গাযওয়ায়ে হিন্দ বিষয়ক হাদীসসমূহ:
সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা
মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ
সনদ বিশ্লেষণমূলক পর্যালোচনা
মুফতি আবু আসেম নাবিল হাফিযাহুল্লাহ

দ্বিতীয় অংশ
পঞ্চম হাদীস
পঞ্চম হাদীসটি সাওবান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। সাওবান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে চতুর্থ স্তর পর্যন্ত সনদের ধারা একটিই। এরপর চতুর্থ স্তর তথা মুহাম্মদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী থেকে তাঁর তিনজন ছাত্র বর্ণনা করেছেন। এভাবে একটি সনদ চতুর্থ স্তরে গিয়ে দুইটি তরিক বা শাখায় রূপান্তরিত হয়েছে। নিম্নে সনদ বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার সুবিধার্থে সনদের দুইটি শাখা (طريق) পৃথকভাবে ‘ক’ ও ‘খ’ শিরোনামে আলোচনা করা হলো।
(ক)
হাদীসটি ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহিমাহুল্লাহ (১৬৪-২৪১ হি.) তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ، حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ سَالِمٍ، وَأَبُو بَكْرٍ بْنُ الْوَلِيدِ الزُّبَيْدِيُّ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْوَلِيدِ الزُّبَيْدِيِّ، عَنْ لُقْمَانَ بْنِ عَامِرٍ الْوُصَابِيِّ، عَنْ عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ عَدِيٍّ الْبَهْرَانِيِّ، عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمَا اللَّهُ مِنَ النَّارِ: عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ، وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ."
قُلْتُ: إِسْنَادُهُ حَسَنٌ، وَالْحَدِيْثُ صَحِيْحٌ لِغَيْرِهِ وَخُلَاصَتُهُ: رِجَالُ هَذَا الْإِسْنَادِ كُلُّهُمْ ثِقَاتٌ غَيْرُ أَبِي بَكْرٍ الزُّبَيْدِيِّ فَهُوَ مَجْهُوْلُ الْحَالِ لَكِنَّهُ مَقْرُوْنٌ هُنَا مَعَ عَبْدِ اللهِ بْنِ سَالِمٍ وَ هُوَ ثِقَةٌ مِنْ رِجَالِ الْبُخَارِيِّ، وَ بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيْدِ مُدَلِّسٌ وِلَكِنَّهُ قَدْ صَرَّحَ بِالتَّحْدِيْثِ، عَلَى أَنَّهُ قَدْ تَابَعَهُ هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ[1] وَهُوَ مِنْ شُيُوْخِ الْبُخَارِيِّ، وَثَّقُوْهُ وَ كَانَ يَتَلَقَّنُ، لَكِنْ تَابَعَهُ سُلَيْمَانُ وَ هُوَ ثِقَةٌ.
قَالَ الشَّيْخُ الأَلْبَانِيُّ فِي "سِلْسِلَةُ الْأَحَادِيْثِ الصَّحِيْحَةِ " 4 / 570- 571 (1934) بَعْدَ ذِكْرِ إِسْنَادِ الْإِمَامِ أَحْمَدَ وَ النَّسَائِيِّ (الآتِي ذِكْرُهُ): وَ هَذَا إِسْنَادٌ جَيِّدٌ، ثُمَّ ذَكَرَ إِسْنَادَ الْبُخَارِيِّ فِي " التَّارِيْخُ الْكَبِيْرُ [2] وَقَالَ: وَ هَذَا إِسْنَادٌ قَوِيُّ ، فَصَحَّ الحْدِيْثُ وَ الْحَمْدُ لِلَّه .اهـ
