Announcement

Collapse
No announcement yet.

জিহাদে কাশ্মীর এবং বালআম বিন বাউরার উত্তরসূরিদের বিভ্রান্তির অপপ্রয়াস-০১

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জিহাদে কাশ্মীর এবং বালআম বিন বাউরার উত্তরসূরিদের বিভ্রান্তির অপপ্রয়াস-০১

    (২য় পর্ব কমেন্ট বক্সে দেখুন)

    ইদানিং কাশ্মীর জিহাদ নিয়ে আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া সাহেবের বক্তব্য আশাকরি সকলেই শুনে থাকবেন। তার বক্তব্যের সারকথা:


    [জিহাদ একটি মুনাজ্জাম ও শৃংখলাবদ্ধ কাজ। এলোপাথারি মারামারি করে মরে যাওয়াই জিহাদ নয়। আর শৃংখলাবদ্ধভাবে জিহাদ করতে হলে জিহাদের স্থান লাগবে, নিয়মিত সেনাবাহিনি লাগবে, কুদরত তথা শত্রুর সাথে পেরে উঠার সামর্থ্য লাগবে। সাধারণ ব্যক্তিদের দ্বারা এমন শৃংখলাবদ্ধ জিহাদ সম্ভব নয়, এর জন্য রাষ্ট্র লাগবে। রাষ্ট্রীয় ঘোষণার দ্বারা জিহাদ করতে হবে। জিহাদ করবে রাষ্ট্রের সেনাবাহিনি। সাধারণ মানুষ জিহাদে যাবে না। তবে যদি সেনাবাহিনি সাধারণ মানুষদের যেতে বলে তাহলে যাবে। কারণ, সেনাবাহিনি তখন তাদেরকে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং দেবে। অন্যথায় সাধারণ মানুষ যাওয়া আত্মহত্যার শামিল। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ছাড়া তাদের জন্য জিহাদে যাওয়া হারাম হবে। অতএব যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার জিহাদে যাওয়ার ডাক না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দেশের মুসলমানদের জন্য কাশ্মীর বা এ জাতীয় কোন ভূখণ্ডে যাওয়া হারাম।]



    উপরোক্ত কথাটি (যদিও তাতে বেশ কিছু ভুল আছে তথাপি) এক পর্যায়ে মেনে নেয়ার মতো। কারণ, জিহাদ আসলে একটা জামাতবদ্ধ কাজ। এর জন্য একটা উপযুক্ত ময়দান এবং সুশৃংখল ব্যবস্থাপনা না থাকলে তেমন ফলপ্রসূ হয় না। এটা অস্বীকার করার মতো নয়। এ জন্যই মুজাহিদিনে কেরাম যার তার কথায় কোন ভূমিতে রওয়ানা দিতে নিষেধ করেন। বরং মুজাহিদদের নিয়ম হল, প্রত্যেকে আপন ভূমিতে থেকে জিহাদ করবে। কখনও প্রয়োজন পড়লে বাহিরে যাবে। ঢালাওভাবে সকলে হিজরত করে অন্য ভূমিতে চলে যাওয়া আন্তর্জাতিক উমারাদের নিয়ম বহির্ভূত। যাহোক, কথাটা এক পর্যায়ে মেনে নেয়ার তবে। তবে তার পুরো বক্তব্য থেকে পরিষ্কার যে, তার এ আশঙ্কা শুধু একটা আশঙ্কা নয়, বরং অনেকগুলো ভ্রান্ত আকিদার নাতিজা-ফলাফল। যেমন, আমাদের দেশের মুসলমান যুবকদের জন্য কাশ্মিরে যাওয়া হারাম হওয়ার কারণ বলেছেন,

    - রাষ্ট্রপ্রধান তাদেরকে অনুমতি দেয়নি।

    - কাশ্মীরে জিহাদের জন্য কোথাও থেকে কোনো ডাক আসেনি। এমনকি তিনি দাবি করেছেন যে, বর্তমান বিশ্বে কোথাও জিহাদের ডাক নেই।

    - কাশ্মীরিরা জিহাদে দাঁড়ায়নি। আর যখন তারা না দাঁড়াবে তখন আমাদের উপর তাদের সাহায্য করার দায়িত্ব নেই। তারা যখন দাঁড়াবে এবং দাঁড়ানোর পর মোকাবেলা করতে অক্ষম হয়ে যাবে, তখন অন্যরা যেতে পারবে, নতুবা হারাম হবে।

    - কাশ্মীরিরা দাঁড়ালেও তারা না পারলে প্রথম ফরয হতো পাকিস্তানীদের উপর। আমরা যারা দূরে আছি, তাদের জন্য যাওয়া হারাম হবে। এটা আত্মহত্যার শামিল।

    - কাশ্মীরে জিহাদ দাঁড়ালে, তারা না পারলে, এমনকি আশপাশের মুসলমানরাও না পারলে তখন আমরা যেতে পারবো। তবে আমাদের মধ্যে কেবল সে সকল লোকই যাবে যারা সামরিক ট্রেনিং প্রাপ্ত। সাধারণ মানুষ কখনও জিহাদে যাবে না। অবশ্য তিনি সামনে গিয়ে এর বিপরীত কথা বলেছেন যে, নিয়মতান্ত্রিক সেনাবাহিনি যদি সাধারণ মানুষকে যেতে বলে তাহলে তারা যাবে। সেনাবাহিনি তাদেরকে ট্রেনিং দেবে।

