দারুল ইরফান কর্তৃক প্রকাশিত
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-১০
================================================== ===============================
কা‘ব বিন মালেক রাযি. এর ঘটনা থেকে শিক্ষা
শায়খ আবু আব্দুল্লাহ উসামা রহ.
এর থেকে
পর্ব-১০
================================================== ===============================
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মজলিসে উপস্থিতি
তিনি বলেন, ‘যখন সে সুসংবাদদাতা আমার কাছে পৌঁছল, ‘যার আওয়াজ আমি শুনেছিলাম’ তখন তাকে আমার কাপড় দুটি খুলে দিয়ে দিলাম এবং এক প্রতিবেশী থেকে পোশাক ধার নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দরবারে উপস্থিত হলাম। আল্লাহর কসম! সেদিন আমি এই এক পোশাক ছাড়া অন্য কোন বস্তুর মালিক ছিলাম না।’
একটু লক্ষ্য করুন নিজেদের আসলাফদের দিকে!
হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘লোকেরা দলে দলে আমাকে মুবারকবাদ জানাচ্ছিল। সর্বপ্রথম তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ রাযি. তীব্র গতিতে অগ্রসর হলেন এবং আমার সাথে মুসাফা করে আমাকে মুবারকবাদ জানালেন।’
হযরত কা‘ব রাযি. সাইয়্যেদুনা তালহা রাযি. এর এ আচরণ সারা জীবন ভুলতে পারেন নি। অতঃপর তিনি বলেন, আমি উপস্থিত হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম করলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চেহারা মুবারক খুশিতে ঝলমল করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাওবা কবুলের বিষয়টি আপনার পক্ষ থেকে, নাকি মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষে থেকে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না, বরং মহান আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে।’
তাওবার অসাধারণ গুরুত্ব
হযরত কা‘ব রাযি. আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমার তাওবা এটা ব্যতীত পূর্ণ হবেনা যে, আমি নিজের সমুদয় সম্পদ থেকে রিক্তহস্ত হবো এবং এগুলো আল্লাহর রাহে সাদাকা করে দেব।’
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এক তৃতীয়াংশ সম্পদ সাদাকা করা তোমার জন্য যথেষ্ট।’
এই ঘটনা থেকে সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর জীবনে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর গুরুত্ব আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়। হযরত কা‘ব রাযি. প্রায় সব যুদ্ধে শরীক হয়ে ছিলেন। শুধুমাত্র একবার পিছনে থেকে গিয়ে ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি কাফফারা স্বরূপ সমস্ত সম্পদ সাদাকা করে দিতে চেয়েছেন।
আজ আপনার সমুদয় সম্পদও চাওয়া হচ্ছেনা। অথচ তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলারই সম্পদ! সুতরাং সুযোগের এইমুহুর্ত গুলোকে গনিমত মনে করে আল্লাহর রহে বেরিয়ে পড়ুন, – মৃত্যু আসার পূর্বেই সুযোগ গ্রহণ করুন। অতীত জীবনে ধোঁকায় পড়ে ছিলেন-এ অনুভূতি হওয়ার পূর্বেই আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়ুন।
জিহাদের পথে অতিবাহিত একটি মুহূর্ত
সহীহ হাদিসে রয়েছে যে, নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
قِيامُ ساعةٍ في الصَّفِّ للقتالِ في سبيلِ اللهِ خيرٌ من قيامِ سِتِّينِ سَنَةً
আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধের কাতারে এক মুহূর্ত অবস্থান করা ষাট বছর ইবাদতের চেয়ে উত্তম। [1]
হে তরুণ! দ্বীনের সাহায্যে ইহুদী, খৃস্টান ও তাদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে কিছু সময় জিহাদের ময়দানে যেতে পার। আল্লাহর মেহেরবানিতে এখনও পথ খোলা। প্রশিক্ষণ প্রস্তুতিও সহজ। অথচ তুমি বসে আছ। এর চেয়ে নির্বুদ্ধিতা আর হতে পারে?
এই ফজিলত তো ফরজে কেফায়া অবস্থায়। অথচ আজকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের উপর ফরজে আইন হয়ে রয়েছে।
অপর এক হাদিসে এসেছে
,رباطُ شَهرٍ خيرٌ من صيامِ دَهرٍ
‘এক মাস রিবাত করা (ইসলামী ভূখণ্ডের সীমানা পাহারা দেয়া) সারা জীবন রোজা রাখার চেয়ে উত্তম।’ [2]
সুতরাং এই ফজিলতসমূহ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনেক বড় দয়া ও অনুগ্রহ। শুধুমাত্র নির্বোধরাই এই ফজিলত থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
সত্যের মাঝেই মুক্তি
এরপর হযরত কা‘ব রাযি. বলেন, ‘আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি খায়বারে প্রাপ্ত গণিমত রেখে দিচ্ছি (এবং অবশিষ্ট সম্পদ সাদাকা করে দিচ্ছি) এবং আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ আমাকে সত্য বলার কারণে মুক্তি দিয়েছেন। এজন্য আমার তাওবা কবুল হওয়ার দাবী এটাও যে, আমি ভবিষ্যতে সর্বদা সত্যের উপর অবিচল থাকবো।’
এখানে তিনি নিজের উপর আল্লাহ তাআলার এই অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করছেন যে, আল্লাহ তাআলা তাঁকে সত্য বলার তাওফিক দিয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটা তাঁর প্রতি আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তাআলার মহান অনুগ্রহ ছিল এবং এই সততাই তাঁকে ধ্বংস এবং রববাদীর গর্ত থেকে রক্ষা করেছে। যার মাঝে অন্যরা পড়ে গিয়েছে। এইসব মিথ্যা প্রলাপকারীদের ব্যাপারে তো আল্লাহ তাআলা এমন কঠিন শব্দ ব্যবহার করেছেন যা অন্য কারো জন্য ব্যবহার করেননি। কেননা, এরা দ্বীনের সাহায্য ছেড়ে পিছনে বসেছিল। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সূরা তাওবার আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করে তাদের অবস্থা, তাদের গুণাবলী কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এবং তাদের নিফাক, কপটতার গোপন রহস্য প্রকাশ করে দিয়েছেন। তাই এ সূরাকে চিন্তা-ফিকিরের সাথে পড়া চাই!
[1] কানযুল উম্মাল-১০৬০৯
[2] কানযুল উম্মাল: ১০৫১২
আরও পড়ুন
Comment