অর্থ: “আবুন নযর রহিমাহুল্লাহ বাকিয়্যা বিন ওয়ালিদ থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন সালিম ও আবু বকর বিন ওয়ালিদ থেকে, তাঁরা উভয়ে মুহাম্মদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী থেকে, তিনি লুকমান বিন আমের থেকে, তিনি আব্দুল আ’লা বিন আদি থেকে, তিনি সাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন; সাওবান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে দুটি দলকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। একটি দল, যারা হিন্দুস্তানের যুদ্ধে শরিক হবে। আর দ্বিতীয় দল, যারা ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম-এর সঙ্গী হয়ে যুদ্ধ করবে।”
-মুসনাদে আহমাদ ৩৭/৮১, হাদীস ২২৩৯৬, তাহকীক-শায়খ শুআইব আরনাঊত; হাদীসটির বর্ণনা আরো যে সকল কিতাবে রয়েছে- সুনানে নাসাঈ ২/৫২, হাদীস ৩১৭৫; মুসনাদে শামিয়্যিন, তবারনী ৩/৮৯, হাদীস ১৮৫১; আলফিরদাউস, দায়লামী ৩/৩৮, হাদীস ৪১২৪
ইমাম নাসাঈ রহিমাহুল্লাহ ও ইমাম তবারানী রহিমাহুল্লাহ সনদের কিছুটা ভিন্নতাসহ এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। নিম্নে সে বিষয়টি তুলে ধরা হলো-
এই হাদীসটি ইমাম নাসাঈ বর্ণনা করেছেন আসাদ বিন মুসা থেকে, তিনি বাকিয়্যা বিন ওয়ালিদ থেকে, আর বাকিয়্যা বর্ণনা করেছেন আবু বকর বিন ওয়ালিদ থেকে; অন্যদিকে ইমাম তবারানী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন হাইওয়াহ বিন শুরাইহ থেকে, তিনি বাকিয়্যা বিন ওয়ালিদ থেকে, আর বাকিয়্যা বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন সালেম থেকে; আবু বকর বিন ওয়ালিদ এবং আব্দুল্লাহ বিন সালেম উভয়ে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী থেকে, তিনি লুকমান বিন আমের থেকে, তিনি আব্দুল আ’লা বিন আদি থেকে, তিনি সাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটির মান: সনদটি হাসান পর্যায়ের। তবে ‘মুতাবাআত’ বা সমর্থক বর্ণনাকারীর ভিত্তিতে হাদীসটি সহীহ লি-গাইরিহী।
সংক্ষিপ্ত বিবরণ: সনদের রাবিগণ নির্ভরযোগ্য। তবে আবু বকর বিন ওয়ালিদ; যার থেকে ইমাম নাসাঈ ‘সুনানে নাসাঈ’ গ্রন্থে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি ‘মাজহুল’ পর্যায়ের। অর্থাৎ তাঁর সম্পর্কে কোনো ‘তাওছীক্ব’ পাওয়া যায় না। কিন্ত আবু বকর বিন ওয়ালিদের মুতাবি’ তথা সমর্থক বর্ণনাকারী রয়েছেন আব্দুল্লাহ বিন সালেম, যিনি রাবি হিসেবে নির্ভরযোগ্য, সহীহ বুখারীতে তাঁর রেওয়ায়াত আছে। আবু বকর বিন ওয়ালিদের আরো একজন মুতাবি’ আছেন “জাররাহ বিন মালিহ”। তাঁর আলোচনা এই হাদীসের ‘খ’ অংশে আসছে।
অন্যদিকে, রাবি বাকিয়্যা বিন ওয়ালিদের ব্যাপারে তাদলীসের অভিযোগ রয়েছে, তবে এই হাদীসটি তিনি ‘হাদ্দাছানা’ শব্দে বর্ণনা করেছেন।[3] উপরন্তু তাঁর মুতাবি’ তথা সমর্থক বর্ণনাকারী রয়েছেন হিশাম বিন আম্মার। হিশামের বার্ধক্য বয়সে হিফয ও স্মৃতিশক্তির ব্যাপারে অভিযোগ থাকলেও তাঁর মুতাবি’ তথা সমর্থক বর্ণনাকারী রয়েছেন সুলাইমান বিন আব্দুর রহমান।
শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। সিলসিলা সহীহাহ, হাদীস ১৯৩৪; সহীহু ওয়া যঈফু সুনানিন নাসাঈ, হাদীস ৩১৭৫।[4]
নিম্নে বর্ণনাকারীগণের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেশ করা হল
১. আবুন নযর, (জন্ম ১৩৪ হি., মৃত্যু ২০৭ হি.)। ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন, আলী ইবনুল মাদিনী, মুহাম্মাদ ইবনে সা’দ, আবু হাতেম, ইজলী প্রমুখ ইমামগণ তাঁকে ‘ছিক্বাহ’ বা নির্ভরযোগ্য বলেছেন। -তাহযীবুল কামাল, ৭/৩৮৫, রাবি ৭১৩৫
