“ফিলিস্তিনের স্মৃতি ” ।।
শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. ||
এর থেকে– প্রথম পর্ব
শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম রহ. ||
এর থেকে– প্রথম পর্ব
কিছু কথা
অনেক মুসলমান ভাই আছেন, যাঁরা শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযাম সম্পর্কে ভালো জানেন না। যাঁরা তাঁর লেখাগুলো পড়েন নি বা তিনি যা বলেছেন সে সম্পর্কে ধারণা রাখেন না তাঁরা হয়তো অবচেতনভাবে মনে করবেন তিনি আফগানিস্তান নিয়েই মগ্ন ছিলেন; ফিলিস্তিনের কথা ভুলে ছিলেন এবং ফিলিস্তিনের জন্যে কোনো কাজ করেন নি। এমনকি ফিলিস্তিনের অনেক মুসলমান ভাই এ-ধরনের কথা বলেন এবং বেশ স্পষ্টভাবেই বলেন।
হায়, এই বন্ধুরা যদি সামান্য কষ্ট করতেন, তাঁর বইগুলো পড়তেন, তাঁর বক্তৃতার রেকর্ড শুনতেন, তাহলে তাঁরা বুঝতে পারতেন তাঁর দেহটাই শুধু আফগানিস্তানে ছিলো আর তাঁর হৃদয় ও আত্মা ছিলো মসজিদুল আকসা [জেরুজালেম] ও নাবলুস পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বিগলিত।
বরং আমরা বলতে পারি—বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই বলতে পারি, শহীদ ড. আবদুল্লাহ আয্যাম ফিলিস্তিনের জন্যে যা করেছেন, যাঁরা ফিলিস্তিন নিয়ে বেশি গান গান, বক্তৃতার মঞ্চে, সভায় ও সমাবেশে কথার তুবড়ি ছোটান এবং চ্যালেঞ্জ প্রকাশ করেন তাঁরা সেটা করেন নি।
কেনো নয়! তিনি শত শত ফিলিস্তিনি যুবককে সৈনিক ও আত্মোৎসর্গকারী যোদ্ধারূপে প্রস্তুত করেছেন। কেনো নয়! বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষিতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ পর্বতমালার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি নাবলুস, খলিল ও জেরুজালেমের পর্বতমালার অভিজ্ঞতাও বর্ণনা করেছেন।
প্রিয় পাঠক, আপনি আবদুল্লাহ আয্যামের লেখায় ও ভাষণে—যদি পড়ে থাকেন—তার প্রমাণ পাবেন। এবং সন্দেহ নেই, আপনি উপরিউক্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছুবেন
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য
এ-গ্রন্থটি শহীদ ড. আবদুল্লাহ আযযামের ফিলিস্তিন সম্পর্কিত ভাষণের ক্ষুদ্র সংকলন; তাঁর বক্তৃতার রেকর্ড থেকে সংকলিত হয়েছে। আমৃত্যু তিনি ফিলিস্তিন সম্পর্কে অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন, মূল্যবান ভাষণ দিয়েছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ লিখেছেন। তার অধিকাংশ ইতোপূর্বে তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং বিভিন্ন সাময়িকীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু শুধু ফিলিস্তিন বিষয়ে এককভাবে কোনো পূর্ণাঙ্গ সংকলন প্রকাশিত হয় নি। আমরা দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, ড. আবদুল্লাহ আয্যামের ফিলিস্তিন সম্পর্কিত অধিকাংশ লেখা বিভিন্ন গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরও আমরা সেসব লেখা সংকলন করতে বিলম্ব করে ফেলেছি। