Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফিকহুল জিহাদ; দশম পর্ব ➤ফরযে কেফায়ার অর্থ এবং জিহাদ অস্বীকারকারীর বিধান:

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফিকহুল জিহাদ; দশম পর্ব ➤ফরযে কেফায়ার অর্থ এবং জিহাদ অস্বীকারকারীর বিধান:

    ফরযে কেফায়ার অর্থ:

    ফরযে কেফায়া মূলত ফরযে আইনের মতই সবার উপর ফরয হয়। তবে ফরযে আইনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তি কর্তৃক তা আদায় করতে হয়। আর ফরযে কেফায়ার ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে উক্ত কাজ আদায় করতে হয়। সুতরাং ফরযে আইন-এর অর্থ দাঁড়াবে, প্রত্যেক ব্যক্তিকে উক্ত কাজ করতে হবে। আর ফরযে কেফায়া-এর অর্থ দাঁড়াবে, যথেষ্ট সংখ্যক লোক যথাযথভাবে কাজটি আদায় করতে হবে।

    সারকথা হচ্ছে, ফরযে আইনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তি কর্তৃক কাজ পাওয়া মুখ্য থাকে। পক্ষান্তরে ফরযে কেফায়ার ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে কাজটি সম্পাদিত হওয়া মুখ্য থাকে; প্রত্যেক ব্যক্তি কর্তৃক আদায় করা মুখ্য নয়।
    -হেদায়া: ২/৩৩৫ (দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরাবী); আল-হাওয়াশিস সা’দিয়্যাহ (ফাতহুল কাদীরের সাথে): ৫/৪২০ (ইলমিয়্যাহ); রদ্দুল মুহতার: 4/123 (দারুল ফিকর)

    তাই যদি কিছু সংখ্যক লোক আদায় করে, তবে তা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় না হয়, তাহলে বাকিদের পক্ষ থেকে ফরযে কেফায়ার ফরযিয়াত আদায় হবে না তখন আদায়কারীরা রেহাই পেলেও বাকি যারা আদায় করেনি, তারা ফরয তরকের গুণাহগার হবে।

    সুতরাং, ফরযে কেফায়ার যে অর্থ করা হয়, “কিছু সংখ্যক লোক আদায় করলে বাকিদের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে”—তা ব্যাপক অর্থে সঠিক নয়। বরং কিছু সংখ্যক লোক যদি পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করে, তাহলে বাকিদের পক্ষ থেকে আদায় হবে। অন্যথায় বাকিদের পক্ষ থেকে আদায় হবে না। তাই ফরযে কেফায়ার অর্থ “কিছু সংখ্যক” দিয়ে না করে “পর্যাপ্ত সংখ্যক” দিয়ে করলে অধিক উপযোগী ও মর্মার্থ হবে।

    ফরযে কেফায়ার উক্ত ব্যাখ্যা কেফায়ার শাব্দিক অর্থ থেকেই স্পষ্ট হয়ে আসে। তদ্রূপ ফিকহ ও উসূলে ফিকহের অনেক কিতাবে তা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে আমরা এখানে ফুকাহায়ে কেরামের দু’একটি বক্তব্য উল্লেখ করছি

    ইমাম কুদুরী রহ. (৪২৮ হি.) বলেন,
    وكذلك لو احتيج إلى من يقرب من الثغور ومن ينأى عنها في سد الثغور والقيام في مجاهدة العدو لم يسع أحدا ممن فيه غناء ودفاع أن يتأخروا؛ وذلك لأن الفرض إنما يسقط بحصول الكفاية، فإذا لم تحصل تعين الفرض على كل الناس، فلزمهم القيام به.اهــــ -شرح مختصر الكرخي للقدوري (9/ 9) ط. أسفار

    “তেমনিভাবে, যারা সীমান্তের নিকটে বা দূরে অবস্থান করছেন, যদি সীমানা রক্ষা এবং শত্রুদেরকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে তাদের সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে, তাহলে সামর্থবান ও প্রতিরোধ করতে সক্ষম—এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। কেননা, ফরয দায়িত্ব থেকে কেবল তখনই অন্যরা অব্যাহতি পাবে, যখন তা যথাযথভাবে আদায় হবে। কিন্তু যখন তা যথাযথভাবে আদায় হবে না, তখন সকল মানুষের উপর জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায়। এমতাবস্থায় সকল মানুষের জন্য জিহাদ করা আবশ্যক।” -শরহে মুখতাসারিল কারখী: ৯/৯ (আসফার)