২. বাকিয়্যাহ বিন ওয়ালিদ, (জন্ম ১১০ হি., মৃত্যু ১৯৭ হি.)। ইমাম নাসাঈ রহিমাহুল্লাহ বলেন, إِنْ قَالَ أَخْبَرَنَا أَوْ حَدَّثَنَا فَهُوَ ثِقَةٌ অর্থ্যাৎ “যখন তিনি ‘হাদ্দাছানা বা আখবারানা’ শব্দে হাদীস বর্ণনা করেন তখন ‘ছিক্বাহ’ (নির্ভরযোগ্য)।” ইজলী বলেন, “যখন তিনি পরিচিত (মারুফ) রাবি থেকে বর্ণনা করবেন তখন তা সহীহ। আর অপরিচিত (মাজহুল) রাবি থেকে বর্ণনা করলে তা সহীহ হবে না।” পরবর্তীদের মধ্যে হাফেয ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন, “তিনি ‘সাদুক’ (সত্যপরায়ণ), তবে তিনি ‘যঈফ’ রাবিদের থেকে ব্যাপক তাদলীস করতেন।”-তাহযীবুল কামাল ১/৩৬৭, রাবি ৭২৬; মীযানুল ই’তিদাল ১/৩৩১, রাবি ১২৫০; তাক্বরীব, রাবি ৭৩৪, পৃ. ১২৬
উল্লেখ্য, বাকিয়্যাহ বিন ওয়ালিদের ব্যাপারে তাদলীসের অভিযোগ রয়েছে, তবে এই হাদীসটি তিনি ‘হাদ্দাছানা’ শব্দে বর্ণনা করেছেন, সেক্ষেত্রে সনদে আর কোনো সমস্যা থাকে না।
৩. সনদের এ স্তরে দুইজন বর্ণনাকারী রয়েছেন-
(ক) আব্দুল্লাহ বিন সালেম আলআশআরী, (মৃত্যু ১৭৯ হি.)। ইমাম নাসাঈ বলেন, لَيْسَ بِهِ بَأسٌ (রাবি হিসেবে তাঁর মধ্যে কোনো সমস্যা নেই)। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন। অর্থাৎ তাঁকে হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। -তাহযীবুল কামাল ৪/১৪১, রাবি ৩২৭৩
(খ) আবু বকর বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী। তিনি মুহাম্মদ বিন ওয়ালিদের ভাই। ইমাম নাসাঈ তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। -তাহযীবুল কামাল ৮/২৬৩ রাবি ৭৮৫৬
৪. মুহাম্মদ বিন ওয়ালিদ আবুল হুযাইল আলহিমসী। জন্ম ৭২ হি., মৃত্যু ১৪৬/১৪৭ হি.। ইমাম ইজলী, আলী ইবনুল মাদিনী, আবু যুরআ ও নাসাঈ তাঁকে ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য বলেছেন। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন, অর্থাৎ তাঁকে হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। -তাহযীবুল কামাল ৬/৫৪৬, রাবি ৬২৬৫
৫. লুকমান বিন আমের আলউসাবী। ১১১ থেকে ১২০ হিজরির মধ্যে মৃত্যুবরণ করেন। ইমাম ইজলী বলেন, شَامِيٌّ تَابِعِيٌّ، ثِقَةٌ (তিনি শামের অধিবাসী, তাবিঈ, ‘ছিক্বাহ’ বা নির্ভরযোগ্য)। ইমাম আবু হাতিম বলেন, يُكْتَبُ حَدِيْثُهُ. (তার হাদীস লেখা যায়)। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন, অর্থাৎ তাঁকে হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। -আছ-ছিক্বাত, ইবনে হিব্বান ৫/৩৪৫, রাবি ৫১৫০; তাহযীবুল কামাল ৬/১৮২, রাবি ৫৬০০; তাহযীবুত তাহযীব ৮/৩৯৮, রাবি ৫৯০৫
৬. আব্দুল আ’লা বিন আদি আলবাহরানী (মৃত্যু ১০৪ হি.)। আবু দাউদ তাঁকে ‘ছিক্বাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন, অর্থাৎ তাঁকে হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। -তাহযীবুল কামাল ৪/৩৩৭ রাবি ৩৬৭৬; তাহযীবুত তাহযীব ৬/৮৮, রাবি ৩৮৬৬
৭. সাওবান (রাযি)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবী। তিনি ৫৪ হিজরিতে ইনতেকাল করেন। শামের হিমস এলাকার অধিবাসী। -তাহযীবুল কামাল ১/৪১৮, রাবি ৮৪৪; সিয়ারু আ’লামিন নুবালা ৩/১৫, রাবি ৫