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ফিলিস্তিন সম্পর্কিত যে-সব রচনা কোনো গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত হয় নি বা যেসব লেখা ও ভাষণ আমাদের হাতে অবশিষ্ট ছিলো বা পরবর্তী সময়ে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে, সেসব লেখা একত্র করে একটি গ্রন্থ প্রস্তুত করবো। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন সম্পর্কিত যাবতীয় রচনা একত্র করে একটি বা দুটি খণ্ডে প্রকাশ করতে পারবো, ইনশাআল্লাহ ।
নিবেদক
ড. আবদুল্লাহ আযযাম প্রচার কেন্দ্র।
গ্রন্থটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু কথা
ড. আবদুল্লাহ আযযাম প্রচার কেন্দ্র।
গ্রন্থটির বিষয়বস্তু সম্পর্কে কিছু কথা
যেসব বিষয়ের আলোচনা এ গ্রন্থটিতে সংকলিত হয়েছে তার প্রতিটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, প্রতিটি মুসলিম যুবক বিশেষ করে ফিলিস্তিনের যুবকেরা এতে উদ্বেলিত হবেন। পাঠক চিন্তার খোরাক পাবেন এবং তাঁর বর্তমান কর্মপন্থা কী হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্তগ্রহণে সহায়তা পাবেন। এ-গ্রন্থের প্রতিটি লেখা ইমানী চেতনা জাগ্রত রাখবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস সুদৃঢ় রাখবে। ইসলামই একমাত্র সত্যধর্ম—এ বিশ্বাস প্রত্যেক মুসলমানের হৃদয়ে বদ্ধমূল থাকা উচিত। মুসলিম হওয়ার পরও কেউ যদি অন্য ধর্মকে সত্য মনে করে এবং নিজ ধর্মের অবমাননা সহ্য করে তাহলে তার বিশ্বাস নিয়ে সন্দেহ থেকে যাবে। নিম্নে এ গ্রন্থের বিষয়বস্তু উল্লেখ করা হলো:
• ফিলিস্তিনের নিপীড়িত-নিগৃহীত মুসলমান সম্পর্কে ড. আবদুল্লাহ আয্যামের বক্তব্য;
• ফিলিস্তিনে তাঁর অবস্থান এবং জিহাদে অংশগ্রহণ ও ফিলিস্তিন সীমান্ত প্রহরার স্মৃতি;
• শিক্ষা ও অভিজ্ঞতামূলক কাহিনি ও বর্ণনা--চেতনাদৃঢ় মুসলিম জাতির জন্যে বার্তা;
• কীভাবে বিশ্বের আরব ও অনারব গোষ্ঠী ফিলিস্তিন জাতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে এবং ফিলিস্তিন বিক্রি করে দেয়ার পাঁয়তারা করছে;
• যেসব ফিলিস্তিনি যুবক জেরুজালেম ও মসজিদুল আকসাকে নিজেদের অধিকারে ফিরিয়ে আনতে চায় তাদের জন্যে কিছু নির্দেশনা এবং সেটা কীভাবে সম্ভব তার কিছু কৌশল;
আমরা আবারো পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, ড. আবদুল্লাহ আয্যামের ফিলিস্তিন সম্পর্কিত যেসব রচনা পূর্বপ্রকাশিত কোনো গ্রন্থে অন্ত র্ভুক্ত হয় নি, এ-গ্রন্থ সেসব রচনারই সংকলন।
নিবেদক
ড. আবদুল্লাহ আযযাম গবেষণা সংস্থা।
ড. আবদুল্লাহ আযযাম গবেষণা সংস্থা।
শহীদ ইমাম আবদুল্লাহ আয্যামের
আলোকিত কথামালা
• আমাদের মনে প্রথম যে কথাটির উদয় হয় তা হলো, আমরা আফগানিস্তানের হিন্দুকুশের চূড়ায় পৌঁছেছি—এখন কীভাবে আমরা ফিলিস্তিনেও এই অবস্থায় পৌঁছতে পারি।
