Announcement

Collapse
No announcement yet.

জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখন্ডনঃ ১ আল-বাগদা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখন্ডনঃ ১ আল-বাগদা

    নিচে জামাতুল বাগদাদির খিলাফাহ প্রসঙ্গে ব্যবহৃত যুক্তি নিয়ে শাইখ আব্দুল্লাহ আল মুহাইসিনি হাফিযাহুল্লাহ-র বক্তব্য এবং তাঁর আলোকে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা তুলে ধরা হল। প্রথমে আমরা শাইখের বক্তব্য উপস্থাপন করবো এবং তারপর তাঁর বক্তব্য, জামাতুল বাগদাদির বক্তব্য এবং আলোচ্য বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ-র অবস্থানের আলোকে বর্তমান অবস্থার একটি বিশ্লেষণ তুলে ধরবো।

    জামাতুল বাগদাদির যুক্তিখন্ডনঃ ১
    আল-বাগদাদি একজন মুতাঘাল্লিব*
    শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনি

    [*তাঘাল্লুব, ইমাম মুতাঘাল্লীব এবং আনুগত্য বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা, শাইখের বক্তব্যের সমাপ্ত হবার পর সংযুক্ত করা হয়েছে]
    যখন বলা হয়েছিল আল-বাগদাদির “খিলাফাহ” মুসলিমদের মধ্যে শূরার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় নি, জবাবে আল-আদনানি বলেছিল “তরবারির অগ্রভাগ দিয়ে জোরপূর্বক আমরা এই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করেছি”। তাদের [জামাতুল বাগদাদির] প্রশ্ন হল, তারা কতৃত্ব অর্জন করেছে আর শারীয়াহ দ্বারা শাসন করেছে, তাহলে কেন আমরা তাদের আনুগত্য মেনে নিচ্ছি না?

    এর জবাব হলঃ

    ১। আল-বাগদাদি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু এলাকা জয় করতে সক্ষম হয়েছে, সকল মুসলিম ভূমি না।



    ২। আমরা জামাতুল বাগদাদির জিজ্ঞেস করতে চাই, তোমরা কি আল-বাগদাদিকে খালিফাহ মনে করো? নাকি ইমাম মুতাঘাল্লীব [জোরপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী নেতা] মনে করো? যদি সে খালিফাহ হয়ে থাকে, তবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মানহাজের উপর নেই। কারণ খিলাফাহ (মুসলিমদের উপর জোর খাঁটিয়ে) প্রতিষ্ঠা করা হয় না।
    ৩। যদি সে আসলে ইমাম মুতাঘাল্লীব হয়ে থাকে, তাহলে আমরা মনে করিয়ে দিতে চাই, আহলুল ‘ইলমের অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা বলেছেন মুতাঘাল্লীব ব্যক্তি ফাসেক। ইবন হাজার আল-হায়তামী, আল-সাওয়া’ইক্ব আল মুহরিক্বা [যা শি’আদের যুক্তিখন্ডনের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছিল] কিতাবের ষষ্ঠ পৃষ্ঠায় বলেছেন:

    মুতাঘাল্লীব শাসক একজন ফাসেক ব্যক্তি যাকে শাস্তি দেয়া উচিত। সে যাদের উপর শক্তি অর্জন করেছে তাঁদেরকে নাসীহাহ করা এবং আমর বিল মারুফের কোন যোগ্যতা রাখে না। বরং তাঁকে প্রত্যাখ্যান ও কাবু করা উচিত, এবং তার অন্যায় এবং নিন্দনীয় অবস্থা সম্পর্কে মানুষকে অবশ্যই জানাতে হবে।
    যদি তোমরা দাবি করো যে আল-বাগদাদি একজন ইমাম মুতাঘাল্লীব/মুতাঘাল্লীব শাসক, তাহল তোমাদের তার ফাসেকী এবং তার ফাসেক হওয়াকে স্বীকার করে নেয়া উচিত। তোমরা কি এটা স্বীকার করবে? যারাই বলছে এই খিলাফাহ তাঘাল্লুবের [বলপ্রয়োগে কতৃত্ব অর্জন] মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তারা প্রকৃত পক্ষে এই দাবিই করছে যে আল-বাগদাদি হল এক ফাসেক ব্যক্তি।
    ৪। আহলুল ‘ইলমের বক্তব্য হল, কোন মুসলিমের উচিত না একজন মুতাঘাল্লীব শাসককে সাথে যুক্ত হওয়া কিম্বা তাকে সমর্থন করা। তাহলে কেন তোমরা আল-বাগদাদীর ভূমিতে মুসলিমদের হিজরত করার জন্য আহবান জানাচ্ছো?
    বরং সমীচিন হল এটিই যে আল-বাগদাদিকে শক্তিপ্রয়োগে ঐ সব অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করতে হবে যেগুলোর উপর সে সম্পূর্ণ কতৃত্ব অর্জন করে নি। একারণে, শামের দলসমূহকে অবশ্যই বাগদাদিকে প্রতিহত ও বিতাড়িত করতে হবে, কারণ সে একজন ফাসেক ও মুতাঘাল্লীব।
    [শাইখের বক্তব্য সমাপ্ত]