উল্লেখ্য: এই হাদীসটি বাকিয়্যা থেকে তিনজন রাবি বর্ণনা করেছেন। মুসনাদে আহমাদের রেওয়ায়াতে ‘আবুন নযর’, সুনানে নাসাঈর রেওয়ায়াতে ‘আসাদ বিন মুসা’ এবং তবারানীর রেওয়ায়াতে ‘হাইওয়াহ বিন শুরাইহ’। আর বাকিয়্যা হাদীসটি বর্ণনা করেছেন দুইজন থেকে; আব্দুল্লাহ বিন সালেম এবং আবু বকর বিন ওয়ালিদ থেকে। তাঁরা উভয়ে বর্ণনা করেছেন মুহাম্মদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী থেকে। অর্থাৎ এই হাদীসটিতে সাওবান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে রাবিদের চতুর্থ স্তর পর্যন্ত সনদের ধারা একটিই। এরপর চতুর্থ স্তর তথা রাবি মুহাম্মদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী থেকে তাঁর তিনজন ছাত্র বর্ণনা করেছেন। যথাক্রমে- ১. আব্দুল্লাহ বিন সালেম, ২. আবু বকর বিন ওয়ালিদ, ৩. জাররাহ বিন মালিহ। রাবি আব্দুল্লাহ বিন সালেম ও আবু বকর বিন ওয়ালিদ থেকে বর্ণনা করেছেন বাকিয়্যা বিন ওয়ালিদ। এবং জাররাহ বিন মালিহ থেকে বর্ণনা করেছেন, হিশাম বিন আম্মার ও সুলাইমান বিন আব্দুর রহমান। এভাবে একটি সনদ উপর থেকে চতুর্থ স্তরে এসে দুইটি শাখায় রূপান্তরিত হয়েছে।
(খ)
আব্দুল্লাহ বিন সালেম ও আবু বকর বিন ওয়ালিদের বর্ণনাকৃত সনদ সম্পর্কে উপরে আলোচনা করা হয়েছে। নিম্নে জাররাহ বিন মালিহের বর্ণনাকৃত সনদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ইমাম ইবনে আবি আসিম রহিমাহুল্লাহ (২০৬-২৮১/২৯০ হি.) হাদিসটি তাঁর ‘কিতাবুল জিহাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন,
حَدَّثَنَا هِشَامُ بن عمَّار قال حَدَّثَنَا الجرَّاحُ بن مليحٍ الْبَهْرَانِيُّ، قال حدثنا مُحَمَّدُ بْنُ الْوَلِيدِ الزُّبَيْدِيُّ، عَنْ لُقْمَانَ بْنِ عَامِرٍ الْوُصَابِيِّ، عَنْ عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ عَدِيٍّ الْبَهْرَانِيِّ، عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قال، قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: عِصَابَتَانِ مِنْ أُمَّتِي أَحْرَزَهُمَا اللَّهُ مِنَ النَّارِ: عِصَابَةٌ تَغْزُو الْهِنْدَ، وَعِصَابَةٌ تَكُونُ مَعَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلامُ.
قُلْتُ: إِسْنَادُهُ حَسَنٌ كَمَا مَرَّ فِي الطَّرِيْقِ الْأَوَّلِ لِهَذَا الْحَدِيْثِ.
অর্থ: “হিশাম বিন আম্মার রহিমাহুল্লাহ জাররাহ বিন মালিহ থেকে, তিনি মুহাম্মাদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী থেকে, তিনি লুকমান বিন আমের থেকে, তিনি আব্দুল আ’লা বিন আদি থেকে, তিনি সাওবান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেন; সাওবান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে দুটি দলকে আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। একটি দল, যারা হিন্দুস্তানের যুদ্ধে শরিক হবে। আর দ্বিতীয় দল, যারা ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম-এর সঙ্গী হয়ে যুদ্ধ করবে।” -কিতাবুল জিহাদ, ইবনে আবি আসিম ২/৬৬৫, হাদীস ২৮৮
