গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীসসমূহ:
সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা
মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ

দ্বিতীয় হাদীস
দ্বিতীয় হাদীসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহিমাহুল্লাহ (১৬৪-২৪১ হি.) তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ إِسْحَاقَ عَنِ الْبَرَاءِ عَنِ الْحَسَنِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ: حَدَّثَنِيْ خَلِيلِيْ الصَّادِقُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: "يَكُوْنُ فِيْ هَذِهِ الْأُمَّةِ بَعْثٌ إِلَى السِّنْدِ وَالْهِنْدِ، فَإِنْ أَنَا أدْركْتُهُ فَاسْتَشْهَدْتُ فَذَاكَ، وَإِنْ أَنَا فَذَكَرَ كَلِمَةً رَجَعْتُ وَأَنَا أَبُوْ هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ قَدْ أَعْتَقَنِيْ مِنَ النَّارِ".
قَالَ الشَّيْخُ شُعَيْب اَلْأَرْنَؤُوْط فِيْ"تَعْلِيْقِهِ عَلَى المُسْنَدِ" 419:14 (8823) عَنْ هَذَا الإِسْنَادِ: إِسْنَادُهُ ضَعِيْفٌ لِضُعْفِ البَرَاءِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الغَنَوِيْ، وَلِانْقِطَاعِهِ، فَإِنَّ الحَسَنَ -وَهُوَ البَصْرِيُّ- لَمْ يَسْمَعْ مِنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ. انتهى
قُلْتُ: إِسْنَادُهُ ضَعِيْفٌ كَمَا سَيَأْتِيْ، وَلَكِنَّ الْمَتْنَ صَحِيْحٌ بِالْحَدِيْثِ الْأَوَّلِ. وَأَمَّا سَمَاعُ الحَسَنِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ فَقَدْ أَثْبَتَ سَمَاعَهُ عَنْهُ بِدَلَائِلَ قَوِيَّةٍ وَاضِحَةٍ مُفَصِّلَةً الأُسْتَاذُ العَلَّامَةُ أحْمَد شَاكِر رَحِمَه اللهُ فِيْمَا عَلّقَهُ عَلَى "المُسْنَدِ" بِرَقْمِ (7138) وقَبْلَهُ الإمَامُ الحَافِظُ عَلاءُ الدِّيْن مُغُلْطَاي (المتوَفى:762 هـ) فِيْ كِتَابِهِ "إكْمَالُ تَهْذِيْبِ الْكَمَالِ" 2: 284 (1288) فَقَدْ أثْبَتَ سَمَاعَ الْحَسَنِ عَنْ أبِي هُرَيرةَ بِدَلائلَ قَوِيةٍ.
অর্থ:“ইয়াহইয়া ইবনে ইসহাক থেকে, তিনি বারা থেকে, তিনি হাসান বসরী থেকে, তিনি আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণনা করেন; আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, আমার সত্যবাদী বন্ধু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বলেছেন, এই উম্মতের মধ্যে একটি দল লড়াই করার জন্যে সিন্ধু ও হিন্দুস্তানে প্রেরিত হবে। (আবু হুরায়রাহ বলেন,) আমি যদি সেই যুদ্ধটি পাই এবং তাতে শহীদ হয়ে যাই, তাহলে তো ভালো কথা। আর যদি (জীবিত) ফিরে আসি, তাহলে তো আমি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরায়রাহ হব।” -মুসনাদে আহমাদ ১৪/৪১৯, হাদীস ৮৮২৩, তাহকীক- শুআইব আরনাঊত।
মান: হাদীসটির সনদ যঈফ, তবে মতন বা মূলপাঠ সহীহ (প্রথম হাদীসের ভিত্তিতে)।
নিম্নে বর্ণনাকারীগণের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেশ করা হলো
এক. ইয়াহইয়া ইবনে ইসহাক আলবাজালী, আবু যাকারিয়া (মৃত্যু ২১০ হি.)। আহমাদ ইবনে হাম্বাল, মুহাম্মদ ইবনে সা’দ প্রমুখ মুহাদ্দিস তাঁকে ‘ছিকাহ’ বা নির্ভরযোগ্য বলেছেন। ইমাম মুসলিম তার থেকে ‘সহীহ মুসলিমে’ হাদীস বর্ণনা করেছেন। -তাহযীবুল কামাল ৮/০৮, রাবি ৭৩৭৬
দুই. বারা ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াযীদ আলগনাবী। ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, ইমাম আহমদ ও নাসাঈ তাঁকে যঈফ বলেছেন। হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন,
ضَعَّفَهُ أَحْمَد، وَابْنُ معِيْن وَالنَّسَائِيْ , وَلَمْ يُتَّهَمْ.
