কাফিরের রক্ত হালাল: জুমহুর কর্তৃক প্রত্যাখাত মত
কাফিরের রক্তের মূলনীতি হল তা হালাল- এটা জুমহুরের (অধিকাংশ 'উলামা`দের) বক্তব্য নয়। জুমহুরের মতে কাফিরের রক্ত যুদ্ধে লিপ্ত হবার আগ পর্যন্ত হালাল হয় না।
জুমহুরের মাযহাবঃ
الكافر الأصلي الذي ليس هو من أهل القتال، فإنه لا يقتل عند أكثر العلماء كأبي حنيفة ومالك وأحمد.
অধিকাংশ উলামা` যেমনঃ আবু হানীফা (রহঃ), মালিক (রহঃ), আহমাদ (রহঃ) এর মতে- মুরতাদ নয় এমন কাফির (কাফির আসলি) যদি যুদ্ধে সম্পৃক্ত (আহলুল ক্বিতাল) না হয়, তবে তাদের হত্যা করা যাবে না।
সুত্রঃ islamqa.info/ar/107105
জুমহুরের মাযহাব উল্লেখ করে শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়্যাহ (রহঃ) তার মাজমু' আল ফাতাওয়া [২০/১০১-১০২] গ্রন্থে লিখেন-
فَأَبُو حَنِيفَةَ رَأَى أَنَّ الْكُفْرَ مُطْلَقًا إنَّمَا يُقَاتَلُ صَاحِبُهُ لِمُحَارَبَتِهِ فَمَنْ لَا حِرَابَ فِيهِ لَا يُقَاتَلُ وَلِهَذَا يَأْخُذُ الْجِزْيَةَ مِنْ غَيْرِ أَهْلِ الْكِتَابِ الْعَرَبِ وَإِنْ كَانُوا وَثَنِيِّينَ. وَقَدْ وَافَقَهُ عَلَى ذَلِكَ مَالِكٌ وَأَحْمَد فِي أَحَدِ قَوْلَيْهِ وَمَعَ هَذَا يَجُوزُ الْقَتْلُ تَعْزِيرًا وَسِيَاسَةً فِي مَوَاضِعَ. وَأَمَّا الشَّافِعِيُّ فَعِنْدَهُ نَفْسُ الْكُفْرِ هُوَ الْمُبِيحُ لِلدَّمِ إلَّا أَنَّ النِّسَاءَ وَالصِّبْيَانَ تُرِكُوا لِكَوْنِهِمْ مَالًا لِلْمُسْلِمِينَ
ইমাম আবু হানীফার (রহঃ) সিদ্ধান্ত হচ্ছে: কুফরের কারণে তার ধারকের (কাফের) সাথে লড়াই কেবল তখনই হতে পারে, যখন সে লড়াই করবে। আর যে লড়াইয়ে অংশ নিবে না, তার বিরূদ্ধে লড়াই করা যাবে না। আর একারণেই আহলে কিতাব না হয়ে মূর্তিপূজক হওয়া সত্ত্বেও আরবদের কাছ [যুদ্ধ না করে] থেকে জিযিয়া নেয়া হয়েছিল এবং এ বিষয়ে ইমাম মালিক (রহঃ), আহমদ (রহঃ) তার সাথে একমত পোষণ করেছেন (তার দুইমতের একটি অনুযায়ী)। তবে এটা সত্ত্বেও শাস্তি হিসেবে কিংবা রাজনৈতিক কারণে কাফেরকে হত্যা করা কিছু ক্ষেত্রে জায়েয আছে। আর ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মতে স্বয়ং কুফরই রক্ত মুবাহ (হালাল) হওয়ার কারণ। তবে নারী-শিশুদের হত্যা করা হয় না, কারণ তারা মুসলিমদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়ে থাকে।
শায়খুল ইসলাম (রহঃ) অন্যত্র জুমহুরের মাযহাবকেই সঠিক প্রমাণ করে লিখেনঃ
فإن الأصل أن دم الآدمي معصوم لا يقتل إلا بالحق وليس القتل للكفر من الأمر الذي اتفقت عليه الشرائع ولا أوقات الشريعة الواحدة كالقتل قودا فإنه مما لا تختلف فيه الشرائع ولا العقول
মূলনীতি হচ্ছে যেকোন আদম সন্তানের রক্ত মা'সুম (অর্থাৎ রক্ত ঝরানো থেকে বিরত থাকতে হবে)। কোন ন্যায় সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা যাবে না। শুধু কুফরের কারণে তাকে হত্যা করা এমন একটি বিষয়, যার ব্যাপারে শরীয়াহর বিধানসমূহ কোন একটি সময়ের জন্যও একমত হয় নি, যেমনটি কিসাস (القَوَدُ القِصاصُ - লিসানুল 'আরব) হিসেবে হত্যা করার ব্যাপারে হয়েছে, এমনকি বিবেকও (আক্বল) এতে একমত হয় না।