    - যারা কাশ্মীরে যাওয়ার জন্য বলছে, তারা নিজেরা জিহাদে যায় না। অন্যদেরকে যেতে বলে নিজেরা বসে থাকে। এরা নিজেদের সুনাম বাড়ানোর জন্য জিহাদের কথা বলছে। এরা ধান্দাবাজ- ফেতনাবাজ। এদের কথা শুনা জায়েয হবে না।
    - কাশ্মীরে কারা জিহাদ করছে তা জানা নেই। আর হাদিসে এসেছে, ومن قاتل تحت راية عمية يغضب لعصبة أو يدعو إلى عصبة أو ينصر عصبة فقتل فقتلة جاهلية “যে ব্যক্তি এমন ঝাণ্ডা তলে যুদ্ধ করে যা হক না বাতিল জানা নেই, যে তার আপন গোত্রের স্বার্থে ক্রোধান্বিত হয় কিংবা গোত্রের দিকে আহবান করে বা অন্যায়ভাবে গোত্রের সহায়তা করে আর এভাবেই মারা যায়, তাহলে সে জাহিলী মরা মরল।”- মুসলিম: ৪৮৯২



    এছাড়াও আরও অনেক কিছু বলেছেন। সংক্ষেপে একটু গুছিয়ে বলতে গেলে এভাবে বলা যায়-

    [কোন মুসলিম ভূখণ্ডে কাফেররা আগ্রাসন চালালে প্রথমত যাদের উপর আক্রমণ হয়েছে মোবাবেলা করা তাদের উপর ফরযে আইন- যদি মোকাবেলার সামর্থ্য তাদের থাকে। মোকাবেলার সামর্থ্য না থাকলে ফরয নয়। তখন হয়তো হিজরত করবে, নয়তো সবর করবে (তথা মার খেতে থাকবে)। আর সামর্থ্যের মাপকাটি হল, কাফেরদের সংখ্যা মুসলমানদের ডবলের চেয়ে বেশি না হওয়া।


    আক্রান্ত মুসলমানরা যদি জিহাদে না দাঁড়ায়, তাহলে তাদেরকে সাহায্য করা এবং তাদের হয়ে জিহাদ করা বাহিরের মুসলামনদের দায়িত্ব নয়। বাহিরের মুসলমানদের উপর তখনই জিহাদ ফরয হবে, যখন আক্রান্তরা কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তি তথা আমীরের অধীনে মোকাবেলায় দাঁড়াবে। যখন তারা আমীরের অধীনে দাঁড়াবে এবং মোকাবেলা করতে অক্ষম হয়ে পড়বে তখনই কেবল বাহিরের মুসলমানদের উপর ফরয হবে, অন্যথায় নয়।


    যদি তারা কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তি তথা আমীরের অধীনে মোকাবেলায় দাঁড়ায় কিন্তু মোকাবেলা করতে সক্ষম না হয়, তাহলে পার্শ্ববর্তী মুসলমান রাষ্ট্রের সকলের উপর জিহাদ ফরয হবে না, কেবল সেনাবাহিনির উপর ফরয হবে। সাধারণ জনগণের উপর ফরয হবে না। তবে সেনাবাহিনি যদি সাধারণ জনগণকে যেতে বলে তাহলে যাবে এবং সেনাবাহিনি তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করবে।


    পার্শ্ববর্তীরা যদি জিহাদে যায় এবং তারাও মোকাবেলা করতে অক্ষম হয়ে পড়ে, তাহলে দূরবর্তীদের উপর জিহাদ ফরয। পার্শ্ববর্তী দেশের মুসলমানরা যদি জিহাদে না যায়, তাহলে দূরবর্তী দেশগুলোর মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরয নয়। (শায়খ যদিও কথাটি এত পরিষ্কার করে বলেননি, তবে বয়ান থেকে কথাটি স্পষ্ট।)


    তবে সেনাবাহিনি হোক, সাধারণ মুসলমান হোক, পার্শ্ববর্তী হোক বা দূরবর্তী হোক: তাদের জন্য তখনই জিহাদে যাওয়া জায়েয হবে, যখন রাষ্ট্র প্রধান অনুমতি দেবে। রাষ্ট্র প্রধান অনুমতি না দিলে জিহাদে যাওয়া হারাম।]





    এককথায়, সব বিভ্রান্তির গোঁড়া হল, ইমাম। শায়খের মতে জিহাদ ফরয হওয়ার জন্য ইমাম, ইমামের আহ্বান ও অনুমতি লাগবে। যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদেরও একজন ইমাম লাগবে; আর বাহিরের মুসলমান যারা জিহাদে যেতে চাচ্ছে তাদেরও তাদের ইমাম তথা রাষ্ট্র প্রধানের অনুমতি লাগবে। অবশ্য তিনি এতটুকু ব্যবধান করেছেন যে, যারা বাহিরের তাদের জন্য তো নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র প্রধান লাগবে; কিন্তু যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের জন্য এমন রাষ্ট্র প্রধান লাগবে না। অন্তত জিহাদে অভিজ্ঞ এমন কোন ব্যক্তির অধীনে জিহাদে দাঁড়াতে হবে। যদি তারা জিহাদে দাঁড়ায় তাহলেই কেবল বাহিরের মুসলমানদের জন্য এখানে এসে জিহাদ করা জায়েয হবে, অন্যথায় যদি তারা শুধু মারই খেতে থাকে, অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তির অধীনে জিহাদে না দাঁড়ায়, তাহলে বাহিরের মুসলমানদের জন্য তাদেরকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসা জায়েয নয়, হারাম। কারণ, যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের কোন ইমাম নেই।



