Announcement

Collapse
No announcement yet.

গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীসসমূহ: সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা || প্রথম অংশ - চতুর্থ হাদীস || মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীসসমূহ: সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা || প্রথম অংশ - চতুর্থ হাদীস || মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ


    গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীসসমূহ:
    সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা


    মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ



    চতুর্থ হাদীস



    গাযওয়ায়ে হিন্দ সম্পর্কে আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত উপরোক্ত তিনটি হাদীসের শব্দ প্রায় একই রকম। তবে আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে উক্ত বিষয়েই আরো একটি হাদীস রয়েছে, যাতে আগের হাদীসের পুরো বিষয়সহ অতিরিক্ত কিছু তথ্য রয়েছে, যা পূর্বের হাদীসগুলোতে নেই। সে বিষয়গুলো গাযওয়ায়ে হিন্দেরই একটি অংশ; তাতে যুদ্ধ-পরবর্তী অবস্থা এবং এ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করার ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।

    এ হাদীসটি হিজরী তৃতীয় শতকের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস নুআইম ইবনে হাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ২২৮ হিজরী)[1] তাঁর ‘কিতাবুল ফিতান’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,

    حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيْدِ عَنْ صَفْوَانَ عَنْ بَعْضِ الْمَشِيْخَةِ عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَذَكَرَ الهِنْد، فَقَالَ: "لَيَغْزُوَنَّ الهِنْدَ لَكُمْ جَيْشٌ، يَفْتَحُ اللهُ عَلَيْهِمْ حَتَّى يَأْتُوا بِمُلُوْكِهِمْ مُغَلِّلِيْنَ بِالسَّلَاسِلِ، يَغْفِرُ اللهُ ذُنُوْبَهُمْ، فَيَنْصَرِفُوْنَ حِيْنَ يَنْصَرِفُوْنَ فَيَجِدُوْنَ ابْنَ مَرْيَمَ بِالشَّامِ. قَالَ أَبُوْهُرَيْرَةَ: إِنْ أَنَا أَدْرَكْتُ تِلْكَ الغَزْوَةَ بِعْتُ كُلَّ طَارِفٍ لِيْ وَتَالِدٍ وَغَزَوْتُهَا، فَإِذَا فَتَحَ اللهُ عَلَيْنَا وَانْصَرَفْنَا فَأَنَا أَبُوْهُرَيْرَةُ المُحَرَّرُ، يَقْدِمُ الشَّامَ فَيَجِدُ فِيْهَا عِيْسَى بْنَ مَرْيَمَ، فَلَأَحْرِصَنَّ أَنْ أَدْنُوَ مِنْهُ فَأُخْبِرُهُ أَنِّيْ قَدْ صَحبْتُكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ: فَتَبَسَّمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَضَحِكَ، ثُمَّ قَالَ: هَيْهَاتَ هَيْهَاتَ

