(বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা ও সরকারী পাঠ্যবই। তুমুল ইসলাম বিদ্বেষের অপর এক নাম। এই সিরিজের প্রতিটি পর্বে শিক্ষা কারিকুলাম ও সরকারী পাঠ্যবইগুলোর বিভিন্ন বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। গতানুগতিক আলোচনার বাইরে গিয়ে বইগুলোর সঠিক-ভুল তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। সবাই যেভাবে লেখে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে লেখার চেষ্টা করা হয়েছে। শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি ইস্যু নিয়েই লেখা হয়নি। বরং বইয়ের যেই যেই বিষয়ই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক মনে হয়েছে সব বিষয়েই লেখা হচ্ছে। আল্লাহই একমাত্র তাওফীকদাতা। প্রিয় পাঠক! আপনার সার্বিক সহায়তা কামনা করি। সকলে যার যার স্থান থেকে সিরিজটিকে বেশি বেশি প্রচার করার চেষ্টা করি। হিন্দুত্ববাদের ভয়াবহ হুমকির মোকাবেলায় তাওহীদের সুমহান বাণী ছড়িয়ে দেই; বাংলার আনাচে কানাচে!)
প্রিয় পাঠক! তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইটিও ১ম ও ২য় শ্রেণীর বইগুলোর মতো ফ্রী-মিক্সিং এবং পর্দাহীনতা দিয়ে ঠাসা। আসলে ফ্রী-মিক্সিং এবং পর্দাহীনতার যে বান আমাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে আমরা যত দ্রুত ও বলিষ্ঠভাবে উঠে আসতে পারব; ততই আমাদের মঙ্গল। আর বলা বাহুল্য, ''সহশিক্ষাই'' এর জন্য দায়ী। সহশিক্ষা সম্পর্কে শরীয়াহর অবস্থান বিস্তারিতভাবে জানতে পড়ুন, "সহশিক্ষার নোংরামি, ভণ্ডামি ও ক্ষতির দিকগুলো নিয়ে এবং আমাদের করণীয় সম্পর্কে প্রমাণ্য প্রবন্ধ - সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের প্রাসঙ্গিক গবেষণা-প্রবন্ধ ও ফাতওয়া সংকলনঃ- ০১. সহশিক্ষা ও ইসলাম। https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196529
বইয়ের ৩-৪ পৃষ্ঠায় ''আমাদের পরিবার ও আমাদের প্রতিবেশি'' নামে একটি বিবরণীমূলক পাঠ রয়েছে। সেখানে একটি ছবি দিয়ে নীচে একটি ক্যাপশন লেখা আছে। আগে চলুন, ছবিতে কী আছে সেটা আমরা দেখি।
ছবিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেকগুলো ছেলে মেয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে বিভিন্ন জাতি উপজাতির ছেলে মেয়েরা আছে। সেখানে আছে পাঞ্জাবী গায়ে টুপি মাথায় একজন মুসলিম। আছে ধুতি পরা তবলাওয়ালা হিন্দু বাদকদল। আছে সংখ্যালঘু কিছু উপজাতি শিশু। যাদের ধর্মীয় পরিচয়ে আমরা তাদেরকে খৃষ্টান, ইহুদি অথবা হিন্দু মতালম্বী বলেই জানি। আছে মাথায় টিকনী রাখা বৌদ্ধ একটি ছেলেও। এই হলো ছবিটিতে আমরা যা দেখতে পেলাম তার বিবরণ।
এবার আমরা ক্যাপশনটা একটু পড়ে দেখি। ক্যাপশনে লেখা আছে, '' ........ আমাদের চারপাশে বিভিন্ন পেশার আরও অনেক মানুষ আছে। সবাই আমরা মিলেমিশে থাকি। এই মিলেমিশে থাকার মানেটা কি? এই মিলমিশের মানে কি? মিলমিশের মানে কি সামাজিক সহাবস্থান, সমানধিকার? হ্যাঁ, হয়ত সেটাই। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, এমন সহাবস্থান ও সমানধিকারের বিষয়ে ইসলামের মতামত কি, ইসলাম কি বলে? ইসলামের দৃষ্টিতে অমুসলিম প্রজাদের সামাজিক অধিকার কি কি এবং কতটুকু?
