আত–তিবইয়ান পাবলিকেসন্স পরিবেশিত
“জিহাদে অংশ গ্রহণ এবং সহায়তার ৩৯টি উপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ১৪তম পর্ব
==================================================
=====
“জিহাদে অংশ গ্রহণ এবং সহায়তার ৩৯টি উপায়”।।
মুহাম্মাদ বিন আহমাদ আস-সালিম (‘ইসা আল-‘আশীন) হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || ১৪তম পর্ব
==================================================
=====
উপসংহার
আমি এই লেখাটি শেষ করতে চাই জিহাদ পরিত্যাগ করার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করে যা শাইখ ‘আবদিল আজিজ আল-জালিল (আল্লাহ্ তাঁকে নিরাপদে রাখুন) তাঁর ‘আত-তারবিয়্যাহ আল-জিহাদিয়্যাহ’ নামক বইয়ে উল্লেখ করেছেনঃ
আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ পরিত্যাগ করার ভয়াবহতাঃ
যেহেতু আমরা শুরুতেই দুনিয়া ও আখেরাতে জিহাদ ও এর ফলাফলের উপকারীতার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছি, সুতরাং এখন পরিসমাপ্তিতে জিহাদ পরিত্যাগ করা ও এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ থেকে বিরত থাকার ভয়াবহতা, ক্ষতি এবং দুনিয়া ও আখিরাতের খারাপ পরিসমাপ্তির ফলাফল সম্পর্কে বলা অনেকটা সহজ হবে।
আলেম সমাজ সর্বদাই জিহাদ পরিত্যাগ করাকে সবচেয়ে বড় পাপের একটি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইবনে হাজার আল-হাইযামী (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেনঃ “৩৯১তম ও ৩৯২তম বৃহত্তম পাপগুলো হলঃ যখন তা প্রত্যেকের উপর ফরজ হয়ে যায় তখন জিহাদ পরিত্যাগ করা; যেমনঃ যখন শত্রুরা ইসলামের ভূমিতে প্রবেশ করে অথবা কোন মুসলিমকে বন্দী হিসেবে নিয়ে যায় যদিও তাকে ছাড়িয়ে আনার ক্ষমতা আছে অথবা যখন সমগ্র জাতি একত্রে জিহাদ পরিত্যাগ করা, অথবা যখন রিবাতের (সীমান্তের) পাহারাদাররা ইসলামিক দেশের সীমানা সুরক্ষিত না করে তা কাফিরদের আক্রমণের জন্য উন্মুক্ত রেখে দেয়।”
এবং এজন্য জিহাদ পরিত্যাগ করা ও এর জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ না করা মুনাফিকীর লক্ষণ কারণ রসূল ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি জিহাদ না করেই মারা যায় অথবা অন্তত জিহাদ করার নিয়্যত না করেই মৃত্যুবরণ করে, তবে সে মুনাফিকের একটি শাখার উপর মারা গেল।”এবং আল্লাহ্ এটাকে পরকালে বিশ্বাসের ঘাটতি স্বরূপ অথবা সুনিশ্চিত বিশ্বাসের অভাব হিসেবে গণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ
لَا يَسْتَـْٔذِنُكَ الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ أَن يُجٰهِدُوا بِأَمْوٰلِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌۢ بِالْمُتَّقِينَ * إِنَّمَا يَسْتَـْٔذِنُكَ الَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْءَاخِرِ وَارْتَابَتْ قُلُوبُهُمْ فَهُمْ فِى رَيْبِهِمْ يَتَرَدَّدُونَ * وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُۥ عُدَّةً وَلٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انۢبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقٰعِدِينَ
“যারা আল্লাহে ও শেষ দিবসে ঈমান আনে, তারানিজেদের মাল ও জান দিয়ে জিহাদ করার ব্যাপারে আপনার কাছে অব্যহতি লাভেরঅনুমতি প্রার্থনা করে না। আল্লাহ্ মুত্তাকীদের সম্বন্ধে ভাল জানেন। আপনারকাছে অব্যহতির অনুমতি প্রার্থনা করে কেবল তারাই যারা আল্লাহ্ ও শেষ দিবসেঈমান আনে না এবং যাদের চিত্ত সংশয়যুক্ত। ফলে তারা তো আপন সংশয়েদ্বিধাগ্রস্ত। তারা বাহির হতে চাইলে তারা নিশ্চয়ই ইহার জন্য প্রস্তুতিরব্যবস্থা করতো, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহর মনঃপুত ছিল না। সুতরাং তিনি তাদের বিরত রাখেন এবং তাদের বলা হয়, ‘যারা বসে আছে তাদের সাথে বসে থাক।”