    অর্থ: “বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ থেকে, তিনি সফওয়ান থেকে, তিনি জনৈক শায়খ থেকে, তিনি আবু হুরায়রাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন; আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিন্দুস্তানের যুদ্ধের আলোচনা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘অবশ্যই তোমাদের একটি দল হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাঁদের বিজয় দান করবেন। তাঁরা হিন্দুস্তানের রাজাদের শিকল দিয়ে বেঁধে টেনে আনবে। আল্লাহ তাআলা সেই মুজাহিদদের সকলকে ক্ষমা করে দেবেন। অতঃপর মুসলিমরা যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে শামে পেয়ে যাবে।’ আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, ‘আমি যদি গাজওয়াতুল হিন্দের সময় বেঁচে থাকি, তাহলে আমার সমস্ত সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে দেব এবং সেই যুদ্ধে শরীক হব। এরপর যখন আল্লাহ তা’আলা আমাদের বিজয় দান করবেন এবং আমরা যুদ্ধ থেকে ফিরে আসব, তখন আমি হব (জাহান্নামের আগুন হতে) মুক্তিপ্রাপ্ত আবু হুরাইরা, যে শামে গিয়ে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম-এর সঙ্গে মিলিত হবে।’ (আবু হুরায়রাহ (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, আমি তখন নবীজীকে বলেছিলাম,) ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার খুব আকাংখা যে, আমি ঈসা আলাইহিস সালাম-এর নিকটবর্তী হয়ে তাঁকে সংবাদ দেব যে, আমি আপনার সংশ্রবপ্রাপ্ত একজন সাহাবী।’ তিনি বলেন, এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুচকি মুচকি হাসতে লাগলেন এবং বললেন, সে (যুদ্ধ) তো অনেক দেরি! অনেক দেরি!” -আলফিতান, নুআইম ইবনে হাম্মাদ ১/৪০৯, হাদীস ১২৩৬
    নুআইম ইবনে হাম্মাদ রহিমাহুল্লাহ ‘কিতাবুল ফিতান’ গ্রন্থে উক্ত হাদীসটি পরের পৃষ্ঠায় কিছুটা ভিন্ন শব্দে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন,

    حَدَّثَنَا الوَلِيْدُ ثَنَا صَفْوَانُ بْنُ عَمْرٍو عَمَّنْ حَدَّثَهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَغْزُوْ قَوْمٌ مِنْ أمَّتِيْ الهِنْدَ، يَفْتَحُ اللهُ عَلَيْهِمْ حَتَّى يَأْتُوا بِمُلُوْكِ الهِنْدِ مَغْلُوْلِيْنَ فِيْ السَّلَاسِلِ، فَيَغْفِرُ اللهُ لَهُمْ ذُنُوْبَهُمْ، فَيَنْصَرِفُوْنَ إِلَى الشَّامِ، فَيَجِدُوْنَ عِيْسَى ابْنَ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ بِالشَّامِ.

    অর্থ: “ওয়ালীদ থেকে, তিনি বিশিষ্ট তাবেয়ী সফওয়ান ইবনে আমর রহিমাহুল্লাহ থেকে, সফওয়ান ইবনে আমর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একজনের মারফতে বর্ণনা করে বলেন, নবীজী বলেছেন, আমার উম্মতের একটি দল হিন্দুস্তানে যুদ্ধ করবে। আল্লাহ তাআলা তাদের বিজয় দান করবেন। এমনকি তারা হিন্দুস্তানের রাজাদের শিকলে আবদ্ধ করে নিয়ে আসবে। আল্লাহ তাঁদের সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। এরপর তারা শামে চলে আসবে। শামে তারা ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালামকে পেয়ে যাবে।” -আলফিতান, নুআইম ইবনে হাম্মাদ ১/৪১০, হাদীস ১২৩৯



    হাদীসটির সনদ বিশ্লেষণ ও রাবি বা বর্ণনাকারীগণের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি


    প্রারম্ভিক কথা: নুআইম ইবনে হাম্মাদ প্রথম হাদীসটি বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ থেকে বর্ণনা করেছেন আর দ্বিতীয় হাদীসটি ওয়ালীদ বিন মুসলিম থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা উভয়ে তাবেয়ী সফওয়ান ইবনে আমর থেকে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। সুতরাং ওয়ালিদ ইবনে মুসলিমের হাদীসটি বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদের ‘মুতাবি’ হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ একটি অপরটি দ্বারা শক্তিশালী হবে।

    নিম্নে এ তিনজন রাবির (বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ, ওয়ালীদ ইবনে মুসলিম ও তাবেঈ সফওয়ান ইবনে আমর) সংক্ষিপ্ত পরিচিতি দেয়া হলো-