    দ্বিতীয়ত যদি তারা কোন আমীরের নেতৃত্বে দাঁড়ায়ও এবং অক্ষম হয়ে মারও খেতে থাকে, তথাপি বাহিরের মুসলমানদের জন্য তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা ততক্ষণ পর্যন্ত হারাম, যতক্ষণ না তাদের রাষ্ট্র প্রধান তাদেরকে অনুমতি দেয়।
    এর দলীল তিনি দিয়েছেন নিচের হাদিসটি দিয়ে-
    إنما الإمام جنة يقاتل من ورائه ويتقى به
    “ইমাম হচ্ছেন ঢালস্বরূপ। তার পেছনে থেকে যুদ্ধ করা হবে এবং তার দ্বারা আত্মরক্ষা করা হবে।”- বুখারি ২৭৯৭, মুসলিম ১৮৪১

    অতএব, যাদের উপর আক্রমণ হয়েছে তাদেরও একজন ইমাম লাগবে, আর বাহিরের মুসলমান যারা যাবে, তাদেরও ইমামের অনুমতি লাগবে। এ হাদিসের আলোচনা আমরা সামনে করবো ইনশাআল্লাহ।






    উল্লেখ্য, শায়খ বলেছেন, যাদের উপর আক্রমণ হয়েছে তাদের উপর জিহাদ তখনই ফরয হবে, যখন শত্রু প্রতিহত করার কুদরত তাদের থাকবে। এর মাপকাটি তিনি বুঝাচ্ছেন, শত্রু সংখ্যা মুসলমানদের দ্বিগুণের বেশি না হওয়া। দ্বিগুণের বেশি হলে কুদরত নেই ধরা হবে। তখন আর ফরয থাকবে না। ধরলাম ফরয নয়, তাহলে অন্তত প্রতিরোধ করা জায়েয হবে কি’না? এ ব্যাপারে তিনি স্পষ্ট কিছু না বললেও যতটুকু বুঝা যায়, তার মতে এমতাবস্থায় প্রতিরোধ করা হারাম হবে। কেননা, এটা ‘ইলক্বাউন নাফস ইলাততাহলুকা’ তথা আত্মহত্যার শামিল। শায়খের আরেকটা কথা থেকে এমনটা বুঝা যায়। তাহ হল, শায়খ যখন বলেছিল, রাষ্ট্র প্রধানের অনুমতি না হলে জিহাদে যাওয়া হারাম, তখন একজন সূরা নিসার নিম্নোক্ত আয়াত দিয়ে এর আপত্তি করেছিল-
    ﴿وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا﴾
    “তোমাদের কী হলো! তোমরা কিতাল করছো না আল্লাহর রাস্তায় এবং অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য? যারা বলে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে বের করে নিন এ জনপদ থেকে, যার অধিবাসীরা যালিম। আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কোনো অভিভাবক নির্ধারণ করে দিন এবং নিযুক্ত করে দিন আপনার পক্ষ থেকে কোনো সাহায্যকারী।”- নিসা ৭৫

    আপত্তি করেছিল যে, এ আয়াতে তো রাষ্ট্র প্রধানের অনুমতি লাগবে বলা হয়নি। তখন তিনি আজগুবি একটা জওয়াব দিয়েছেন। সাথে এও বলেছেন, দুর্বলদেরকে তো একথা বলা হয়নি যে, তোমরা জিহাদ শুরু কর। তাদেরকে সবর করতে বলা হয়েছে।





    শায়খের এ কথা এবং আগের কথা মিলালে বুঝা যাচ্ছে যে, তিনি বুঝাচ্ছেন, দুর্বলদের জন্য জিহাদ করা হারাম। এটা আত্মহত্যার নামান্তর। এছাড়াও আরো বিভিন্ন যুক্তি দিয়ে তিনি বিষয়টি বুঝানোর পায়তারা করেছেন। যদি এমনটাই হয়, তাহলে শায়খের এ দাবি নির্জলা মিথ্যা। কারণ, আয়াতে তো এ কথা বলা হয়নি যে, ‘তোমরা মার খেয়ে যাও, তবুও জিহাদ শুরু করবে না। তোমরা দুর্বল। জিহাদ শুরু করা তোমাদের জন্য হারাম হবে’। বেশির চেয়ে বেশি একথা বলা যায়, দুর্বলদের জন্য জিহাদ ফরযে আইন করা হয়নি। তাই না করার অনুমতি আছে। কিন্তু করলে হারাম হবে একথা তো বলা হয়নি। বরং করাটাই প্রশংসনীয়। মার খেয়ে খেয়ে ধুকে ধুকে মরার চেয়ে, ইজ্জত-আব্রু হারিয়ে মরার চেয়ে যুদ্ধ করে মরে যাওয়া প্রশংসনীয়। এ ব্যাপারে ইনশাআল্লাহ আমরা সামনে আলোচনা করবো।



