Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফিকহুল জিহাদ; পঞ্চম পর্ব ➤ ইসলাম প্রচার হয়েছে তরবারির জোরে নাকি আখলাকের বলে?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফিকহুল জিহাদ; পঞ্চম পর্ব ➤ ইসলাম প্রচার হয়েছে তরবারির জোরে নাকি আখলাকের বলে?

    ইসলাম প্রচার হয়েছে তরবারির জোরে নাকি আখলাকের বলে?

    গত শতাব্দি থেকে একটি বিষয় খুব জোরেশোরে আলোচনায় এসেছে—“ইসলাম প্রচার হয়েছে তরবারির মাধ্যমে নাকি আখলাকের মাধ্যমে?”
    মূলত তরবারি ও আখলাককে এভাবে বিপরীতমুখী দাঁড় করানোই আপত্তিকর। একটির সাথে অপরটির বৈপরিত্ব নেই।
    ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে তরবারি ও আখলাক—উভয়টির অবধান অনস্বীকার্য; কোনোটির অস্বীকার করার সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা একই সাথে কুরআন, মীযান ও হাদীদ (লোহা)-এর কথা উল্লেখ করে জানতে চেয়েছেন, কে তা ব্যবহার করে আল্লাহর দীনের সাহায্য করে
    এরশাদ হয়েছে,
    لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنْزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ -سورة الحديد: 25

    “আমি আমার রসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে। আর আমি অবতীর্ণ করেছি লোহা, যাতে আছে প্রচণ্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। (এটা এজন্যে যে) যাতে আল্লাহ জানতে পারেন, কে না দেখে তাঁকে ও তাঁর রসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।” –সূরা হাদীদ: ২৫
    আল্লাহ তাআলা একমাত্র তাঁরই দীন পৃথিবীতে বিজয় করার যে লক্ষ্যে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, তা বলপ্রয়োগ ও তরবারি ব্যবহার দ্বারা(ছাড়া) সম্ভব নয়। কোনো কাফের জাতি নিজেদের এলাকায় অন্যদের আইন-কানুন চলবে, তা সহজে মেনে নিবে না তাই এর জন্য বল প্রয়োগ করতে হয়
    এজন্য আল্লাহ তাআলা তরবারি ব্যবহারের মাধ্যমে দীন বিজয়ী করার আদেশ দিয়ে এরশাদ করেন,
    وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ –سورة البقرة: 193

    “আর তোমরা তাদের (কাফেরদের) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকো, যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয় এবং দীন একমাত্র আল্লাহর হয়ে যায় এতে যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তাহলে জালিম ছাড়া অন্য কারো প্রতি কোনো কঠোরতা নেই–সূরা বাকারা: ১৯৩
    একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
    عن عمرو بن دينار قال رأيت جابر بن عبد الله وبيده السيف والمصحف وهو يقول أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نضرب بهذا من خالف ما في هذا. –رواه ابن عساكر في تاريخ دمشق ط. دار الفكر (52/ 279)

    “আমর বিন দীনার রহ. থেকে বলেন, আমি জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদি.কে এক হাতে তরবারি এবং অপর হাতে মুসহাফ (কুরআনে কারীম) নিয়ে বলতে দেখেছি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তা (তরবারি) দ্বারা যে তা (মুসহাফ)-র ভিতরে যা আছে এর বিরোধিতা করবে, তাকে প্রহার করতে আদেশ করেছেন–তারীখে দিমাশক লিবনি আসাকির: ৫২/২৭৯ (দারুল ফিকর)
    শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
    فالدين الحق لا بد فيه من الكتاب الهادي والسيف الناصر. ... فالكتاب يبين ما أمر الله به وما نهى عنه، والسيف ينصر ذلك ويؤيده.اهــــ -منهاج السنة النبوية ط. مؤسسة قرطبة (1/ 276)

    “সত্য দীনের জন্য পথপ্রদর্শক কিতাব এবং সাহায্যকারী তরবারি আবশ্যক কিতাব আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ স্পষ্ট করবে এবং তরবারি তার সাহায্য ও শক্তিশালী করবে–মিনহাজুস সুন্নাহ: ১/২৬৭ (মুআসসাসাতুর রিসালাহ)
    ইবনে তাইমিয়া রহ. অন্যত্র বলেন,
    فمن عدل عن الكتاب قوم بالحديد؛ ولهذا كان قوام الدين بالمصحف والسيف.اهــــ -مجموع الفتاوى (28/ 264) ط. مجمع الملك فهد