• আমি একজন ফিলিস্তিনি। যদি ফিলিস্তিনে যাওয়ার কোনো সুযোগ আমার হয় এবং মসজিদুল আকসায় পাহারা দেয়ার সুযোগ আমার হয়, তাহলে সেখানে আমি লড়াই করতেই পছন্দ করবো।
• জেনে রাখা উচিত, মসজিদুল আকসার ভালোবাসা আমাদের বিশ্বাসের অংশ; তা আমাদের আকিদার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং আমাদের দীনের একটি স্তম্ভ। এই চেতনা আমাদের রক্তে সর্বদা বহমান এবং আমাদের আত্মায় চিরকাল বিরাজমান।
• জেনে রাখা উচিত, আমরা আল্লাহর পথে বের হয়েছি এবং সেই সুযোগের অপেক্ষায় আছি কখন আমরা মসজিদুল আকসার চূড়ায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর পতাকা উড্ডীন করতে পারবো। কখন প্রিয়নবীর মেরাজের সূচনাস্থল আল-আকসায় কালিমার পতাকা উড়াতে সক্ষম হবো।
• আমাদের প্রধান সংকল্প হলো আফগানিস্তানকে শত্রুমুক্ত করা এবং তার সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনা। এ কাজটি আমাদের দীনের অংশ এবং অত্যাবশ্যক দায়িত্ব। বাইতুল মাকদিস স্বাধীন করা এবং আল- আকসাকে তাওহিদের ছায়া ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর কালিমাতলে নিয়ে আসাও আমাদের জন্যে আবশ্যক কর্তব্য ।
• যাঁরা মনে করেন আফগানিস্তানে জিহাদ অব্যাহত রাখার অর্থ হলো ফিলিস্তিনে ইসলামি বিপ্লব দমিত রাখা তাঁরা আসলে ভুল বুঝছেন এবং সত্য থেকে দূরে রয়েছেন। আসলে নেতৃত্ব কীভাবে ফিরিয়ে আনতে হয় এবং অধিকারে রাখতে হয় সে ব্যাপারে তাঁদের অজ্ঞতা রয়েছে। কীভাবে আন্দোলন ও দ্রোহ-চেতনা জাগ্রত করতে হয় এবং কীভাবে ইসলামি বিপ্লবের বীজ ছড়িয়ে দিতে হয় তা তাঁরা জানেন না। বিশাল আকারে ইসলামি সেনাদল তৈরি করে কীভাবে পৃথিবীকে নৈরাজ্য-কলহ থেকে পবিত্র রাখা যায় সে বিষয়ে তাদের চিন্তা-ভাবনা কম।
• রক্তরঞ্জিত কাবুলের ঘটনাবলি আর ফিলিস্তিনের রক্তাক্ত বদ্ধভূমির কাহিনির সূত্র একই। হিন্দুকুশের ওপর নিহত মুসলমান ও রক্তস্রোত এবং গাজায় নিহত মুসলমান ও রক্তস্রোতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। হেলমান্দ বাল্খ ও হেরাতে এতিমদের আর্তচিৎকার ও বিধবাদের বুকফাটা বিলাপ এবং নাবলুস, উম্মুন নুর, খলিল ও কুদসে বিধবাদের বুকফাটা বিলাপ ও এতিমদের আর্তনাদের উৎস একই এবং সমান দুঃখদায়ক। আফগানিস্তানের বিপর্যয় ও দুর্দশা এবং ফিলিস্তিনের বিপর্যয় ও দুর্দশা সমান ভয়াবহ।
• এসব কাহিনি বস্তুত একই কাহিনি—রক্তাক্ত ইসলামের কাহিনি। পৃথিবীর চারদিক থেকে এখন শত্রুরা চূড়ান্ত বর্বরতা ও হিংস্রতা নিয়ে ইসলামের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। শত্রুর আগ্রাসন কবলিত দীনের কাহিনি আসলে অজস্র হিংস্রতার শিকার মুসলিম জাতির কাহিনি। যখন জিহাদ থেমে যাবে, ইসলামের শত্রুদের আত্মা থেকে ভয় দূর হয়ে যাবে এবং তাদের সাহস বেড়ে যাবে (তখন তারা অবশ্যই মুসলিম উম্মাহর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।] মুসলিম জাতি তখন ব্যর্থ- অথর্ব হয়ে বসে থাকবে, তখন তাদের সমগ্রতা অর্থহীনতা ছাড়া আর কিছু নয়। যখন অস্ত্র ঝনঝনিয়ে উঠবে, তরবারি কোষমুক্ত থাকবে তখনই কেবল শেয়ালেরা তাদের গর্তে আশ্রয় নেবে।