    অধিকন্তু দুর্বলদের জন্য জিহাদ না করে থাকার অনুমতি আছে কথাটা ঢালাওভাবে সহীহ নয়। কাফেররা আপনাকে, আপনার সামনে আপনার ছেলে-মেয়ে, মা-বাপা ও ভাই-বোনকে নির্যাতন ও হত্যা করছে আর আপনি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবেন? কিছুই করবেন না? এটার অনুমতি শরীয়ত দেয় না। সামর্থ্যে যতটুকু আছে আপনাকে করতে হবে। বসে বসে মার খেয়ে খেয়ে, নিজের ইজ্জত-আব্রু হারিয়ে মরার অনুমতি শরীয়ত দেয় না। সামনে ইনশাআল্লাহ এর আলোচনা করবো।



    আর শায়খ শত্রু সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হলেই যে জিহাদ ফরয নয় বলেছেন, সেটা মূলত তার অজ্ঞতার ফল। আহযাবের যুদ্ধে যখন কুরাইশরা আরবের বড় বড় কয়েকটি কাফের গোত্র এবং মদীনার ইয়াহুদিদের সমন্বয়ে বহুজাতিক বাহিনি গঠন করে মদীনা অবরোধ করেছিলে, তখন কি কাফেরদের সংখ্যা মুসলমানদের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি ছিল না? তখন কি জিহাদ ফরযে আইন ছিল না? না’কি হারাম ছিল? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের নিয়ে যে প্রতিরোধ করেছেন তা কি হারাম করেছেন? শায়খ আপনি কি বলছেন? আপনার মাথা ঠিক আছে তো? আমার মনে হয় শায়খ কি যে বলেন তা চিন্তা করেন না। মুখে যা আসে বলে দেন। এজন্য শায়খের আগে পিছে কথার মধ্যে অনেক গড়মিল দেখা যায়। ২০ মিনিটের দু’টো বয়ানে মধ্যেও শায়খের অনেক গড়মিল আছে। বরং বলতে গেলে শায়খের প্রতিটি কথাতেই একেকটি মহা বিভ্রান্তি লুকায়িত। সব আলোচনা করতে গেলে বিশাল কিতাব লিখতে হবে। আলোচনা সংক্ষেপ করতে চাচ্ছি।
    ***



    তাহলে এখন মুসলমানদের করণীয় কি? বাইরের মুসলামানদের করণীয় বলেছেন, দোয়া করা এবং যাদেরকে বললে কাজ হবে তাদেরকে বলা। এর বাইরে কোন কাজ নেই। এমনকি কাশ্মীরিদের দাবিতে মিছিলও করতে তিনি নিষেধ করেছেন।
    দোয়ার বিষয়টা মেনে নিলাম। মুসলমানের বিপদে অন্য মুসলমান দোয়া করবে এটাই তো ভ্রাতৃত্বের দাবি। এতে আপত্তি নেই। আপত্তি হলো, দোয়া ছাড়া আর কিছু করণীয় আছে কি’না- সেটা নিয়ে।


    তিনি দোয়া ছাড়া আর করণীয় বলেছেন, ‘যাদেরকে বললে কাজ হবে তাদেরকে বলা’। এর দ্বারা তিনি মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর তাগুত শাসকগোষ্ঠী, অন্যান্য কাফের রাষ্ট্রের শাসকদের বুঝিয়েছেন। জাতিসংঘকেও হয়তো বুঝিয়ে থাকবেন। কিন্তু তাদের কাছে যদি বলা না যায় (বিশেষত যখন তিনি মিছিল করতেও নিষেধ করেছেন তখন বলার আর কি সূরত বাকি রইল? আর শাসকগোষ্ঠীর কাছে দাবি নিয়ে পৌঁছা যে মোটামুটি অসম্ভব আশাকরি বর্তমানে কারো কাছে অস্পষ্ট নয়; আর পৌঁছতে পারলেও তাতে সমূহ বিপদের আশঙ্কা); কিংবা বলার পর যদি তারা কোন কার্যকরি পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে কি করণীয় তা তিনি বলেননি। তবে তিনি এতটুকু বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার যদি ভারতের পক্ষ হয়ে কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তাহলে ভারতের পক্ষে যোগ দেয়া আমাদের জন্য জায়েয হবে না। সাথে এ কথাও বলেছেন যে, বাংলাদেশ সরকার ভারতকে সমর্থন করে যাচ্ছে। তবে আরো কিছু প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গেছেন, যেগুলো বর্তমান পরিস্থিতিতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যেমন,

    - সরকার যখন কুফরের পক্ষ নিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হবে তখন সরকারের কি বিধান? সে মুসলমান থাকবে কি’না বা তার আনুগত্য জরুরী কি’না বা সে আমীরুল মু’মিনীন হিসেবে বহাল থাকবে কি’না (যেমনটা তারা বর্তমানে সরকারকে আমীরুল মু’মিনীন মনে করে থাকে এবং তার আনুগত্য ফরয বলে থাকে)?

    - সরকার যদি নিজেও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করে এবং জিহাদেরও অনুমতি না দেয় তখন মুসলমানদের কি করণীয়?

    - সরকার যদি ভারতের পক্ষে যোগ দেয়, তাহলে এদেশের মুসলমানদের কি করণীয়?

