০৯ গাদ্দারি, গনিমতের মাল চুরি ও অঙ্গবিকৃতি নিষেধ
ونهينا عن ... وغَدرٍ وغُلولٍ[1] ومُثلةٍ. “গাদ্দারি করা, গনিমতের মাল লুকিয়ে ফেলা এবং অঙ্গ-বিকৃতি করা থেকে আমাদের বারণ করা হয়েছে।” |
غَدر বলা হয় চুক্তি বা অঙ্গীকার করার পর গাদ্দারি করা। যেমন কাফেরদের কোনো দলের সাথে তিনদিনের যুদ্ধবিরতি হলো। তিনদিন হামলা হবে না ভেবে কাফেররা অপ্রস্তুত রইল। এই সুযোগে হঠাৎ হামলা করে বসলো। এটি গাদ্দারি। গাদ্দারি হারাম।
উল্লেখ্য, হাদিসে এসেছে الحرب خدعة ‘যুদ্ধ হচ্ছে কৌশলের নাম’। এই ‘খিদা’ – ‘কৌশল’ আর ‘গাদ্দারি’ এক নয়। খিদা’ জায়েয[2] বরং এটিই যুদ্ধের মোড় নির্ধারণ করে।
গাদ্দারি হচ্ছে – যেমনটা বলা হয়েছে – অঙ্গীকার বা চুক্তি করার পর তা রক্ষা না করে সুযোগ বুঝে ভঙ্গ করে ফেলা। পক্ষান্তরে খিদা হচ্ছে কৌশলে মার দেয়া। যেমন আমরা এমন একটা ভাব দেখালাম যে, আমরা তিনদিন কোনো যুদ্ধ করবো না, কিংবা আমরা যুদ্ধে ইচ্ছুক নই, আমরা ফিরে যাচ্ছি। কাফেররা এই ভেবে যখন অপ্রস্তুত হয়ে গেল, সুযোগ বুঝে হঠাৎ হামলা করে দিলাম। এখানে আমরা কোনো চুক্তি বা অঙ্গীকার করিনি। কৌশলে ফাঁদে ফেলেছি। এটি জায়েয এবং কাম্য।
غُلول অর্থ গনিমতের মাল লুকিয়ে ফেলা। গনিমতের মাল দশের হক। মুজাহিদগণ পাবেন চার ভাগ। আর খুমুস তথা এক পঞ্চমাংশ যাবে বাইতুল মালে। এটি গরীবদের হক। কোনো মুজাহিদের জন্য গনিমতের কোনো অংশ; বণ্টনের আগে নিয়ে নেয়া জায়েয হবে না; তা যত সামান্যই হোক।
অবশ্য দারুল হারবে থাকাবস্থায় খানাপিনার জরুরত গনিমতে বিদ্যমান থাকা খাবার ও খাবার উপযোগী বস্তু থেকে মিটানো যাবে। যেমন রুটি, গোশত, চাল-ডাল ইত্যাদি। এমনিভাবে গনিমতের গরু ছাগল বা উট জবাই করে রান্না করে খাওয়া যাবে। তবে দারুল ইসলামে ফিরে আসার পর আর খাওয়া যাবে না। কারও হাতে কোনো কিছু অবশিষ্ট থাকলে ফিরত দিতে হবে। এ ব্যাপারে গনিমতের পরিচ্ছেদে আলোচনা আসবে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে ইনশাআল্লাহ।
مُثلة অর্থ অঙ্গবিকৃতি ঘটানো। যেমন নাক কান কাটা। থেঁতলে দেয়া। হাত পা ভেঙে দেয়া বা কেটে বিচ্ছিন্ন করা। কিংবা আগুনে পুড়িয়ে, গাড়ি চাপা দিয়ে বা অন্য এমন কোনো পন্থায় হত্যা করা, যার দ্বারা দেহ বিকৃত হয়ে যায়।
কাফেরকে অঙ্গবিকৃত করে হত্যা করা নিষেধ। এমনিভাবে হত্যার পর অঙ্গবিকৃত করাও নিষেধ।
তবে এ নিষেধাজ্ঞা কাফেরকে বন্দী করে আনার পর ইচ্ছাকৃত বিকৃতি ঘটানোর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
পক্ষান্তরে:
ক. ব্যাপক আক্রমণের কবলে পড়ে যদি কেউ ভস্ম হয়ে যায়, থেঁতলে যায় বা অঙ্গহানি বা অঙ্গবিকৃতির শিকার হয়- তাহলে নাজায়েয হবে না। এ ব্যাপারে আগে আলোচনা গেছে।
খ. এমনিভাবে কোনো কাফেরের সাথে কিতাল চলাবস্থায় যদি মুজাহিদের আঘাতে সে বিকৃত হয় তাহলেও সমস্যা নেই। যেমন মারামারির হালতে একটা কোপ দিলো, যা তার নাক উড়িয়ে দিল। আরেকটা কোপ দিলো, মুখে লেগে মুখ বিকৃত হয়ে গেল। আরেকটা কোপ দিল, একটা হাত কেটে গেল বা চোখ নষ্ট হয়ে গেল। অবশেষে যখন মুজাহিদ পূর্ণ সুযোগ পেল, গলা কেটে হত্যা করে দিল। কাফের যতক্ষণ মারামারির হালতে থাকবে, এ ধরনের বিকৃতি ঘটলে সমস্যা নেই। এখানে ইচ্ছাকৃত বিকৃতি ঘটানো হয়নি, মারামারির হালতে অনেকটা অনিচ্ছায় বিকৃতি ঘটেছে।
গ. রইলো মারামারির হালতে যদি মুজাহিদ স্বাভাবিক গলা কেটে বা মাথায় বা বুকে গুলি করে হত্যা করতে সক্ষম হন, তখন কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা জায়েয হবে কি?
