আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ১০ম পর্ব
“ফিতনার যুগে
মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” ।।
ড. শায়খ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ১০ম পর্ব
ইতিহাস অধ্যয়ন করা এবং ঘটনার পরিণাম ও সেখান থেকে পাওয়া কল্যাণ-অকল্যাণের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা
ফিতনার জমানায় বান্দাকে যে বিষয়টি সরল-সঠিক পথে সাহায্য করবে, তা হচ্ছে, এ জাতীয় অন্যান্য ঘটনার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করা; পূর্ববর্তীরা এসব বিষয়কে কীভাবে সমাধান করেছেন। এমনিভাবে পরিণাম ও ঘটে যাওয়া বিষয়ের ফলাফল সম্পর্কে ইলম ভিত্তিক সঠিক জ্ঞান অর্জন করা। সবরকে মুসাব্বাবের উপর পরিপূর্ণভাবে ফিট করা। ধারণা, খেয়াল-খুশি ও সন্দেহের উপর ভিত্তি করে নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেন,
لَقَدْ كَانَ فِي قَصَصِهِمْ عِبْرَةٌ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ ۗمَا كَانَ حَدِيثًا يُفْتَرَىٰ وَلَـٰكِن تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ كُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ﴿١١١﴾
‘তাদের কাহিনীতে বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে প্রচুর শিক্ষণীয় বিষয়, এটা কোনো মনগড়া কথা নয়, কিন্তু যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্যে এটি পূর্বেকার কালামের সমর্থন এবং প্রত্যেক বস্তুর বিবরণ, রহমত ও হেদায়েত স্বরূপ।’ -সূরা ইউসুফ 12:১১১
আল্লাহ তা’আলার বাণী,
وَكُلًّا نَّقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ ۚوَجَاءَكَ فِي هَـٰذِهِ الْحَقُّ وَمَوْعِظَةٌ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ﴿١٢٠﴾
‘আর আমি রাসূলগণের সব বৃত্তান্তই তোমাকে বলছি, যার মাধ্যমে তোমার অন্তরকে মজবুত করেছি। আর এভাবে তোমার নিকট মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য নসিহত ও স্মরণীয় বিষয়বস্তু এসেছে।’ -সূরা হুদ 11:১২০
ইমাম শাতিবী রহ. বলেন, ‘কাজের পরিণামের প্রতি লক্ষ্য করা শরীয়ত কর্তৃক গৃহীত একটি বিষয়। অনুকূলে হোক বা প্রতিকুলে। কারণ, মুজতাহিদ ইমাম মুকাল্লিফ থেকে প্রকাশিত কোনো কাজের সিদ্ধান্ত শরীয়তগত ভাবে এর পরিণাম কী হতে পারে তার প্রতি লক্ষ্য করা ছাড়া দিতে পারেন না। কল্যাণকর বিষয়কে গ্রহণ করে অকল্যাণ দূর করবেন। তবে কখনো কল্যাণকর বিষয়ে উল্টো প্রতিক্রিয়ায় থাকতে পারে। অথবা ব্যাপারটি এমন যে, কোনো ক্ষতি সাধিত হওয়া বা কোনো উপকার দূরীভূত হওয়ার কারণে শরীয়তসম্মত মনে করা হল না; অথচ তার মাঝে বিপরীত বিধান লুকায়িত রয়েছে। সুতরাং যখন প্রথমটিকে শরীয়ত সম্মত বলা হল, অথচ তখন দেখা গেল, যে ক্ষতিকে দূর করার জন্য মাসলাহাতকে গ্রহণ করা হচ্ছে সে ক্ষতিটি মাসলাহাতের বরাবর বা তার চেয়ে বেশি। এমতাবস্থায় এ বিষয়টিকে শরীয়ত সম্মত বলা যাবে না। এমনিভাবে দ্বিতীয়টিকে যখন শরীয়ত পরিপন্থী বলা হল, অথচ তখন দেখা গেল, এক ক্ষতিকারক বিষয়ের মাধ্যমে এমন এক ক্ষতিকে প্রতিহত করা হলো, যা তার বরাবর বা তার চেয়ে বড়; তাহলে তো তাকে শরীয়ত পরিপন্থী মনে করার কোনো কারণ নেই। এটি ইজতেহাদী একটি বিষয়, কঠিন একটি জায়গা। তবে বিষয়টি মজাদার, পরিণাম প্রশংসনীয় এবং মাকসাদে শরীয়ার অন্তর্ভুক্ত।’ - আল-মুআফাকাত:৪/১৯৪
