দারুল ইরফান কর্তৃক প্রকাশিত
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-৬
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-৬
================================================== ===============================
জিহাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য
তবে কি জিহাদের এসব আয়াত এবং বিধি বিধান এজন্য অবতীর্ণ হয়ে ছিল যে, এগুলোকে তার আসল ও সঠিক অর্থ থেকে সরিয়ে অস্পষ্ট এবং অর্থহীন করে দেয়া হবে? এটা তো সেই মহান ইবাদত যার মাধ্যমে সত্য পথ থেকে বিচ্যুত লোকদেরকে স্বীয় রবের ইবাদতে ফিরিয়ে আনা হবে। যেমন সহীহাইনের বর্ণনা রয়েছে,
أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله، وأن محمداً رسول الله، ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة
‘আমাকে নির্দেশ করা হয়েছে যে, আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকব যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল এবং সালাত প্রতিষ্ঠা করবে এবং যাকাত প্রদান করবে।’[1]
যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রবের ইবাদত ব্যাপক করার জন্য কিতালের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। সেখানে আমরা কিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ কর্মপদ্ধতি ছেড়ে দিয়ে লোকদেরকে ইবাদতের দিকে নিয়ে আসবো?! বিশেষ করে যখন ইসলামী ভূখণ্ডগুলোতে চলছে নাস্তিকতার সয়লাব। এবং প্রকাশ্যে অস্বীকার করা হচ্ছে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে।
সুতরাং এসব ব্যাপারে তর্ক বিতর্ক থেকে বিরত থাকুন এবং মানুষকে আপন অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে সেসব আসলাফদের অনুসরণ করা উচিৎ যাদের নেতা ও সর্দার স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
নিজের ভুল স্বীকার প্রভুর ক্রোধ থেকে বাঁচার উপায়
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কসম! যদি আমি আপনাকে ছাড়া অন্য কারো সামনে বসতাম তবে কোন ওজর পেশ করে তার ক্রোধ থেকে বেচে যেতাম। কেননা আমি কথাবার্তায় বেশ পটু। কিন্তু আল্লাহর শপথ! আমি জানি, যদি কোন মিথ্যা বলে দেই এবং আপনাকে সন্তুষ্ট করে দেইও, তবে আল্লাহ তাআলা আপনাকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অচিরেই আমার ব্যাপারে জানিয়ে দিবেন।’
আজকে যখন আপনার কাছে আপনার কোন ভাই জিজ্ঞেস করে যে, তুমি কেন জিহাদে বের হচ্ছনা। তখন আপনার নফস আপনাকে ধোঁকায় ফেলে দেয় এবং আপনি নিজের ভুল স্বীকারের পরিবর্তে সেই ভাইকে মিথ্যা বাহানা শুনিয়ে শুনিয়ে শান্ত করেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা ক্রোধের কারণে জনসাধারণকে আপনার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট করে দিবেন এবং নিশ্চয়ই তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘যদি আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মিথ্যা বলে দেই। এবং তিনি ঐ সময় আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। কিন্তু অচিরেই আল্লাহ তাআলা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে আমার ব্যাপারে অসন্তুষ্টি করে দিবেন। আর যদি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে সত্য বলার কারণে তিনি আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন, সেক্ষেত্রে আমার আশা হল যে, আল্লাহ তাআলা এর পরিণাম ভাল করে দিবেন।’
সত্যবাদী উলামাদের কর্মরীতি