আরেকটু সামনে গিয়ে সহাবস্থানকে প্রমোট করে ''বালুচরে একদিন নামে'' বইতে একটি গল্প আনা হয়েছে। গল্পটি তিথি নামক একটি ছোট মেয়েকে নিয়ে। সেখানে দেখানো হচ্ছে তিথিরা নদীর মাঝে একটি বালুচরে ঘুরতে যায় এবং সেখানে অনেক আনন্দ করে। গল্পে তিথির সাথে আছে তিথির বাবা। আছেন নাদের চাচা, গণেশ কাকা, হামিদ চাচা এবং আছে বাবার কুমারপাড়ার বন্ধু হিন্দু মধু পাল। নাদের চাচা চরের পাশের জলাশয় থেকে মাছ ধরে আনেন এবং সবাইকে দুপুরে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন। এই হলো সংক্ষিপ্তভাবে মূল গল্পটি।
এখানে গল্পে তারা মূলত মুসলিম + হিন্দু চরিত্রগুলো এনে এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে, আমাদের গ্রাম হলো শান্তিপুর! এখানে হিন্দু মুসলিমে কোনো অশান্তি হয় না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এখানে হয় না। এখানে যা আছে সেটা হলো সহাবস্থান, হিন্দু মুসলিম প্রীতি সহাবস্থান!
প্রিয় পাঠক! দারুল ইসলামের অমুসলিম যিম্মি এবং বইয়ের এই হিন্দুরা কিন্তু এক নয়। ভুল বুঝবেন না । গুলিয়ে ফেলবেন না। ফতোয়া এবং তারীখের কিতাবের অমুসলিম যিম্মি এবং বর্তমানের হিন্দুরা এক না। সেই যিম্মিদের হুকুম এই হিন্দুত্ববাদীদের উপর প্রয়োগ করতে যাবেন না। তাহলে এব্যাপারে শরীয়াহর সঠিক অবস্থান কি? সেটা নিয়ে আমরা ভিন্ন প্রবন্ধে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।
তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইটিতেও পহেলা বৈশাখকে জাতীয় একটি উৎসব হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখানেও মাটির তৈরি হাতি ঘোড়ার মূর্তিকে প্রমোট করা হয়েছে। বৈশাখী মেলায় নানা রকম জিনিস আছে। আছে মাটির হাতি, ঘোড়া, পুতুল। আছে......। মাটির পুতুল, মাটির ঘোড়া এবং মাটির হাতি সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? হোক না সেটা মাটির পুতুল; সেটা কি বানানো জায়েয? সেটা কি ইসলামে বৈধ? ইসলামের আইন হলো, মাটির তৈরি কোনো প্রাণী, সেটা যত বড়ই হোক অথবা যত ছোটই হোক সেটা মূর্তি, সেটা হারাম। আখেরাতে সবচেয়ে বেশি কঠিন আযাব হবে যে সকল কারণে মূর্তিনির্মাণ তার মাঝে অন্যতম।
মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ২০৮ নং আয়াতে বলেন,
মুসলিম শিশুদের পাঠ্যবইতে পহেলা বৈশাখের মতো একটা শিরকি দিবস সম্পর্কে আনন্দ আলোচনা কেন থাকবে? পহেলা বৈশাখের হাকীকত কী ? পহেলা বৈশাখ কি ইসলাম সমর্থিত? যদি ইসলাম সমর্থিত না হয়, তাহলে অনৈসলামিক একটা কালচার মুসলিম শিশুদেরকে কেন শেখানো হবে? মুসলিম শিশুরা কেন পহেলা বৈশাখ যা হিন্দুদের উৎসবের দিন এটা সম্পর্কে জানতে হবে? এগুলো কি অনিচ্ছায় কৃত ভুল? নাকি শিক্ষাব্যবস্থাকে হিন্দুয়ানীকরণ? এবং মুসলিম শিশুদেরকে পহেলা বৈশাখের শিরকে লিপ্ত করার গভীর চক্রান্ত? হে মুসলিম সজাগ হোন, সাবধান হোন। নিজের ও নিজের সন্তানদের এবং অধীনস্তদের ঈমানের হেফাজত করুন। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন। আমীন। পহেলা বৈশাখের শিরক সম্পর্কে সামনে আলাদা পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইনশা-আল্লাহ।
তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইটিতে খুবই নোংরাভাবে শিশুদেরকে মানবধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ''আমাদের উৎসব'' নামে বইয়ের ৪৮ পৃষ্ঠায় একটি পাঠ আনা হয়েছে। যেখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খৃষ্টানদের প্রধান উৎসব নিয়ে আনন্দ আলোচনা করা হয়েছে। এবং হিন্দুধর্ম ও ইসলাম ধর্মের উৎসবে একে অপরের যোগদানে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। হিন্দুদের পূজা একটি ভ্রান্ত উপাসনা, তাদের এই উপাসনা হলো আল্লাহর সাথে শিরক। একজন মুসলিম কীভাবে এমন শিরকি-কুফরি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে? কেউ কিভাবে কোনো মুসলিমকে এমন শিরকি-কুফরি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারে? একমাত্র আল্লাহকে অস্বীকারকারী এবং আল্লাহর দ্বীনের প্রকাশ্য দুশমন ব্যতিত অন্য কেউ এমন দুঃসাহস করতে পারে না। অথচ এমন কুফর শিরকের দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে একটি পাঠ্যবইয়ে! মুসলিম শিশুদের পাঠ্যবইয়ে! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে! হে মুসলিম! এমন কুফরী শিক্ষাব্যবস্থাকে বয়কট করুন। এর মূলোৎপাটন করুন। যারা এই নাস্তিক্যবাদী হিন্দুত্ববাদী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে; তাদেরকে অপসারণ করুন।
বইতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে আমাদের মুসলিমদেরকে হিন্দু ও বিজাতীয়দের সাথে ভাই ভাই দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধোকায়পূর্ণ একটি কুফরি মতবাদ ছাড়া আর কিছুই না। ''আমাদের উৎসব'' পাঠটির পরিশিষ্টে তারা এভাবে লিখেছে যে, ''নানা রকম উৎসব আমাদেরকে এক করে রেখেছে''। মুসলিম শিশুদের একটি পাঠ্যবইয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খৃষ্টানদের প্রধান উৎসবগুলো নিয়ে উৎসাহমূলক আলোচনা আসবে কেন? আমরা মুসলিম হিসেবে হিন্দুদের ধর্মকে সঠিক মনে করি না। খৃষ্টান এবং বৌদ্ধদেরকেও আমরা সঠিক মনে করি না। কুরআন আমাদেরকে জানায়, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন-ধর্ম একমাত্র ইসলামই। ইসলাম ছাড়া অন্য সকল মতবাদ ও ধর্ম মিথ্যার উপর। ইসলাম ব্যতিত অন্য সকল ধর্ম বাতিল। একমাত্র ইসলামই হক্ব। এই বিশ্বাস রাখা ঈমানের অঙ্গ। এই আকীদাই ঈমান।
একমাত্র আল্লাহই সত্য । একমাত্র আল্লাহর প্রেরিত রাসূলের আদর্শই সত্য। একমাত্র আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব কুরআনই সত্য । অন্যসব বাতিল, মিথ্যা, অন্ধকার এবং ভুয়া । এটা একজন মুসলিমের আকীদা । এই বিশ্বাস রাখা ব্যতিত একজন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারে না। মুমিন হতে পারে না। মুসলমান হতে পারে না।
এসব মিথ্যাধর্মের আলোচনা কেবল একটি উদ্দেশ্যেই বইপুস্তকে আনা যাবে, সেটা হলো, এই হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খৃষ্টান সহ দুনিয়াতে ইসলাম ব্যতিত যত ধর্ম বা মতবাদ আছে সব মিথ্যা - এটা বুঝানোর জন্য। একমাত্র এই উদ্দেশ্যের জন্যই বইপুস্তকে এসব মিথ্যা ধর্মের আলোচনা করা যাবে। অর্থাৎ এক কথায় এসব মিথ্যা ধর্মের মিথ্যাকে মানুষদের নিকট স্পষ্ট করে দেওয়ার জন্য। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। এটাই ইসলামের বিধান। এর অন্যথা কোনোভাবেই বৈধ নয়। আসলে ধর্মহীনতার নোংরা স্রোত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাস্তবেই ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। হে মুসলিম! আপনি একটু অনুভব করুন। আল্লাহ আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন!