    _
    সম্পূর্ণ লেখাটা পড়তে ক্লিক করুনঃ https://tinyurl.com/jumrf5f
    আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

  • #2
    মুতাঘাল্লীব শাসক একজন ফাসেক ব্যক্তি যাকে শাস্তি দেয়া উচিত। সে যাদের উপর শক্তি অর্জন করেছে তাঁদেরকে নাসীহাহ করা এবং আমর বিল মারুফের কোন যোগ্যতা রাখে না। বরং তাঁকে প্রত্যাখ্যান ও কাবু করা উচিত, এবং তার অন্যায় এবং নিন্দনীয় অবস্থা সম্পর্কে মানুষকে অবশ্যই জানাতে হবে।

    Comment


    • #3
      এত কিছুর পরও যারা তাদের পক্ষে যায় তাদের জন্য সত্যিই দুঃখ হয়।

      Comment


      • #4
        শাইখের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিশ্লেশনঃ


        শাইখের বক্তব্য নিয়ে বিশ্লেষণের আগে, আলোচনার প্রেক্ষাপট এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে কিছু কথা বলে নেয়া প্রয়োজন। জামাতুল বাগদাদী যখন “খিলাফাহ” প্রতিষ্ঠার দাবি করা শুরু করে, এবং এই প্রতিষ্ঠিত “খিলাফাহ”র ভিত্তিতে বাইয়াহ দাবি করে, এবং তাদেরকে বাইয়াহ দেয়াকে ওয়াজিব বলা শুরু করে এবং বাইয়াহ-র ভিত্তিতে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার নীতি গ্রহণ করে, তখন বর্তমান সময়ের আহলুল ‘ইলম এবং আহলুল জিহাদের পক্ষ থেকে জামাতুল বাগদাদীকে জিজ্ঞেস করা হয় তাদের এই “প্রতিষ্ঠিত খিলাফাহ” প্রকৃতপক্ষে কি ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? উম্মাহ-র ইতিহাস থেকে আমরা জানি তিনভাবে একজন ব্যক্তি খালিফাহ মনোনীত হতে পারেন।

        ১। মুসলিমদের আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদের [কতৃত্ব ও শক্তি] শূরার মাধ্যমে। আবু বাকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এই পদ্ধতিতে খালিফাহ নির্ধারিত হয়েছিলেন। উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-ও আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদের শুরার মাধ্যমে খালিফাহ নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবং আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একইভাবে খালিফাহ নির্বাচিত হয়েছিলেন, কারণ তাঁর ক্ষেত্রে অধিকাংশ আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদ একমত হয়েছিলেন, মুআউয়ী’আ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর সমর্থকরা ব্যতীত।

        ২।যখন পূর্ববর্তী খালিফাহ, তাঁর উত্তরসূরি নির্ধারণ করে দেন, যেমন আবু বাকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, উমার ইবনুল খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লহু আনহুকে নির্বাচন করেছিলেন। বর্তমান সময়ের জন্য এই পদ্ধতি প্রযোজ্য না, কারণ এখন খিলাফাহ নেই।