    এক. বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ আবু মুহাম্মদ আলকিলাঈ আলহিমসী (জন্ম ১১০ হি., মৃত্যু ১৯৭ হি.)। তিনি তাবেয়ী সফওয়ান ইবনে আমর ও শাম দেশের হিমস এলাকার অধিবাসী আরতাত ইবনে মুনযির থেকে হাদীস শুনেছেন।



    বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ সম্পর্কে কিছু কথা


    জারহ তা’দীলের ইমামগণ তার থেকে হাদীস গ্রহণ করার বিষয়ে কয়েকটি শর্তারোপ করেছেন- ১. হাদীস বর্ণনা করার সময় এমন শব্দ চয়ন করতে হবে যাতে বোঝা যায় যে, যাদের থেকে হাদীস বর্ণনা করছেন তাদের থেকে শুনে হাদীস বলছেন। যেমন: ‘হাদ্দাছানা’, ‘আখবারানা’ ইত্যাদি শব্দ ব্যবহার করা। ২. যার থেকে রেওয়ায়াত করছেন তিনি যদি শামের অধিবাসী হন। ৩. মারুফ বা পরিচিত রাবি থেকে হাদীস বর্ণনা করলে। যেমন: সফওয়ান ও অন্যান্য পরিচিত রাবি।
    উল্লিখিত কোনো একটা শর্ত পাওয়া গেলে বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদের হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে। প্রকাশ থাকে যে, বাকিয়্যাহ উক্ত হাদীসটি সফওয়ান থেকে বর্ণনা করেছেন, আর সফওয়ান হলেন শামের অধিবাসী এবং তিনি মারুফ বা পরিচিত রাবি। অতএব, বাকিয়্যাহ থেকে বর্ণিত হাদীসে অন্য কোনো সমস্যা না থাকলে ইমামগণের উক্ত বক্তব্যের আলোকে বাকিয়্যাহর হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে।

    নিম্নে বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ সম্পর্কে ইমামগণের মতামত মূল আরবিতে (অনুবাদসহ) পেশ করা হলো-

    আলী ইবনুল মাদীনী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

    بَقِيَّةُ صَالِحٌ فِيْمَا رَوَى عَنْ أَهْلِ الشَّامِ

    অর্থ: “বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ শামের অধিবাসী থেকে যে সকল রেওয়ায়াত করেন, সেগুলো বিশুদ্ধ।”

    ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন রহিমাহুল্লাহ বাকিয়্যাহ সম্পর্কে বলেন,

    ثِقَةٌ، وَقَالَ أَيْضًا: إِذَا حَدَّثَ عَنِ الثِّقَاتِ مِثْلَ صَفْوَانَ وَغَيْرِهِ، وَقَالَ مَرَّةً أُخْرٰى: إِذَا لَمْ يُسَمِّ بَقِيَّةُ الرَّجُلَ الَّذِيْ يَرْوِيْ عَنْهُ وَكَنَّاهُ فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا يُسَاوِيْ شَيْئًا.

    অর্থ: “যখন সফওয়ান ও তাঁর মতো ছিকাহ ও নির্ভরযোগ্য রাবিদের থেকে হাদীস বর্ণনা করবেন, তখন তাঁর রেওয়ায়াতগুলো বিশুদ্ধ ও দলীলযোগ্য হবে। তিনি আরো বলেন, বাকিয়্যাহ যখন ‘মারবী আনহুর’ (যার থেকে বর্ণনা করেছেন) নাম উল্লেখ না করে উপনাম উল্লেখ করবেন (যে উপনামে মারবী আনহু পরিচিত নয়), তাহলে তার হাদীস গ্রহণযোগ্য হবে না।”

    ইয়াকুব ইবনে শায়বাহ রহিমাহুল্লাহ বলেন,

    بَقِيَّةُ بْنُ الوَلِيْدِ صَدُوْقٌ ثِقَةٌ وَيُتَّقَى حَدِيْثُهُ عَنْ مَشِيْخَتِهِ الَّذِيْنَ لَا يُعْرَفُوْنَ وَلَهُ أَحَادِيْثُ مَنَاكِيْرُ

