আন নাসর মিডিয়া
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৪
==================================================
===============================
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৪
==================================================
===============================
নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা
ভাইয়েরা আমার! আরও দেখুন! রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু স্বীয় আদর্শ দিয়ে নিরাপত্তা শিখিয়েছেন বিষয়টি এমন নয়। বরং বিষয়টি কুরআনেও এসেছে (যার আলোচনা পূর্বে গত হয়েছে)। অন্যদিকে রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে বলেছেন-
إستعينوا على قضاء الحوائج بكتمانها أو إستعينوا على قضاء الحوائج بالكتمان
“তোমরা তোমাদের হাজত পূর্ণ করার সময় গোপনীয়তা অবলম্বন কর।”
এ থেকে বুঝে আসে যে, যখন তোমরা কোন কাজ করতে চাও, তা গোপন রাখ- চাই সেটি জিহাদী কাজ হোক বা অন্য কোন কাজ। আমাদের সব কাজই তো জিহাদী কাজের অংশ। কোন কাজই জিহাদী কাজের আওতামুক্ত নয়। এই জন্য একজন আমাদেরকে খানা-পিনা ও ঘরোয়া বিষয়াদীর ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ, আমাদের খানা-পিনা সংক্রান্ত কোন ধরণের অসতর্কতার কারণে দুশমনের কাছে তথ্য চলে যেতে পারে। যেমন, এই ঘরে এই এই সামানা যাচ্ছে, অথচ ঘরওয়ালারা এই সামানা ব্যবহার করে না। তাহলে মনে হয়, তাদের ঘরে মুহাজির রয়েছে। এই ধরনের সংবাদ তাদের কাছে যাওয়ার দ্বারা আমাদের কি পরিমাণ ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে? কত ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগবে? তাই আমাদের পুরো যিন্দেগী-ই জিহাদের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং বিল কিতমান তথা গোপনীয়তার বিষয়টি সকল মুসলমানদের জন্যই প্রযোজ্য।
অন্য হাদিসে এসেছে- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং ইরশাদ করেছেন- فإن كل ذى نعمة محصود “নিশ্চয় প্রত্যেক নেয়ামতের অধিকারী ব্যক্তিকে হিংসার শিকার হতে হয়।” শয়তান অন্যের মনে তার প্রতি হিংসা সৃষ্টি করে। এ কারণে আপনি যদি আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে কোন নেয়ামত প্রাপ্ত হন, তাহলে যেহেতু কুরআনে আছে- وَأَمَّا بِنِعْمَةِ رَبِّكَ فَحَدِّثْ ﴿الضحى: ١١﴾ “এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।”(সূরা দোহা : ১১) সে হিসেবে আপনিও বর্ণনা করতে পারেন। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে, যখন কোন নেয়ামত অর্জনে সময় ব্যয় হয় এবং তা গোপন রাখার মধ্যে কোন সমস্যা না থাকে বরং উপকারিতা থাকে, তখন তা গোপন রাখাই উত্তম।
আরও একটি বিষয় দেখুন! অনেক সময় আমাদের মাঝে যখন কথোপকথন হয়, কোন এক সাথী দু’একটি কথা বললে দেখা যায় তৃতীয় কোন সাথী তা শুনতে থাকে। অথবা যখন কারো কোন চিঠি আসে, তখন আমরা সেই চিঠিকে চূড়ান্ত পর্যায়ের কোন শরয়ী প্রয়োজন বা জিহাদী প্রয়োজন ব্যতিরেকেই খুলে দেখি। আমরা খুলব না, ইনশা আল্লাহ। তবে আমি শুধু মাসআলাটি বর্ণনা করছি। কারণ তা অনেক বড় গুনাহ।
দেখা যায়- কোন সাথী কম্পিউটারে কিছু লিখছে, অন্য সাথী উঁকি মেরে দেখে; সে কি লিখছে? অথবা যিম্মাদার বা যিম্মাদার নয় এমন দু’জন মুজাহিদ সাথী পরস্পর কথা বলছে; জিহাদী বিষয়ে বা অন্য কোন বিষয়ে অথবা কোন জায়গায় স্থানান্তর হওয়া প্রসঙ্গে। তৎক্ষনাৎ শয়তান আমাদের কাছে এসে উপস্থিত হয় ও খুব বেশী ওয়াসওয়াসা দিতে থাকে। শয়তান বলে, একটু ওদিকে কান দাও... এমনটিই হয়। এটাও এক প্রকার গোপন বিষয় অনুসন্ধান। আর গোপন বিষয় অনুসন্ধান করতে আল্লাহ তা‘আলা নিষেধ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন-
﴿الحجرات: ١٢﴾...وَلَا تَجَسَّسُوا “আর তোমরা কারো গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না।”(সূরা হুজুরাত : ১২)