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, ‘অনুচ্ছেদ: স্থান-কাল, অবস্থা ও প্রেক্ষাপট ভেদে ফতওয়া বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। দুনিয়া ও আখিরাত বিষয়ে বান্দার কল্যাণের উপর শরীয়তের ভিত্তি।’
এটি গুরুত্বপূর্ণ ও উপকারী একটি অনুচ্ছেদ। এ ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কারণে শরীয়তের মধ্যে অনেক ভুল-ভ্রান্তি ঢুকে পড়েছে, অনেক সমস্যা ও জটিলতা পরিলক্ষিত হয়েছে, শরীয়তে যার কোনো স্থান নেই। অনেকের এ কথা জানা নেই যে, এ সবের মাধ্যমে মহান শরীয়ত - যার সুউচ্চ চূড়ায় রয়েছে কল্যাণ- তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কারণ, দুনিয়া ও আখিরাতে কুরআনী বিধান ও বান্দার কল্যাণের উপর শরীয়তের ভিত্তি। এটিই সব কিছুর জন্য ইনসাফ, রহমত, কল্যাণ ও হিকমত। যে বিষয় ইনসাফ থেকে বে-ইনসাফে পরিণত হল, রহমতের পরিবর্তে বিপরীত দিকে চলে গেল, কল্যাণের পরিবর্তে ক্ষতিকারক হয়ে গেল, হিকমতের পরিবর্তে খেলনার পাত্রে পরিণত হল- তাহলে বুঝতে হবে তা শরীয়ত নয়। মন্দ বিষয় দূর হওয়ার চারটি পথ:
এক. একটি মন্দ দূর হয়ে বিপরীত আরেকটি তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া।
দুই. মন্দ বিষয়টি কমে যাওয়া, যদিও পরিপূর্ণভাবে দূর না হয়।
তিন. হুবহু আরেকটি মন্দ তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া।
চার. পূর্বের চেয়ে মারাত্মক কোনো মন্দ তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া।
প্রথম দু’টি শরীয়ত কর্তৃক গৃহীত। তৃতীয়টি ইজতেহাদ-যোগ্য। চতুর্থটি হারাম।’ -ই’লাউল মুআক্কিঈন:৩/৪
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘আদেশ-নিষেধ যদিও কল্যাণ সাধন করা ও ক্ষতিকারক বিষয় দূর করার জন্য নির্ধারিত, তারপরও বাস্তব ময়দান অবশ্যই লক্ষণীয়। আদেশ-নিষেধ দ্বারা যদি কল্যাণ দূর হওয়া বা ক্ষতি সাধিত হওয়ার পরিমাণ বেশি হয় তাহলে তা পালনীয় নয়। বরং উপকারের তুলনায় যখন ক্ষতির দিকটি বেশি হবে তখন তা হারাম। তবে উপকার ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার মাপকাঠি শরীয়ত। মানুষ যখন নসের উপর আমল করতে সক্ষম হবে তখন সেখান থেকে সরবে না। তা না হলে দৃষ্টান্ত ও নজির দেখে ইজতেহাদ করবে। তবে এ ব্যাপারে ভালো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা সীমিত। এরই উপর ভিত্তি করে আরেকটি বিষয়, যদি কোনো ব্যক্তি বা গুষ্ঠী ভালো ও মন্দ উভয় গুণে গুণী হয়, কিন্তু তাদেরকে কোনোটি থেকে পার্থক্য করা যাচ্ছে না। বরং সকলে