[আস সারিম আল মাসলুল, পৃ. ১০৪]
ইমাম আস সারাখসী আল হানাফী (রহঃ) (৪৮৩ হি.) লিখেন:
إن الآدمي في الأصل محقون الدم والإباحة بعارض القتال فإذا زال ذلك بعقد الذمة عاد الحقن الأصلي
"মৌলিকভাবে একজন মানুষের রক্ত ঝরানো নিষেধ এবং (রক্ত ঝরানোর) বৈধতা কেবল তার যুদ্ধে সম্পৃক্ততার কারণেই হয়। আর যখন এটি (যুদ্ধে সম্পৃক্ততা) যিম্মাহর চুক্তির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়ে যায়, তার (রক্ত ঝরানোর) নিষেধাজ্ঞা পুনরায় ফিরে আসে।”
["আল-মাবসুত", ১০/৮১]
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) কাফির নারীদের ব্যাপারে বলেন:
قتل المرأة لمجرد الكفر لا يجوز ولا نعلم قتل المرأة الكافرة الممسكة عن القتال أبيح في وقت من الأوقات
"একজন নারীকে কেবল কুফরের কারণে হত্যা করা জায়েয নয়, এবং আমরা এমন কোন সময়ের কথা জানি না যখন যুদ্ধ থেকে বিরত নারী হত্যার বৈধতা দেয়া হয়েছিল"।
["আস সারিম আল মাসলুল", পৃ. ১০১]
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব আল হিদায়াহ-তে ৩/২৮০-২৮১ আল্লামা মারগিনানী (রহঃ) লিখেন-
ولا يقتلوا امرأة ولا صبيا ولا شيخا فانيا ولا مقعدا ولا أعمى لأن المبيح للقتل عندنا هو الحراب ولا يتحقق منهم ولهذا لا يقتل يابس الشق والمقطوع اليمنى والمقطوع يده ورجله من خلاف والشافعي رحمه الله تعالى يخالفنا في الشيخ الفاني والمقعد والأعمى لأن المبيح عنده الكفر والحجة عليه ما بينا وقد صح أن النبي عليه الصلاة والسلام نهى عن قتل الصبيان والذراري
"এবং নারী, শিশু, অতিবৃদ্ধ, পঙ্গু, অন্ধকে হত্যা করা যাবে না কেননা আমাদের (হানাফীদের) কাছে হত্যার বৈধতা দাণকারী হচ্ছে যুদ্ধে অংশগ্রহণ, যা এদের মাঝে পাওয়া যায় না। আর একই কারণে একপাশ অচল, ডানহাত কর্তিত, বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কর্তিতদেরও হত্যা করা যাবে না। তবে ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মত ভিন্ন। তিনি অতিবৃদ্ধ, পঙ্গু, অন্ধের ব্যাপারে আমাদের সাথে মতবিরোধ করেছেন কেননা তার নিকট হত্যার বৈধতা দাণকারী হচ্ছে কুফর। আর তার বিরূদ্ধে দলীল হচ্ছে নবী সাঃ থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীস যেখানে তিনি নারী-শিশু হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।"
জমহুরের বক্তব্য পরিত্যাগ করে কাফিরদের রক্তকে হালাল বলা নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক।
হ্যাঁ, তবে কাফির যদি হারবী হয়, নারী-শিশু না হয় তবে সমস্যা নেই। কিন্তু গুলশান হামলায় ৮/৯ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের রক্ত হালাল ছিল না। সুতরাং এ কেমন বাছ-বিচার! খারেজীরা তো শরীয়াহর তোয়াক্কা করে না, তারা তাদের সুবিধামত ফতোয়া-শপিং করে, তাই বলে আমরা সহীহ মানহাজের দাবীদার হয়েও এমন কথা বলব?
