দারুল ইরফান কর্তৃক প্রকাশিত
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-৩
================================================== ===============================
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-৩
================================================== ===============================
এসব নির্বোধদের জন্য কি আমরা জান্নাত ছেড়ে দিব
এ জীবন তো কয়েক দিনের খেলা মাত্র। সুতরাং আমরা কি এসব লোকদের কথার কারণে আমাদের পালনকর্তার জান্নাত ছেড়ে দিব? আল্লাহর কসম! এটা হতে পারেনা! যার এই বিশ্বাস আছে যে, মৃত্যুর সময় নির্ধারিত, সেটার আগপিছ হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই এবং যার এই নিশ্চিত বিশ্বাস আছে যে, রিযিকের পরিমাণ নির্ধারিত। যার মাঝে কমবেশি করণের কোন সুযোগ নেই। সে এসব কথা কখনো মনে নিবেনা। এক হাদিসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাইয়্যেদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. কে বললেন,
عن عبد الله بن عباس رضي الله عنهما قال: كنت خلف النبي صلى الله عليه وسلم فقال: (يا غُلامُ إنِّي أعلِّمُكَ كلِماتٍ، احفَظِ اللَّهَ يحفَظكَ، احفَظِ اللَّهَ تَجِدْهُ تجاهَكَ، إذا سأَلتَ فاسألِ اللَّهَ، وإذا استعَنتَ فاستَعِن باللَّهِ، واعلَم أنَّ الأمَّةَ لو اجتَمعت علَى أن ينفَعوكَ بشَيءٍ لم يَنفعوكَ إلَّا بشيءٍ قد كتبَهُ اللَّهُ لَكَ، وإن اجتَمَعوا على أن يضرُّوكَ بشَيءٍ لم يَضرُّوكَ إلَّا بشيءٍ قد كتبَهُ اللَّهُ عليكَ، رُفِعَتِ الأقلامُ وجفَّتِ الصُّحفُ).[رواه الترمذي]
‘হে বৎস! আমি তোমাকে কয়েকটি কথা শিক্ষা দিচ্ছি, আল্লাহর বিধানাবলীর হেফাজত করো আল্লাহ তোমাকে হেফাজত করবেন। আল্লাহর হকসমূহের হেফাজত করো, তাঁকে তোমার সামনে পাবে। যখন কিছু চাইবে আল্লাহর কাছেই চাইবে! এবং যখন সাহায্য কামনা করবে আল্লাহ তাআলার কাছেই কামনা করবে! এবং মনে রেখ! যদি সকল মানবজাতি মিলেও তোমার কোন উপকার করতে চায় তাহলে তারা তোমার কোন উপকার করতে পারবেনা। তবে ততটুকুই পারবে যা আল্লাহ তোমার ব্যাপারে লিখে দিয়েছেন। এবং তারা সবাই মিলেও যদি তোমার ক্ষতি করতে চায় তাহলে তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। তবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে দিয়েছেন। কলম তুলে নেওয়া হয়েছে এবং লিখিত কাগজসমূহ শুকিয়ে গেছে।’[1]
ইলমের সাথে সাথে আমলও শিক্ষা দিন
এই হাদিস আজও মুসলিমদের শিক্ষা দেওয়া হয়। আজও এই শব্দেই পাঠ করা হয়। এটা আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার বিশেষ অনুগ্রহ। কিন্তু মুসলিম যুব সমাজের দরকার এ হাদিসের শিক্ষার সাথে তার বাস্তব প্রশিক্ষণ। এবং দরকার لا اله الا الله এর দাবীকে প্রকাশ্যে ঘোষণার শিক্ষা দান। তবেই সমস্যার সমাধান চুড়ান্ত হবে। আর যদি ইলম মোতাবেক আমল না কর। তবে এই ইলম তোমার বিপক্ষে যাবে।
ইলমের দুইটি উদ্দেশ্য,
- ইলম অর্জন ।
- তার উপর আমল।
যদি আমি চলেই যেতাম!