হাদীসটির বর্ণনা আরো যে সকল কিতাবে রয়েছে- আলমু’জামুল আওসাত, তবারানী ৭/৫৫, হাদীস ৬৭৪১; [5] আলকামিল, ইবনে আদি ২/৪০৮, রাবি ৩৫১; আসসুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৯/২৯৭-২৯৮, হাদীস ১৮৬০০ (বাবু মা জাআ ফি কিতালিল হিন্দ); তা’রীখে দিমাশ্ক, ইবনে আসাকির (মৃত্যু. ৫৭১ হি.) ৫২/২৪৮
উল্লিখিত ইমামগণ এ হাদীসটি নিজ নিজ সূত্রে হিশাম বিন আম্মার রহিমাহুল্লাহ থেকে, তিনি জাররাহ বিন মালিহ থেকে, তিনি মুহাম্মাদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী থেকে, তিনি লুকমান বিন আমের থেকে, তিনি আব্দুল আ’লা বিন আদি থেকে, তিনি সাওবান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন।
হাদীসটির দ্বিতীয় সনদের মান: সনদটি হাসান পর্যায়ের। এই হাদীসের উভয় সনদ মিলে হাদীসটি সহীহ লি-গাইরিহী।
নিম্নে রাবি বা বর্ণনাকারীগণের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেশ করা হলো
১. হিশাম বিন আম্মার (জন্ম ১৫৩ হি., মৃত্যু ২৪৫ হি.)। ইয়াহইয়া বিন মাঈন ও ইজলী তাঁকে ‘ছিক্বাহ’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। নাসাঈ বলেন, لا بأس به (তার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই)। আবু হাতিম বলেন,
هِشَامُ ابْنُ عَمَّارٍ لَمَّا كَبُرَ تَغَيَّرَ فَكُلُّ مَا دُفِعَ إِلَيْهِ قَرَأَهُ وَ كُلَّمَا لُقِّنَ تَلَقَّنَ وَ كَانَ قَدِيْمًا أَصُحُّ وَ كَانَ يَقْرَأُ مِنْ كِتَابِهِ
“হিশাম বিন আম্মার যখন বাধর্ক্যে উপনীত হন, তখন তাঁর হিফয ও স্মৃতিশক্তিতে পরিবর্তন দেখা দেয়; যে কোনো জিনিস তাঁর কাছে পেশ করা হলে তিনি তা পড়ে দিতেন, কোনো কিছু তাঁকে শিখিয়ে দেয়া হলে গ্রহণ করতেন। বার্ধক্যের পূর্বে তিনি অধিকতর বিশুদ্ধ হাদীস বর্ণনাকারী ছিলেন। তখন সর্বদা তার কিতাব থেকে পড়তেন।”-তাহযীবুল কামাল ৭/৪১১, রাবি ৭১৮১; সিয়ারু আলামিন নুবালা ১১/৪২০, রাবি ৯৮
২. জাররাহ বিন মালিহ আশশামী। আবু হাতিম বলেন, صَالِحُ الحَدِيْثِ. (তার হাদীস গ্রহণযোগ্য)। নাসাঈ বলেন, لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ (তার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই)। ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন বলেন,
مَشْهُوْرٌ فِي أَهْلِ الشَّامِ وَ هُوَ لَا بَأْسَ بِهِ، وَ بِرِوَايَاتِهِ، وَ لَهُ أَحَادِيْثُ صَالِحَةٌ جِيَادٌ
“শামের অধিবাসীদের মধ্যে তিনি প্রসিদ্ধ। তার এবং তার বর্ণনায় কোনো ধরণের সমস্যা নেই। বিশুদ্ধতার দিক থেকে বেশ কিছু গ্রহণযোগ্য হাদীস তার রয়েছে।”
ইবনে আদি বলেন, لَهُ أَحَادِيْثُ سِوَى مَا ذَكَرْتُ عَنِ الزُّبَيْدِيِّ (আমি যা উল্লেখ করলাম, এর বাইরেও যুবাইদী থেকে তার আরো হাদীস রয়েছে)। ইবনে হিব্বান ‘কিতাবুছ ছিকাত’-এ তাঁর জীবনী আলোচনা করেছেন, অর্থাৎ তাঁকে হাদীস বর্ণনায় নির্ভরযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। -তাহযীবুল কামাল ১/৪৪২, রাবি ৮৯৪
উক্ত হাদীসের প্রথম সনদের পর্যালোচনায় মুহাম্মাদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী, লুকমান বিন আমের এবং আব্দুল আ’লা বিন আদি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
