কিছু উপদেশ যা বাংলাদেশী ভাইদের জন্যও অত্যন্ত জরুরী।
.
بسم الله الرحمن الرحيم
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দুরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূলের উপর। তার পরিবারবর্গ, সাহাবা ও যারা তার সাথে বন্ধুত্ব রাখে তাদের উপরও।
.
এই কয়েকটি উপদেশ ঐসকল মুজাহিদ ভাইদের প্রতি, যারা আফগান মুজাহিদবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত, অথবা যারা স্বীয় ভাইদের সাথে শরীক হতে অচিরেই আফগানবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত হবেন।
প্রিয় ভাইদেরকে অবগত করছি, আমি এখানে যেসমস্ত শরয়ী মাসআলাসমূহ আলোচনা করবো, তার প্রতিটি কথার পক্ষেই আলেমদের উদ্ধৃতি ও শরয়ী দলীল রয়েছে, কিন্তু কলেবর বৃদ্ধির আশঙ্কায় সেগুলো এখানে আনিনি। তাই আপনি প্রশান্তমনে এগুলো গ্রহণ করতে পারেন।
আমরা আমাদের জন্য এবং আপনাদের জন্য আল্লাহর নিকট সঠিকের দিকনির্দেশনা, তার তাওফীক, কথা ও কাজের সংশোধন এবং তার গ্রহণযোগ্যতা প্রার্থনা করি।
.
#সর্বদা আপনার ভাইদের সাথে মিশে থাকতে আগ্রহী হোন, কোন কথা বা কাজে তাদের সবার থেকে ভিন্নতা অবলম্বন করবেন না। যতটুকু সম্ভব তাদেরকে সন্তুষ্ট রাখুন। ইজতিহাদী মাসায়েলের ক্ষেত্রে আমির যেটা অবলম্বন করেন সেটাকেই মানা ওয়াজিব। চাই তা মারকাযে থাকাকালীন বা অভিযানে যাত্রাকালীন অথবা অন্য যেকোন অবস্থাতেই হোকনা কেন। এমনকি যদি আপনার মতটি এর থেকে বিপরীত হয়, তবুও। যেমন, নামায আদায়ের সময়, দুই নামায এক সাথে জমা করা, নামায পূর্ণ করা বা কসর করা, জামাতে নামায পড়া বা একাকী পড়া, কোন অভিযান বা কাজের জন্য রোজা বর্জন করা, বা এজাতীয় বিষয়ে।
.
‘তহাবি’ কিতাবের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনে আবিল ইজ্জ রহ: বলেন,
“কিতাব-সুন্নাহর বর্ণনাসমূহ ও সালাফের ইজমা প্রমাণ করে, ইজতিহাদের স্থান সমূহে দায়িত্বশীল, নামাযের ইমাম, বিচারক, যুদ্ধের সেনাপতি ও যাকাত উসুলকারী শ্রেণীর কথাই অনুসরণীয় হবে। ইজতিহাদী বিষয়বালীর ক্ষেত্রে তাদের অনুসারীদের আনুগত্য করা তাদের উপর ওয়াজিব নয় বরং তাদের অনুসারীদের উপরই ওয়াজিব হল তাদের আনুগত্য করা এবং তার মতের সামনে নিজেদের মতকে বর্জন করা। কারণ ঐক্য ও সমঝোতার উপকারীতা এবং বিভেদ ও বিচ্ছিন্নতার ক্ষতি শাখাগত মাসআলাসমূহের ব্যাপারগুলো থেকে অনেক বড়।”
.