    এসব প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে গেছেন।
    ***



    ফতোয়ার নাতিজা-ফলাফল

    শায়খের ফতোয়া অনুযায়ী ফলাফল কি দাঁড়াচ্ছে একটু লক্ষ করি:
    শায়খ বলেছেন, কাশ্মীরে যে পরিমাণ হিন্দু সৈন্য আছে এবং তাদের যে পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র আছে, তার সামনে কাশ্মীর মুসলমানদের দাঁড়ানোর সামর্থ্য নেই। এমনকি এও বলেছেন, বাংলাদেশের অর্ধেক মানুষ কাশ্মীরে চলে গেলেও কিছু করতে পারবে না। এতই যখন দুর্বল, তখন কাশ্মীরিদের জন্য জিহাদে দাঁড়ানো আত্মহত্যার শামিল। শায়েখের ফতোয়া অনুযায়ী (যদি আমি শায়খের কথা সঠিক বুঝে থাকি) কাশ্মীরিদের জন্য জিহাদে দাঁড়ানো হারাম। কিংবা অন্তত ফরয নয়। আর শায়খ বলেছেন, কাশ্মিরিরা জিহাদে দাঁড়ায়নি। মোটকথা দাঁড়ানো হারামই হোক কিন্তু এমনটাই হয়ে থাকুক যে, তারা দাঁড়ায়নি- সর্বাবস্থায় বহির্বিশ্বের মুসলমানদের জন্য কাশ্মিরে যাওয়া হারাম। কারণ, এক দিকে তারা নিজেরা যখন দাঁড়ায়নি (যদিও শায়খের এ বক্তব্য সঠিক নয়, বরং কাশ্মিরিরা টুকটাক হলেও জিহাদ করে যাচ্ছে) তখন শায়খের দরবারি ফতোয়া অনুযায়ী তাদেরকে সাহায্য করা বাকি মুসলমানদের দায়িত্ব নয়। অধিকন্তু পাকিস্তান যেহেতু এগিয়ে যায়নি, তাই আমাদের কোন দায়িত্ব নেই। সর্বোপরি রাষ্ট্রপ্রধানের যেহেতু অনুমতি হয়নি, তাই বাহিরের মুসলমানদের জন্য কাশ্মিরে সহায়তা করতে যাওয়া হারাম। অতএব, এখন যদি গোটা কাশ্মীরকে মৃত্যুপুরীও বানানো হয়; কাশ্মীরের নারী, শিশু, যুবক, বৃদ্ধ সকলকেও যদি ধরে ধরে যবাই করা হয় বা বোম্বিং করে উড়িয়ে দেয়া হয়; যদি মা-বোনদের আহাজারিতে আকাশ বাতাস প্রকম্পিতও হয়, যদি তাদের প্রতি দরদে হৃদয় ফেঁটে টুকরো টুকরোও হয়ে যায়, তথাপি আমাদের জন্য এবং বিশ্বের সকল মুসলমানের জন্য জিহাদে যাওয়া হরাম! হারাম! হারাম! কাঁদতে পারবেন, দোয়া করতে পারবেন, জিহাদ করতে পারবেন না। এমনকি মিছিলও করতে পারবেন না। করলেই হারাম হবে। জাহান্নামে যেতে হবে। আল্লাহর সামনে কেয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে- কেন তুমি রাষ্ট্র প্রধানের অনুমতি ছাড়া জিহাদে গেলে? তাগুতদের কথা মতো কেন ঘরে বসে থাকলে না? কেন কাশ্মীরিদের নীরবে হত্যা করতে দিলে না? কেন মালউনদেরকে বাধা দিলে? আরো হাজারো জবাবদিহিতার সম্মুখীন হতে হবে!!


    এই হল ফতোয়ার সারকথা। বাহ! অনেক সুন্দর ফতোয়া। এ ধরণের সরকারি ফতোয়া দেয়ার জন্যই বালআম বিন বাউরার উত্তরসূরি কুকুরদেরকে রুটি আর উচ্ছিষ্ট দিয়ে তাগুতগোষ্ঠী পোষে যাচ্ছে। না হলে তাদের কি-ই বা দরকার পড়েছে যে, এদেরকে তারা পোষে যাবে- যদিও তা উচ্ছিষ্ট দিয়েই হোক না কেন!!

    (চলমান ইনশাআল্লাহ)

  • #2
    মাসাআল্লাহ ভাই- পুরোটা পড়লাম। খুব ভাল লাগল। আশা করি বাকি পর্বগুলো খুব দ্রুত ই পাব। ইনশা আল্লাহ
    আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে ইলমে নাফে‘ দান করুন। আমীন
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      আমার মনে চাই এসব কুকুরদের যবেহ করে জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয় তাদের প্রভু এমেরিকার কুকুরদের সাথে এক সাথে ঘাস খাবে। এদের ফতুয়াই ইয়ামানে সৌদির ত্বাগুতেরা লক্ষ লক্ষ শিশুদের হত্যা করে যাচ্ছে। আর এরা এসি রুমে বসে জালিমের পক্ষে ফতুয়া দিচ্ছে। এরা কত বড় নষ্ট এক আল্লাহ ই ভালো জানেন। এদের মুখে এমেরিকার প্রশংসা শুনা যায়। ইনশাআল্লাহ সময় খুব নিকটে, রাস্তার মোড়ে এদের লাশ ঝুলবে। ইনশাআল্লাহ।
      والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

      Comment


      • #4
        استغفر الله
        استغفر الله
        استغفر الله
        কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
        তাদের কথা একের পর এক অন্তরকে জখম করেই চলছে।
        একটি কথাই মনে পড়ছে, اتق دعوة المظلوم، فإنها ليس بينها وبين الله حجاب

        Comment


        • #5
          মাসাআল্লাহ, চালিয়ে যান ভাই...ইনশা আল্লাহ
          আল্লাহ তা‘আলা আপনার সহায় হোন। আল্লাহুম্মা আমীন
          “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