        ৩। তাঘাল্লুবের মাধ্যমে। তাঘাল্লুব অর্থ, জোরপূর্বক কতৃত্ব অর্জন। অর্থাৎ মুসলিমদের উপর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, জোরপূর্বক নিজেকে শাসক বানিয়ে নেয়া। তাঘাল্লুবের মাধ্যমে কতৃত্ব অর্জনকারী শাসক বা ইমামকে বলা হয় ইমাম মুতাঘাল্লীব। উমাইয়্যা এবং আব্বাসী খালিফাহদের মধ্যে অনেকে তাঘাল্লুবের মাধ্যমে নিজেদের শাসক বানিয়ে নিয়েছিলেন।



        জামাতুল বাগদাদীকে আহলুল ‘ইলম ও আহলুল জিহাদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়েছিল কোন পদ্ধতিতে তারা তাদের এই “খিলাফাহ” প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং কিসের ভিত্তিতে তারা বলছে এই “খালিফাহ”-কে বাইয়াহ দেয়া ওয়াজিব, এবং বাইয়াহ দেয়া না দেয়ার ভিত্তিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে এবং তাঁদের রক্ত ঝরাচ্ছে? কারণ, এটা পরিষ্কার যে আল-বাগদাদীকে “খালিফাহ” নির্বাচনের আগে, জামাতুল বাগদাদী আহলুল ‘ইলম ও আহলুল জিহাদের অন্তর্গত কারো সাথেই কোন শূরা করেনি, এবং একারণে আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদের শূরার মাধ্যমে খালিফাহ নির্ধারণের পদ্ধতি [অর্থাৎ উপরের ১ নং] অনুসৃত হয় নি। আর ২ নং পদ্ধতি আজ প্রযোজ্য না। বাকি থাকে শুধুমাত্র ৩ নং পদ্ধতি বা তাঘাল্লুব।



        এই প্রশ্নের জবাবে জামাতুল বাগদাদীর মুখপাত্র আল-আদনানী বলে “আমরা তরবারির অগ্রভাগ দিয়ে এই জোরপূর্বক এই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করেছি”। এর মাধ্যমে আল-আদনানী স্বীকার করে নেয় যে জামাতুল বাগদাদি আহলুল হাল্ল ওয়াল আক্বদের সাথে শূরার পদ্ধতি অনুসরণ করে নি যা খুলাফায়ে রাশিদার সময় অনুসৃত হয়েছে। সে আরো স্বীকার করে যে তারা তাঘাল্লুবের পদ্ধতি অনুসরণ করেছে, কারণ সে বলেছে, “আমরা তরবারির অগ্রভাগ দিয়ে এই জোরপূর্বক এই খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করেছি”। এর মাধ্যমে এটাও সে স্বীকার করে নিলো যে তারা যদিও দাবি করে থাকে তাদের এই “খিলাফাহ” প্রতিষ্ঠা হয়েছে ‘আলা মানহাজুন নাবুওয়্যাহ” [নাবুওয়্যাতের মানহাজের উপর], কিন্তু তাদের এই দাবি প্রকৃতপক্ষে মিথ্যা, কারণ মুসলিমদের উপর বলপ্রয়োগ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মানহাজ না, বরং এটা হল আল-হাজ্জায, তাতার, আহলুল বিদ’আ শি’আ-রাফিদা এবং আহলুল গুলুহ ও খাওয়ারিজদের মানহাজ।



        এখানে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষণীয়। একথা সত্য যে আহলুল ‘ইলমের অন্তর্ভুক্ত অনেক ব্যক্তিই বলেছেন যদি সে শারীয়াহ অনুযায়ী শাসন করে এবং তাকে বিতাড়িত করতে গিয়ে যদি ব্যপকভাবে মুসলিমদের রক্ত প্রবাহিত হবার সম্ভাবনা থাকে, তবে ইমাম মুতাঘাল্লীবকে মান্য করতে হবে। এবং জামাতুল বাগদাদীর সদস্য ও সমর্থকরা এই যুক্তি ব্যবহার করে। কিন্তু সকল আহলুল বিদ’আর মতোই তারা এক্ষেত্রে খন্ডিতভাবে দালীল উপস্থাপন করে, এবং নিজেদের সুবিধামতো তার ব্যাখ্যা করে।