শায়খ আবু মুহাম্মদ মাকদীসী হাফিযাহুল্লাহ লিখেন,
فمعلوم انه لا يجوز في ديننا أن يعمد إلى قتل الصبيان والنساء غير المقاتلات ونحوهم، فقد فسر أهل العلم - ومنهم حبر القرآن ابن عباس رضي الله عنه - قوله تعالى: {ولا تعتدوا} بقوله: لا تقتلوا النساء والصبيان والشيخ الكبير
وروى مسلم في "باب؛ نساء غازيات... والنهي عن قتل أهل الحرب"، عن ابن عباس رضي الله عنه أيضاً قوله: وإن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يقتل الصبيان، فلا تقتل الصبيان إلا أن تكون تعلم ما علم الخضر من الصبي الذي قتل
وروى الامام أحمد والحاكم والبيهقي وغيرهم عن الأسود بن سريع أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ما بال قوم جاوزهم القتل حتى قتلوا الذرية؟! ألا لا تقتلوا ذرية، ألا لا تقتلوا ذرية
والأدلة في هذا الباب مشهورة، بل أفتى مالك والأوزاعي بأكثر من هذا فقالوا: (لا يجوز قتل النساء والصبيان بحال، حتى لو تترس أهل الحرب بالنساء والصبيان أو تحصنوا بحصن أو سفينة وجعلوا معهم النساء والصبيان؛ لم يجز رميهم ولا تحريقهم أهـ.
এটা তো জানা কথা যে আমাদের দ্বীনে যোদ্ধা নয় এমন নারী, শিশু এবং তাদের মত অন্যান্যদের আক্রমণের লক্ষ্য বানানো জায়েয নয়। আহলুল ইলম যেমন হিবরুল কুরআন ইবনু আব্বাস রাঃ (এবং সীমালঙ্ঘন করো না ২:১৯০) এর ব্যাখ্যা করেছেন: নারী, শিশু, অতিবৃদ্ধদের হত্যা করো না।
সহীহ মুসলিমে ইবনু আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে- রাসুল সাঃ শিশুদের হত্যা করতেন না, তোমরাও শিশুদের হত্যা করো না। তবে খাযির আঃ এর মত যদি তোমাদের (গায়বের) জ্ঞান থেকে থাকে তবে করতে পার। ইমাম আহমদ, হাকিম, বায়হাক্বী এবং অন্যান্যরা আসওয়াদ বিন সারী' থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেনঃ "লোকেদের কী হল তারা হত্যার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করছে? সাবধান তোমরা শিশুদের হত্যা করো না। সাবধান তোমরা শিশুদের হত্যা করো না"
আর এ সংক্রান্ত দলীল-প্রমাণগুলোও মশহুর। বরং ইমাম মালিক, আওযায়ী রহঃ ফতোয়া দিয়েছেন, কোন অবস্থাতেই নারী এবং শিশুদের হত্যা করা জায়েয নয়, এমনকি শত্রু যদি নারী-শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আত্মরক্ষা করতে চায়, তবেও নয়। এমনকি যদি তারা নারী এবং শিশু নিয়ে দূর্গে অবস্থান করে কিংবা জাহাজে আরোহণ করে, তবে তাদের উদ্দেশ্যে তীর ছোড়া কিংবা অগ্নিসংযোগ করাও জায়েয নয়।
কিতাবঃ حسن الرفاقة في أجوبة سؤالات سواقة, পৃষ্ঠাঃ ৩৮।
কই? শায়খ মাকদীসী তো কাফির তাই রক্ত হালাল, এই যুক্তি দিয়ে নারীদের হত্যার ফতোয়া দিলেন না????
