আত–তিবইয়ান পাবলিকেসন্স পরিবেশিত
“জিহাদেঅংশগ্রহণ এবংসহায়তার৩৯টিউপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৬ষ্ঠ পর্ব
==================================================
=====
“জিহাদেঅংশগ্রহণ এবংসহায়তার৩৯টিউপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ৬ষ্ঠ পর্ব
==================================================
=====
১৪. মুজাহিদীনদের পক্ষে কথা বলা এবং তাদের সমর্থন দেয়াঃ
আবু আদ্-দারদা রা. থেকে আত্-তিরমিযী বর্ণনা করেছেন যে, রসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্মানকে রক্ষা করে, পুনরুত্থান দিবসে আল্লাহ্ তার সামনে থেকে আগুন সরিয়ে দিবেন।”
এবং এটি সমস্ত উম্মাহর উপর মুজাহিদীনদের একটি অধিকার। মুজাহিদীনদের সম্মানহানির ব্যাপারে আমাদের খুবই সর্তক থাকতে হবে, এমন কিছু প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে যা তাদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করে এবং তাঁদের ভুল ক্রুটি খোঁজা ও তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে। বরং বর্তমান পরিস্থিতি ও সময়ে যা আমাদের জন্য অবশ্যকরণীয় তা হল তাদের পক্ষে দাঁড়ানো, তাদের সম্মানকে রক্ষা করা, তাঁদের ভুল ক্রুটি ঢেকে রাখা এবং যারা তাঁদের ক্ষতি করতে চায় অথবা এমন কিছু প্রচার করতে চায় যা তাঁদের ক্ষতির কারণ, তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করা। এখানে আমি আমার ভাইদের ‘আস-শারক আল-আওসাত’ পত্রিকাটি এবং এই ধরনের অন্যান্য পত্রিকাগুলো বর্জন করার জন্য উৎসাহিত করছি কারণ তা উম্মাহ ও মুজাহিদীনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং তাঁদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করা এবং তাঁদের ব্যাপারে মিথ্যা কথা প্রচার করা এবং উম্মাহর নৈতিকতাকে ধ্বংস করার মাধ্যমে ইহুদী-ক্রুসেডার মিত্রদের পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করছে। সুতরাং এর উৎস ও কর্ম পদ্ধতি উভয় দিক থেকেই এটা শয়তানের পত্রিকা এবং আমরা বিশ্বাস করি যে, এটা কখনই হালাল নয় যে এই ধরনের পত্রিকার জন্য কাজ করা অথবা এমন কোন প্রচার মাধ্যমে কাজ করা যা আল্লাহ্, তাঁর রসূল এবং ঈমানদারদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করছে। এবং আমাদের জানা উচিত মুজাহিদীন ভাইদের ব্যাপারে আমাদের ভূমিকা কি হবে। আল্লাহ তা’য়ালার বাণীতে বর্ণিত হয়েছেঃ
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِن بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِّلَّذِينَ آمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ ﴿١٠﴾
“আর যারা তাদের পরে এসেছে, তারা বলেঃ “হে আমাদের রব! আমাদেরকে এবং আমাদের ভাইয়েরা যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছেন, তাদেরকেও ক্ষমা কর এবং মু’মিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে বিদ্বেষ রাখিও না। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আপনি বড় স্নেহশীল, পরম দয়ালু।”
শাইখ ইউসূফ আল-উয়াইরী (রহীমাহুল্লাহ) বলেছেন, “জিহবা দ্বারা জিহাদ করার একটি উপায় হল ইসলামের বিরুদ্ধে শুরু করা এই ক্রুসেডের বাস্তবতা প্রকাশ করে দেওয়া এবং মুজাহিদীনদের সম্মানকে রক্ষা করা এবং এটা করতে হবে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনে এবং যেখানে সাধারন মানুষ সমাগম হয় সেখানে অর্থাৎ মসজিদে, কর্মস্থলে এবং শিক্ষাঙ্গনে। সুতরাং এটা প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যই কর্তব্য তার সাধ্য অনুযায়ী জিহ্বার জিহাদ চালিয়ে যাওয়া এবং জিহ্বা দ্বারা জিহাদ করার ক্ষেত্রে কোনই শর্ত নেই। বরং এটা আমাদের দ্বায়িত্ব মানুষকে জানানো এবং স্পষ্ট ভাবে ব্যাখ্যা করা যে প্রত্যেকটি কথার মাধ্যমে ক্রুসেডারদের মুখোস খুলে দেওয়া, তাদের প্রতিহত করা এবং মুজাহিদীনদের সমর্থন করা। আল্লাহ্ই সবচেয়ে ভাল জানেন।”
তিনি (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি ক্ষমাশীল হোন) আরও বলেছেন, যারা চুপ থেকেই সন্তুষ্ট, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ও তাদের মতো লোকদেরকে বলছেনঃ
هَا أَنتُمْ هَٰؤُلَاءِ تُدْعَوْنَ لِتُنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنكُم مَّن يَبْخَلُ ۖ وَمَن يَبْخَلْ فَإِنَّمَا يَبْخَلُ عَن نَّفْسِهِ ۚ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنتُمُ الْفُقَرَاءُ ۚ وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُم ﴿٣٨﴾