        এখানে যে বিষয়টি তারা এড়িয়ে যায়, তা হল মুতাঘাল্লীবের আনুগত্য করার কথা উলেমা তখন বলেছেন যখন সে সম্পূর্ণ ভাবে কতৃত্ব অর্জন করবে। উলেমাদের পূর্ণ বক্তব্য হলঃ যখন মুসলিমদের উপর বলপ্রয়োগের মাধ্যমে, যুদ্ধের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি মুসলিমদের উপর সম্পূর্ণভাবে কতৃত্ব অর্জন করবে, এবং তার বিরোধী সকল সশস্ত্র মুসলিম দলকে পরাজিত করবে, এবং মুসলিম ভূমির উপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করবে – তখন তার আনুগত্য করা উচিত, কারণ এমন অবস্থায় তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে গেলে পুনরায় মুসলিম রক্ত প্রবাহিত হবে এবং ফিতনা বৃদ্ধি পাবে। তাই মুসলিমদের জান ও মাল সংরক্ষণ, ফিতনা কমানো এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থে এক্ষেত্রে মুতাঘাল্লীবের আনুগত্য করতে হবে। [বিস্তারিত জানার জন্য আহকামুল সুলতানিয়্যাহ দ্রষ্টব্য]
        যেমন আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, ততোক্ষণ পর্যন্ত আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানকে বাইয়াহ দেন নি এবং খালিফাহ হিসেবে স্বীকার করেন নি, যতক্ষণ আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু জীবিত ছিলেন এবং মক্কার উপর কতৃত্ব রাঃ প্রতিষ্ঠিত ছিল। আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিহত হবার পর, এবং মক্কা ও হিজাযের উপর সম্পূর্ণ কতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পরই কেবল আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানকে বাইয়াহ দেন। কারণ এসময় ইবন মারওয়ানের প্রতি আর কোন সশস্ত্র বিরোধিতা আহলুস সুন্নাহ-র পক্ষ থেকে ছিল না, সে সম্পূর্ণভাবে কতৃত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল, এবং মুসলিমদের ভূমি নিয়ন্ত্রনে এনেছিল।

        উপরের কোনটাই কি আল-বাগদাদির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য?

        সকল সশস্ত্র মুসলিম দলকে কি সে পরাস্ত করতে সক্ষম হয়েছে? উত্তর হল, না। শামে এখনো বিভিন্ন মুসলিম দল আছে, যার বাশার এবং আল-বাগদাদি উভয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, এবং মুসলিমদের নিরাপত্তা দিচ্ছে, এইসব দলের অধীনে ভূমি আছে এবং শারীয়াহর মাধ্যমে তাঁরা এসব জায়গায় বিচার করছে, যেমন জাবহাতুন নুসরা এবং জুন্দুল আক্বসা।

        সে কি শামের বা ইরাকের সকল ভূমি নিয়ন্ত্রনে এনেছে? এর উত্তরও হল, না। বরং আলেপ্পোতে জামাতুল বাগদাদি নুসাইরিদের পাশেই সহাবস্থান করছে। তুর্কি সীমান্তে কুর্দি মুরতাদিনের কাছে পরাজিত হচ্ছে আর ইরাকে শি’আ হাসাদ মিলিশিয়ার কাছে ভূমি হারাচ্ছে এবং আহলুস সুন্নাহকে রাফিদাদের হাত থেকে বাঁচাতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাহলে কিভাবে এই ব্যক্তি সম্পূর্ণ কতৃত্ব অর্জনের দাবি করতে পারে আর তাকে বাইয়াহ দেয়া ওয়াজিব আর তার বিরোধিতা করা কুফর এই দাবি করতে পারে? তার অবস্থা তো মক্কা বিজয়ের পূর্বে আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানের যে অবস্থা ছিল তার চাইতেও দুর্বল। যদি আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ইবন মারওয়ানকে বাইয়াহ না দিয়ে থাকেন তাহলে কেন আজকে আহলুস সুন্নাহ বাগদাদিকে বাইয়াহ দিতে বাধ্য হবে? কেন আজ বাগদাদিকে বাইয়াহ দেয়া ওয়াজিব? আর তাকে বাইয়াহ না দিলে “জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু” হবে, যেমনটা তার সমর্থকরা দাবি করে? যদি আব্দুল মালিক ইবন মারওয়ানকে বাইয়াহ না দেয়া অবস্থায় আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যু হত, তবে কি তিনি জাহিলিয়্যাতের উপর মৃত্যুবরণ করতেন? নাউযুবিল্লাহ! প্রকৃতপক্ষে তারা কথা বলে ‘ইলম এবং বিবেচনাবোধ ছাড়া এবং তাদের উদাহরণ হল সেই অন্ধ ব্যক্তিদের নেয়, যাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অন্য কিছু অন্ধ ব্যক্তি।