উভয়টির সাথে জড়িয়ে পড়ল অথবা সকলে উভয়টিকে ছেড়ে দিল। এমতাবস্থায় তাদেরকে ভালো কাজের আদেশ করা যাবে না, খারাপ কাজ থেকে বারণও করা যাবে না। যদি অধিকাংশ কাজ ভালো হয় তাহলে ভালো কাজের আদেশ করা হবে, যদিও তার কারণে কিছু মন্দ আসতে পারে। তাদেরকে এমন খারাপ কাজ থেকে বারণ করা যাবে না, যার কারণে তুলনামূলক তার চেয়ে ভালো কাজ হারাতে হয়। তখন এই বারণটা হবে আল্লাহর পথে বাধা প্রদান; আল্লাহর আনুগত্য, আল্লাহর রাসূলে আনুগত্য ও ভালো কাজ বিদূরিত করার নামান্তর। আর যদি খারাপ দিকের পরিমাণ বেশি হয় তাহলে খারাপ কাজ থেকে বারণ করা হবে। যদিও এর দ্বারা কিছু ভালো দিক ব্যাহত হবে যা খারাপের তুলনায় কম। এমতাবস্থায় ভালো কাজের আদেশ করা, যা তার চেয়ে বড় খারাপ কাজকে ডেকে আনে- তা খারাপ কাজের আদেশ এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের অবাধ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে। যখন ভালো দিক, খারাপ দিক উভয়টি বরাবর হয়ে যাবে, তখন ভালো কাজের কথা বলা যাবে না, খারাপ কাজ থেকে বারণ করাও যাবে না। এতে কখনো ভালো কাজে আদেশ কল্যাণকর হতে পারে, কখনো খারাপ কাজ থেকে বারণ কল্যাণকর হতে পারে। কখনো আদেশও কল্যাণজনক হবে না, কখনো নিষেধও কল্যাণজনক হবে না। এটা সে সময় যখন ভালো-মন্দ উভয়টি বরাবর হবে।’ -মাজমুউল ফাতওয়া: ২৮/১২৯-১৩০
আমরা এখানে আবারও সে কথার দিকে ইঙ্গিত করছি, যার প্রতি শাইখ ইবনে তাইমিয়া রহ. সতর্ক করেছেন, ‘কিন্তু উপকার ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করার মাপকাঠি শরীয়ত। মানুষ যখন নসের উপর আমল করতে সক্ষম হবে তখন সেখান থেকে সরবে না। তা নাহলে দৃষ্টান্ত ও নজির দেখে ইজতেহাদ করবে। তবে নসকে বোঝা ও তদনুযায়ী হুকুম বের করার মত অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ব্যক্তির সংখ্যা সীমিত।’
এখানে আরো যে বিষয়ে সতর্ক করা উচিৎ তা হলো, যখন দুটি কল্যাণকর বিষয় বিরোধপূর্ণ হবে তখন তুলনামূলক বড়টিকে আমরা গ্রহণ করব। যখন দুটি মন্দ বিষয় পরস্পর বিরোধপূর্ণ দেখা দিবে তখন আমরা ক্ষতির দিক থেকে বড়টিকে দূর করব। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘শরীয়তের ভিত্তি فاتقوا الله ماستطعتم (আল্লাহকে সাধ্যমত ভয় কর)-এর উপর, যা اتقوا الله حق تقاته(আল্লাহকে ভয় করার মত ভয় কর)এর ব্যাখ্যা। এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী,( إذا أمرتكم بأمر فأتوا منه ما استطعتم) ‘যখন তোমাদের কোনো কাজের আদেশ করি তখন যথাসম্ভব তা বাস্তবায়ন কর’-এর উপর। এটি বুখারী-মুসলিমের যৌথ রেওয়ায়েত। শরীয়তের ভিত্তি যার উপর তার আরেকটি হচ্ছে, কল্যাণ অর্জন করে তাকে পূর্ণতায় পৌঁছানো; মন্দ বিষয়কে বন্ধ করা এবং তা কমিয়ে নিয়ে আসা। যখন দু‘টি পরস্পর বিরোধপূর্ণ হয়ে যাবে তখন ছোট কল্যাণকে ছেড়ে বড় কল্যাণটি গ্রহণ করতে হবে, বড় ক্ষতিকে দূর করে ছোটটি সয়ে নিতে হবে। এটিই শরীয়তের কথা। যে ব্যক্তি অত্যাচারীকে তার