তাহলে বুঝা গেল, কারো গোপন বিষয় অনুসন্ধান করা নিষেধ। কিন্তু যখন একটা ঘটনা ঘটে, তখন জরুরী ভিত্তিতে কান সে দিকে খাড়া হয়ে যায়। অন্য দিকে তাকালেও কান সেদিকেই পড়ে থাকে। এদিকে আমি কাজ করছি বা কিতাব দেখছি, কিন্তু কান সে দিকেই পড়ে আছে। এভাবে আমার কাছে অনেক তথ্য একত্রিত হয়। আর যখন আমার কাছে তথ্যগুলো একত্রিত হয়, আল্লাহ না করুন! আল্লাহ না করুন!! আল্লাহ না করুন!!! যদি আমার গ্রেফতারীর পরীক্ষা চলে আসে, তখন কি অবস্থা হবে? কারণ আমরা সবাই জানি, যখন কেউ গ্রেফতার হয়, তখন তাকে বড় একটা ডায়েরী দেওয়া হয়। আর বলা হয়, জিহাদী কাজে তোমার যতটুকু সময় অতিবাহিত হয়েছে এবং সে সময়ে যত তথ্য তোমার কাছে রয়েছে, সেসব তথ্য এখানে লিখে দাও। তখন সে তার জিহাদী জীবনের যত স্মৃতি আছে, সব সেখানে লিখে দেয়। তার স্মরণে যা ছিলো তা লিখে দেয়ার পর যখন সে বলে, আমার স্মরণে যা ছিলো, তার সব আমি লিখে দিয়েছি। তখন পুনরায় তাকে বাধ্য করা হয় যে, তোমার আরো যা যা স্মরণ হয়, তাও লিখ। যখন এ তথ্যগুলো তাদের হাতে চলে যায়। তখন বলা হয়, তুমি তো অমুকের সাথে ছিলে, অমুক থেকে যা শুনেছে তাও লিখ।
আমার ভাইয়েরা! আপনারা যত কথা শুনছেন, তা সবই আমানত। এটা জিহাদের আমানত। এ কারণে আমি যদি তখন বলি যে, আমি অমুক জায়গায় বসা ছিলাম। আমার পাশে দু’ব্যক্তি একথা বলছিল, আর আমি তা শুনছিলাম... এভাবে তখন স্মৃতিতে যা আসে, আমি যদি তাদের সব বলে দেই, তখন কি হবে? জিহাদের ক্ষতি হবে। অতিমাত্রার কঠোরতার কারণে সেখানে আপনি লিখতে বা বলতে বাধ্য হবেন। এ বিষয়ে হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসার রাযি. এর একটি ঘটনা আমাদের সামনে আছে। অতিমাত্রার কঠোরতার কারণে হয়তো আপনার জন্য গোপন তথ্য প্রকাশ করা বৈধ হবে। কিন্তু এতে জিহাদের ক্ষতি হবে বা সমূহ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ জন্যই যদি আপনি কান লাগিয়ে এমন কথা শুনেন, যা আপনার কোন কাজে আসবে না। বরং যদি আপনি সে দিকে কান না দেন, তারপরও আপনার জিহাদ এবং যিন্দেগী খুব আরামে কাটবে। তথাপি যদি শুধু শুধু অপরের দোষ অনুসন্ধানের প্রতি আগ্রহের কারণে তার কথা শুনে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আল্লাহর নিকট আপনি জবাবদিহিতার সম্মুখীন হবেন।
হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- (এ ব্যাপারে এই হাদিস অত্যন্ত ভীতিকর অবস্থার বর্ণনা দেয়)
وَمَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَديثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ ، صُبَّ في أُذُنَيْهِ الآنُكُ يَوْمَ القِيَامَةِ… رواه البخاري
“যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের কথা কান লাগিয়ে শুনে, অথচ তারা চাচ্ছেনা যে বিষয়টি ঐ ব্যক্তি শুনুক। তাহলে কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত সিসা ঢেলে দেওয়া হবে।” (বুখারী)
ধরুন- দু’জন লোক কথা বলছে। আর তৃতীয় জন তাদের কথা শুনছে, অথচ তারা তা অপছন্দ করছে, এরপরেও সে শুনেছে। তাহলে কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত সিসা ঢেলে দেয়া হবে। এটা কত বড় মারাত্মক বিষয় যে, সিসা গলিয়ে এমন ব্যক্তির কানে ঢেলে দেয়া হবে! তার কারণ, তারা দু’জন যখন কথা বলছে, তখন তৃতীয় ব্যক্তি তা শুনুক, তারা তা চায়নি। বিষয়টি একেবারেই তাদের নিজস্ব। কিন্তু এই লোক শুনেছিলো। অন্যদিকে চিঠি সম্পর্কিত তার কোন যিম্মাদারী ছিলো না (তারপরও সে লুকিয়ে দেখেছে)। জিহাদী বা শরয়ী কোন প্রকার যিম্মাদারীই তার ছিলো না, যে কারণে চিঠিটি পড়া তার জন্য বৈধ হতে পারতো। সে চিঠিটি এ জন্য পড়ে ছিলো যে, আজকাল লোকেরা কি চিন্তা করছে? শুধু তা জানার জন্য। তো এসব কিছুই এ হাদিসেরই অধীনে অন্তর্ভুক্ত হবে।
একজনের কম্পিউটার খোলা, লোকটি স্বীয় কাজে ব্যস্ত, কোন লেখা লিখছে বা কোন গুরুত্বপূর্ণ জিহাদী কাজ করছে। যখনই কাজ থেকে মন সরে গেল, তখন দেখল যে, তিনি যা লিখছেন, তা একজন দেখছে। এটি স্পষ্টত: চোখের খেয়ানত। চোখের খিয়ানত সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা অবগত। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ ﴿غافر: ١٩﴾
“চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন।” (সূরা গাফির [মু’মিন] : ১৯)
“চোখের চুরি এবং অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন।” (সূরা গাফির [মু’মিন] : ১৯)
তাহলে বুঝা গেল- বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর ও ভয়াবহ।
আরও পড়ুন
Comment