Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ২য় পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ২য় পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
    ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
    একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
    (সূরা আসরের আলোকে)
    ।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
    এর থেকে২য় পর্ব
    بسم الله الرحمن الرحيم
    .
    وَالْعَصْرِ ﴿العصر: ١﴾ إِنَّ الْإِنسَانَ لَفِي خُسْرٍ ﴿العصر: ٢﴾ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ ﴿العصر: ٣﴾



    “কসম যুগের (সময়ের), নিশ্চয় মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে তাকীদ করে সত্যের এবং তাকীদ করে সবরের।” (সূরা আসর : ১-৩) ﴿
    وَالْعَصْرِ ﴾




    অনির্দিষ্টভাবে যুগের/সময়ের কসম অথবা আসরের সময়ের কসম উদ্দেশ্য। অথবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের সময়কালের কসম উদ্দেশ্য। কারণ, এ উম্মাহর বয়সের উদাহরণ আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত। যেমন, হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
    عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ عَنْ أَبِيهِ أَنَّهُ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّمَا بَقَاؤُكُمْ فِيمَا سَلَفَ قَبْلَكُمْ مِنْ الْأُمَمِ كَمَا بَيْنَ صَلَاةِ الْعَصْرِ إِلَى غُرُوبِ الشَّمْسِ.



    হযরত সালেম ইবনে আব্দুল্লাহ তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন যে,
    “পূর্বেকার উম্মাতের স্থায়িত্বের তুলনায় তোমাদের স্থায়িত্ব হল আসর থেকে নিয়ে সূর্য অস্ত যাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ের অনুরূপ”(সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৫৩০ ই, ফা,)

    এ উম্মাহর কাঁধে অর্পণ করা হয়েছে পাহাড়সম দায়িত্ব; তবে সময় দেওয়া হয়েছে এত অল্প যে, এর মাধ্যমে উম্মাহকে সতর্ক করা হচ্ছে- তোমাদের কাছে সময় খুবই স্বল্প; তাতেও রয়েছে কত তাড়াহুড়া। সবকিছু যেন নিমিষেই ঘটে যায়!

    প্রতিটি দিবসের গোধূলি ইঙ্গিত দেয়, ওহে মানব! আলস্যের কাঁথা খুলে ফেলো। কারণ, সূর্য যখন অস্ত যায়, তখন ছায়া সঙ্গ ত্যাগ করার জন্য দীর্ঘ হতে শুরু করে। পাখপাখালি ফিরে যায় আপন আপন নীড়ে।

    সুতরাং হে মানব! তোমার যদি সামান্য বিবেক থাকে; তাহলে দেখো, তোমার জীবনসন্ধ্যাও ঘনিয়ে আসছে। তোমার ছায়াও তোমাকে ত্যাগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তোমাকে এটাও জানানো হয়নি যে, তোমার জীবনসূর্য কখন অস্তমিত হবে। তারপরও তোমার গাফিলতি, অন্তিম গন্তব্যের ব্যাপারে তোমার উদাসীনতা, স্বীয় প্রতিপালকের সম্মুখে দাঁড়ানোর ব্যাপারে বেপরোয়াভাব- কতই না নির্বুদ্ধিতা!!

    ওয়াল আসর! দিবসের শেষপ্রহর! হে মানুষ! ঐ অস্তায়মান সূর্যের দিকে তাকাও, কয়েক ঘণ্টা আগেও সেটি এমন ছিল; যার প্রখরতার কারণে তার দিকে তাকানো যায়নি। তার আলো ছিল সহ্যসীমার বাহিরে। যার তীব্রতা ও প্রখরতায় দেহে জলতরঙ্গ বয়ে যেত। কিন্তু এ উত্থানের পর তার পতন ও অস্ত যাওয়ার দৃশ্যটিও দেখো। অতএব, ওহে ধন-ঐশ্বর্যের নেশায় বিভোর মানুষ! ওহে যৌবন নিয়ে গর্বিত তরুণ! ওহে তারুণ্যের যাদুতে মাতোয়ারা মুসলিম বোন! সেই উত্থানের পর পতনের দৃশ্যটিও মনে রাখো। স্বীয় প্রতিপালকের সামনে এখনই সিজদাবনত হয়ে অনুভব করো, তিনি ছাড়া কারো স্থায়িত্ব নেই। সবকিছুই ধ্বংস ও নিঃশেষ হয়ে যাবে। জীবনের কয়েকটি বছর নামের যে পুঁজি দিয়ে তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে, এগুলোকে সফল ব্যবসায় বিনীয়োগ করো। অথবা তা পুরোপুরি মালিকের কাছে সোপর্দ করে দাও এবং সেই চুক্তিকে পূর্ণ করো।
    وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ ﴿التوبة: ١١١﴾

    আর এ হল মহান সাফল্য।”(সূরা তাওবা : ৯)

    এটিই সফলতার চাবিকাঠি। ﴿
    إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ ﴾