অত্যাচারের কাজে সাহায্য করল সে অন্যায় ও অবাধ্যতার সাহায্যকারী। তবে যে জালিমের কাছে মাজলুমের জুলুমকে লাঘব করার জন্য গেল তাহলে সে মাজলুমের সাহায্যকারী, জালিমের নয়। সে ঐ ব্যক্তির মত যে তার কাছে ঋণী অথবা তার মাল জালিমের কাছে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিলো। এর একটি দৃষ্টান্ত, এতিম বা ওয়াকফের ওয়ালির কাছে যদি কোনো জালিম তাদের মাল তলব করে তাহলে সে মাল দেয়ার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ইজতেহাদ করার পর তার কাছে অথবা অন্যের কাছে রক্ষিত তুলনামূলক কম মাল পরিশোধ করবে। তাহলে এ ক্ষেত্রে সে নেককার। আর নেককারদের উপর অভিযোগের কোনো পথ নেই।’ - মাজমুউল ফাতওয়া: ২৮/২৮৪-২৮৫
যে কোনো সংবাদে, যে কোনো ঘটনায় অটল-অবিচল থাকা
বিভিন্ন সংবাদ, বর্ণনা, আজেবাজে কথা-বার্তা ফিতনার জমানায় বেশি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে বান্দার জন্য আবশ্যক সর্বাবস্থায় অটল-অবিচল থাকা। পূর্বেকার একটি প্রবাদ, ‘আজেবাজে বর্ণনা সংবাদের আপদ’। কিছু সংবাদ, কিছু বর্ণনা এমন থাকবে যা সঠিক নয়। কিছু থাকবে এমন, যা বর্ণনাকারী নিজের বুঝ অনুযায়ী বলে, অথচ বাস্তবতা তার বিপরীত। আল্লাহ তা’আলা বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
হে! মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও। [ সুরা হুজুরাত ৪৯:৬ ]
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ جَاءُوا بِالْإِفْكِ عُصْبَةٌ مِّنكُمْ ۚلَا تَحْسَبُوهُ شَرًّا لَّكُم ۖبَلْ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۚلِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُم مَّا اكْتَسَبَ مِنَ الْإِثْمِ ۚوَالَّذِي تَوَلَّىٰ كِبْرَهُ مِنْهُمْ لَهُ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴿١١﴾لَّوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَـٰذَا إِفْكٌ مُّبِينٌ﴿١٢﴾لَّوْلَا جَاءُوا عَلَيْهِ بِأَرْبَعَةِ شُهَدَاءَ ۚفَإِذْ لَمْ يَأْتُوا بِالشُّهَدَاءِ فَأُولَـٰئِكَ عِندَ اللَّـهِ هُمُ الْكَاذِبُونَ﴿١٣﴾وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ لَمَسَّكُمْ فِي مَا أَفَضْتُمْ فِيهِ عَذَابٌ عَظِيمٌ﴿١٤﴾إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُم مَّا لَيْسَ لَكُم بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِندَ اللَّـهِ عَظِيمٌ﴿١٥﴾وَلَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ قُلْتُم مَّا يَكُونُ لَنَا أَن نَّتَكَلَّمَ بِهَـٰذَا سُبْحَانَكَ هَـٰذَا بُهْتَانٌ عَظِيمٌ﴿١٦﴾يَعِظُكُمُ اللَّـهُ أَن تَعُودُوا لِمِثْلِهِ أَبَدًا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ﴿١٧﴾وَيُبَيِّنُ اللَّـهُ لَكُمُ الْآيَاتِ ۚوَاللَّـهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ﴿١٨﴾إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ۚوَاللَّـهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ﴿١٩﴾وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّـهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ وَأَنَّ اللَّـهَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ﴿٢٠﴾