    অর্থ: “বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ হাদীস বর্ণনায় সত্যপরায়ণ ও নির্ভরযোগ্য। তবে যাদের থেকে তিনি হাদীস বর্ণনা করেন, তাদের মধ্যে যারা অপরিচিত, তাদের থেকে বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদের হাদীস পরিহার করতে হবে। আর তার বেশ কিছু মুনকার হাদীস রয়েছে।”

    ইজলী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

    بَقِيَّةُ بْنُ الوَلِيْدِ ثِقَةٌ مَا رَوَي عَنِ المَعْرُوْفِيْنَ، وَمَا رَوَي عَنِ المَجْهُوْلِيْنَ فَلَيْسَ بِشَيْءٍ.

    অর্থ: “বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ যখন মারুফ বা পরিচিত রাবি থেকে হাদীস বর্ণনা করবেন, তখন সেটা সহীহ হিসেবে গণ্য হবে, আর যখন মাজহুল বা অপরিচিত কোনো রাবি থেকে হাদীস বর্ণনা করবেন, তখন সে বর্ণনা মূল্যহীন হবে।”

    ইমাম নাসাঈ রহিমাহুল্লাহ বলেন,

    إِذَا قَالَ حَدَّثَنِيْ وَحَدَّثَنَا فَلَا بَأْسَ، وَقَالَ أَيْضًا: إِنْ قَالَ أَخْبَرَنَا أَوْ حَدَّثَنَا فَهُوَ ثِقَةٌ، وَإِنْ قَالَ (عَنْ فُلَانٍ) فلَا يَأْخُذُ عَنْهُ، لِأَنَّهُ لَا يُدْرَى عَمَّنْ أَخَذَهُ.
    “বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ যখন حَدَّثَنِيْ وَحَدَّثَنَا،أَخْبَرَنَا أَوْحَدَّثَنَا - শব্দগুলো দ্বারা হাদীস বর্ণনা করবেন, তখন তিনি নির্ভরযোগ্য রাবি হিসেবে গণ্য হবেন। আর যখন عَنْ - শব্দ দ্বারা বর্ণনা করবেন, তখন তার থেকে সে বর্ণনা গ্রহণ করা হবে না। জানা নেই, কার থেকে তিনি হাদীস নিয়েছেন।”

    আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রহিমাহুল্লাহ বলেন,

    كَانَ صَدُوْقًا وَلكِنَّهُ كَانَ يَكْتُبُ عَمَّنْ أَقْبَلَ وَأَدْبَرَ.

    অর্থ: “তিনি হাদীস বর্ণনায় সত্যপরায়ণ, তবে তিনি ভালো-মন্দ সবার থেকেই হাদীস লিখতেন।”

    ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান রহিমাহুল্লাহ বলেন,

    بَقِيَّةُ إِذَا لَمْ يُسَمِّ الَّذِيْ يَرْوِىْ عَنْهُ وَكَنَّاهُ فَلَا يُسَاوِيْ حَدِيْثُهُ شَيْئًا.

    অর্থ: “বাকিয়্যাহ যখন ‘মারবী আনহুর’ নাম উল্লেখ না করে উপনাম উল্লেখ করেন (যে উপনামে মারবী আনহু পরিচিত নয়), তাহলে বাকিয়্যাহর হাদীস সঠিক বলে বিবেচিত হবে না।”
    এছাড়া ইমাম মুসলিমসহ[2] অন্যান্য ইমামগণ তাদের ‘সহীহ হাদীস-গ্রন্থে’ বাকিয়্যাহ ইবনে ওয়ালীদ থেকে হাদীস গ্রহণ করেছেন। -তারীখে বাগদাদ ৫/৩৯৩, রাবি ৩৫৬০; তাহযীবুল কামাল ১/৩৬৭, রাবি ৭২৬

