আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৭ম পর্ব
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ৭ম পর্ব
কালিমায়ে তাওহীদের দাবি: সব বাতিল জীবনব্যবস্থা (দ্বীন) থেকে পবিত্রতা ঘোষণা
উপাস্য ও উপাসনার সংজ্ঞা জানার পর এটাও জেনে রাখা দরকার যে, একজন ঈমানদারের কাছে কালিমায়ে তাওহীদের প্রথম দাবি হলো, সব বাতিল উপাস্য ও সব বাতিল জীবনব্যবস্থাকে অস্বীকার করা এবং তা থেকে পবিত্রতা ঘোষণা করা। তারপর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। কালিমার বিন্যাসও এ কথার সমর্থন করে।
لا إله إلا الله محمد رسول الله
“কোনো উপাস্য নেই একমাত্র আল্লাহ ছাড়া। মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল।”
আল্লাহ তা‘আলা সূরা বাকারায় ইরশাদ করেছেন-
لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿البقرة: ٢٥٦﴾
“দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হিদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে। এখন যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, সে ধারণ করে নিয়েছে সুদৃঢ় হাতল; যা ভাঙবার নয়। আর আল্লাহ সবই শুনেন এবং জানেন।”(সূরা বাকারাহ : ২৫৬)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে গাইরুল্লাহ’র অস্বীকৃতি বর্ণনা করেছেন। অতঃপর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলেছেন।
عن ابن عمر عن النبى -صلى الله عليه وسلم- قال « بنى الإسلام على خمس على أن يعبد الله ويكفر بما دونه وإقام الصلاة وإيتاء الزكاة وحج البيت وصوم رمضان ».
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. রাসূল ﷺ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর। ০১. একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করা; তিনি ব্যতীত বাকি সবকিছু (মিথ্যা ইলাহকে) অস্বীকার করা, ০২. সালাত কায়েম করা, ০৩. যাকাত প্রদান করা, ০৪. হজ্ব করা, ০৫. রমজানের রোজা রাখা।”(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১২১, শামেলা)
إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا শুধুমাত্র তারা, যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে যে, উপাস্য একমাত্র তিনিই। সালাতেও একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য ও সরকার-আদালতেও তিনি ছাড়া অন্য কাউকে উপাস্য বানানো যাবে না। তিনিই বিচারক, তিনিই সৃষ্টিকর্তা।
أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ …﴿الأعراف: ٥٤﴾
“শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা।”
তাঁর সৃজন গুণের মধ্যে যেমন কেউ শরীক নেই, তেমনি তাঁর আইন প্রণয়ন ও আদেশ গুণেও কেউ শরীক নেই। আইন প্রণয়ন একমাত্র তাঁরই অধিকার। তাতে কাউকে অংশীদার বানানো তাকে উপাস্য বানানোর শামিল; যা সরাসরি কুফরী। কোনটি আইনি, কোনটি বেআইনি? কোনটি বৈধ, কোনটি অবৈধ? এটি নির্ধারণ করা তাঁরই গুণ। এ অধিকার অন্য কারো নেই। তাঁর আদেশ ও আইন পার্লামেন্টে পাশ হওয়া ছাড়াও বাস্তবায়ন করার উপযুক্ত। এ ছাড়া সব আইন বাতিল। সুতরাং তাঁর অবতীর্ণ আইন-কানুন এ থেকে পবিত্র যে, সেগুলোকে প্রথমে গণতন্ত্রের দারুন নাদওয়ায় (মক্কার কাফেরদের পার্লামেন্ট, যেখানে বসে তারা আইন প্রণয়ন করত এবং সেই আইনকে ধর্মীয় রূপ দেওয়ার জন্য মূর্তির দিকে সম্বন্ধ করত) আলোচনা করতে হবে। কুরআনের আইন সংবিধানের অংশ হতে পারবে কিনা– নাউযুবিল্লাহ, সেটার জন্য মিটিং করতে হবে?? তা পার্লামেন্ট হয়তো অনুমোদন দেবে, না হয় রদ করে দেবে। আবার চাইলে শাসনযন্ত্রের দেবী পার্লামেন্ট নামের দারুন নাদওয়া সেটি রদ করতেও পারে। আল্লাহর অবতীর্ণ আইন, যা মুহাম্মাদ ﷺ কে দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে, নাউযুবিল্লাহ, তা পার্লামেন্ট থেকে বের করে দেওয়া হবে?? তারপরও পার্লামেন্ট পবিত্র! সেটির পবিত্রতার শপথ নেওয়া হয়!! সেটির মর্যাদা সম্মানের দোহাই দেওয়া হয়!!
যেন আল্লাহর ইচ্ছাকে পার্লামেন্টের জালিম, বদমাশ, মাদকাসক্ত ও ব্যভিচারীদের হাতে তুলে দেওয়ার নামই গণতন্ত্র। তারা যা ইচ্ছা হালাল (বৈধ) বলবে, আর যা ইচ্ছা হারাম (অবৈধ) বলবে।
আল্লাহর কুরআনকে পার্লামেন্টের মুখাপেক্ষী বানানো- এটি তাঁর সত্তার সাথে সুস্পষ্ট কুফরী। তাঁর সাথে এটি ঠাট্টা ও উপহাস। রাহমাতুল্লিল আলামীন ﷺ এর আনীত দ্বীনের সাথে এর চেয়ে বড় উপহাস ও অসম্মান আর কী হতে পারে? এর চেয়ে বড় ক্ষতি আর কী হবে?