    ইমাম আবু বাকার কাসানী রহ. (৫৮৭ হি.) বলেন,
    وإذا كان فرضا على الكفاية فلا ينبغي للإمام أن يخلي ثغرا من الثغور من جماعة من الغزاة فيهم غنى وكفاية لقتال العدو، فإذا قاموا به يسقط عن الباقين، وإن ضعف أهل ثغر عن مقاومة الكفرة، وخيف عليهم من العدو فعلى من وراءهم من المسلمين الأقرب فالأقرب أن ينفروا إليهم، وأن يمدوهم بالسلاح والكراع والمال؛ لما ذكرنا أنه فرض على الناس كلهم ممن هو من أهل الجهاد، لكن الفرض يسقط عنهم بحصول الكفاية بالبعض، فما لم يحصل لا يسقط.اهــــ -بدائع الصنائع (9/ 340) ط. دار الحديث

    “আর জিহাদ যখন ফরযে কেফায়া হবে, তখন ইমামের জন্য প্রত্যেক সীমান্তবর্তী এলাকায় এমন মুজাহিদ দল রাখা আবশ্যক; যারা শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম এবং যথেষ্ট। যখন তারা উক্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে আদায় করবে, বাকিরা তা থেকে অব্যাহতি পাবে। কিন্তু যদি কোনো সীমান্তবর্তী বাহিনী শত্রুদের প্রতিরোধ করতে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের ওপর শত্রু কর্তৃক আক্রমণের আশঙ্কা হয়, তখন তাদের পেছনের মুসলিমদের উপর পর্যায়ক্রমে তাদের সাহায্যে ছুটে যাওয়া এবং তাদেরকে অস্ত্র, অশ্ব ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করা আবশ্যক হয়ে যায়। কেননা, আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি যে, জিহাদ করার সামর্থ রাখে এমন প্রত্যেক ব্যক্তির উপর জিহাদ ফরয। তবে কিছু সংখ্যক লোক দ্বারা আদায় হয়ে গেলে, বাকিরা অব্যাহতি পাবে। সুতরাং যখন কিছু সংখ্যক লোক দ্বারা তা যথাযথভাবে আদায় হবে না, তখন বাকিরা তা থেকে অব্যাহতি পাবে না।” –বাদায়েউস সানায়ে: ৯/৩৪০ (দারুল হাদীস)

    বরং ফকীহগণ এ পর্যন্ত বলেছেন, যদি মুসলিম উম্মাহ সংখ্যায় এত কম হয় যে, সকল মুসলিম জিহাদে বের না হলে ইকদামী জিহাদ করা সম্ভব নয়, তাহলে ইকদামী জিহাদ আদায়ের লক্ষ্যে সকল মুসলিমের উপর জিহাদ ফরযে আইন হয়ে যায় -বাদায়েউস সানায়ে: ৯/৩৪০ (দারুল হাদিস); রদ্দুল মুহতার: ৪/১২২ (দারুল ফিকর)

    ফরযে কেফায়ার উপরিউক্ত ব্যাখ্যা জানতে আরো দেখুন, তুহফাতুল ফুকাহা: ৩/২৯৪ (ইলমিয়্যাহ); হেদায়া: ২/৩৭৮ (দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরাবী); আল-জাওহারাতুন নায়্যিরাহ: ২/২৫৭ (আল-মাতবাআতুল খাইরিয়্যাহ); মাজমাউ’ল আনহুর: ১/৬৩২ (দারু ইহয়াইত তুরাসিল আরাবী); আল-ওয়াজীয ফী উসূলিল ফিকহ: পৃ: ৩১ (মুআসসাসাতুর রিসালাহ)

    জিহাদ অস্বীকারকারীর বিধান:

    যে ব্যক্তি ব্যাপকভাবে সকল প্রকারের জিহাদ অস্বীকার করবে এবং জিহাদকে বর্বরতা, নৃশংসতা, সহিংসতা ইত্যাদি অপবাদ দিবে, তার কুফুরের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

    মুখতার বিন মাহমুদ মাওসীলী রহ. (৬৮১ হি.) বলেন,
    والجهاد فريضة محكمة يكفر جاحدها، ثبتت فرضيته بالكتاب والسنة وإجماع الأمة.اهــــ -الاختيار في تعليل المختار (4/ 117) ط. مطبعة الحلبي