        এছাড়া একথা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ যে সম্পূর্ণ কতৃত্ব অর্জনের পর ইমাম মুতাঘাল্লীবের আনুগত্যের ব্যাপারে উলেমা যে মত দিয়েছেন তা এটাকে ওয়াজিব বলে সাব্যস্ত করে না। ফিতনা দূরীকরণ, মুসলিম রক্ত সংরক্ষণ এবং স্থিতিশীলতার স্বার্থে মাসলাহা বিবেচনা করে উলেমা এই মত দিয়েছেন। এর অর্থ এই না যে সম্পূর্ণ কতৃত্ব অর্জনের পর আনুগত্য দিতেই হবে, দেয়া ওয়াজিব আর না দেয়া কুফর। আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইরের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বিরোধিতা কি কুফর ছিল? নাউযুবিল্লাহ। অর্থাৎ উলেমার এই মতের উপর ভিত্তি করে এই কাজকে ঢালাওভাবে ওয়াজিব এবং আনুগত্য না করাকে কুফর কিম্বা ফিসক বলা যাবে না। বরং সাইয়্যেদিনা হোসেইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, ইয়াযিদের আনুগত্য স্বীকার করেন নি, যদিও ইয়াযিদের সম্পূর্ণ কতৃত্ব ছিল। আব্বাসিরা উমাইয়্যাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেছিল যখন উমাইয়্যাদের সম্পূর্ণ কতৃত্ব ছিল। আব্বাসিদের এই কাজকে কেউ কুফর বলে নি। মু’আউয়ীআ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, এবং আয-যুবাইর, তালহা এবং উম্মুল মু’মিনিন আইশা রাদীয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা ইজমাইন, যুদ্ধ করেছেন – কিন্তু কাউকে খালিফাহ-র বিরোধিতা করার জন্য কাফির বলা হয় নি। কেউ বলে নি আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু শারীয়াহ অনুযায়ী শাসন করা খালিফাহ তাই তাঁর রাঃ বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফর। আহলুস সুন্নাহ-র ১৪০০ বছরের ইতিহাসে কেউ দাবি করে নি খালিফাহ-র বিরোধিতা করা কুফর।

        অথচ আল-আদনানি ৫ই রামাদ্বানের [১৪৩৬ হিঃ] বক্তব্যে বলছে –“ হুশিয়ার দাউলাতুল ইসলামিয়্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে তুমি কুফরে পতিত হবে, তুমি তা অনুধাবন করো আর না করো”। আর কিছুদিন আগে প্রকাশিত সর্বশেষ বক্তব্যে সে আরও অগ্রসর হয়ে বলেছে বাইয়াহ দেয় নি এমন সব মুসলিম দলের বিরুদ্ধে জমাতুল বাগদাদি যুদ্ধ করবে, এবং তারা এইসব দলকে “বিচ্ছিন করবে”, তাদের একতা ধ্বংস করবে, এবং “ধারালো ছুড়ি” আর “বক্ষ বিদীর্ণকারী বুলেটের” ভাষায় তারা বাইয়াহ না দেয়া সকল মুসলিম দলের সাথে কথা বলবে।
        শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ যথার্থই বলেছেনঃ
        “আহলুল বিদ’আর বৈশিস্ট হল তারা দ্বীনের মধ্যে কোন একটি নতুন বিষয় উদ্ভাবন করে এবং তারপর এই নব উদ্ভাবিত বিষয়কে দ্বীনের মধ্যে ওয়াজিব করে নেয়। তারপর এসব নব উদ্ভাবিত বিষয়কে আক্বীদার অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নেয়। আর একারণে মুসলিমদের ভেতর থেকে যারা এসব বিষয়ে তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করে তাদের উপর তাকফির করে, এবং তাঁদের রক্ত হালাল ঘোষণা করে, যেরকম খাওয়ারিজ এবং জাহমিয়্যাহরা করেছিল।“ [মাজমু’ আল ফাতাওয়া]