‘আলইখতিয়ার’ কিতাবের ভাষ্য থেকে বুঝা যায়, কিতালের হালে স্বাভাবিক হত্যা করা সম্ভব হলেও স্বাভাবিক হত্যা না করে এভাবে হত্যা করা জায়েয, যাতে কাফেরদের মাঝে ভীতি ও ত্রাস সৃষ্টি হয়।[3] আইনি রহ. রমজুল হাকায়িকে একে সমর্থন করেছেন। শামি রহ.- এর অভিমতও এমনই; যদিও ফাতহুল কাদির থেকে এর বিপরীত বুঝা যায়।
এ তিন হালতে মুছলা তথা অঙ্গবিকৃতি শরীয়ত পরিপন্থী নয়। পক্ষান্তরে কাফেরদের বন্দী করে আনার পর যখন আমরা তাদের স্বাভাবিকভাবে হত্যা করতে পারি, তখন অঙ্গবিকৃত হয় মতো করে হত্যা করা নাজায়েয। এমনিভাবে হত্যার পর অঙ্গবিকৃত করাও নাজায়েয।
এ ধরনের বিষয়াশয় লক্ষ না করে চলার কারণে আই এস কতটুকু সমালোচনার শিকার হয়েছে এবং জিহাদের কতটুকু বদনাম হয়েছে তা সকলের জানা। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
***
[1] وَمِنْهُ الْغُلُولُ فِي الْغُنْمِ، وَهُوَ أَنْ يُخْفَى الشَّيْءُ فَلَا يُرَدُّ إِلَى الْقَسْمِ. -مقاييس اللغة (4/ 376)
[2] الاختيار لتعليل المختار (4/ 120): والغدر: نقض العهد فلا يجوز بعد الأمان، ولا بأس به قبله وهو حيلة وخدعة، قال - عليه الصلاة والسلام -: «الحرب خدعة». اهـ
[3] الاختيار لتعليل المختار (4/ 120): والمثلة المنهية بعد الظفر بهم، ولا بأس بها قبله لأنه أبلغ في كبتهم وأضر بهم. اهـ
কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০১ ভূমিকা ও জিহাদের হুকুম
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%81%E0%A6%AE
কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০২ যাদের উপর জিহাদ ফরয নয়
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%A8%E0%A7%9F
কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০৩ মুসলিম ভূমিতে আগ্রাসন হলে জিহাদ ফরযে আইন
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%87%E0%A6%A8
কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০৪ অভিযান প্রস্তুতির জন্য জনসাধারণের উপর চাঁদা ধার্য করার হুকুম
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%81%E0%A6%AE
কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০৫ কিতালপূর্ব দাওয়াত: ইসলাম ও জিযিয়া
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%9F%E0%A6%BE
কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০৬ কি ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে এবং কি কি ধ্বংস করা যাবে
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%AC%E0%A7%87
কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০৭ মানবঢাল ভেদকরণ
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%B0%E0%A6%A3
কিতাবুস সিয়ার: কানযুদ দাকায়িক: ০৮ কুরআনে কারীম সাথে নেয়া এবং মহিলাদের জিহাদে নেয়া
https://dawahilallah.com/forum/%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2-%E0%A6%AB%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE/%E0%A6%86%E0%A6%B2-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A6/183246-%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A 7%81%E0%A6%B8-%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A 6%A6-%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A 6%BF%E0%A6%95-%E0%A7%A6%E0%A7%AE-%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A 7%87-%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%AE-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A5%E0%A7%87-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%8F%E0%A6%AC%E0%A6%82-%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A 6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A 7%87-%E0%A6%A8%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A6%BE
Comment