মানবধর্মে শেখানো হয় আপনার বিবেক-বুদ্ধি, মন-মেযাজ এবং রুচি-অভিরুচিই আপনার মনীব-প্রভু। আপনি শুধুমাত্র আপনার মন যা চায় তা-ই করবেন, যদিও সে কাজটা ভুল হয়। সেই ভুল কাজটাই মানবধর্মে আপনার জন্য বৈধ। এবং আপনার মন যেটাকে চায় না সেটাকে আপনি মিথ্যা-ভুল প্রতিপন্ন করবেন, যদিও বাস্তবে সেটাই সত্য হয়। এবং সেই সত্য-সঠিক কাজটাই মানবধর্মে আপনার জন্য অবৈধ। এটাই সেই কুফুরি মানবধর্ম যার প্রচার আজ বিশ্বে জোরেশোরে করা হচ্ছে। কোনো মুসলিম মানবধর্মকে অস্বীকার করা ব্যতিত মুসলিম হতে পারে না। মানবধর্ম সম্পর্কে আমরা সামনে আলাদাপর্বে আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং হে মুসলিম আপনার ঈমানের হেফাযত করুন। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খৃষ্টান সহ দুনিয়াতে ইসলাম ব্যতিত যত ধর্ম বা মতবাদ আছে সবগুলোকে মিথ্যা ঘোষণা করুন। আপনার ঈমানকে খালেস করুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফিক দিন। আমিন।
বইগুলোতে ভাষা আন্দোলন আর পাকিস্তানীদের সম্পর্কে কী মিথ্যা ইতিহাস গুলে খাওয়ানো হচ্ছে, সে সম্পর্কে আজ আর কোনো কিছু বললাম না। সামনে যাই।
এই বইতেও সুফিয়া কামালের অনর্থক বাজে একটি কবিতা আনা হয়েছে।
ইয়া রব্বাল আলামিন, আপনার দ্বীনকে যারা মুখের ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, তাদের উপর আমাদের শক্তিশালী করে দিন। এমন প্রচণ্ড আঘাত করার তাওফিক দিন, যেন আগামী হাজার বছর পরও তাদের কোন উত্তরসূরি দুনিয়ার বুকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে লক্ষবার ভাবে।
ধারাবাহিক চলবে......। আপনাদের মতামত জানাবেন। জাযাকুমুল্লাহ।
- এমন আজগুবি কাহিনীও কি পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া খুব প্রয়োজন ছিল?
- মুসলিম দেশ। মুসলমানের দেশ। শিক্ষক মুসলিম, শিক্ষার্থীরাও মুসলমান। কিন্তু পাঠ্যবই এমন অনৈসলামিক কেন?
- হারাম বাজি ও সুদি অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে প্রচারিত এবং প্রতিষ্ঠিত একটি খেলার প্রচারণা চালানো হচ্ছে স্কুলের একটি পাঠ্যবইয়ে!