‘যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে, তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্যে খারাপ মনে কর না; বরং এটা তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। তাদের প্রত্যেকের জন্যে ততটুকু আছে যতটুকু সে গুনাহ করেছে এবং তাদের মধ্যে যে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছে, তার জন্যে রয়েছে বিরাট শাস্তি। তোমরা যখন এ কথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ? তারা কেন এ ব্যাপারে চার জন সাক্ষী উপস্থিত করেনি; অতঃপর যখন তারা সাক্ষী উপস্থিত করেনি, তখন তারাই আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী। যদি ইহকালে ও পরকালে তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত, তবে তোমরা যা চর্চা করছিলে, তজ্জন্যে তোমাদেরকে গুরুতর আযাব স্পর্শ করত। যখন তোমরা একে মুখে মুখে ছড়াচ্ছিলে এবং মুখে এমন বিষয় উচ্চারণ করছিলে, যার কোনো জ্ঞান তোমাদের ছিল না। তোমরা একে তুচ্ছ মনে করছিলে, অথচ এটা আল্লাহর কাছে গুরুতর ব্যাপার ছিল। তোমরা যখন এ কথা শুনলে তখন কেন বললে না যে, এ বিষয়ে কথা বলা আমাদের উচিত নয়। আল্লাহ তো পবিত্রতম মহান। এটা তো এক গুরুতর অপবাদ। আল্লাহ তোমাদেরকে উপদেশ দিচ্ছেন, তোমরা যদি ঈমানদার হও, তবে কখনও পুনরায় এ ধরণের আচরণের পুনরাবৃত্তি কর না। আল্লাহ তোমাদের জন্যে কাজের কথা স্পষ্ট করে বর্ণনা করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে ব্যভিচার প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহকাল ও পরকালে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি রয়েছে। আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকত এবং আল্লাহ দয়ালু ও মেহেরবান না হতেন, তবে কত কিছুই হয়ে যেত। -সূরা আন্-নূর 24: ১১-২০
শাইখুল ইসলাম রহ. বলেন, ‘কারো জন্য অন্য কোনো ব্যক্তির কথাকে সে যা বুঝাতে চাচ্ছে তা ভিন্ন অন্য কোনো অর্থে প্রকাশ করার অধিকার নেই। সাধারণভাবে সবাই যে অর্থ উদ্দেশ্য করে সেভাবে প্রকাশ করা যাবে না।’ -মাজমুউল ফাতওয়া: ৭/৩৬
‘অনেক বর্ণনাকারী আছে মিথ্যা বলা যাদের উদ্দেশ্য নয়, তবে তারা মানুষের সরাসরি শব্দ ছাড়া অন্য শব্দে প্রকাশ করে। তখন তাদের উদ্দেশ্য বুঝা অনেকের জন্য কঠিন হয়ে যায়, অনেকের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে যায়।’ -মানাহিজুস্ সুন্নাতিন্ নববিয়্যাহ: ৬/১৯৩
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, ‘মানুষ উলামায়ে কেরামের উদ্ধৃতি দিয়ে যে সব বাতিল মতাদর্শ পেশ করে- তার অধিকাংশ হয়ে থাকে বুঝের স্বল্পতার কারণে।’ -মাদারিজুস্ সালিকীন:২/৪৩১