জিহাদ পরিত্যাগের বিপদ ও কূফলের সার কথা নিম্নে দেয়া হলোঃ
১. জিহাদ ত্যাগ করা একটি কবীরা গুনাহ, যেরূপ আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি। কারণ তা একজনকে আল্লাহর ক্রোধের পাত্র এবং দুনিয়া ও আখিরাতে তাঁর শাস্তির যোগ্য করে তুলে। আল্লাহ্ বলেছেনঃ
إِلَّا تَنفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلَا تَضُرُّوهُ شَيْـًٔا ۗ وَاللَّهُ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
“যদি তোমরা অভিযানে বাহির না হও, তবেতিনি তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তিনদিবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদেরস্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁহার কোনই ক্ষতি করতে পাবরে না। আল্লাহসর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।”
তিনি আরও বলেছেনঃ
قُلْ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوٰنُكُمْ وَأَزْوٰجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوٰلٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجٰرَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسٰكِنُ تَرْضَوْنَهَآ أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٍ فِى سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُوا حَتّٰى يَأْتِىَ اللَّهُ بِأَمْرِهِۦ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِى الْقَوْمَ الْفٰسِقِينَ * لَقَدْ نَصَرَكُمُ اللَّهُ فِى مَوَاطِنَ كَثِيرَةٍ ۙ وَيَوْمَ حُنَيْنٍ ۙ إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنكُمْ شَيْـًٔا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُم مُّدْبِرِينَ * ثُمَّ أَنزَلَ اللَّهُ سَكِينَتَهُۥ عَلٰى رَسُولِهِۦ وَعَلَى الْمُؤْمِنِينَ وَأَنزَلَ جُنُودًا لَّمْ تَرَوْهَا وَعَذَّبَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْكٰفِرِينَ
“বল, ‘তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভ্রাতা, তোমাদের পত্নী, তোমাদের স্বগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বানিজ্য যাহার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যাহা তোমরা ভালোবাস, তবেঅপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত।’ আল্লাহ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কেসৎপথ প্রদর্শন করেন না। আল্লাহ তোমাদেরকে তো সাহায্য করিয়াছেন বহু ক্ষেত্রেএবং হুনায়নের যুদ্ধের দিনে যখন তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল তোমাদেরসংখ্যাধিক্য; কিন্তু তা তোমাদের কোনকাজে আসে নাই এবং বিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিতহইয়াছিল ও পরে তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করিয়া পলায়ন করিয়াছিলে। অতঃপর আল্লাহতাঁহার নিকট হতে তাঁহার রসূল ও মু’মিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমনএক সৈন্যবাহিনী অবর্তীণ করেন যাহা তোমরা দেখিতে পাও নাই এবং তিনি কাফিরদেরশাস্তি প্রদান করেন; ইহাই কাফিরদের কর্মফল।”