বিস্তারিত জানতে পড়ুন; সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম । পর্ব - ০৫
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196625
- এই ভূমিতে কি চক্ষুষ্মান একজন ব্যক্তিও নেই? সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম । পর্ব - ০৭ ।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196978
স্কুলের ৩য় শ্রেণীর আমার বাংলা বইয়ের সরকারি পিডিএফ সংস্করণ লিঙ্ক।
https://drive.google.com/file/d/1ak1...v1pq6yzMj/view
প্রিয় পাঠক! তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইটিও ১ম ও ২য় শ্রেণীর বইগুলোর মতো ফ্রী-মিক্সিং এবং পর্দাহীনতা দিয়ে ঠাসা। আসলে ফ্রী-মিক্সিং এবং পর্দাহীনতার যে বান আমাদেরকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা থেকে আমরা যত দ্রুত ও বলিষ্ঠভাবে উঠে আসতে পারব; ততই আমাদের মঙ্গল। আর বলা বাহুল্য, ''সহশিক্ষাই'' এর জন্য দায়ী। সহশিক্ষা সম্পর্কে শরীয়াহর অবস্থান বিস্তারিতভাবে জানতে পড়ুন, "সহশিক্ষার নোংরামি, ভণ্ডামি ও ক্ষতির দিকগুলো নিয়ে এবং আমাদের করণীয় সম্পর্কে প্রমাণ্য প্রবন্ধ - সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের প্রাসঙ্গিক গবেষণা-প্রবন্ধ ও ফাতওয়া সংকলনঃ- ০১. সহশিক্ষা ও ইসলাম। https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196529
বইয়ের ৩-৪ পৃষ্ঠায় ''আমাদের পরিবার ও আমাদের প্রতিবেশি'' নামে একটি বিবরণীমূলক পাঠ রয়েছে। সেখানে একটি ছবি দিয়ে নীচে একটি ক্যাপশন লেখা আছে। আগে চলুন, ছবিতে কী আছে সেটা আমরা দেখি।
ছবিতে আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেকগুলো ছেলে মেয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে বিভিন্ন জাতি উপজাতির ছেলে মেয়েরা আছে। সেখানে আছে পাঞ্জাবী গায়ে টুপি মাথায় একজন মুসলিম। আছে ধুতি পরা তবলাওয়ালা হিন্দু বাদকদল। আছে সংখ্যালঘু কিছু উপজাতি শিশু। যাদের ধর্মীয় পরিচয়ে আমরা তাদেরকে খৃষ্টান, ইহুদি অথবা হিন্দু মতালম্বী বলেই জানি। আছে মাথায় টিকনী রাখা বৌদ্ধ একটি ছেলেও। এই হলো ছবিটিতে আমরা যা দেখতে পেলাম তার বিবরণ।
এবার আমরা ক্যাপশনটা একটু পড়ে দেখি। ক্যাপশনে লেখা আছে, '' ........ আমাদের চারপাশে বিভিন্ন পেশার আরও অনেক মানুষ আছে। সবাই আমরা মিলেমিশে থাকি। এই মিলেমিশে থাকার মানেটা কি? এই মিলমিশের মানে কি? মিলমিশের মানে কি সামাজিক সহাবস্থান, সমানধিকার? হ্যাঁ, হয়ত সেটাই। তাহলে এখন প্রশ্ন হলো, এমন সহাবস্থান ও সমানধিকারের বিষয়ে ইসলামের মতামত কি, ইসলাম কি বলে? ইসলামের দৃষ্টিতে অমুসলিম প্রজাদের সামাজিক অধিকার কি কি এবং কতটুকু?