    প্রথম আয়াতে সময়ের কসম করার পর কয়েকটি গুরুত্ববাচক শব্দ এনে বুঝানো হচ্ছে যে, মানুষ ক্ষতিতে নিপতিত।

    ১. إِنَّ এর মাধ্যমে গুরুত্বপ্রদান। অর্থাৎ এ কথায় কোনো সন্দেহ নেই; তা একেবারে নিশ্চিত কথা।

    ২. لَفِي خُسْرٍ অর্থাৎ ক্ষতিতে নিমজ্জিত। ক্ষতিগ্রস্ত বলা হয়নি। বলা হয়েছে, ক্ষতিতে নিমজ্জিত।

    এ ক্ষতি মানুষ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। কেউ দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতেই ক্ষতির সম্মুখীন। যেমন, কুরআনুল কারীমের ঘোষণা-

    وَمِنَ النَّاسِ مَن يَعْبُدُ اللَّهَ عَلَىٰ حَرْفٍ فَإِنْ أَصَابَهُ خَيْرٌ اطْمَأَنَّ بِهِ وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَىٰ وَجْهِهِ خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ ذَٰلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ ﴿الحج: ١١﴾



    “মানুষের মধ্যে কেউ কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর এবাদত করে। যদি সে কল্যাণ প্রাপ্ত হয়, তবে এবাদতের উপর কায়েম থাকে এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তবে পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। সে ইহকালে ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত। এটাই প্রকাশ্য ক্ষতি” (সূরা হজ্জ্ব : ১১)

    কেউ আবার শয়তানের ধোঁকায় পড়ে প্রবৃত্তি ও দুনিয়ার বর্ণিল স্বপ্নে বিভোর হয়ে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। (যার প্রতি আল্লাহ লা’নত করেছেন, সেই শয়তান বলেছিল...)
    وَلَأُضِلَّنَّهُمْ وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ آذَانَ الْأَنْعَامِ وَلَآمُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللَّهِ وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللَّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا ﴿النساء: ١١٩﴾



    “তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, তাদেরকে আশ্বাস দেব; তাদেরকে পশুদের কর্ণ ছেদন করতে বলব এবং তাদেরকে আল্লাহর সৃষ্ট আকৃতি পরিবর্তন করতে আদেশ দেব। যে কেউ আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, সে প্রকাশ্য ক্ষতিতে পতিত হয়।” (সূরা নিসা : ১১৯)

    কেউ পার্থিব ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পরিবর্তে ভোগবিলাসের উপকরণ পেয়ে যায়; কিন্তু সে চিরস্থায়ী আখিরাতে পুরোপুরিই ক্ষতিগ্রস্ত।

    وَيَوْمَ يُعْرَضُ الَّذِينَ كَفَرُوا عَلَى النَّارِ أَذْهَبْتُمْ طَيِّبَاتِكُمْ فِي حَيَاتِكُمُ الدُّنْيَا وَاسْتَمْتَعْتُم بِهَا فَالْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَبِمَا كُنتُمْ تَفْسُقُونَ ﴿الأحقاف: ٢٠﴾



    “যেদিন কাফেরদেরকে জাহান্নামের কাছে উপস্থিত করা হবে সেদিন বলা হবে, তোমরা তোমাদের সুখ পার্থিব জীবনেই নিঃশেষ করেছ এবং সেগুলো ভোগ করেছ সুতরাং আজ তোমাদেরকে অপমানকর আযাবের শাস্তি দেয়া হবে; কারণ, তোমরা পৃথিবীতে অন্যায় ভাবে অহংকার করতে এবং তোমরা পাপাচার করতে।”(সূরা আহকাফ : ২০)

    ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের এটিও একটি প্রকার:

    قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُم بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا ﴿الكهف: ١٠٣﴾ الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا ﴿الكهف: ١٠٤﴾



    “বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে।”(সূরা কাহফ : ১০৪)
    ﴿ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا ﴾




    সুতরাং মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিপতিত; তবে সেই ক্ষতি থেকে কারা বাঁচতে পারবে, তা এরপর আলোচিত হচ্ছে।

    ﴿ إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا ﴾ সেসব লোক ব্যতীত, যাঁরা ঈমান এনেছে।আল্লাহ তা‘আলা এ কথা বলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এই ক্ষতি থেকে তারাই বাঁচতে পারে, যারা গাইরুল্লাহর ইবাদত ছেড়ে শুধু এক আল্লাহর ইবাদত করে। তাঁর ইবাদতে কাউকে শরীক করে না। যে কালিমা তাঁরা উচ্চারণ করেছে, তার দাবিসমূহ পূর্ণ করে এবং সেই কালিমায় আল্লাহর সাথে তাঁরা যে অঙ্গীকার করেছে; তা জীবনের কোনো পর্যায়ে ভঙ্গ করে না। এমন লোকই সফলকাম।







    আরও পড়ুন​
    ১ম পর্ব ------------------------------------------------------------------------------------------------------ ৩য় পর্ব
    Last edited by tahsin muhammad; 4 days ago.
Working...
X