          Comment


          • #6
            জিহাদে কাশ্মীর এবং বালআম বিন বাউরার উত্তরসূরিদের বিভ্রান্তির অপপ্রয়াস-০২

            উপরে আমরা দরবারি ফতোয়াটি দেখেছি। এবার একটু পর্যালোচনায় যাব। শায়খের সংশয়গুলোর উপর একটু আলোকপাত করবো ইনশাআল্লাহ।


            প্রথমে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, সুবিধাবাদিরা কাফের-মুরতাদদের পক্ষে যতই ওকালতি করুক; যতই তাবিল, তাহরিফ ও অপব্যাখ্যা করুক- আল্লাহ তার দ্বীনকে বিজয়ী করবেনই। আল্লাহ তাআলার চিরসত্য ওয়াদা-
            يُرِيدُونَ أَنْ يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلَّا أَنْ يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ (32) هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ (33)
            “ওরা আল্লাহর নূরকে নিজেদের মুখের (ফুঁ) দ্বারা নিভিয়ে দিতে চায়, অথচ আল্লাহ তার নূরের পূর্ণনা বিধান ব্যতীত বাকি সকল কিছুতেই অসম্মত- যদিও কাফেররা (তা) অপছন্দ করে। তিনিই তো সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে হিদায়াত ও সত্য দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যেন তিনি সকল দ্বীনের উপর তাকে বিজয়ী করেন- যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে।”- তাওবা ৩২-৩৩



             সংশয়: ইমামের অনুমতি
            এ ব্যাপারে কিছু আলোচনা আগেও হয়েছে। তবে শায়খের বক্তব্য যেহেতু নতুন করে ফিতনার সৃষ্টি করেছে তাই কিছু আলোচনা সমীচিন করছি। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।


            সরকারি মোল্লারা মূলত কথার একাংশ বলে আরেকাংশ বাদ দিয়ে ফিতনার সৃষ্টি করে। পূর্ণ কথাটি বললে তখন সকলেই সঠিক বিষয়টি বুঝতে পারতো। ইমামের আনুগত্য আমরা অস্বীকার করি না, ফরয মনে করি। যেমনটা আল্লাহ তাআলা আদেশ দিয়েছেন,
            يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا الله وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ
            “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আদেশ মান্য কর এবং আদেশ মান্য কর রাসূলের ও তোমাদের মধ্যে যারা দায়িত্বশীল, তাদের।”- নিসা ৫৯


            কিন্তু এ আনুগত্য দু’টি শর্ত সাপেক্ষে:


            প্রথম শর্ত:
            ইমাম মুসলমান হতে হবে। কাফের কখনও মুসলমানদের ইমাম হতে পারে না। যেমনটা এ আয়াতেও বলা হয়েছে (مِنْكُمْ) তথা ইমাম মুসলমান হতে হবে। শায়খ আব্দুল্লাহ আদদুমাইজি বলেন,
            فقوله تعالى (منكم) نص على اشتراط أن يكون ولي الأمر من المسلمين ، قال د . محمود الخالدي : [ولم ترد كلمة (أولي الأمر) إلا مقرونة بأن يكونوا من المسلمين ، فدل على أن ولي الأمر يشترط أن يكون مسلما]. اهـ
            “আল্লাহ তাআলার বাণী (منكم)- ‘তোমাদের মধ্য থেকে’ সুস্পষ্ট ভাষ্য যে, উলূল আমর মুসলমানদের মধ্য থেকে হওয়া শর্ত। ডক্টর মাহমুদ আলখালিদি বলেন, ‘(উলূল আমর) শব্দটি যত জায়গায় এসেছে, সব খানেই (মুসলমানদের মধ্য থেকে হওয়া) কথাটির সাথে মিলে এসেছে। বুঝা গেল, উলূল আমর মুসলমান হওয়া শর্ত’।”- আলইমামতুল উজমা ১৫৭


            আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেন,
            وَلَنْ يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا
            ‘আল্লাহ কিছুতেই কাফেরদের জন্য মু’মিনদের বিরুদ্ধে কোন পথ রাখবেন না।’- নিসা: ১৪১

            ইবনুল হুমাম রহ. (৮৬১ হি.) বলেন,
            لا ولاية لكافر على مسلم لقوله تعالى {ولن يجعل الله للكافرين على المؤمنين سبيلا} [النساء: 141]. اهـ
            “কোন মুসলমানের উপর কোন কাফেরের কোন কর্তৃত্ব নেই। কেননা, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- ‘আল্লাহ কিছুতেই কাফেরদের জন্য মু’মিনদের বিরুদ্ধে কোন পথ রাখবেন না’।”- ফাতহুল কাদীর: ৫/২৬৫


            দ্বিতীয় শর্ত:
            আদেশ বা নিষেধ শরীয়তসম্মত হতে হবে। শরীয়ত পরিপন্থী আদেশ-নিষেধে কোন আনুগত্য নেই। যেমনটা হাদিসে এসেছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
            « على المرء المسلم السمع والطاعة فيما أحب وكره إلا أن يؤمر بمعصية فإن أمر بمعصية فلا سمع ولا طاعة ».
            “পছন্দ-অপছন্দ সকল বিষয়ে মুসলমানের জন্য শ্রবণ ও আনুগত্য আবশ্যক। তবে যদি গুনাহের আদেশ করা হয়, তাহলে ভিন্ন কথা। গুনাহের আদেশ করা কোন হলে শ্রবণ বা আনুগত্য নেই।”- মুসলিম ৪৮৬৯, বুখারি ৬৭২৫