সমস্ত বিবেচনায় যুদ্ধ ব্যাতিরেকে কাফিরদের রক্ত হালাল গণ্য না করাই শ্রেয়। কারণ ফুকাহাদের নীতি হচ্ছে, কোন বিষয় সম্পর্কে হালাল এবং হারাম দুইটি মতই পাওয়া গেলে, হারামের মতটিই প্রাধাণ্য পাবে, কেননা এটাই নিরাপদ।
কাফিরের রক্তের মূলনীতি হল তা হালাল- এটা জুমহুরের (অধিকাংশ 'উলামা`দের) বক্তব্য নয়। জুমহুরের মতে কাফিরের রক্ত যুদ্ধে লিপ্ত হবার আগ পর্যন্ত হালাল হয় না।
জুমহুরের মাযহাবঃ
الكافر الأصلي الذي ليس هو من أهل القتال، فإنه لا يقتل عند أكثر العلماء كأبي حنيفة ومالك وأحمد.
অধিকাংশ উলামা` যেমনঃ আবু হানীফা (রহঃ), মালিক (রহঃ), আহমাদ (রহঃ) এর মতে- মুরতাদ নয় এমন কাফির (কাফির আসলি) যদি যুদ্ধে সম্পৃক্ত (আহলুল ক্বিতাল) না হয়, তবে তাদের হত্যা করা যাবে না।
সুত্রঃ islamqa.info/ar/107105
জুমহুরের মাযহাব উল্লেখ করে শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়্যাহ (রহঃ) তার মাজমু' আল ফাতাওয়া [২০/১০১-১০২] গ্রন্থে লিখেন-
فَأَبُو حَنِيفَةَ رَأَى أَنَّ الْكُفْرَ مُطْلَقًا إنَّمَا يُقَاتَلُ صَاحِبُهُ لِمُحَارَبَتِهِ فَمَنْ لَا حِرَابَ فِيهِ لَا يُقَاتَلُ وَلِهَذَا يَأْخُذُ الْجِزْيَةَ مِنْ غَيْرِ أَهْلِ الْكِتَابِ الْعَرَبِ وَإِنْ كَانُوا وَثَنِيِّينَ. وَقَدْ وَافَقَهُ عَلَى ذَلِكَ مَالِكٌ وَأَحْمَد فِي أَحَدِ قَوْلَيْهِ وَمَعَ هَذَا يَجُوزُ الْقَتْلُ تَعْزِيرًا وَسِيَاسَةً فِي مَوَاضِعَ. وَأَمَّا الشَّافِعِيُّ فَعِنْدَهُ نَفْسُ الْكُفْرِ هُوَ الْمُبِيحُ لِلدَّمِ إلَّا أَنَّ النِّسَاءَ وَالصِّبْيَانَ تُرِكُوا لِكَوْنِهِمْ مَالًا لِلْمُسْلِمِينَ
ইমাম আবু হানীফার (রহঃ) সিদ্ধান্ত হচ্ছে: কুফরের কারণে তার ধারকের (কাফের) সাথে লড়াই কেবল তখনই হতে পারে, যখন সে লড়াই করবে। আর যে লড়াইয়ে অংশ নিবে না, তার বিরূদ্ধে লড়াই করা যাবে না। আর একারণেই আহলে কিতাব না হয়ে মূর্তিপূজক হওয়া সত্ত্বেও আরবদের কাছ [যুদ্ধ না করে] থেকে জিযিয়া নেয়া হয়েছিল এবং এ বিষয়ে ইমাম মালিক (রহঃ), আহমদ (রহঃ) তার সাথে একমত পোষণ করেছেন (তার দুইমতের একটি অনুযায়ী)। তবে এটা সত্ত্বেও শাস্তি হিসেবে কিংবা রাজনৈতিক কারণে কাফেরকে হত্যা করা কিছু ক্ষেত্রে জায়েয আছে। আর ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মতে স্বয়ং কুফরই রক্ত মুবাহ (হালাল) হওয়ার কারণ। তবে নারী-শিশুদের হত্যা করা হয় না, কারণ তারা মুসলিমদের সম্পত্তিতে পরিণত হয়ে থাকে।
শায়খুল ইসলাম (রহঃ) অন্যত্র জুমহুরের মাযহাবকেই সঠিক প্রমাণ করে লিখেনঃ
فإن الأصل أن دم الآدمي معصوم لا يقتل إلا بالحق وليس القتل للكفر من الأمر الذي اتفقت عليه الشرائع ولا أوقات الشريعة الواحدة كالقتل قودا فإنه مما لا تختلف فيه الشرائع ولا العقول
মূলনীতি হচ্ছে যেকোন আদম সন্তানের রক্ত মা'সুম (অর্থাৎ রক্ত ঝরানো থেকে বিরত থাকতে হবে)। কোন ন্যায় সঙ্গত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করা যাবে না। শুধু কুফরের কারণে তাকে হত্যা করা এমন একটি বিষয়, যার ব্যাপারে শরীয়াহর বিধানসমূহ কোন একটি সময়ের জন্যও একমত হয় নি, যেমনটি কিসাস (القَوَدُ القِصاصُ - লিসানুল 'আরব) হিসেবে হত্যা করার ব্যাপারে হয়েছে, এমনকি বিবেকও (আক্বল) এতে একমত হয় না।