        যদি আমরা তর্কের খাতিরে ধরেও নেই বাগদাদি “খালিফাহ”, তাহলেও তারা এই ফাতাওয়া কিসের ভিত্তিতে দিচ্ছে যে বাগদাদির বিরোধিতা করা কুফর? আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফর না, কিন্তু বাগদাদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফর? বাগদাদি কি সাইয়্যেদিনা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর চাইতে উত্তম হয়ে গেলো? লা হাওলা ওয়ালা কু’আতা ইল্লাহ বিল্লাহ। ওয়াল্লাহী ! ১৪০০ বছরে আহলুস সুন্নাহ-র কেউ এরূপ কোন কথা দ্বীনে উদ্ভাবন করে নি। বরং ইতিহাস সাক্ষি দেয় এরকম কথা হল খাওয়ারিজ-হারুরিয়্যাহ, আর শি’আদের অন্তর্গত, রাফিদা-বাতেনিয়া-কারামাতিয়্যাদের বৈশিষ্ট্য। ওয়াল্লাহী ! ইতিহাসে খাওয়ারিজ-শি’আ-রাফিদা ছাড়া আর কেউ এরকম দাবি করে নি। নিশ্চিত ভাবেই আহলুস সুন্নাহ করে নি।

        অথচ আজ জামাতুল বাগদাদি এবং তাদের সমর্থকরা বলছে তারা আহলুস সুন্নাহর প্রতিনিধিত্ব করে, এবং তারা নাবুওয়্যাতের মানহাজে আছে। ওয়াল্লাহী! এটা সুস্পষ্ট মিথ্যাচার! নাবী কারীম ﷺ , সালাফ-সালেহীন এবং আহলুস সুন্নাহ এই বিচ্যুতি এবং গোমরাহি থেকে মুক্ত – এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ-ই আমাদের জন্য যথেষ্ট।



        এই প্রেক্ষাপটে শাইখ মুহাইসিনি হাফিযাহুল্লাহ – বাইয়াহ দাবি করা, বাগদাদিকে বাইয়াহ দেয়া ওয়াজিব দাবি করা, এবং বাইয়াহ দেয়া না দেয়ার ভিত্তিতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, তাঁদের রক্ত ঝরানো ও তা হালাল করা, জামাতুল বাগদাদির বিরোধিতা করাকে কুফর দাবি করা, বাগদাদির প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে আল ওয়ালা ওয়াল বারা’ নির্ধারণ করা – ইত্যাদি বিষয়ে জামাতুল বাগদাদির যুক্তি খন্ডন করেছেন। আর এই যুক্তিখন্ডনের প্রথম অংশ মহান আল্লাহ-র ইচ্ছায় আজ প্রকাশিত হল। আল্লাহ যদি চান ইন শা আল্লাহ, পরবর্তী অংশগুলো প্রকাশ করা হবে।
        আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

        Comment


        • #5
          আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ মুসলিমদের কাজে বরকত দান করুন, সকল প্রকার বাতিলকে ধ্বংস করে দিন আমীণ।

          Comment


          • #6
            মাশাআল্লাহ। খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট।

            আপনার এই সিরিজের পরবর্তী পোষ্টের অপেক্ষায় থাকলাম।
            কথা ও কাজের পূর্বে ইলম

            Comment


            • #7
              আলহামদুলিল্লাহ।

              নতুন পর্ব প্রকাশিত হয়েছে।

              পাবেন এখানেঃ https://tinyurl.com/q9rgkbo



              এখানেঃ https://tinyurl.com/najkru4
              আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

              Comment


              • #8
                তৃতীয় পর্ব প্রকাশিতঃ



                দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরামে প্রকাশিত হয়েছে - এই থ্রেডেঃ https://tinyurl.com/h4vv7de

                তিন পর্ব একসাথে পড়ুনঃ



                [প্রথম পর্বের লিঙ্ক]- https://tinyurl.com/jumrf5f

                [দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক]- https://tinyurl.com/jyuqrqk

                [তৃতীয় পর্বের লিঙ্ক] - https://tinyurl.com/jzklrsg
                আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের অন্তরে ত্রাসের সৃষ্টি হয়, আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।

                Comment

                Working...
                X