    “জিহাদ একটি অকাট্য ফরয বিধান। যে তা অস্বীকার করবে, সে কাফের হয়ে যাবে। জিহাদের ফরযিয়াত কুরআন, সুন্নাহ ও উম্মতের ইজমা দ্বারা প্রমাণীত।” -আল-ইখতিয়ার: ৪/১১৭ (মাতবাআতুল হালাবী)
    আরো দেখুন, আল-হাওয়াশিস সা’দিয়্যাহ (ফাতহুল কাদীরের সাথে): ৫/৪২০ (ইলমিয়্যাহ); ইসলাম আওর হামারী যিন্দেগী: ২/৩২৭-৩২৮ (এদারায়ে ইসলামিয়াত)

    কাদিয়ানিরা কাফের হওয়ার একাধিক কারণসমূহের মাঝে স্বতন্ত্র একটি কারণ হচ্ছে জিহাদ অস্বীকার করা। -জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ আওর এ’তেরাজাত কা ইলমী জায়েযাহ (শাইখ আব্দুল হাফিজ মাক্কী এর ভূমিকা): পৃ: ৭

    বরং জিহাদ ‘জরুরিয়াতে দীন’ তথা দীনের আবশ্যকীয় বিধানসমূহের অন্তর্ভুক্ত; যার ব্যাপারে মৌলিকভাবে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা, অজ্ঞতা বা ওযর গ্রহণযোগ্য নয়।

    তদোপরি কেউ অজ্ঞতা বা ভুল ব্যাখ্যার ভিত্তিতে জিহাদের বিধান অস্বীকার করলে, তাকে বুঝানোর মাধ্যমে তার অজ্ঞতা ও ভুল ব্যাখ্যা দূর করা হবে। যদি এতে সে ভুল পরিহার করে সঠিক মত গ্রহণ করে নেয়, তাহলে তাকে তাকফীর করা হবে না। কিন্তু বুঝানোর পরও যদি তার অবস্থানে অটল থাকে, তাহলে তাকে তাকফীর করা হবে।

    সাহাবায়ে কেরামের মাঝে ‘মুত্তাফাকা ফতোয়া’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত একটি হাদীসে এসেছে,
    عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: شَرِبَ قَوْمٌ مِنْ أَهْلِ الشَّامِ الْخَمْرَ، وَعَلَيْهِمْ يَزِيدُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ، وَقَالُوا: هِيَ لَنَا حَلاَلٌ، وَتَأَوَّلُوا هَذِهِ الآيَةَ: "لَيْسَ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ جُنَاحٌ فِيمَا طَعِمُوا" الآيَةَ، قَالَ: فَكَتَبَ فِيهِمْ إِلَى عُمَرَ، فَكَتَبَ: أَنِ ابْعَثْ بِهِمْ إِلَيَّ قَبْلَ أَنْ يُفْسِدُوا مَنْ قِبَلِكَ، فَلَمَّا قَدِمُوا عَلَى عُمَرَ اسْتَشَارَ فِيهِمُ النَّاسَ، فَقَالُوا: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، نَرَى أَنَّهُمْ قَدْ كَذَبُوا عَلَى اللهِ وَشَرَعُوا فِي دِينِهِمْ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ، فَاضْرِبْ رِقَابَهُمْ، وَعَلِيٌّ سَاكِتٌ، فَقَالَ: مَا تَقُولُ يَا أَبَا الْحَسَنِ فِيهِمْ؟ قَالَ: أَرَى أَنْ تَسْتَتِيبَهُمْ، فَإِنْ تَابُوا جَلَدْتَهُمْ ثَمَانِينَ لِشُرْبِهم الْخَمْرِ، وَإِنْ لَمْ يَتُوبُوا ضَرَبْتَ أَعْنَاقَهِمْ، فَإِنَّهُمْ قَدْ كَذَبُوا عَلَى اللهِ وَشَرَعُوا فِي دِينِهِمْ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ، فَاسْتَتَابَهُمْ فَتَابُوا، فَضَرَبَهُمْ ثَمَانِينَ ثَمَانِينَ. –رواه ابن أبي شيبة (29000) والطحاوي في شرح معاني الآثار (4899). وقال العيني رحمه الله في نخب الأفكار ط. وزارة الأوقاف (15/ 531): إسناده صحيح.اهــــ