    দুই. ওয়ালীদ ইবনে মুসলিম আলকুরাশী আবুল আব্বাস আদদিমাশকী (জন্ম ১১৯ হি., মৃত্যু ১৯৫ হি.)। ইমাম আবু হাতেম, ইজলী, ইয়াকুব ইবনে শায়বা ও অন্যান্য মুহাদ্দিসগণ তাঁকে ‘ছিকাহ’ বা নির্ভরযোগ্য বলেছেন। -তাহযীবুল কামাল, ৭/৪৮৭; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা, ৯/২১১; তাযকিরাতুল হুফফায ১/২২২

    তিন. সফওয়ান ইবনে আমর (জন্ম ৭২ হি., মৃত্যু ১৫৫ হি.)। তিনি তাবিঈ ছিলেন। তিনি সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে বুসর আল মাযিনী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন। হাফেয যাহাবী রহিমাহুল্লাহ তার সম্পর্কে বলেন,

    هُوَ الإِمَامُ المُحَدِّثُ الحَافِظُ، أَبُوْ عَمْرٍو السَّكْسَكِيْ، الحِمْصِيْ، مُحَدِّثُ حِمْص. ثِقَةٌ مِنْ صِغَارِ التَّابِعِيْنَ.

    “তিনি হাদীসের ইমাম, মুহাদ্দিস ও হাফেযে হাদীস। হিমসের অধিবাসী এবং সেখানকার বিশিষ্ট মুহাদ্দিস। হাদীসের বর্ণনাকারী হিসেবে ছিকাহ বা নির্ভরযোগ্য। ছোট বয়সী তাবিঈদের অন্তর্ভুক্ত।” -তাহযীবুল কামাল ৩/৪৬১, রাবি ২৮৭৪; সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৬/৩৮০



    একটি পর্যালোচনা


    এ হাদীসের সনদদ্বয়ে সফওয়ান ইবনে আমর রহিমাহুল্লাহ এর উস্তাদের নাম স্পষ্ট করা হয়নি। প্রথম সনদে ‘জনৈক শায়খ থেকে’ (عَنْ بَعْضِ الْمَشِيْخَةِ) এবং দ্বিতীয় সনদে ‘নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে একজনের মারফতে’ (عَمَّنْ حَدَّثَهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ) শব্দ ব্যবহার করে উস্তাদের নাম অস্পষ্ট রাখা হয়েছে। এ কারণে কেউ কেউ এ হাদীসের ব্যাপারে কঠিন আপত্তি করেছেন!

    উল্লেখ্য, রাবি ‘সফওয়ান ইবনে আমর’ নির্ভরযোগ্য তাবেঈ। এমন কোনো প্রমাণ নেই যে, তিনি কখনো মুনকার বা পরিত্যাজ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর যে সকল মাশায়েখ থেকে তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন, তারাও প্রসিদ্ধ তা’বেঈ ছিলেন। আর এটা খুবই সম্ভব যে, সফওয়ানের পরবর্তী রাবি (অর্থাৎ সফওয়ানের শাগরিদ বা তার নিচের স্তরের কোনো রাবি) এই হাদীসের সনদ সংক্ষেপে উল্লেখ করতে গিয়ে সফওয়ানের উস্তাদের নাম বাদ দিয়েছেন। সেক্ষেত্রে শুধু বাহ্যিক ‘ইনকিতা’ ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোনো ‘ইনকিতা’ (রাবির বিচ্ছিন্নতা) থাকে না। আর এ কারণে কোনো হাদীস সম্পূর্ণ পরিত্যাজ্য হতে পারে না। তাছাড়া, ‘তাবে তাবিঈ’ থেকে তাবিঈ স্তরে কোনো তাবিঈ এর নাম উল্লেখ না থাকা অর্থাৎ উস্তাদের নাম অস্পষ্ট থাকার (যখন অন্য গ্রহণযোগ্য সূত্রে সে হাদীসের মুতাবি বা শাওয়াহিদ বিদ্যমান থাকবে) উদাহরণ ‘সহীহ বুখারী’ ও ‘সহীহ মুসলিমে’ও বিদ্যমান রয়েছে। যেমন: ‘সহীহ বুখারীর’ একটি বর্ণনায় রাবি শাবীব ইবনে গারকাদাহ[3] তার উস্তাদের নাম উল্লেখ না করে বলেন,