“…যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তারা তোমাদের মত হবে না।”
মহা মহিমান্বিত ও প্রশংসিত আল্লাহ সেই ব্যক্তির প্রতি প্রতিজ্ঞা করেছেন যে এরকম প্রয়োজনীয় পরিস্থিতির সময় নীরব থাকে যা আবু দাউদ ও আহমাদে জাবীর বিন আব্দুল্লাহ্ ও আবু তালহাহ্ বিন সাহল আল-আনসারী (আল্লাহ্ তাঁদের দু’জনের প্রতি সন্তুষ্ট হোন) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রসূল ﷺ বলেছেন, “এমন কোন মুসলিম নেই যে অপর মুসলিমের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে এমন পরিস্থিতিতে যখন তার সম্মান হানি করা হয় বা তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয়, তাহলে তাকে প্রবল শক্তিশালী, মহিমান্বিত আল্লাহ্ ত্যাগ করবেন এমন পরিস্থিতিতে যখন সে (আল্লাহর) সাহায্য পেতে পছন্দ করবে। এবং এমন কোন মুসলিম নেই যে তার মুসলিম ভাইকে সাহায্য করে এমন পরিস্থিতিতে যখন তার মর্যাদা ক্ষুন্ন করা হয় বা তার সম্মান হানি করা হয়, তাহলে তাকে আল্লাহ্ সাহায্য করবেন এমন এক পরিস্থিতিতে যখন সে সাহায্য পেতে পছন্দ করবে।”
বর্তমানে আমরা এমন এক সময়ে আছি যখন মুনাফিক, মুরতাদ এবং এমন লোকের সংখ্যায় প্রচুর যারা নিজেদেরকে ইসলামিক চিন্তাবীদ বলে পরিচয় দেয়, যদিও তাদের ইসলামের জ্ঞান নেই, যারা মুজাহিদীনদের অপমান করে এবং তাঁদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করে এবং তাঁদেরকে নিয়ে বিদ্রুপ করে।
এখানে যে বিষয়টি অবশ্যই জানা উচিৎ তা হল বর্তমানে জিহাদ এবং মুজাহিদীনদের মর্যাদা ঐ রকম অনেক আলিমের চেয়েও বেশী পবিত্র, যারা মানুষকে জিহাদ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার সামান্য সুযোগও হাত ছাড়া করে না। এবং এখানে যে দু’টি বিষয়ের প্রতি অবশ্যই মনোযোগ দিতে হবে তা হলোঃ
- জিহাদ ও মুজাহিদীনদের সমর্থন করার মাঝে বিশাল উপকার রয়েছে যা প্রাধান্য পায় ঐ সব আলিমদের স্বার্থের উপরে যারা মুজাহিদীনদেরকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে। তারা যে কারণেই এ কাজ করার দাবী করুক না কেন তাদের প্রতিউত্তর দেয়া অত্যাবশ্যকীয় কাজ। এতে যদিও তাদের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় তবুও তা করতে হবে কারণ তারা নিজেরাই নিজেদের জিহ্বা দ্বারা এ বিপদ ডেকে এনেছে।
- এমন অনেক হাদীস রয়েছে যেখানে বর্ণিত হয়েছে যে, এমন এক সময় আসবে যখন আলিমরা এবং তিলাওয়াতকারীরা জিহাদকে নিয়ে ব্যাঙ্গ করবে যা আন-নাসাঈ তার সুনানে সালামাহ্ বিন নুফাইল রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন, “আমি আল্লাহর রসূল ﷺ-এর সাথে বসে ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! মানুষজন তাদের ঘোড়াগুলি সরিয়ে রেখেছে এবং তাদের অস্ত্রগুলি রেখে দিয়েছে এবং বলছে যে আর কোন জিহাদ নেই কারণ যুদ্ধ শেষ হয়ে গিয়েছে।’ তখন আল্লাহর রসুল ﷺ ঐ ব্যক্তির দিকে তাকালেন এবং বললেন, ‘তারা মিথ্যা বলেছে! এখন! এখন! যুদ্ধ তো কেবল শুরু হয়েছে এবং আমার উম্মাহর একটি দল থাকবে যারা কখনই সত্যের উপর যুদ্ধ করা থেকে বিরত হবে না, এবং আল্লাহ্ মানুষের অন্তরকে পরিবর্তন করে (কাফির বানিয়ে দিবেন) দিবেন, এবং তাদের জন্য রিযক সরবরাহ করবেন ঐসব মানুষের সম্পত্তি থেকে, যে পর্যন্ত না ‘কিয়ামাত’ ঘনিয়ে আসবে এবং আল্লাহর ওয়াদা সংঘটিত হবে এবং ঘোড়ার কপালে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে পুনঃরুত্থান দিবস পর্যন্ত।’”
ইবনে আসাকির যায়েদ বিন আসলাম হতে তার পিতার মাধ্যমে আরও বর্ণনা করেছেন যে রসুল ﷺ বলেছেন, “জিহাদ ততদিন পর্যন্ত সুমিষ্ট ও সতেজ থাকবে যতদিন পর্যন্ত আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং মানুষের উপর এমন একটি সময় আসবে যখন তাদের মধ্যকার তিলাওয়াতাকারীরা বলবে ‘এটা জিহাদ করার সময় না। সুতরাং যে ব্যক্তি ঐ সময় জীবিত থাকবে তখন সেটিই হবে জিহাদের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়।’ তখন তাঁকে ﷺ-কে প্রশ্ন করা হল, ‘হে আল্লাহর রসূল, সত্যিই কি এমন লোক থাকবে যারা এমন কথা বলবে?’ তিনি ﷺ বললেন, ‘হ্যাঁ, তারা ঐ সমস্ত লোক যাদের উপর আল্লাহ, ফিরিশতাগণ এবং সমস্ত মানুষের লা’নত।’”
আরও পড়ুন