আজ থেকে প্রায় বিশ বৎসর পূর্বের কথা, যখন আমি আমাদের আলেম এবং মাশাইখগণের খিদমতে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে জিহাদে বের হওয়ার দাওয়াত দিতাম। সেই সময় রুশদের বিরুদ্ধে জিহাদের সূচনা হয়ে গিয়েছিল। সেসব আলেমদের মধ্যে অনেকেই এমন ছিলেন যারা জবাবে অসংখ্য ওজর-আপত্তি পেশ করত। তাদের মধ্যে অতি অল্প সংখ্যক এমন লোক ছিলেন যারা হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর মানহাজ-রীতির নিকটবর্তী ছিলেন। আমি অধিকাংশ সময় তাঁদের কতকের এ বাক্য বর্ণনা করে থাকি, ‘হে উসামা! আল্লাহর প্রদত্ত পূণ্যময় এ পথে অবিচল থাকবে! যে পথে তুমি চলছো হকের পথ এবং সঠিক পথ। আমাদের ব্যাপার হলো, আমরা কখনো এ পথে চলে দেখিনি। এজন্যই এই পথকে ভয় পাই, কিন্তু আমরা কখনো তার বিরোধিতা করি না এবং সর্বদাই মানুষ অজানা বিষয়কে ভয় করে থাকে।’
মূলত এই উলামায়ে কেরামগণ জিহাদের ইবাদতের সাথে একেবারে অপরিচিত ছিলেন। কেননা ঐ সময়কাল অনেক দীর্ঘ হয়ে গেছে এজন্যই সমাজে জিহাদকারী লোকের খুব অভাব ছিল।
ভুল স্বীকার
অতঃপর হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার কোন ওজর ছিলনা।’
তিনি আল্লাহর কসম করে বলছেন, তার কোন ওজর ছিলনা। আজও যারা কা‘ব রাযি. এর মানহাজ ও নীতির নিকটবর্তী, তারা ওজর পেশ করার পরিবর্তে নিজের দুর্বলতা স্পষ্টভাবে স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘আল্লাহর কসম! আমার কোন ওজর ছিলনা। আল্লাহর কসম! আমি ইতঃপূর্বে কখনই এত পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ও শক্তিশালী ছিলাম না যখন আপনার (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে পিছনে রয়ে গিয়েছিলাম।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,أَمَّا هَذَا فَقَدْ صَدَقَ، ‘যতদূর বুঝি! সে সম্পূর্ণ সত্য বলেছে।’
নফস তো মিথ্যার উপর উৎসাহিত করে থাকে
হযরত কা‘ব বিন মালিক রাযি. এর উপর আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি সত্য বলার উপর দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
কিন্তু তিনি নিজেই বলেন, যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জিহাদের ময়দান থেকে ফিরে আসার সংবাদ পেলাম, তখন ‘আমি বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা বানাতে শুরু করে দিয়ে ছিলাম।’
হযরত কা‘ব রাযি. এর স্বীকারোক্তি মানবাত্মার স্বভাব জানার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজকাল অধিকাংশ লোকের অবস্থা এই যে, তারা অন্যদের সামনে নিষ্পাপ সেজে বলে, আপনি প্রকৃত ব্যাপার জানেন না! আমার ব্যাপার জিহাদ থেকে পলায়ন নয়! বরং বাস্তবে যদি এ সময়ে জিহাদের গুরুত্ব থাকত তাহলে আমি অবশ্যই বেরিয়ে পড়তাম।
এই মহান সাহাবী যিনি অগ্রগামী সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। সহীহাইনের উক্ত হাদিসে তাকে স্পষ্টভাবে এ স্বীকার করতে দেখা যায় যে, তিনিও সেই নফসানি আকর্ষণের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন। তাহলে আজকে আমাদের মত লোকদের অবস্থা কেমন হবে মানুষকে ঘায়েল করার জন্য নফসের অনেক অস্ত্র আছে। আর শয়তান তো বনী আদমের রগরেখায় চলাচল করে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তার অনিষ্ট থেকে তাঁর আশ্রয়ে রাখেন! কিন্তু আল্লাহ তাআলার তাওফিকে হযরত কা‘ব সততার প্রতিজ্ঞা করেছেন। যা পরিশেষে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অনুগ্রহে তাঁর মুক্তির উপায় হয়েছে। যার আলোচনা আমরা ইনশাআল্লাহ সামনে করব।
[1] বুখারী
আরও পড়ুন
Comment