[আস সারিম আল মাসলুল, পৃ. ১০৪]
ইমাম আস সারাখসী আল হানাফী (রহঃ) (৪৮৩ হি.) লিখেন:
إن الآدمي في الأصل محقون الدم والإباحة بعارض القتال فإذا زال ذلك بعقد الذمة عاد الحقن الأصلي
"মৌলিকভাবে একজন মানুষের রক্ত ঝরানো নিষেধ এবং (রক্ত ঝরানোর) বৈধতা কেবল তার যুদ্ধে সম্পৃক্ততার কারণেই হয়। আর যখন এটি (যুদ্ধে সম্পৃক্ততা) যিম্মাহর চুক্তির মাধ্যমে সমাপ্ত হয়ে যায়, তার (রক্ত ঝরানোর) নিষেধাজ্ঞা পুনরায় ফিরে আসে।”
["আল-মাবসুত", ১০/৮১]
শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) কাফির নারীদের ব্যাপারে বলেন:
قتل المرأة لمجرد الكفر لا يجوز ولا نعلم قتل المرأة الكافرة الممسكة عن القتال أبيح في وقت من الأوقات
"একজন নারীকে কেবল কুফরের কারণে হত্যা করা জায়েয নয়, এবং আমরা এমন কোন সময়ের কথা জানি না যখন যুদ্ধ থেকে বিরত নারী হত্যার বৈধতা দেয়া হয়েছিল"।
["আস সারিম আল মাসলুল", পৃ. ১০১]
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব আল হিদায়াহ-তে ৩/২৮০-২৮১ আল্লামা মারগিনানী (রহঃ) লিখেন-
ولا يقتلوا امرأة ولا صبيا ولا شيخا فانيا ولا مقعدا ولا أعمى لأن المبيح للقتل عندنا هو الحراب ولا يتحقق منهم ولهذا لا يقتل يابس الشق والمقطوع اليمنى والمقطوع يده ورجله من خلاف والشافعي رحمه الله تعالى يخالفنا في الشيخ الفاني والمقعد والأعمى لأن المبيح عنده الكفر والحجة عليه ما بينا وقد صح أن النبي عليه الصلاة والسلام نهى عن قتل الصبيان والذراري
"এবং নারী, শিশু, অতিবৃদ্ধ, পঙ্গু, অন্ধকে হত্যা করা যাবে না কেননা আমাদের (হানাফীদের) কাছে হত্যার বৈধতা দাণকারী হচ্ছে যুদ্ধে অংশগ্রহণ, যা এদের মাঝে পাওয়া যায় না। আর একই কারণে একপাশ অচল, ডানহাত কর্তিত, বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কর্তিতদেরও হত্যা করা যাবে না। তবে ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এর মত ভিন্ন। তিনি অতিবৃদ্ধ, পঙ্গু, অন্ধের ব্যাপারে আমাদের সাথে মতবিরোধ করেছেন কেননা তার নিকট হত্যার বৈধতা দাণকারী হচ্ছে কুফর। আর তার বিরূদ্ধে দলীল হচ্ছে নবী সাঃ থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীস যেখানে তিনি নারী-শিশু হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।"
জমহুরের বক্তব্য পরিত্যাগ করে কাফিরদের রক্তকে হালাল বলা নিঃসন্দেহে বিপজ্জনক।
হ্যাঁ, তবে কাফির যদি হারবী হয়, নারী-শিশু না হয় তবে সমস্যা নেই। কিন্তু গুলশান হামলায় ৮/৯ জন নারীকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের রক্ত হালাল ছিল না। সুতরাং এ কেমন বাছ-বিচার! খারেজীরা তো শরীয়াহর তোয়াক্কা করে না, তারা তাদের সুবিধামত ফতোয়া-শপিং করে, তাই বলে আমরা সহীহ মানহাজের দাবীদার হয়েও এমন কথা বলব?