ইমাম বুখারী এই হাদীসটি সুলাইমান বিন আব্দুর রহমান থেকে, তিনি জাররাহ বিন মালিহ থেকে উপরিউক্ত সনদে বর্ণনা করেছেন। -আত তারীখুল কাবীর, বুখারী ৬/৭২, রাবি ১৭৪৭
নিম্নে ইমাম বুখারীর রাবি বা বর্ণনাকারী সুলাইমান বিন আব্দুর রহমানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি পেশ করা হলো,
সুলাইমান বিন আব্দুর রহমান। (জন্ম ১৫৩ হি., মৃত্যু ২৩৩ হি.)। ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, لَيْسَ بِهِ بَأْسٌ (তার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই)। তিনি আরো বলেন, ثِقَةٌ إِذَا رَوَى عَنِ الْمَعْرُوْفِيْنَ. “যখন তিনি মারুফ বা পরিচিত রাবি থেকে বর্ণনা করবেন, সে ক্ষেত্রে তিনি ‘ছিক্বাহ’ বা নির্ভরযোগ্য।” আবু দাউদ বলেন, ‘ছিক্বাহ’ (নির্ভরযোগ্য)। নাসাঈ বলেন, তিনি সাদুক (সত্যপরায়ণ)।
আবু হাতিম বলেন, صَدُوْقٌ، مُسْتَقِيْمُ الْحَدِيْثِ وَ لكِنَّهُ رَوَى النَّاسَ عَنِ الضُّعَفَاءِ وَ الْمَجْهُوْلِيْنَ. (তিনি সাদুক বা সত্যপরায়ণ, সঠিক হাদীস বর্ণনাকারী, কিন্তু তিনি লোকজনকে দুর্বল ও অপরিচিত ব্যক্তি থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন)।
ইবনে হিব্বান বলেন,
يُعْتَبَرُ حُدِيْثُهُ إِذَا رَوَىَ عَنِ الثِّقَاتِ الْمَشَاهِيْرِ، فَأَمَّا إِذَا رَوَى عَنِ الْمَجَاهِيْلِ فَفِيْهَا مَنَاكِيْرُ
অর্থ: “যখন তিনি মশহুর ছিক্বাহ রাবি থেকে বর্ণনা করেন তখন তার হাদীস গ্রহণযোগ্য। আর যখন তিনি মাজহুল রাবি থেকে বর্ণনা করেন তখন তাতে মুনকার বর্ণনা থাকে।” -তাহযীবুল কামাল ৩/২৮৯, রাবি ২৫২৭
হাদীসটির সনদ বিশ্লেষণের সার সংক্ষেপ
এই হাদীসটি জাররাহ বিন মালিহ থেকে দুইজন রাবি বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবি আসিম, তবারানী, ইবনে আদি, বাইহাকী ও ইবনে আসাকিরের রেওয়ায়াতে ‘হিশাম বিন আম্মার’ রয়েছেন। এবং ইমাম বুখারীর ‘আত তারীখুল কাবীরে’র রেওয়ায়াতে ‘সুলাইমান বিন আব্দুর রহমান’ রয়েছেন।
রাবি হিশাম বিন আম্মারের ব্যাপারে ইয়াহইয়া বিন মাঈন, ইজলী ও নাসাঈ বলেছেন: তিনি ‘ছিক্বাহ’ (নির্ভরযোগ্য)। তবে আবু হাতিম বলেন, ‘যখন তিনি বাধর্ক্যে উপনীত হন, তখন তাঁর হিফয ও স্মৃতিশক্তিতে পরিবর্তন দেখা দেয়।’ কিন্তু তাঁর মুতাবি’ তথা সমর্থক বর্ণনাকারী রয়েছেন সুলাইমান বিন আব্দুর রহমান। সুলাইমান বিন আব্দুর রহমানের বিষয়ে ইয়াহইয়া বিন মাঈন বলেন, যখন তিনি মারুফ বা পরিচিত রাবি থেকে বর্ণনা করবেন, সে ক্ষেত্রে তিনি ছিক্বাহ বা নির্ভরযোগ্য। আর তাঁদের উভয় থেকে বর্ণনা করেছেন জাররাহ বিন মালিহ, যিনি মুহাদ্দিসদের নিকট প্রসিদ্ধ ও ‘ছিক্বাহ’ (নির্ভরযোগ্য)। এছাড়া তাঁর মুতাবাআত করেছেন আব্দুল্লাহ বিন সালেম এবং আবু বকর বিন ওয়ালিদ[6]। সুতরাং রাবিদের পরস্পরের ‘মুতাবাআত’ এর ভিত্তিতে এই সনদে আর সমস্যা রইল না। তাই সনদটি কমপক্ষে হাসান পর্যায়ের।
এই হাদীসের সবগুলো সনদের ‘মাদার’ বা কেন্দ্রীয় ব্যক্তি হলেন ‘মুহাম্মাদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী’। ইমাম তবারানী রহিমাহুল্লাহ (২৬০-৩৬০ হিজরি) ‘আলমুজামুল আওসাত’ গ্রন্থে উক্ত হাদীস বর্ণনা করে বলেন,
لَا يُرَوَى هَذَا الْحَدِيْثُ عَنْ ثَوْبَانَ إِلَّا بِهَذَا الْإِسْنَادِ، تَفَرَّدَ الزُّبَيْدِيِّ.