            এটাই আমাদের আকীদা। যেমনটা ইমাম ত্বহাবি রহ. (৩২১হি.) আহলুস সন্নাহর আকীদায় লিখেছেন,
            ولا نرى الخروج على أئمتنا وولاة أمورنا وإن جاروا ولا ندعوا عليهم ولا ننزع يدا من طاعتهم ونرى طاعتهم من طاعة الله عز و جل فريضة ما لم يأمروا بمعصية. اهـ
            “আমরা আমাদের আইম্মা ও আমাদের দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয মনে করি না- যদিও তারা জুলুম করে। তাদের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করি না। আনুগত্যের হাতও গুটিয়ে নিই না। (বরং) তাদের আনুগত্যকে আল্লাহ আযযা ওয়াজাল্লাহ-এর আনুগত্য মনে করি ও ফরয মনে করি- যতক্ষণ তারা কোনো গুনাহের আদেশ না দেন।”- আলআকিদাতুত ত্বহাবিয়্যাহ ৪৭
            ***


            শর্তের ব্যতয় ঘটলে

            উপরোক্ত দুই শর্তের কোন একটায় ব্যাত্যয় ঘটলেই হুকুম বিপরীত হবে।

            যদি প্রথম শর্তে ব্যত্যয় ঘটে তথা ইমাম মুসলমান না থাকে, তাহলে শরীয়তের নিদের্শ: যুদ্ধ করে হলেও তাকে অপসারণ করে দিতে হবে। যেমনটা হাদিসে এসেছে যে, হযরত উবাদ ইবনু সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
            دعانا النبي صلى الله عليه وسلم فَبَايَعْنَاهُ. فكان فيما أخذ علينا أَنْ بَايَعَنَا على السمع والطاعة في مَنشَطِنا ومَكْرَهِنا، وعُسرنا ويُسرنا، وَأَثَرَة علينا، وَأَنْ لا نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَه. قَالَ: إِلاَّ أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ. (متفق عليه وهذا لفظ مسلم.)
            “আমাদেরকে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডাকলেন এবং আমরা তাঁর হাতে বাইআত হলাম। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের থেকে যে বিষয়ে বাইআত নিলেন তার মধ্যে একটি ছিল: আমরা আমাদের পছন্দনীয়-অপছন্দনীয় সকল বিষয়ে, সুখে-দুঃখে এবং আমাদের উপর যদি অন্য কাউকে প্রাধান্য দেয়া হয় তথাপি (আমীরের কথা) শুনবো ও আনুগত্য করবো এবং আমরা দায়িত্বশীলের সাথে দায়িত্ব নিয়ে বিবাদে জড়াবো না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন তবে হাঁ, যদি তোমরা কোন স্পষ্ট কুফর দেখতে পাও, যার ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান রয়েছে- তাহলে ভিন্ন কথা।”- সহীহ বোখারি: ৬৬৪৭, সহীহ মুসলিম: ৪৮৭৭


            এটি মুসলিম উম্মাহর ইজমায়ী তথা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। ইমাম নববি রহ. (৬৭৬ হি.) কাজি ইয়াজ রহ. (৫৪৪ হি.) এর বক্তব্য বর্ণনা করেন,
            قال القاضي عياض: أجمع العلماءُ على أن الإمامةَ لا تنعقد لكافر وعلى أنه لو طرأ عليه الكفرُ انعزل. اهـ
            “উলামায়ে কেরাম সবাই একমত যে, কোনো কাফেরকে খলিফা নিযুক্ত করলে সে খলিফা হবে না এবং কোনো খলিফার মাঝে যদি কুফরী প্রকাশ পায়, তাহলে সে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপসারিত হবে যাবে।”- শরহে নববি আলা মুসলিম ১২/২২৯


            আরো বলেন,
            قال القاضي: فلو طرأ عليه كفر وتغيير للشرع أو بدعة خرج عن حكم الولاية وسقطت طاعته. اهـ
            “কাজী ইয়ায রহ. আরও বলেন, শাসকের উপর যদি কুফর আপতিত হয় এবং সে যদি শরীয়া বিনষ্ট করে অথবা বিদআত করে, তবে সে পদচ্যুত হয়ে যাবে এবং তার আনুগত্যের অপরিহার্যতা শেষ হয়ে যাবে।”- শরহে নববি আলা মুসলিম ১২/২২৯


            হাফেয ইবনে হাজার রহ. (৮৫২ হি.) বলেন,
            يَنعَزِلُ بالكفر إجماعا فيجبُ على كل مسلمٍ القيامُ في ذلك، فمن قَوِيَ على ذلك فله الثوابُ، ومن داهن فعليه الإثمُ، ومن عَجَزَ وجبتْ عليه الهجرةُ من تلكَ الأرضِ. اهـ
            “কুফরীর কারণে শাসক সর্বসম্মতিক্রমে অপসারিত হয়ে যাবে। তখন প্রতিটি মুসলমানের উপর ফরজ হলো, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। যে তাতে সক্ষম হবে, তার জন্য রয়েছে প্রতিদান। যে শিথিলতা করবে, সে গুনাহগার হবে। আর যে অক্ষম, তার জন্য আবশ্য হলো ঐ ভূমি থেকে হিজরত করা।”– ফাতহুল বারি: ১৩/১৫৩