“ইমাম আহমদ, ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন ও নাসাঈ তাঁকে যঈফ বলেছেন কিন্তু মুত্তাহাম বলেননি বা তাঁর উপর মিথ্যার কোনো অভিযোগ করা হয়নি।” -লিসানুল মীযান ৯/২৬৬, রাবি ২৫৮
হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন, বারা ইবনে আব্দুল্লাহ যঈফ। -তাকরীবুত তাহযীব পৃ. ১২১, রাবি ৬৪৯; তাহযীবুল কামাল ১/৩৩২, রাবি ৬৪০
তিন. হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ১১০ হি.)। প্রখ্যাত তাবেঈ, ইমাম, মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ। - তাহযীবুল কামাল, রাবি ১২০০; ইকমালু তাহযীবিল কামাল ২/২৭৮-২৯৩, রাবি ১২৮৮; তাহযীবুত তাহযীব ২/২৪৩-২৪৮, রাবি ১২৯৭
একটি আপত্তি ও পর্যালোচনা
শায়খ শুআইব আরনাঊত মুসনাদে আহমাদ এর টীকায় বলেন, “হাদীসটির সনদ যঈফ; বারা ইবনে আব্দুল্লাহ আলগনাবী দুর্বল রাবি। এছাড়া এ সনদে ইনকিতা (বিচ্ছিন্নতা) রয়েছে। কেননা, হাসান বসরী আবু হুরায়রাহ থেকে হাদীস শুনেননি।” -মুসনাদে আহমাদ ১৪/৪১৯, হাদীস ৮৮২৩, তাহকীক- শুআইব আরনাঊত।
শায়খ আহমাদ শাকের রহিমাহুল্লাহ মুসনাদে আহমাদের টীকায় খুব মজবুতভাবে দলিল-প্রমাণ দিয়ে এবং হাদীস শাস্ত্রের ইমামদের কথা ও কর্মের মাধ্যমে সাব্যস্ত করেছেন যে, আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ হাদীস শুনেছেন। যারা বলেন, আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ হাদীস শুনেননি, তিনি তাঁদের মতামত সুদৃঢ়ভাবে খণ্ডন করেছেন। -মুসনাদে আহমাদ, তাহকীক- শায়খ আহমাদ শাকের ১২/১০৭-১২২, হাদীস ৭১৩৮
তাছাড়া তাঁর পূর্বেই হিজরী অষ্টম শতকের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস আলাউদ্দীন মুগলতাঈ রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৭৬২ হি.) দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে সাব্যস্ত করেন যে, হাসান বসরী আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে হাদীস শুনেছেন। হাফেয মুগলতাঈ রহিমাহুল্লাহ শুরুতে ওই সকল ইমামগণের নাম উল্লেখ করেন, যারা বলেন: হাসান বসরী আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে হাদীস শোনেননি। এরপর বলেন,
وَالَّذِيْ يَظْهَرُ بِالدَّلِيْلِ صِحَّةُ سَمَاعِهِ مِنْهُ لِمَا نُوْرِدُهُ مِنْ أَقْوَالِ العُلَمَاءِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمْ.
অর্থ: “দলিল-প্রমাণের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ হাদীস শোনার মতই সঠিক। এ বিষয়ে আমরা উলামায়ে কেরামের মতামত উল্লেখ করছি।”
এরপরে তিনি দলিল প্রমাণের মাধ্যমে সাব্যস্ত করেছেন যে, আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ হাদীস শুনেছেন। -ইকমালু তাহযীবিল কামাল ২/২৮৪, রাবি ১২৮৮
হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ ‘তাহযীবুত তাহযীব’ গ্রন্থে হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ এর জীবনীর শেষে এ প্রসঙ্গে বলেন,
وَهُوَ يُؤَيِّدُ أَنَّهُ سَمِعَ مِنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ فِيْ الجُمْلَةِ.