আমরা যতটুকু জানি, ইসলাম এধরনের প্রচলিত সমানধিকারের ভিত্তিতে সহাবস্থানকে কোনোভাবে সমর্থন তো করেই না। বরং ইসলাম এজাতীয় সহাবস্থান-এর কঠোর বিরোধী। ইসলামে এজাতীয় সহাবস্থান কঠোরভাবে নিষিদ্ধ; যেখানে মুসলিম এবং হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান সকলের মর্যাদা সমান এবং সকলের অধিকার সমান। বরং ইসলামী শরীয়তে বর্তমান সময়ের মতো কাফেরদের সাথে সহাবস্থান ও সমানধিকার বলতে কোনো কিছুর কোনো অস্তিত্বই নেই। জানি, কথাগুলো কঠিন শোনাচ্ছে; তবে সত্য এটিই। "সহাবস্থান ও ইসলাম" বিষয়ে 'সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের প্রাসঙ্গিক গবেষণা-প্রবন্ধ-সংকলন নতুন একটি পর্বে আমরা আলাদাভাবে আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ।
এখানে গল্পে তারা মূলত মুসলিম + হিন্দু চরিত্রগুলো এনে এটাই বুঝাতে চেয়েছে যে, আমাদের গ্রাম হলো শান্তিপুর! এখানে হিন্দু মুসলিমে কোনো অশান্তি হয় না। সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এখানে হয় না। এখানে যা আছে সেটা হলো সহাবস্থান, হিন্দু মুসলিম প্রীতি সহাবস্থান!
প্রিয় পাঠক! দারুল ইসলামের অমুসলিম যিম্মি এবং বইয়ের এই হিন্দুরা কিন্তু এক নয়। ভুল বুঝবেন না । গুলিয়ে ফেলবেন না। ফতোয়া এবং তারীখের কিতাবের অমুসলিম যিম্মি এবং বর্তমানের হিন্দুরা এক না। সেই যিম্মিদের হুকুম এই হিন্দুত্ববাদীদের উপর প্রয়োগ করতে যাবেন না। তাহলে এব্যাপারে শরীয়াহর সঠিক অবস্থান কি? সেটা নিয়ে আমরা ভিন্ন প্রবন্ধে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।
তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইটিতেও পহেলা বৈশাখকে জাতীয় একটি উৎসব হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখানেও মাটির তৈরি হাতি ঘোড়ার মূর্তিকে প্রমোট করা হয়েছে। বৈশাখী মেলায় নানা রকম জিনিস আছে। আছে মাটির হাতি, ঘোড়া, পুতুল। আছে......। মাটির পুতুল, মাটির ঘোড়া এবং মাটির হাতি সম্পর্কে ইসলাম কী বলে? হোক না সেটা মাটির পুতুল; সেটা কি বানানো জায়েয? সেটা কি ইসলামে বৈধ? ইসলামের আইন হলো, মাটির তৈরি কোনো প্রাণী, সেটা যত বড়ই হোক অথবা যত ছোটই হোক সেটা মূর্তি, সেটা হারাম। আখেরাতে সবচেয়ে বেশি কঠিন আযাব হবে যে সকল কারণে মূর্তিনির্মাণ তার মাঝে অন্যতম।
মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ২০৮ নং আয়াতে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
মুসলিম শিশুদের পাঠ্যবইতে পহেলা বৈশাখের মতো একটা শিরকি দিবস সম্পর্কে আনন্দ আলোচনা কেন থাকবে? পহেলা বৈশাখের হাকীকত কী ? পহেলা বৈশাখ কি ইসলাম সমর্থিত? যদি ইসলাম সমর্থিত না হয়, তাহলে অনৈসলামিক একটা কালচার মুসলিম শিশুদেরকে কেন শেখানো হবে? মুসলিম শিশুরা কেন পহেলা বৈশাখ যা হিন্দুদের উৎসবের দিন এটা সম্পর্কে জানতে হবে? এগুলো কি অনিচ্ছায় কৃত ভুল? নাকি শিক্ষাব্যবস্থাকে হিন্দুয়ানীকরণ? এবং মুসলিম শিশুদেরকে পহেলা বৈশাখের শিরকে লিপ্ত করার গভীর চক্রান্ত? হে মুসলিম সজাগ হোন, সাবধান হোন। নিজের ও নিজের সন্তানদের এবং অধীনস্তদের ঈমানের হেফাজত করুন। আল্লাহ আমাদেরকে তাওফীক দিন। আমীন। পহেলা বৈশাখের শিরক সম্পর্কে সামনে আলাদা পোস্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইনশা-আল্লাহ।