    (شَبِيْبُ بْنُ غَرْقَدَةَ قَالَ سَمِعْتُ الحَيَّ يُحَدِّثُوْنَ عَنْ عُرْوَةَ) “ শাবীব ইবনে গারকাদাহ বলেন, আমি এলাকাবাসী থেকে শুনেছি, যারা উরওয়া থেকে শুনেছে।” -সহীহ বুখারী, কিতাবুল মানাকিব ১/৫১৪, হাদীস ৩৫১৩।

    সহীহ মুসলিমের একটি বর্ণনায় রাবি ইবনে শিহাব যুহরী[4] উস্তাদের নাম উল্লেখ না করে বলেন, (عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّهُ قَالَ: حَدَّثَنِيْ رِجَالٌ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ) “আমি এমন ব্যক্তিদের থেকে শুনেছি, যারা আবু হুরায়রা থেকে শুনেছেন।”

    অবশ্য ইমাম মুসলিম প্রথমে ইবনে শিহাব ও আবু হুরায়রাহ রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু র মাঝে ওয়াসেতা বা মাধ্যম উল্লেখ করে হাদীসটা এনেছেন। পরে ওয়াসেতা ছাড়া উক্ত হাদীসটা আনেন, যাতে কিছু অতিরিক্ত শব্দ রয়েছে। -সহীহ মুসলিম, জানাযা অধ্যায়- ১/৩০৭, হাদীস ৯৪৫



    Collected‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬

    (চলবে, ইনশা আল্লাহ)​​​
    [1]. নুআইম ইবনে হাম্মাদ ও তাঁর রচিত ‘কিতাবুল ফিতান’ গ্রন্থ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা প্রবন্ধের ‘পরিশিষ্টে’ দেখুন।
    [2]. رَوَى الإِمَامُ البُخَارِيُّ فِيْ "صَحِيْحِهِ" عَنْ بَقِيَّةَ بْنِ الوَلِيْدِ تَعْلِيْقًا
    [3]. শাবীব ইবনে গারকাদাহ, তাবেঈ (মৃত্যু ১৩৭ হিজরী)। ইমাম আহমাদ, ইয়াহয়া ইবনে মাঈন, নাসাঈসহ অন্যান্য ইমামগণ তাকে ছিকাহ বা হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্য বলেছেন। -তাহযীবুল কামাল ৩/৩৬৩, রাবি ২৬৭৯; ইকমালু তাহযীবিল কামাল ৪/১৩, রাবি ২৫১৫; তাকরীবুত তাহযীব পৃ.২৬৪, রাবি ২৭৪৩
    [4] ইমাম ইবনে শিহাব যুহরী; তাবেঈ, হাদীসের প্রসিদ্ধ ইমাম। জন্ম ৫০/৫১ হি., মৃত্যু ১২৫ হি.। -তাহযীবুল কামাল ৬/৫০৭, রাবি ৬১৯৭
    “ধৈর্যশীল, সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”
    -শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ

  • #2
    গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীসসমূহ: সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা || ভূমিকা || মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ


    গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীসসমূহ: সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা || প্রথম অংশ - প্রথম হাদীস || মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ


    গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীসসমূহ: সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা || প্রথম অংশ - দ্বিতীয় ও তৃতীয় হাদীস || মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ
    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A6%BE%E0%A6%B9
    “ধৈর্যশীল, সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”
    -শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ

    Comment

    Working...
    X