অর্থ: “আর তা এ বিষয়কে শক্তিশালী করে যে, মোটের উপর আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে হাসান বসরী রহিমাহুল্লাহ হাদীস শুনেছেন”। -তাহযীবুত তাহযীব ২/২৪৭, রাবি ১২৯৬
এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিস্তারিত দেখুন-
ইকমালু তাহযীবিল কামাল ২/২৭৮-২৯৩, রাবি ১২৮৮; তাহযীবুত তাহযীব ২/২৪৩-২৪৮, রাবি ১২৯৭; মুসনাদে আহমাদ, তাহকীক- শায়খ আহমাদ শাকের ১২/১০৭-১২২, হাদীস ৭১৩৮ টীকা; মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বাহ, তাহকীক-শায়খ মুহাম্মাদ আউওয়ামাহ ১/৫১৭-৫১৯, হাদীস ৯৩৭ টীকা; আলকাশেফ, তাহকীক -শায়খ মুহাম্মাদ আউওয়ামাহ ২/২৬২-২৬৫, রাবি ১০২২ টীকা।
তৃতীয় হাদীস
এ হাদীসটি হিজরী তৃতীয় শতকের বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইবনে আবি আসেম রহিমাহুল্লাহ[1] (১) (২০৬-২৮৭ হি) তাঁর ‘কিতাবুল জিহাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
حَدَّثَنَا أَبُو الْجَوْزَاءِ أَحْمَدُ بْنُ عُثْمَانَ - وَكَانَ مِنْ نُسَّاكِ أَهْلِ الْبَصْرَةِ - قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الصَّمَدِ قَالَ: حَدَّثَنَا هَاشِمُ بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ كِنَانَةَ بْنِ نُبَيْهٍ مَوْلَى صَفِيَّةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ : وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ غَزْوَةَ الْهِنْدِ، فَإِنْ أُدْرِكْهَا أُنْفِقْ فِيهَا نَفْسِي وَمَالِي، فَإِنْ قُتِلْتُ كُنْتُ كَأَفْضَلِ الشُّهَدَاءِ، وَإِنْ رَجَعْتُ فَأَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ الْمُحَرَّرُ.
قُلْتُ: إسْنَادُهُ ضَعِيْفٌ لِضُعْفِ هَاشِمِ بْنِ سَعِيْدٍ، وَلكِنّ الْمَتْنَ صَحِيْحٌ بِالْحَدِيْثِ الْأوّلِ.
অর্থ:“আবুল জাওযা আহমাদ ইবনে উসমান থেকে, তিনি আব্দুস সামাদ থেকে, তিনি হাশিম ইবনে সাঈদ থেকে, তিনি কিনানাহ ইবনে নুবাইহ থেকে, তিনি আবু হুরায়রাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে; আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে হিন্দুস্তানের জিহাদ সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (আবু হুরায়রাহ রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন,) যদি আমি সে জিহাদ পেয়ে যাই, তাহলে আমার জান-মাল সব কিছু তাতে ব্যয় করব। যদি শাহাদাত বরণ করি, তাহলে আমি হব সর্বশ্রেষ্ঠ শহীদ। আর যদি (জীবিত) ফিরে আসি, তাহলে হব (জাহান্নামের আগুন থেকে) মুক্তিপ্রাপ্ত।” -কিতাবুল জিহাদ, ইবনু আবি আসিম ২/৬৬৮, হাদীস ২৯১ (বাবু ফাযলি গাযবিল বাহর বা সামুদ্রিক জিহাদের ফযিলত অধ্যায়)।
হাদীসের মান: হাদীসটির সনদ যঈফ, তবে মতন বা মূলপাঠ সহীহ (প্রথম হাদীসের ভিত্তিতে)।
নিম্নে রাবি বা বর্ণনাকারীগণের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেশ করা হলো,
এক. আবুল জাওযা আহমাদ বিন উসমান, (মৃত্যু ২৪৬ হি.)। ইমাম আবু হাতেম ও নাসাঈ তাঁকে ‘ছিকাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। -তাহযীবুল কামাল, রাবি ৭৮
দুই. আব্দুস সামাদ ইবনে আব্দিল ওয়ারিছ (মৃত্যু ২০৭ হি.)। ইমাম আবু হাতেম তাঁকে ‘সাদুক, সালিহুল হাদীস’ (সত্যপরায়ণ ও হাদীস বর্ণনায় যোগ্য) বলেছেন, ইমাম হাকিম তাঁকে ‘ছিক্বাহ, মা’মুন’ (হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত) বলেছেন। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন, অর্থাৎ তাঁকে নির্ভরযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। -তাহযীবুল কামাল, রাবি ৪০১৯