অর্থ: “এই হাদীস সাওবান (রাযিআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে এই সূত্রেই বর্ণিত, (মুহাম্মাদ বিন ওয়ালিদ) আয-যুবাইদী একাই তা বর্ণনা করেন।” -আলমু’জামুল আওসাত, ত্বাবরানী ৭/৫৫, হাদীস ৬৭৪১
মুহাম্মাদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন তিনজন। যথাক্রমে- ১. আব্দুল্লাহ বিন সালেম, ২. আবু বকর বিন ওয়ালিদ, ৩. জাররাহ বিন মালিহ। অতঃপর আব্দুল্লাহ বিন সালেম ও আবু বকর বিন ওয়ালিদ থেকে বর্ণনা করেছেন বাকিয়্যাহ বিন ওয়ালিদ। আর জাররাহ বিন মালিহ থেকে বর্ণনা করেছেন, হিশাম বিন আম্মার ও সুলাইমান বিন আব্দুর রহমান। তাঁদের অবস্থা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। এভাবে সনদটি উপর থেকে চতুর্থ স্তরে এসে দুইটি শাখায় রূপান্তরিত হয়েছে। সর্বোপরি, উভয় সনদ মিলে হাদীসটি সহীহ লি-গাইরিহী।
Collected
(চলবে, ইনশা আল্লাহ)
[1]. أخرجه ابن عدي (المتوفى 365هـ) في "الكامل" (2/ 58) و ابن عساكر (المتوفى571هـ) في "تاريخ دمشق" (238:52) عن هشام بن عمار قال حدثنا الجراح بن مليح البهراني قال حدثنا محمد بن الوليد الزبيدي عن لقمان بن عامر عن عبد الأعلى البهراني عن ثوبان رضي الله عنه مولى رسول الله صلى الله عليه وسلم به مرفوعا.
[2]. أخرجه البخاري في " التاريخ الكبير " ( 3 / 2 / 72 ) عن سليمان قال حدثنا الجراح بن مليح قال حدثنا الزبيدي عن لقمان بن عامر عن عبد الاعلى بن عدي البهراني عن ثوبان رضي الله عنه به مرفوعا.
[3]. বাকিয়্যা বিন ওয়ালিদ সম্পর্কে চতুর্থ হাদীসের অধীনে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। সামনে পুনরায় সংক্ষেপে বর্ণনা করা হবে।
[4]. একটি আপত্তি ও তার জবাব
শায়খ শুআইব আরনাঊত তাঁর তাহকীককৃত ‘মুসনাদে আহমাদ’ এর টীকায় বলেন, “হাদীসটি হাসান। তবে ‘বাকিয়্যা বিন ওয়ালিদ’ থাকার কারণে এই সনদটি যঈফ। অবশ্য তাঁর মুতাবি’ তথা সমর্থক বর্ণনাকারী রয়েছে। সনদের অন্য রাবিগণ নির্ভরযোগ্য। তবে আবু বকর বিন ওয়ালিদ ‘মাজহুল’ পর্যায়ের। কিন্ত তাঁর মুতাবি’ তথা সমর্থক বর্ণনাকারী রয়েছেন আব্দুল্লাহ বিন সালেম, যিনি রাবি হিসেবে নির্ভরযোগ্য।” -মুসনাদে আহমাদ, ৩৭/৮১, হাদীস ২২৩৯৬
পর্যালোচনা: ‘বাকিয়্যা বিন ওয়ালিদ’ থাকার কারণে এই সনদটি যঈফ’, শায়খ শুআইব আরনাঊতের এই কথাটি যথোপযুক্ত নয়। কেননা, মুদাল্লিস রাবি ‘হাদ্দাছানা’ শব্দে বর্ণনা করলে তাঁর রেওয়ায়াত নির্ভরযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। যেমন, ইমাম নাসাঈ রহিমাহুল্লাহ বলেন, “বাকিয়্যা বিন ওয়ালিদ যখন أَخْبَرَنَا অথবা حَدَّثَنَا শব্দগুলো দ্বারা হাদীস বর্ণনা করবেন, তখন তিনি নির্ভরযোগ্য রাবি হিসেবে গণ্য হবেন। -তাহযীবুল কামাল ১/৩৬৭, রাবি ৭২৬; মীযানুল ই’তিদাল ১/৩৩১, রাবি ১২৫০; তাক্বরীব, রাবি ৭৩৪, পৃ. ১২৬