    “সুতরাং যে কিতাব থেকে বিমুখ হবে, তাকে লোহা দ্বারা ঠিক করা হবে এজন্য দীনের মূল ভিত্তি হচ্ছে মুসহাফ ও তরবারি–মাজমূউল ফাতাওয়া: ২৮/২৬৪ (মাজমাউল মালিক ফাহাদ)
    ইসলামের ইতিহাসে অল্পসংখ্যক কিছু এলাকা ছাড়া বাকি সকল এলাকাই তরবারির বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বিজয় হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কাফেররা আগ বেড়ে মুসলিমদের বশ্যতা স্বীকার করেছে, তা তরবারির ভয়েই করেছে
    আখলাক ও ইসলামের সু্ন্দর্য তখনই প্রভাবশীল হবে, যখন এর পিছনে তরবারির জোর থাকবে অন্যথায় তরবারিমুক্ত আখলাক বিজাতির উপর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়াশীল হতে পারে না কেননা, যতক্ষণ পর্যন্ত কুফুরের প্রভাব ও ভীতি মানুষের অন্তরে বদ্ধমূল থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মানুষ সত্যের দাওয়াত গ্রহণ করতে দ্বিধা করে; যদিও তা সূর্যের মত উজ্জ্বল ও মৃত্যুর মত চিরসত্য হয় না কেন। আর যখন কুফুরের প্রভাব ও ভীতি অন্তর থেকে দূর হয়ে যাবে, তখনই মানুষ দলে দলে সত্য গ্রহণ করতে থাকবেউক্ত প্রভাব ও ভীতি দূর করতে তরবারির ব্যবহার অপরিহার্য।
    বর্তমান সময়ের মানুষের প্রতি লক্ষ করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়, আমেরিকা ও ইউরোপের প্রভাব মানুষের অন্তরে এতটা বদ্ধমূল যে, এর বাইরে গিয়ে কোনো কিছু চিন্তা করার কল্পনাই করতে পারে না। তাদের যেকোনো কথা মানুষ অকপটে গ্রহণ করে নেয়; এজন্য কোনো দায়বদ্ধতা নেই এর বিপরীতে দিবালোকের ন্যায় সত্য কথাও মানুষ গ্রহণ করতে পারে না
    -এনআমুল বারী: ৭/৪৭৭
    রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় তের বছর ইসলামের দাওয়াত দেন; কিন্তু অধিকাংশ আরব তা গ্রহণ করতে পারেনিবিপরীতে মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে যখন ‘রা’সুল কুফুর’ তথা কুফুরের মাথা আরবের মুশরিকরা পরাজিত হলো এবং কুফুরের প্রভাব ভূলুণ্ঠিত হলো, তখনই মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করতে লাগল। মাত্র কয়েকদিনে দুই হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করে নিলএতো বিরাট পার্থক্যের মূল কারণ হচ্ছে, মক্কার তের বছরে কুফুরের প্রভাব সবার অন্তরে বদ্ধমূল ছিল; বিপরীতে মক্কা বিজয়ের পরে কুফুরের দাপট আর থাকেনি।

    উক্ত প্রোপাগাণ্ডার পিছনের বাস্তবতা হচ্ছে, মুসলিমদেরকে জিহাদ বিমুখ করার লক্ষ্যে ইউরিপীয় কাফেররা তাদের দূসরদের মাধ্যমে উক্ত প্রোপাগণ্ডা ছড়াতে থাকে।
    এজন্য তারা অনেক ধূর্ততার সাথে উক্ত প্রোপাগাণ্ডা ছড়ায়। প্রথমে প্রশিদ্ধ প্রাচ্যবিদ রবার্ট বেইন ইসলামের ইতিহাস নিয়ে লিখিত গ্রন্থ ‘পবিত্র তরবারী’ (The Sacred Sword) নামক বইয়ে বারবার এ কথা বলতে থাকে, “ইসলাম তরবারীর মাধ্যমে প্রচার হয়েছে”এর মাধ্যমে সে মূলত এ কথা বুঝাতে চেয়েছে, ইসলাম অন্যকে মুসলিম হতে বাধ্য করে এবং ইসলামে কথিত ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা’ নেই।
    পরবর্তীতে আরেক প্রচ্যবিদ থমাস ওয়াকার আর্নল্ড তার ‘ইসলামের দাওয়াত’ (The Preaching of Islam) নামক বইয়ে উক্ত কথার ‘দলীল ভিত্তিক’ খণ্ডন করে এবং উভয়েরই যৌথ উদ্ধেশ্য সে নিকৃষ্টতম বাণী প্রমাণ(প্রচার) করে, “ইসলাম তরবারীর মাধ্যমে নয়; আখলাকের মাধ্যমে প্রচার হয়েছে”‘মুসলিম প্রাচ্যবিদরা’ এতে ঘি ঢেলে এটিকে একটি ‘ইলমী তাহকীক’ ও ‘তাত্বিক গবেষণা’ হিসেবে খুব জোরেশোরে প্রচার করতে থাকে।
    -আল-মুস্তাশরিকূন ওয়াল ইসলাম: ৭৫, ৭৬
    এর মূল লক্ষ্য ছিল, ইকদামী জিহাদ অস্বীকার করা এবং মুসলিম উম্মাহকে জিহাদ বিমুখী করে তোলা পরবর্তীতে অনেক সরলমনা মুসলিমরা এর মূল চক্রান্ত বিষয়ে না জেনে তা গ্রহণ করে নেন এবং তারাও খুব জোরেশোরে এর প্র্রচারণা চালান।
    Last edited by Rakibul Hassan; 20 hours ago.

  • #2
    ফিকহুল জিহাদ; প্রথম পর্ব ➤ জিহাদের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ
    ​- https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফ...
    বছর ফুরিয়ে যাবে এতো রিসোর্স আছে https://gazwah.net সাইটে

    Comment


    • #3
      “এর মূল লক্ষ্য ছিল, ইকদামী জিহাদ অস্বীকার করা এবং মুসলিম উম্মাহকে জিহাদ বিমুখী করে তোলা”
      কেননা, যখন ‘দলীল ভিত্তিক’ এ কথা প্রমাণ হয়ে গেল যে, “ইসলাম আখলাকের মাধ্যমে প্রচার হয়েছে; তরবারির মাধ্যমে নয়”, তখন আবশ্যকীয় ফলাফল দাঁড়াবে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য তরবারি ব্যবহার করা যাবে না। অর্থাৎ আল্লাহর যমীনে তাঁর মনোনিত দীন ইসলামকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জিহাদ করা যাবে না। অন্যথায় ইসলামের উপর সেই ‘অপবাদ’ পুনরায় আরোপ হয়ে যায়; যা থেকে ইসলাম ‘সদাপবিত্র’!

      Comment

      Working...
      X