• আমরা এখন ইহুদি ও তাদের দোসরদের এবং আমেরিকা ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গদের প্রতি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে পারি যে ফিলিস্তিনে পরিপূর্ণ জিহাদ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা স্থির হবো না, ক্ষান্ত হবো না।
• বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ও সীমাবদ্ধতা সৃষ্টি করে যদি আমাদেরকে সামান্য সময়ের জন্যে ফিলিস্তিনের জিহাদ থেকে বিরত রাখা হয় এবং এই উম্মাহর মসজিদুল আকসার ভূমিতে লড়াইয়ের ইবাদত থেকে বাধা দেয়া হয়—এর অর্থ এই নয় যে ফিলিস্তিন সম্পর্কে আমাদের কোনো চিন্তা-ভাবনা নেই।
• মসজিদুল আকসাকে ফিরিয়ে আনা আমাদের মতাদর্শের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং আমাদের মৌলিক সংকল্প।
• মসজিদুল আকসাকে ফিরিয়ে আনা আমাদের কর্মপরিকল্পনার প্রধান অংশ। আমরা কাবুলে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছি এবং শত্রুর সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ব্যাপক অস্থিরতা ও মসজিদুল আকসা মুক্ত করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা একমুহূর্তের জন্যে আমাদের স্বস্তি দিচ্ছে না। ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমি ও বিষাদগ্রস্ত মসজিদুল আকসাকে মুক্ত করার দৃঢ় সংকল্প আমাদের নির্ঘুম রাখে।
• ইহুদিরা যখনই কোনো যুদ্ধের পরিকল্পনা করবে তখনই সেটা নস্যাৎ করে দিতে হবে।
• সন্তানহারা মায়ের দুঃখ এবং স্বামীহারা নারীর দুঃখ অন্যকেউ বুঝবে না। আমি ফিলিস্তিনের সন্তান এবং আমার পরিবার-পরিজন ফিলিস্তিনেই রয়েছে। আমি আমার মাতৃভূমি হারিয়েছি। আমার দেশ এখন শত্রুর কব্জায়। আমি দেশহারা, মাতৃভূমিহারা। দুঃখ, আফসোস ও যাতনায় আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়ে আছে... ফিলিস্তিনের জন্যে... আমার প্রিয় মাতৃভূমির জন্যে।
• ফিলিস্তিন অবশ্যই আফগানিস্তান থেকে উত্তম স্থান। যখন আমাদের হাতে শিকল পরানো হলো এবং সকল সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হলো এবং আমরা কাপড় টেনে চলা অন্তঃপুরের মেয়েদের মতো হয়ে গেলাম—কবি যেমন বলেছেন, গায়িকাদের দেহ থেকে ঝুলছে আঁচল, তেমন—এবং নারী ও শিশুদের মতো বসে রইলাম, তখন আমরা সে-জীবন ত্যাগ করে আফগানিস্তানের দুঃখ-দুর্দশার ভূমিতে চলে এসেছি। কারণ—শুধু দুঃখীই দুঃখীর দুঃখ বোঝে
প্রকাশনা ও পরিকল্পনা বিভাগ
আবদুল্লাহ আযযাম প্রচার কেন্দ্র।
আবদুল্লাহ আযযাম প্রচার কেন্দ্র।
আরও পড়ুন
Comment