তিন. হাশিম ইবনে সাঈদ আবু ইসহাক আলকুফী, আলবাসরী। ইমাম ইবনে মাঈন বলেন, তার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। ইমাম আহমাদ বলেন, আমি তাকে চিনি না। ইবনে আদী বলেন, তার হাদীসের মুতাবে’ (অর্থাৎ উক্ত অর্থের হাদীস অন্য নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের থেকে) পাওয়া যায় না। ইমাম আবু হাতেম বলেন, সে ‘যঈফুল হাদীস’ বা দুর্বল বর্ণনাকারী। ইমাম তিরমিযী তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন, অর্থাৎ তাঁকে হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্যদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।-আলজারহু ওয়াত তা’দীল, ইবনে আবী হাতেম ৯/১০৫, রাবি ৪৪৩; আল কামেল, ইবনে আদী ৮/৪১৯, রাবি ২০৩২; তাহযীবুল কামাল ৭/৩৮৫, রাবি ৭১৩৩; তাহযীবুত তাহযীব ১১/১৭, রাবি ৩৭
চার. কিনানাহ ইবনে নুবাইহ। উম্মুল মু’মিনীন ছাফিয়্যা (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহা) এর আযাদকৃত গোলাম। তিনি ২১ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন এবং ১২১-১৩০ হিজরীর মধ্যে ইন্তেকাল করেন। উসমান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) এর খেলাফতকাল পেয়েছেন এবং পরবর্তীতে দীর্ঘ জীবন লাভ করেন। তিনি ছাফিইয়া ও আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। ইমাম তিরমিযি তাঁর ‘সুনান’ গ্রন্থে তার থেকে হাশিম ইবনে সাঈদের সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করে বলেন, এই সনদটি মারুফ বা পরিচিত নয়।
ইমাম হাকেম রহিমাহুল্লাহ ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থে তার (অর্থাৎ কিনানাহ ইবনে নুবাইহ) থেকে হাশিম ইবনে সাঈদের সূত্রে একটি হাদীস বর্ণনা করে বলেন, এই হাদীসের সনদটি ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। ইমাম যাহাবী রহিমাহুল্লাহ কিনানাহ ইবনে নুবাইহের সূত্রে বর্ণিত হাদীসকে সহীহ বলার ক্ষেত্রে ইমাম হাকেমের সাথে ঐকমত্য পোষণ করেন।
ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন, অর্থাৎ তাঁকে হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ ‘আলআদাবুল মুফরাদ’ গ্রন্থে কিনানাহ ইবনে নুবাইহ থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন। ইমাম ইবনে আদী রচিত যঈফ বর্ণনাকারীদের জীবনীগ্রন্থ ‘আলকামেল’ ও ইমাম যাহাবী রচিত ‘মীযানুল ই’তিদাল’ গ্রন্থে তার জীবনী আসেনি। অতএব বুঝা গেলো, ইমাম ইবনে আদী ও ইমাম যাহাবীর নিকট কিনানাহ ইবনে নুবাইহ দুর্বল বর্ণনাকারী নন। যদি এমনটি না হত, তাহলে তারা নিজ নিজ গ্রন্থে কিনানাহ ইবনে নুবাইহ এর জীবনী নিয়ে আসতেন। হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ ‘তাকরীব’ গ্রন্থে বলেন,
مَقْبُوْلٌ، ضَعَّفَهُ الْأَزْدِيُّ بِلَا حُجَّةٍ.
অর্থ: “বর্ণনাকারী হিসেবে কিনানাহ গ্রহণযোগ্য। কোনো ধরনের দলিল-প্রমাণ ছাড়া আযদী তাকে যঈফ বলেছেন।” -আলমুসতাদরাক, ইমাম হাকেম ১/৭৩২, হাদীস ২০০৮; তা’রীখুল ইসলাম ৩/৪৮৫; তাহযীবুল কামাল ৬/১৭৯, রাবি ৫৫৮৯; তাহযীবুত তাহযীব ৮/৩৯২, রাবি ৫৮৯৪; তাকরীবুত তাহযীব পৃ.৪৬৩, রাবি ৫৬৬৯
সারকথাঃ আবু হুরায়রাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীস মাত্র একটি। উক্ত হাদীসটি তাঁর থেকে পৃথক তিনটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমটির সনদ সহীহ, পরের দু’টির সনদ দুর্বল। তবে প্রথম হাদীসের কারণে অর্থগত দিক থেকে পরের দু‘টিও সহীহ।
Collected
(চলবে, ইনশা আল্লাহ)
[1]. ইবনে আবি আসেম রাহ. এর জীবনীর জন্য দেখুন- ইমাম যাহাবী রহিমাহুল্লাহ রচিত ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ ১৩/৪৩০-৪৩৯, রাবি ২১৫
Comment