    “আলী রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শামের কতক লোক মদ পান করেছিল, তখন তাদের আমীর ইয়াযীদ ইবন আবু সুফিয়ান ছিলেন। তারা বলল, ‘এটি আমাদের জন্য হালাল’। এবং (এর পক্ষে) তারা এ আয়াত দিয়ে দলীল দিতে লাগল, ‘যারা ঈমান এনেছে এবং সৎ কাজ করেছে, তারা যা ভক্ষণ করেছে তাতে কোনো গুণাহ নেই’।
    আলী রাদি. বলেন, তখন ইয়াযীদ বিন আবু সুফিয়ান উক্ত বিষয়টি উমর রাদি.-কে চিঠি মারফত অবহিত করলেন। তিনি উত্তরে লিখলেন, তারা তোমার এলাকায় ফাসাদ সৃষ্টি করার আগে আমার কাছে পাঠিয়ে দাও।
    যখন তারা উমর রাদি.-এর কাছে (মদীনায়) এসে পৌঁছল, তিনি তাদের ব্যাপারে সাহাবীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। তারা বললেন, ‘হে আমীরুল মুমিনীন! আমাদের মতামত হচ্ছে, তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে এবং দীনে ইসলামে এমন কিছু প্রণয়ন করেছে যার ব্যাপারে আল্লাহ তাদেরকে অনুমতি দেননি। সুতরাং, তাদেরকে হত্যা করা উচিৎ।’
    তখনো আলী রাদি. চুপ ছিলেন। তাই উমর রাদি. তাঁকে বললেন, ‘আবুল হাসান! এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?’ আলী রাদি. বললেন, ‘আমার মত হচ্ছে, আপনি তাদেরকে তওবা করতে বলুন। যদি তারা তওবা করে, তবে তাদেরকে মদপানের শাস্তি-স্বরূপ আশিটি ব্যত্রাঘাত করবেন। আর যদি তারা তওবা না করে, তবে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া উচিত। কেননা, তারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করেছে এবং দীনে ইসলামে এমন কিছু প্রণয়ন করেছে যার ব্যাপারে আল্লাহ তাদেরকে অনুমতি দেননি।’
    সুতরাং উমর রাদি. তাদের থেকে তওবা তলব করালে তারা তওবা করল। তাই তাদের প্রত্যেককে আশিটি করে ব্যত্রাঘাত দেওয়া হলো।”
    –মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ: ২৯০০০; শরহে মাআনিল আসার: ৪৮৯৯। আইনী রহ. হাদীসটি সহীহ বলেছেন।

    উক্ত হাদীসে সাহাবায়ে কেরামের সর্বসম্মত ফতোয়া অনুসারে মদপান হারাম হওয়ার মতো ‘জরুরিয়াতে দীন’-এর ক্ষেত্রে কতক সাহাবীর ভুল ব্যাখ্যা তাকফীরের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়নি। বরং অজ্ঞতা দূর করার লক্ষ্যে একবার ভুল সংশোধনের প্রতি আহ্বান করার পরে, ফিরে না আসলে তাকফীর করা হবে। -আস-সারিমুল মাসলূল: পৃ: ৫৩০ (আল-হিরসুল ওয়াতানী); ইকফারুল মুলহিদীন: পৃ: ১৪৭, ১৪৮ (দারুল বাশায়িরিল ইসলামিয়া)

    কিন্তু মৌলিকভাবে জিহাদের বিধান স্বীকার করে জিহাদকে শুধু দিফায়ী জিহাদের মাঝে সীমাবদ্ধ করা এবং ইকদামী জিহাদ অস্বীকার করার দ্বারা ব্যক্তি কাফের হবে না। মৌলিকভাবে যদিও ইকদামী জিহাদ অস্বীকার করাও কুফুর; তবে ‘তাবিল’ ও ব্যাখ্যার কারণে তাদেরকে তাকফীর করা হবে না। তবে তা স্পষ্ট গোমরাহী ও ভ্রষ্টতা—এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এটা ফিকহী মতভেদপূর্ণ মাসআলার মত নয়; বরং এতে হক ও বাতিলের সম্পর্ক। -আল-হাওয়াশিস সা’দিয়্যাহ (ফাতহুল কাদীরের সাথে): ৫/৪২০ (ইলমিয়্যাহ); ইসলাম আওর হামারী যিন্দেগী: ২/৩২৭-৩২৮ (এদারায়ে ইসলামিয়াত)