[5]. একটি ভুল সংশোধনী
হাফেয হাইসামী রহিমাহুল্লাহ এই হাদীসটি ‘মাজমাউয যাওয়াইদ’ কিতাবে উল্লেখ করার পর বলেন,
رَاشِدُ بْنُ سَعَدٍ وَ بَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ الطَّبَرَانِيُّ فِي" الْأَوْسَطِ" وَسَقَطَ تَابِعِيُّهُ وَالظَّاهِرُ أَنَّهُ رَوَاهُ
অর্থ: “তবারানী হাদীসটি ‘মু’জামুল আওসাতে’ রেওয়ায়াত করেছেন এবং তাবেঈ স্তরের রাবির নাম উল্লেখ করেননি। এটা স্পষ্ট যে, উক্ত স্তরের রাবি হলেন রাশেদ বিন সা’দ। সনদের অন্য রাবিগণ ছিকাহ বা নির্ভরযোগ্য।” -মাজমাউয যাওয়াইদ, অধ্যায়: গযওয়াতুল হিন্দ, ৫/২৮২
অবশ্য তিনি তাঁর ‘মাজমাউল বাহরাইন’ কিতাবে মু’জামুল আওসাতের এ হাদীসটি উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করেননি। -মাজমাউল বাহরাইন, অধ্যায়: গযওয়াতুল হিন্দ, ৫/২৬; তাহকীক- আব্দুল কুদ্দুস বিন মুহাম্মাদ নাযির; মাকতাবাতুর রুশদ, রিয়াদ, ১ম সংস্করণ ১৪১৩ হিজরী।
পর্যালোচনা: সম্ভবত হাইসামী রহিমাহুল্লাহ এর কাছে ‘মু’জামুল আওসাতে’র যে নুসখা ছিল তার ভিত্তিতে উপরিউক্ত কথাটি বলেছেন। তিনি বলছেন যে, তাবেঈ স্তরে রাবির নাম হবে, রাশেদ বিন সা’দ!
প্রথমত, এই সনদের কোথাও ‘ইনকিতা’ বিচ্ছিন্নতা নেই। দ্বিতীয়ত, তাঁর কাছে বিদ্যমান ‘মু’জামুল আওসাতে’র নুসখায় তাবেঈ স্তরের যে রাবির নাম ছুটে গেছে, তিনি ‘রাশেদ বিন সা’দ’ নন। বরং তিনি আব্দুল আ’লা বিন আদি, তাঁর থেকে লুকমান বিন আমের, তাঁর থেকে মুহাম্মাদ বিন ওয়ালিদ আয-যুবাইদী, তাঁর থেকে জাররাহ বিন মালিহ, তাঁর থেকে হিশাম বিন আম্মার, তাঁর থেকে ইমাম তবারানীর উস্তায মুহাম্মাদ ইবনে আবু যুরআ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
قال الإمام الطبراني: حَدَّثَنَا محمد بن أبي زرعة، ثَنَا هِشَامُ بن عمَّار، ثنا الجرَّاحُ بن مليحٍ البهراني، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْوَلِيدِ الزُّبَيْدِيِّ، عَنْ لُقْمَانَ بْنِ عَامِرٍ الْوُصَابِيِّ، عَنْ عَبْدِ الْأَعْلَى بْنِ عَدِيٍّ الْبَهْرَانِيِّ، عَنْ ثَوْبَانَ مَوْلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ به مرفوعا.
হাদীসটি অন্যান্য সকল কিতাবে তাবেঈ স্তরে রাবির নাম ‘আব্দুল আ’লা বিন আদি’ উল্লেখ রয়েছে। যেমন- মুসনাদে আহমাদ ৩৭/৮১, হাদীস ২২৩৯৬, তাহক্বীক- শুআইব আরনাঊত; সুনানে নাসাঈ ২/৫২, হাদীস ৩১৭৫; মুসনাদে শামিয়্যিন, তবারানী ৩/৮৯, হাদীস ১৮৫১; আলফিরদাউস, দায়লামী ৩/৩৮, হাদীস ৪১২৪; কিতাবুল জিহাদ, ইবনে আবি আসিম ২/৬৬৫, হাদীস ২৮৮; আলকামিল, ইবনে আদি ২/৪০৮, রাবি ৩৫১; আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকী ৯/২৯৭-২৯৮, হাদীস ১৮৬০০ (বাবু মা- জাআ ফি কিতালিল হিন্দ- হিন্দুস্তানের যুদ্ধের বিষয়ে যা বর্ণিত হয়েছে); তা’রীখে দিমাশক, ইবনে আসাকির ৫২/২৪৮
[6]. ‘ক’ অংশ দ্রষ্টব্য।
Comment