#আফগান মুজাহিদদের সাথে চলতে গিয়ে এই বিষয়টির প্রতিও লক্ষ্য রাখা উচিত: আফগান মুজাহিদগণ হানাফী মাযহাব মেনে চলেন। এটি আহলুস সুন্নাহর চারটি গ্রহণযোগ্য মাযহাবের একটি। তাই প্রতিটি মুজাহিদ যেন ঘৃণা ও বিভেদসৃষ্টির মত শাখগত মাসআলাসমূহের ব্যাপারগুলোর উপর ঐক্য ও সম্প্রীতির কল্যাণকে প্রাধান্য দেন। এমনকি যদি কোন সুন্নাত বা মুস্তাহাব বর্জন করতে হয় তবুও। কারণ এর বিপরীতে মুহাজিরদের প্রতি তাদের অন্তরে ঘৃণা সৃষ্টি হবে এবং তাদের মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি হবে। সুতরাং এহেন অবস্থায় রুকুর পূর্বে ও পরে হাত উঠানো ছেড়ে দিলে, তাশাহ্হুদের মাঝে শাহাদাত আঙ্গুল নাড়ানো ছেড়ে দিলে, জোরে আমীন বলা ছেড়ে দিলে, সিজদার জন্য হাতে ভর না দিয়ে হাটুতে ভর দিলে বা এজাতীয় কাজগুলো বিসর্জন দিলে কোনই শরয়ী সমস্যা নেই। বরং যদি এগুলো পরিত্যাগ করার দ্বারা তার উদ্দেশ্য হয় সকলের মনোতুষ্টি ও ইখতিলাফ দূরকরা, তাহলে এর দ্বারা সে সওয়াব প্রাপ্ত হবে। এটাই ফিকহ।
যেমন ইমাম বুখারী রহ: কা’বা ঘর (পুন:নির্মাণের উদ্দেশ্যে) ভাঙ্গার ইচ্ছা ত্যাগ করা সংক্রান্ত হাদীসটির ব্যাপারে অধ্যায় সাঁজিয়েছেন এভাবে- ‘অধ্যায়: যে এই ভয়ে জায়েয বিষয়কে পরিহার করে যে, মানুষ তা বুঝে উঠতে পারবে না, ফলে মানুষ এর থেকেও জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়ে পড়বে’।
.
#যেসকল ক্ষেত্রে ইসলামের সরাসরি বিরোধিতা হয় না, সেক্ষেত্রে দলের লোকজনের অভ্যাস ও রীতি-নীতির প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। যেমন: কিবলার দিকে দুই পা দিয়ে না ঘুমানো বা এজাতীয় কাজগুলো। সাথে সাথে তাদের আলেমদের সম্মান করতে হবে। কারণ আলেমরা মানুষের অন্তরের চাবিকঠি।
.
নামাযে যথাসম্ভব তাদের কারীদেরকে সামনে দেওয়া, মাযহাবের আলোচনা বা তাদের ইমামদের সমালোচনা না করা এবং তাদের মাঝে যে ফাতওয়া প্রচলিত তাকে হালকা করা থেকে বেঁচে। যদি তাদের কোন আলেম বা তালিবুল ইলমের সাথে আলোচনা উঠে, তাহলে উক্ত আলোচনা হওয়া উচিত বিশুদ্ধ ইলম, শ্রদ্ধাবোধ, শিষ্টাচার ও আন্তরিকতার সাথে। কোন ধরণের উত্তেজনা, মিথ্যা অপবাদ, গালি-গালাজ ও আত্মগর্ব বা অহংকার থাকতে পারবে না।
.
সম্মানিত ভাই!
মনে রাখবেন, এই মহান মাযহাবটি দীর্ঘ শতাব্দী থেকে শতাব্দী পর্যান্ত বহু শ্রেষ্ঠ ইমামগণ মেনে আসছেন। অনেক রাষ্ট্র এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। অনেক কাযী এর মাধ্যমে বিচারকার্য সম্পাদন করেছে। অনেক শাসক এটাকে নিজ মাযহাব হিসাবে গ্রহণ করে নিয়েছে। হাজার হাজার খণ্ডের কিতাব এই মাযহাবের উপর লিপিবদ্ধ হয়েছে। বরং পৃথিবীতে অন্য কোন মাযহাবের এতটা প্রচার-প্রসার হয়নি, যতটা আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহর মাযহাবের হয়েছে। তাই আপনি একদিনের একটি বৈঠকে বা একটি শাখাগত মাসআলা দিয়ে তাকে ছোট করার চেষ্টা করবেন না।
কারণ হতে পারে, তাহকীক করলে আপনার কথাটিই অপ্রণিধানযোগ্য হবে। আর প্রত্যেক জ্ঞনীর উপরও জ্ঞানী রয়েছে।
আল্লাহ তাআলাই সর্ববিষয়ে পরিজ্ঞাত।
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত জগতের প্রতিপালক।
.
লিখেছেনঃ আবু ইয়াহ্ইয়া আল লিবি রহিমাহুল্লাহ
শনিবার, ২৫ রবিউসসানি, ১৪৩১হিজরী।
(সংগৃহীত)
Comment