তৃতীয় শ্রেণীর বাংলা বইটিতে খুবই নোংরাভাবে শিশুদেরকে মানবধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ''আমাদের উৎসব'' নামে বইয়ের ৪৮ পৃষ্ঠায় একটি পাঠ আনা হয়েছে। যেখানে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খৃষ্টানদের প্রধান উৎসব নিয়ে আনন্দ আলোচনা করা হয়েছে। এবং হিন্দুধর্ম ও ইসলাম ধর্মের উৎসবে একে অপরের যোগদানে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। হিন্দুদের পূজা একটি ভ্রান্ত উপাসনা, তাদের এই উপাসনা হলো আল্লাহর সাথে শিরক। একজন মুসলিম কীভাবে এমন শিরকি-কুফরি কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে? কেউ কিভাবে কোনো মুসলিমকে এমন শিরকি-কুফরি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহ দিতে পারে? একমাত্র আল্লাহকে অস্বীকারকারী এবং আল্লাহর দ্বীনের প্রকাশ্য দুশমন ব্যতিত অন্য কেউ এমন দুঃসাহস করতে পারে না। অথচ এমন কুফর শিরকের দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে একটি পাঠ্যবইয়ে! মুসলিম শিশুদের পাঠ্যবইয়ে! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে! হে মুসলিম! এমন কুফরী শিক্ষাব্যবস্থাকে বয়কট করুন। এর মূলোৎপাটন করুন। যারা এই নাস্তিক্যবাদী হিন্দুত্ববাদী শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে; তাদেরকে অপসারণ করুন।
বইতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে আমাদের মুসলিমদেরকে হিন্দু ও বিজাতীয়দের সাথে ভাই ভাই দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। অথচ জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধোকায়পূর্ণ একটি কুফরি মতবাদ ছাড়া আর কিছুই না। ''আমাদের উৎসব'' পাঠটির পরিশিষ্টে তারা এভাবে লিখেছে যে, ''নানা রকম উৎসব আমাদেরকে এক করে রেখেছে''। মুসলিম শিশুদের একটি পাঠ্যবইয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খৃষ্টানদের প্রধান উৎসবগুলো নিয়ে উৎসাহমূলক আলোচনা আসবে কেন? আমরা মুসলিম হিসেবে হিন্দুদের ধর্মকে সঠিক মনে করি না। খৃষ্টান এবং বৌদ্ধদেরকেও আমরা সঠিক মনে করি না। কুরআন আমাদেরকে জানায়, আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দ্বীন-ধর্ম একমাত্র ইসলামই। ইসলাম ছাড়া অন্য সকল মতবাদ ও ধর্ম মিথ্যার উপর। ইসলাম ব্যতিত অন্য সকল ধর্ম বাতিল। একমাত্র ইসলামই হক্ব। এই বিশ্বাস রাখা ঈমানের অঙ্গ। এই আকীদাই ঈমান।
একমাত্র আল্লাহই সত্য । একমাত্র আল্লাহর প্রেরিত রাসূলের আদর্শই সত্য। একমাত্র আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাব কুরআনই সত্য । অন্যসব বাতিল, মিথ্যা, অন্ধকার এবং ভুয়া । এটা একজন মুসলিমের আকীদা । এই বিশ্বাস রাখা ব্যতিত একজন ব্যক্তি মুসলিম হতে পারে না। মুমিন হতে পারে না। মুসলমান হতে পারে না।