    সুতরাং এ ধরনের মতকে ‘শুযূয’ বা ‘তাফাররুদাত’ বলার সুযোগ নেই। কেননা, শুযূয বা তাফাররুদ হচ্ছে এমন মত, যা মূলত শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়েছে। তবে জমহুর ইমামদের মতে উক্ত মত সঠিক নয়। এবং উক্ত দলীল বাস্তবে দলীলযোগ্য নয়। পক্ষান্তরে, ইকদামী জিহাদ, রজম, মুরতাদের শাস্তি, জিযয়ার বিধান ইত্যাদি অস্বীকার করা মূলত শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয়নি। বরং পশ্চিমা ও প্রাচ্যবিদ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে উক্ত মত গ্রহণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে এর পক্ষে কুরআন, হাদীস ও ইমামদের বক্তব্য জোড়াতালি দিয়ে জোরপূর্বকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। অন্যথায় উক্ত মতসমূহের প্রবক্তারা পশ্চিমা ও প্রাচ্যবিদদের প্রভাব থেকে মুক্ত হয়ে ইজতেহাদ ও গবেষণা করলে, নিজেদের কাছেও তা দলীলের আলোকে ভুল মনে হবে এবং এমন মত গ্রহণ করতেন না। এখানে সালাফদের শুযুয ও তাফাররুদাত এবং সমকালীনদের গোমরাহী ও ভ্রষ্টতার মাঝে মৌলিক পার্থক্য।

    উল্লেখ্য, ইকদামী জিহাদ ফরয কি না—তা সালাফদের মাঝে মতভেদপূর্ণ মাসআলা। তাই মৌলিকভাবে ইকদামী জিহাদ মেনে, ইকদামী জিহাদের ফরযিয়াত না মানলে তা কুফুর বা গোমরাহী হবে না। তবে পরবর্তীতে যেহেতু ইকদামী জিহাদ ফরয হওয়ার ব্যাপারে ইমামদের ইজমা হয়ে গেছে, তাই বর্তমানে এমন মত ‘শায’ হিসেবে গণ্য হবে।

    ​আগের পর্ব:

    ফিকহুল জিহাদ; নবম পর্ব ➤ ইকদামী জিহাদ কখন ফরযে আইন; ইকদামী জিহাদ আদায়ের পদ্ধতি এবং মৌলিক জিহাদ সবার উপর ফরয:


  • #2
    এ পর্যন্ত লিখিত সকল পর্ব:

    ফিকহুল জিহাদ; প্রথম পর্ব ➤ জিহাদের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ
    ​- https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/আল-জিহাদ/210356

    ফিকহুল জিহাদ; দ্বিতীয় পর্ব ➤ ‘ফী সাবীলিল্লাহ’-এর অর্থ
    ​- https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/আল-জিহাদ/210611

    ফিকহুল জিহাদ; তৃতীয় পর্ব ➤ জিহাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য:
    ​- https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/আল-জিহাদ/210876​

    ফিকহুল জিহাদ; চতুর্থ পর্ব ➤ রিবাতের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ:
    - https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/আল-জিহাদ/211041

    ফিকহুল জিহাদ; পঞ্চম পর্ব ➤ ইসলাম প্রচার হয়েছে তরবারির জোরে নাকি আখলাকের বলে?
    ​- https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফ...�াদ/211055

    ফিকহুল জিহাদ; ষষ্ঠ পর্ব ➤জিহাদের বিধান অবতীর্ণ হওয়ার ক্রমবিকাশ:
    - https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...0%A6%A6/211219

    ফিকহুল জিহাদ; সপ্তম পর্ব ➤জিহাদের প্রকার ও প্রত্যেক প্রকারের হুকুম:
    - https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...0%A6%A6/211556

    ​ফিকহুল জিহাদ; অষ্টম পর্ব ➤দিফায়ী জিহাদে ফরযে আইন এবং ইকদামী জিহাদ ফরযে কেফায়া
    - https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...0%A6%A6/211618

    ফিকহুল জিহাদ; নবম পর্ব ➤ ইকদামী জিহাদ কখন ফরযে আইন; ইকদামী জিহাদ আদায়ের পদ্ধতি এবং মৌলিক জিহাদ সবার উপর ফরয:
    - https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...0%A6%A6/211686


    ফিকহুল জিহাদ; দশম পর্ব ➤ফরযে কেফায়ার অর্থ এবং জিহাদ অস্বীকারকারীর বিধান:
    - https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...0%A6%A6/211956
    Last edited by Rakibul Hassan; 1 day ago.

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ!
      আল্লাহ তাআলা আপনার কাজকে কবুল করে নিন, আপনার ইলমে আরও বারাকাহ দিন, উম্মাহ'র খেদমতে আপনাকে নিয়োজিত রাখুন।আমীন!

      Comment

      Working...
      X