আত–তিবইয়ান পাবলিকেসন্স পরিবেশিত
“জিহাদেঅংশগ্রহণ এবংসহায়তার৩৯টিউপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এরথেকে || ২য় পর্ব
==================================================
=====
“জিহাদেঅংশগ্রহণ এবংসহায়তার৩৯টিউপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এরথেকে || ২য় পর্ব
==================================================
=====
২. খালিছভাবে আল্লাহর নিকট শাহাদাত কামনা করাঃ
আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করতে হবে সততা, একনিষ্ঠতা এবং আন্তরিকতার সাথে। কারণ যে ইখলাছের (সততার) সাথে আল্লাহর কাছে শাহাদাত কামনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেন, এমনকি যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যু বরণ করে; যেমনটি সহীহ্ মুসলিমে বর্ণিত আছে যে, আনাস বিন মালিক রা. বলেছেন যে, রসূল ﷺ বলেছেন, “যে ইখলাছের সাথে শাহাদাহর আকাঙ্খা করে, তাকে তা দেয়া হয়, যদিও সে তা অর্জন করেনি।” অন্য একটি বর্ণনায় আছে, “…আল্লাহ্ তাকে শহীদের মর্যাদা দান করেন এমনকি যদিও সে নিজ বিছানায় মৃত্যু বরণ করে।”
শাইখ আব্দুল্লাহ্ আয্যাম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “এ হাদীস দু’টির অর্থ হলো এই, যদি কেউ আল্লাহর কাছে ইখলাছের সাথে শাহাদাত চায় তাকে শহীদের পুরষ্কার দেয়া হয় যদিও সে নিজ বিছানায় (মৃত্যু বরণ করে)…।”
শাইখ আব্দুল্লাহ্ আয্যাম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) আরও বলেছেন, “…কিন্তু সততা বা নিষ্ঠার সাথে শাহাদাতের কামনা করার অর্থ হলো যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া।
আল্লাহ্ ﷻ বলেছেনঃ
وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً
“তারা বাহির হতে চাইলে (জিহাদের জন্য) নিশ্চয়ই তারা ইহার জন্য প্রস্তুতি নিত…।”
যেহেতু আফগানিস্তানের জিহাদের ১০ বছর গত হয়েছে, এবং যখন সেখানে যাওয়ার রাস্তা নিরাপদ, নিশ্চিত এবং সীমানাসমূহ খোলা ছিল তথাপি যে পেশওয়ারের দিকে (জিহাদের জন্য) যায়নি, তার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, সে কি এটা ভেবে বসে আছে যে, সে ইখলাসের সাথে শাহাদাতের আকাঙ্খা করেছে? আপনারা কি দেখেননি সেই বেদুইনকে যে রসূল -কে বলেছিল, “আমি কি আপনাকে অনুসরণ করব এবং এখানে আঘাত প্রাপ্ত হব যাতে করে আমি জান্নাতে প্রবেশ করতে পারি, এই বলে সে নিজ গর্দানে ইশারা করে?”
বেদুইনটি পরবর্তীতে গর্দানের যে অংশে সে ইশারা করেছিল সেখানে আঘাত প্রাপ্ত হয়। রসূল ﷺ বলেছিলেন, “সে আল্লাহর প্রতি সত্যবাদী ছিল, আল্লাহও তার প্রতি সত্যবাদী ছিলেন।”
শাহাদাতের সত্যিকারের আকাঙ্খা হলো এ রকম যে, তা কোন ব্যক্তিকে বিক্ষোভ বা যুদ্ধের ঝনঝনানির কাছে নিয়ে যায়। এই শাহাদাহ হচ্ছে তাদের বিপরীত যারা দ্বীনকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে হেয়ালিপনা করে অথবা অলস অবস্থায় বসে আছে এবং জিহাদের আহবানকারির আহবানে যারা সাড়া দিচ্ছে না। বরং তাদের (যাদের শাহাদার আকাঙ্খা আছে) জিহ্বা পুনরাবৃত্তি করে বলে,
“আমার রব! তোমার সাহায্যে আত্মাসমূহ জান্নাতে যায়, সুতরাং হে আমার ইলাহ, আমার রক্ত জিহাদে বহিয়ে দিন।
যেহেতু আমার পাপসমূহ আমাকে ছেয়ে ফেলেছে এবং আর কিছুই নেই শাহাদাহ্ ছাড়া যা সেগুলোকে পারে মুছে দিতে।
আমার রব! আমার রব! আমি শাহাদাত খুঁজে বেড়াই সুতরাং আপনার গুণাবলীর গুণে আমার অনুরোধটি গ্রাহ্য করুণ হে দয়াময়।”
সুতরাং আল্লাহর সাথে সত্যবাদী হও এবং একনিষ্ঠ হয়ে যাও যেন তিনি তোমাকে তাঁর রাস্তায় শাহাদাহ্ দান করেন- শত্রুদের মুখোমুখি হয়ে এবং পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে না যেয়ে জিহাদে যাওয়ার সংকল্পকে সুদৃঢ় কর, এবং জেনে রাখ যে, একনিষ্ঠ শাহাদাহ্ প্রার্থণাকারী হল সেই ব্যক্তি যে শাহাদাহ অর্জনের জন্য সম্ভাব্য সকল স্থান খুঁজে বেড়ায় এবং অনবরত তা অন্বেষন করে। সে এমন ব্যক্তি নয় যে ঘুমিয়ে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত শাহাদাহ্ তার কাছে এসে ধরা দেয়।
“তুমি সাফল্য কামনা কর, কিন্তু সে পথে চল না!