তারপর দ্বিতীয় কথা হলো, এসব ভ্রান্ত ধর্ম ও মতবাদের আনন্দ আলোচনা কেন পাঠ্যবইয়ে? মিথ্যাকে গ্রহণ করে কেউ আনন্দিত হতে পারে? এসব মিথ্যাধর্মের প্রচার কেন করা হচ্ছে? আবার পাঠ্যবইয়ে? ইসলামী শরীয়াহ' মতে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খৃষ্টান সহ দুনিয়াতে ইসলাম ব্যতিত যত ধর্ম বা মতবাদ আছে সব মিথ্যা হওয়ার কারণে দুনিয়াতে এসব ধর্মের প্রচার প্রচারণাও নিষিদ্ধ। কারণ, একটি অকাট্য মিথ্যাকে কখনো ঢাকঢোল পিটিয়ে এভাবে প্রচার করা যায় না। এটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ! শুনতে অবাক লাগলেও এটিই সত্য।
হিন্দুত্ববাদীরা ও তাদের গোলামরা আমাদেরকে নির্ধারণ করে দিচ্ছে আমরা কী পড়ব? আমরা ইসলামকে কতটুকু মানব এবং কোন কোন জায়গায় ইসলামকে ছেড়ে দেব। এটাই মানবধর্ম। সবার আগে আমি মানুষ । আমার বিবেক-বুদ্ধি, মন-মেযাজ এবং রুচি-অভিরুচির সাথে কোনো কিছু সাঙ্ঘর্ষিক হলে সেটাই অবৈধ। এবং কোনো কিছু আমার বিবেক-বুদ্ধি, মন-মেযাজ ও রুচি-অভিরুচির সাথে মিলে গেলে সেটাই বৈধ। এটাই মানবধর্ম।
সুতরাং হে মুসলিম আপনার ঈমানের হেফাযত করুন। হিন্দু, বৌদ্ধ এবং খৃষ্টান সহ দুনিয়াতে ইসলাম ব্যতিত যত ধর্ম বা মতবাদ আছে সবগুলোকে মিথ্যা ঘোষণা করুন। আপনার ঈমানকে খালেস করুন। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফিক দিন। আমিন।
বইগুলোতে ভাষা আন্দোলন আর পাকিস্তানীদের সম্পর্কে কী মিথ্যা ইতিহাস গুলে খাওয়ানো হচ্ছে, সে সম্পর্কে আজ আর কোনো কিছু বললাম না। সামনে যাই।
এই বইতেও সুফিয়া কামালের অনর্থক বাজে একটি কবিতা আনা হয়েছে।
ইয়া রব্বাল আলামিন, আপনার দ্বীনকে যারা মুখের ফুঁৎকারে নিভিয়ে দিতে চায়, তাদের উপর আমাদের শক্তিশালী করে দিন। এমন প্রচণ্ড আঘাত করার তাওফিক দিন, যেন আগামী হাজার বছর পরও তাদের কোন উত্তরসূরি দুনিয়ার বুকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে লক্ষবার ভাবে।
ধারাবাহিক চলবে......। আপনাদের মতামত জানাবেন। জাযাকুমুল্লাহ।
- এমন আজগুবি কাহিনীও কি পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া খুব প্রয়োজন ছিল?
- মুসলিম দেশ। মুসলমানের দেশ। শিক্ষক মুসলিম, শিক্ষার্থীরাও মুসলমান। কিন্তু পাঠ্যবই এমন অনৈসলামিক কেন?
- হারাম বাজি ও সুদি অর্থনীতির উপর ভিত্তি করে প্রচারিত এবং প্রতিষ্ঠিত একটি খেলার প্রচারণা চালানো হচ্ছে স্কুলের একটি পাঠ্যবইয়ে!
বিস্তারিত জানতে পড়ুন; সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম । পর্ব - ০৫
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196625
- এই ভূমিতে কি চক্ষুষ্মান একজন ব্যক্তিও নেই? সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম । পর্ব - ০৭ ।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196978
স্কুলের ৩য় শ্রেণীর আমার বাংলা বইয়ের সরকারি পিডিএফ সংস্করণ লিঙ্ক।
https://drive.google.com/file/d/1ak1...v1pq6yzMj/view
Comment