অবশেষে বাহিনী রওয়ানা হয়ে গেল। হযরত কা‘ব রাযি. বলেন,
‘আমি এখন তাদের সাথে গিয়ে মিলিত হতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু আমার জন্য তা আর সম্ভব হয়নি।’
ঐ মুহুর্তে তার অন্তর থেকে এই ‘আহ’ শব্দ বের হল," يا ليتني فعلت" ‘হায় আমি যদি চলেই যেতাম!’ এ মহান ও মুবারক যুদ্ধ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সর্বশেষ যুদ্ধ ছিল। এই প্রেক্ষাপটের কারণে তাতে অংশগ্রহণের এ মহান সুযোগ তাঁর হাত ছাড়া হয়ে গেল। যার কারণে তিনি বলেন, ‘হায় যদি আমি চলেই যেতাম! ’
সুতরাং হে আল্লাহর বান্দাগণ! নিজের সুস্থতা, অবসর এবং যৌবনকে গনিমত মনে করুন। এই তো জান্নাতের ময়দান আপনাদের সামনে উন্মুক্ত পড়ে রয়েছে। এক সহীহ হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إنَّ أبْوابَ الجَنَّةِ تَحْتَ ظِلالِ السُّيُوفِ
‘নিশ্চয়ই জান্নাতের দরজাসমূহ তরবারির ছায়াতলে।’ [2]
ইলমের ব্যাপারে সালাফদের রীতি
যখন হযরত আবু মূসা আশআ‘রী রাযি. উপরে উল্লেখিত হাদিস বর্ণনা করলেন তখন এক ব্যক্তি সামনে অগ্রসর হয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু মূসা! আপনি কি নিজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছেন?
একটু এই লোকদের বুঝের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন! তাঁরা ইলমকে শুধু আমলের জন্য অর্জন করতে চাইতেন, শুধু ইলমের আধিক্যের জন্য নয়। যাতে সেই ইলম তাদের বিপক্ষে না দাঁড়ায়। ইলমের সাথে আমল আবশ্যক, তাই হাদিসের সঠিকতার উপর নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি নিজে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একথা বলতে শুনেছেন?’
হযরত আবু মূসা রাযি. বললেন, ‘হ্যাঁ’
এটা শুনে সেই ব্যক্তি তার সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে, বিদায়ী সালাম জানালো এবং নিজের তরবারির খাপ ভেঙ্গে ফেলে ময়দানে চলে গেল। এবং লড়াই করতে করতে শাহাদাতবরণ করল। আল্লাহ তাআলা তাঁদের উপর অগণিত করুণা বর্ষণ করুন। লক্ষ্য করুন! এই হল সাহাবায়ে কেরাম এবং আমাদের আসলাফদের কর্মনীতি।
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, " يا ليتني فعلت" ‘হায়! আমি যদি চলেই যেতাম’।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! এখনও আপনাদের সুযোগ আছে, আপনারা জিহাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সত্যের সাহায্যে বেরিয়ে পড়ন। এমন যেন না হয় যে, একসময় আপনাকেও এই আফসোস করতে হয়, ‘হায়, আমি যদি চলেই যেতাম!’
জিহাদের পথের পবিত্র ধূলিকণা
এক বর্ণনায় রয়েছে যে, একজন নেককার আলেম মৃত্যু শয্যায় ছিলেন। তখন তাঁর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। অথচ তিনি তাকওয়া এবং ইলমে মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠতর ব্যক্তি ছিলেন। তাকে জিজ্ঞাসা কর হল, আপনি কেন কাঁদছেন? তখন তিনি তার পদযুগলের দিকে তাকিয়ে জবাব দিলেন, ‘এজন্য কাঁদছি যে, আমি যে এই কদম কখনো আল্লাহর পথে ধুলোমলিন করিনি।’
নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদিস মুবারক তো আপনারা জেনে থাকবেন যার মাঝে তিনি বলেছেন,
«ما اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ في سَبِيل الله فَتَمَسَّهُ النَّار».
‘যে বান্দার কদম আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হবে, তাকে আগুন স্পর্শ করতে পারেনা।’[3]
‘যে বান্দার কদম আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হবে, তাকে আগুন স্পর্শ করতে পারেনা।’[3]
আল্লাহু আকবার! এটা এমন ইবাদত, যার শুধু ধুলাবালি আপনাকে আগুন থেকে মুক্তি দান করতে পারে। তাহলে সে ব্যক্তির মর্যাদা কেমন হবে, যে নিজের জীবন ও ধন-সম্পদ সব কিছু নিয়ে বের হয়েছে এবং সবকিছু এ পথেই কুরবানি করে দিয়েছে?
[1] সুনানে তিরমিযী: ২৪৪০
[2] মুসলিম
[3] বুখারী
আরও পড়ুন
২য় পর্ব ------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------ ৪র্থ পর্ব
Comment