ইবনুল কাইয়ুম (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) তাদেরকে দ্বীনের ব্যাপারে সবচেয়ে কম অঙ্গীকারপূর্ণ ও নিকৃষ্টতম পাপী বলেছেন যারা ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাকে অবহেলা করে। কারণ তিনি বলেছেন, “জিহাদ হচ্ছে ভালো কাজের আদেশ দেয়া ও মন্দ কাজের নিষেধ করা; আল্লাহ, তাঁর রসূল, ও তাঁর বান্দাদের প্রতি সত্যনিষ্ঠ হওয়া, বিজয় এনে দেয়া এবং আল্লাহ্,তাঁর রসূলকে, তাঁর দ্বীন ও তাঁর কিতাবকে সাহায্য করা। যাদের ক্ষেত্রে এইসব দায়িত্ব ঘটেনি, তাদের উচিত তা বাস্তবায়ন করা অথবা এর জন্য নিয়্যত করা। দ্বীনের ব্যাপারে সবচেয়ে কম অঙ্গীকারপূর্ণ ও নিকৃষ্টতম পাপী হচ্ছে তারা যারা এই দায়িত্ব ছেড়ে দেয় যদিও তারা দুনিয়ার সমস্ত ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে। তুমি দেখবে তাদের খুব কম সংখ্যক লোকেরই (ইসলামের গাইরতের জন্য) মুখ লাল হয় যখন তারা দেখে আল্লাহর সীমানা লংঘিত হচ্ছে বা কম লোকই দ্বীনের ব্যাপারে সাহায্য করছে। আল্লাহর কাছে বড় বড় পাপীদের অবস্থাও এদের থেকে অনেক ভালো।”
এই কারণেই জিহাদ ছেড়ে দেয়া দুনিয়া ও আখিরাতে দুর্দশার কারণ। নিম্নের আল্লাহর কথার প্রকৃত অর্থ এটাইঃ
وَأَنفِقُوا فِى سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ
…
…
“তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদের হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করিও না…।”
ইবনে কাছির (আল্লাহ্ তাঁর প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “মুহাজিরীনদের এক জন কন্সট্যানটিনোপলে যুদ্ধ করার সময় সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন যতক্ষণ না তিনি নিহত হন। তখন লোকেরা বলল, ‘সে নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করল।’ সুতরাং আবু আইযুব আল-আনসারী রা. বললেন, ‘এই ব্যাপারে আমাদের বেশী জ্ঞান আছে। এটা নাযিল হয় আমাদের ব্যাপারে যখন আমরা রসূল ﷺ -এর সাথে ছিলাম। আমরা অনেক যুদ্ধের স্বাক্ষী ছিলাম এবং তাঁকে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সাহায্য করেছি। যখন ইসলাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল এবং প্রতিষ্ঠিত হল, আমরা আনসাররা একত্রিত হলাম এবং বললাম, ‘আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন তাঁর রাসূলের সঙ্গি করে, তাঁর বিজয়ের মাধ্যমে এবং ইসলাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটার লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং যুদ্ধ শেষ হয়েছে। সুতরাং চলো আমরা স্ত্রী, সন্তান-সন্ততিদের কাছে ফিরে যাই এবং তাদের সাথে বসবাস করি। তখন এই আয়াত নাযিল হয়।’ সুতরাং ধ্বংস নিহিত আছে স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও সম্পদের মাঝে বসবাসের মধ্যে এবং জিহাদ ত্যাগের মধ্যে। ”
জিহাদ ত্যাগ আল ওয়ালা ওয়াল বারা’র (আল্লাহর জন্যই ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা) বিশ্বাসকে দূর্বল করে দেয়। এটার কারণ, যা আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি, আল ওয়ালা ওয়াল বারা’র বিশ্বাস ভালো কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ (আমর বিল-মারুফ ওয়া নাহি আন-মুনকার) এবং জিহাদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। সুতরাং যে ব্যক্তি জিহাদ থেকে দূরে থাকে, তার আল ওয়ালা ওয়াল বারা’র বিশ্বাস দূর্বল হয়ে যায় এবং সে গভীর বিপদে নিমজ্জিত।
আরও পড়ুন
Comment