            আর যদি দ্বিতীয় শর্তের ব্যত্যয় ঘটে তথা ইমাম শরীয়ত বহির্ভূত আদেশ দেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ তো করা যাবে না, তবে তার উক্ত আদেশ বা নিষেধ মেনে চলা যাবে না। বরং যা শরীয়তের নির্দেশ তাই পালন করতে হবে।
            ***


            আমাদের প্রেক্ষাপট

            উপরোক্ত সারসংক্ষেপ কথা বুঝার পর এবার আমাদের প্রেক্ষাপটে আসি। আমরা জানি, বর্তমান তাগুত শাসকগোষ্ঠী মুরতাদ। আল্লাহর শরীয়ত প্রত্যাখান করে কুফরি শাসন প্রবর্তন, ইসলাম ও মুসলামানদের বিপক্ষে যুদ্ধে কাফেরদের পক্ষাবলম্বন, শরীয়তের বিধি বিধান নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল ইত্যাদি অসংখ্য কারণে এরা মুরতাদ হয়ে আছে। এমতাবস্থায় জিহাদের মাধ্যমে এদেরকে অপসারণ করে মুসলিম ভূমি এদের থেকে উদ্ধার করা ফরয। তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলার তো কোন প্রশ্নই নেই।


            শায়খের কথা মতো যদি এসব তাগুতকে মুসলমান এবং আমীরুল মু’মিনীন ধরেও নিই, তথাপি জিহাদের অনুমতি না দেয়া বা তাতে বাধা দেয়া সুস্পষ্ট শরীয়ত বহির্ভূত কাজ। এ ধরণের আদেশ-নিষেধে কোনো আনুগত্য নেই। আল্লাহ তাআলার আদেশ আমীরের আদেশের অগ্রবর্তী। জিহাদ আল্লাহ তাআলার নির্দেশ। আমীরের নিষেধের কারণে তা থেকে বিরত থাকা যাবে না। যারা আমীরের নিষেধের কারণে জিহাদ থেকে বিরত থাকবে, তাদেরকে ফরয তরকের গোনাহ মাথায় নিয়ে অপরাধী অবস্থায় আল্লাহ তাআলার সামনে হাজির হতে হবে। এ বিষয়টি সামনে ইনশাআল্লাহ আমরা আরো একটু বিস্তারিত আলোচনা করবো।
            ***

            Comment


            • #7
              ভাই খুব ভালো হয়েছে, আল্লাহ আপনার ইলেমে আরো বরকত বাড়িয়ে দেন ।
              মৃত্যু ও বন্দিত্বের ভয় ঝেড়ে ফেলে চলুন ঝাঁপিয়ে পড়ি ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে।

              Comment


              • #8
                Originally posted by সত্যের খুজে View Post
                ভাই খুব ভালো হয়েছে, আল্লাহ আপনার ইলেমে আরো বরকত বাড়িয়ে দেন ।
                ভাই,,সত্য পেয়েছেন কি??? এরকম আইডি নাম বিষ্মিত করে।
                ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

                Comment


                • #9
                  আলহামদুলিল্লাহ, দ্বিতীয় পর্ব পড়া হয়েছে।
                  আল্লাহ তা‘আলা আপনার মেহনতকে কবুল করুন। আমীন
                  ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                  Comment


                  • #10
                    বারাকাল্লাহু ফিকা.....আমীন
                    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

                    Comment


                    • #11
                      আল্লাহ, আপনি এই ধরণের শাইখদের থেকে মুসলিমদের হিফাজত করুন আমীন। এরা মুসলিমদের কাফেরের বলির পাঠা বানাতে চাই।
                      والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

                      Comment


                      • #12
                        এরাই হচ্ছে বড় মুনাফিক,
                        আমাদের এই সংশয়গুলো নিরশন করে বেশি বেশি প্রচার করতে হবে। জাযাকাল্লাহ ভাই

                        Comment


                        • #13
                          যুগে যুগে ইসলামের ক্ষতি এরাই করে চলেছে।আল্লাহ এদের থেকে আমাদেরকে হেফাজত করুন,আমিন।।
                          আসুক না যত বাধাঁ যত ঝর সাইক্লোন কিতালের পথে মোরা চলবোই

                          Comment


                          • #14
                            ঐ সময় বেশি দুরে না যেই দিন এই সমস্ত তাগুত শাসকদের গলায় শিকল পরাব, সাথে সাথে তাদের এই সমস্ত পাচাটা কুকুর গুলোকেও। কারন রাসুলে আরাবী (সাঃ) আমাদের বিজয়ের ওয়াদা দিয়েছেন, তিনি বলেছেন "আমার উম্মতের একটি দল হিন্ধুস্থানে যোদ্ধ করবে, আল্লাহ তাদের কে বিজয় দান করবেন এবং হিন্ধুস্থানের শাসকদের কে শিকল পরিয়ে নিয়ে আসবে এবং সামে গিয়ে ঈসা (আঃ) এর সাথে সাক্ষাত করবে। হে তাগুত দের পাচাটা কুকুরেরা অপেক্ষা কর, তোমাদের সময় শেষ। আর আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করি হে আল্লাহ আপনি আমাকে ও আমাদের ভাইদের কে ইলমে নাফে দান করুন আমিন।

                            Comment

                            Working...
                            X