নিশ্চয়ই, কোন শুষ্ক মাটির উপর কোন জাহাজ চলতে পারে না।”
৩. নিজে জিহাদে যাওয়াঃ
নিজে থেকেই আল্লাহর পথে জিহাদে যাওয়া এবং এক্ষেত্রে আলসেমী বা দেরী না করা, কারণ জিহাদ ছেড়ে পিছনে পড়ে থাকা হল পরকালের উপরে দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দেওয়া। আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ হল আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সর্বোৎকৃষ্ট ও সবচেয়ে প্রশংসনীয় পন্থা এবং এর শ্রেষ্ঠত্ব কারো কাছে গোপন নয়। ইহার শ্রেষ্ঠত্বের কথা কুরআন এবং সুন্নাহ এ উল্লেখ রয়েছে; স্বশরীরে জিহাদে অংশ গ্রহণ এবং শহীদের ও শাহাদাতের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে অনেক আয়াত রয়েছে যার পর্যালোচনা এই লেখনীকে আরো দীর্ঘ করে দিবে। কুরআনে সত্তরটির বেশী আয়াত রয়েছে জিহাদের উপর এবং সুন্নাহ্-এ হাদীসের আলিমগণ তাদের লেখার মধ্যে জিহাদ, এর নিয়ম এবং শ্রেষ্ঠত্বকে বিভিন্ন অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করেছেন।
যখন ‘জিহাদ’ শব্দটি উল্লেখ করা হয় তখন তা ক্বিতাল -কেও বুঝায়।
ইবন রুশদ বলেছেন, “…যখন ‘জিহাদ’ শব্দটি উল্লেখিত হয়, এর অর্থ দাড়ায় স্বশরীরে তলোয়ার দিয়ে কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা আত্মসমর্পণ করে অথবা অপমানিত অবস্থায় নিজ হাতে জিযিয়া প্রদান করে…।”
সুতরাং কেউ এই শব্দ দ্বারা সাধারণ ভাবে এটা বুঝাতে পারবে না যে, এর অর্থ হল নফস্ -এর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা (জিহাদ আন-নাফ্স) অথবা জিহ্বা দ্বারা জিহাদ করা অথবা কলম দ্বারা জিহাদ করা অথবা আল্লাহর দিকে মানুষকে ডাকা (দাওয়াহ্)। এটা সত্যি যে এই কাজগুলো হল ভাল আমল এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য কিন্তু ইসলামিক পরিভাষায় ‘জিহাদ’ দ্বারা এই অর্থগুলোকে বুঝায় না যদি না বিশেষ ভাবে সেই গুলোর উল্লেখ করা হয়।
সবচেয়ে ভাল আমলগুলোর একটি হলো ‘জিহাদ’। রসূলুল্লাহ্ ﷺ-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল “মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?” তিনি ﷺ বললেন, “একজন ঈমানদার যে নিজের সম্পদ ও জান দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে।” তারপর তারা জিজ্ঞেস করল, “এরপর কে?” তিনি ﷺ বললেন, “পাহাড়ী উপত্যকায় বসবাসকারী ঈমানদার যে আল্লাহকে ভয় করে এবং তার অনিষ্ট থেকে মানুষকে রক্ষা করে।”
তিনি ﷺ আরও বলেছেন, “নিশ্চয়ই, জান্নাতে একশত স্তর আছে যা আল্লাহ্ মুজাহিদীনদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন; প্রতিটি স্তরের মধ্যকার ব্যবধান হল আকাশ ও জমিনের ব্যবধানের ন্যায়, সুতরাং যদি তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থণা কর, তবে জান্নাতুল ফিরদাউসের জন্য প্রার্থণা কর, কারণ সেটি হল জান্নাতের সর্বোত্তম এবং সর্বোচ্চ স্তর, এবং এর উপর পরম করুণাময়ের আরশ এবং এ থেকে জান্নাতের নদীগুলো প্রবাহিত হয়।”