শায়খ আবু মুহাম্মদ মাকদীসী হাফিযাহুল্লাহ লিখেন,
فمعلوم انه لا يجوز في ديننا أن يعمد إلى قتل الصبيان والنساء غير المقاتلات ونحوهم، فقد فسر أهل العلم - ومنهم حبر القرآن ابن عباس رضي الله عنه - قوله تعالى: {ولا تعتدوا} بقوله: لا تقتلوا النساء والصبيان والشيخ الكبير
وروى مسلم في "باب؛ نساء غازيات... والنهي عن قتل أهل الحرب"، عن ابن عباس رضي الله عنه أيضاً قوله: وإن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يقتل الصبيان، فلا تقتل الصبيان إلا أن تكون تعلم ما علم الخضر من الصبي الذي قتل
وروى الامام أحمد والحاكم والبيهقي وغيرهم عن الأسود بن سريع أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: ما بال قوم جاوزهم القتل حتى قتلوا الذرية؟! ألا لا تقتلوا ذرية، ألا لا تقتلوا ذرية
والأدلة في هذا الباب مشهورة، بل أفتى مالك والأوزاعي بأكثر من هذا فقالوا: (لا يجوز قتل النساء والصبيان بحال، حتى لو تترس أهل الحرب بالنساء والصبيان أو تحصنوا بحصن أو سفينة وجعلوا معهم النساء والصبيان؛ لم يجز رميهم ولا تحريقهم أهـ.
এটা তো জানা কথা যে আমাদের দ্বীনে যোদ্ধা নয় এমন নারী, শিশু এবং তাদের মত অন্যান্যদের আক্রমণের লক্ষ্য বানানো জায়েয নয়। আহলুল ইলম যেমন হিবরুল কুরআন ইবনু আব্বাস রাঃ (এবং সীমালঙ্ঘন করো না ২:১৯০) এর ব্যাখ্যা করেছেন: নারী, শিশু, অতিবৃদ্ধদের হত্যা করো না।
সহীহ মুসলিমে ইবনু আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত আছে- রাসুল সাঃ শিশুদের হত্যা করতেন না, তোমরাও শিশুদের হত্যা করো না। তবে খাযির আঃ এর মত যদি তোমাদের (গায়বের) জ্ঞান থেকে থাকে তবে করতে পার। ইমাম আহমদ, হাকিম, বায়হাক্বী এবং অন্যান্যরা আসওয়াদ বিন সারী' থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেনঃ "লোকেদের কী হল তারা হত্যার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করছে? সাবধান তোমরা শিশুদের হত্যা করো না। সাবধান তোমরা শিশুদের হত্যা করো না"
আর এ সংক্রান্ত দলীল-প্রমাণগুলোও মশহুর। বরং ইমাম মালিক, আওযায়ী রহঃ ফতোয়া দিয়েছেন, কোন অবস্থাতেই নারী এবং শিশুদের হত্যা করা জায়েয নয়, এমনকি শত্রু যদি নারী-শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আত্মরক্ষা করতে চায়, তবেও নয়। এমনকি যদি তারা নারী এবং শিশু নিয়ে দূর্গে অবস্থান করে কিংবা জাহাজে আরোহণ করে, তবে তাদের উদ্দেশ্যে তীর ছোড়া কিংবা অগ্নিসংযোগ করাও জায়েয নয়।
কিতাবঃ حسن الرفاقة في أجوبة سؤالات سواقة, পৃষ্ঠাঃ ৩৮।
কই? শায়খ মাকদীসী তো কাফির তাই রক্ত হালাল, এই যুক্তি দিয়ে নারীদের হত্যার ফতোয়া দিলেন না????
সমস্ত বিবেচনায় যুদ্ধ ব্যাতিরেকে কাফিরদের রক্ত হালাল গণ্য না করাই শ্রেয়। কারণ ফুকাহাদের নীতি হচ্ছে, কোন বিষয় সম্পর্কে হালাল এবং হারাম দুইটি মতই পাওয়া গেলে, হারামের মতটিই প্রাধাণ্য পাবে, কেননা এটাই নিরাপদ।
Comment