আল্লাহর অকাট্য আইনকে পার্লামেন্টের অনুমোদনের মুহতাজ বানানোর দৃষ্টিভঙ্গিসহ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কোন ফকীহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে? তবে সেসব ফকীহর কথা ভিন্ন, যারা সামান্য ধন-সম্পদের বিনিময়ে নিজেদের ইলমকে বিক্রয় করেন। অথবা যারা নিজের জীবনযাপনকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিতে ক্ষমতাবানদের কথা মেনে নিতে বাধ্য।
নবীগণের ইতিহাস এ কথার সাক্ষ্য দেয় যে, তাঁদের সাথে তাঁদের বিরোধীদের মূল দ্বন্দ্ব ছিল- তাঁরা এ কথার দাওয়াত দিতেন যে, জীবনের সকল শাখায় ইবাদত শুধু আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রেও গাইরুল্লাহ’র পরিবর্তে এক আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করা হবে।
হযরত শুআইব আ. যখন দ্বীনের এ শাখার দাওয়াত দিলেন, তখন ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা বড়ই আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল-
قَالُوا يَا شُعَيْبُ أَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ أَن نَّتْرُكَ مَا يَعْبُدُ آبَاؤُنَا أَوْ أَن نَّفْعَلَ فِي أَمْوَالِنَا مَا نَشَاءُ إِنَّكَ لَأَنتَ الْحَلِيمُ الرَّشِيدُ ﴿هود: ٨٧﴾
“তারা বলল- হে শোয়ায়েব (আঃ) আপনার নামায কি আপনাকে ইহাই শিক্ষা দেয় যে, আমরা ঐসব উপাস্যদেরকে পরিত্যাগ করব আমাদের বাপ-দাদারা যাদের উপাসনা করত? অথবা আমাদের ধন-সম্পদে ইচ্ছামত যা কিছু করে থাকি, তা ছেড়ে দেব? আপনি তো একজন খাস মহৎ ব্যক্তি ও সৎপথের পথিক।”(সূরা হুদ : ৮৭)
অর্থাৎ তাঁর জাতিও এ বিষয়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ছিল যে, হযরত শুআইব আ. এর ধর্ম আমাদের অর্থনীতিব্যবস্থা ও পার্থিব লেনদেন এর মাঝে নাক গলাচ্ছে কেন?
আজকের দিনেও হক্ব-বাতিলের মাঝে এ লড়াই-ই বিদ্যমান। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধ এমন ‘পাগলদের’ বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে, যাঁরা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের সাথে সাথে লেনদেনের ক্ষেত্রেও এক আল্লাহর অবতীর্ণ আইন বাস্তবায়নের দাবি জানায়।
দ্বীন ইসলামই গ্রহণযোগ্য; মিশ্র ধর্ম নয়
কিন্তু যাঁরা এক আল্লাহর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেই পূর্ণাঙ্গ শরীয়াহর উপর, যা মুহাম্মাদ ﷺ এর মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে। যিনি আল্লাহর সাথে আধুনিক যুগের কোনো মূর্তিকে উপাস্য বানাননি। যিনি মাসজিদেও এক আল্লাহকে উপাস্য মানতেন। লেনদেন, ব্যবসায়-বাণিজ্য, আইন-আদালত, লাভ-লোকসানেও আল্লাহ ছাড়া সব উপাস্যকে অস্বীকার করতেন। তিনি শুধু আল্লাহর নাযিলকৃত দ্বীনের প্রতিই বিশ্বাস স্থাপন করতেন। ইসলামের সাথে তিনি অন্য কোনো মতবাদকে মানতেন না। মিশ্র ধর্মকেও তিনি মানতেন না, যাতে কিছু ইসলাম থেকে নেওয়া হয়েছে, কিছু অন্য ধর্ম থেকে নিয়ে এক নতুন ধর্মের সৃষ্টি করা হয়েছে।
হক্ব-বাতিলের মাঝে চলমান এ লড়াইয়ে বাতিলের পক্ষ থেকে শক্তিপ্রয়োগ করে হক্বের আহ্বানকে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। তাঁদের উপর সব ধরনের নির্যাতন বৈধ করা হয়। জুলুম-নির্যাতন ও হুমকি-ধমকিতে ব্যর্থ হয়ে বাতিলের পক্ষ থেকে আলোচনা, সহাবস্থান, বোঝাপড়া, শান্তিচুক্তি, ঐক্য ইত্যাদি মুখরোচক স্লোগানের মাধ্যমে হক্ব-বাতিলকে ওলটপালট করার চেষ্টা করা হয়।
রাহমাতুল্লিল আলামীনের বিরুদ্ধে জাযিরাতুল আরবের সবচেয়ে বড় পরাশক্তি কুরাইশের সর্দারশ্রেণী যখন দেখল যে, ইসলামকে জোর করে দাবিয়ে রাখার প্রয়াস বারবারই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে, তখন তারাও শান্তিচুক্তি, আলোচনা ও সহাবস্থানের নামে অসাম্প্রদায়িকতার ঢোল পেটাতে শুরু করল। তাদের পক্ষ থেকে রাহমাতুল্লিল আলামীন ﷺ এর কাছে বিভিন্ন প্রস্তাবনা পেশ করতে শুরু করল।
Comment