তিনি ﷺ বলেছেন, “যার পা সমূহ আল্লাহর পথে (জিহাদে) ধূলিপূর্ণ হয়, আল্লাহ্ তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিবেন”
তিনি ﷺ আরও বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ্র রাস্তায় উটের পিঠে যুদ্ধ করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় এবং নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়ার জন্য প্রার্থণা করে এবং অতঃপর মৃত্যু বরণ করে কিংবা নিহত হয়, তবে সে শহীদের মর্যাদা লাভ করে। যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় আহত হয় বা আঘাত প্রাপ্ত হয়, পুনরুত্থানের দিবসে সেটি (আহত স্থান) জ্বলজ্বল করবে, সেটার রং হবে জাফরানের রঙের ন্যায় এবং এর ঘ্রাণ হবে মিশকের ঘ্রাণের ন্যায় এবং যার একটি যন্ত্রণাপূর্ণ ক্ষত রয়েছে যা থেকে রক্ত ক্ষরণ হয় আল্লাহর পথে প্রাপ্ত আঘাতের কারণে, তবে সে শহীদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য সূচক প্রতীক লাভ করবে।”
“জেনে রাখ যে, শ্রেষ্ঠতম কাজ হল কাফির ও পথভ্রষ্ঠ মানুষদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা এবংএটি আমার দয়ালু রবের নিকট সবচেয়ে প্রিয় যা আল-বুখারী হতে বর্ণিতএবং নিশ্চয়ই আল্লাহ জান্নাতে প্রস্তূত করে রেখেছেন সেখানকার অধিবাসীর জন্য হাজার হাজার স্তরযেগুলোর মধ্যকার ব্যবধান হল আসমান ও জমীনের ব্যবধানের সমান।
এবং যে নিজের পা গুলো জিহাদে ধূলো-মলিন করল সে আমার রবের দ্বারা স্তব্ধ করা শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে, এবংযে উটনীর পিঠে থেকে যুদ্ধ করে যুদ্ধের ঢাল স্বরূপ বা পশ্চাদভাগেররক্ষাকারী হিসেবে সে তার জন্যে জান্নাতের প্রতিদান ও পুরষ্কার অবধারিত করেনিয়েছে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ শুধু আল্লাহর জন্য।
এবং শ্রেষ্ঠ জীবন হল নির্জন পার্বত্য উপত্ত্যকার অথবা তলোওয়ার এবং তীরের ছায়ার জীবন।
জিহাদের দ্বারা শত্রুরা ভীত হয় এবং বর্শার অগ্রভাগ দ্বারা পতাকা উত্তোলিত হয়এবং মহৎ গুনের মূল হচ্ছে জিহাদ এবং কেউই তা পরিত্যাগ করে না যার ভাল বিচার শক্তি রয়েছে।
যে ব্যক্তি কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়া পিছনে থেকে যায় সে কখনই ঐ ব্যক্তির সমান নয়, যে বিপদের ডাকে সাড়া দিয়ে সামনের দিকে ছুটে যায়, অথবাযে দিনের বেলায় সিয়াম পালন করে এবং সারা রাত সালাতে দাঁড়িয়ে কাটায়। এইমানোন্নয়ন এবং অনুরাগ সাথে থাকে স্মরণ এবং পাঠের গ্রন্থ (আল-কুরআন) এবং এরপর সেই দাসদের আর কোন পছন্দ নেই, কোন রকম হৃদয়ের প্রকম্পন অথবা সন্দেহ ব্যতিত আত্মসমর্পন করা ছাড়া এবং জিহাদের পতাকা সামনে এগিয়ে যাবে যে স্থান থেকেই তুমি দাঁড়িয়ে যাও না কেন? সুতরাং এর সাথে লেগে থাক।
যুদ্ধও লড়াইয়ের মাঝে সুখ খুঁজে নাও এবং তুমি পুরষ্কার ও সফলতা লাভ করবে। এবংনিরুৎসাহকারী অথবা ছদ্দবেশী ইবাদাতকারী অথবা আলিমগণের কথার দ্বারা নিবৃত্তহয়ে যেও না।
এবং স্মরণ কর সৌভাগ্যবান আলিমগণের সতর্কবাণীকে (আব্দুল্লাহ্ ইবন আল-মুবারাক, আল-ফুদাইল ইবন আইয়্যাদ) এবং তুমি বুঝতে পারবে যৌক্তিকতার ব্যপ্তি।”
আরও পড়ুন
Comment