Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ৮ম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩২ || “ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র (সূরা আসরের আলোকে) ” ।। মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ || ৮ম পর্ব

    আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত

    ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
    একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’

    (সূরা আসরের আলোকে)

    ।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
    এর থেকে৮ম পর্ব


    সন্ধির প্রস্তাবনা


    ইমাম বাগাভী রহ. বলেন, একদিন মক্কা মুকাররমার পাঁচজন লোক আব্দুল্লাহ ইবনে উমাইয়া মাখযূমী, ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা, মিকরায ইবনে হাফস, আমর ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস আল-আমেরী ও আস ইবনে ওয়ায়েল নবী কারীম এর কাছে এল। তারা বলল, আপনি যদি চান যে, আমরা আপনার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করি; তবে আপনি এই কুরআন বাদ দিয়ে আরেকটি কুরআন নিয়ে আসুন!

    আল্লাহ তা‘আলা তাদের এ প্রস্তাবনাকে এভাবে বর্ণনা করেছেন-

    وَإِذَا تُتْلَىٰ عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ قَالَ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا ائْتِ بِقُرْآنٍ غَيْرِ هَٰذَا أَوْ بَدِّلْهُ ﴿يونس: ١٥﴾


    “আর যখন তাদের কাছে আমার প্রকৃষ্ট আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে সমস্ত লোক বলে, যাদের আশা নেই আমার সাক্ষাতের, নিয়ে এসো কোন কোরআন এটি ছাড়া, অথবা একে পরিবর্তিত করে দাও।” (সূরা ইউনুস : ১৫)

    সুতরাং আমাদের ও আপনার মাঝে সন্ধির একটি মাত্র পথ আছে। ঘৃণাভরা, শান্তি-শৃংখলা ও নিরাপত্তা বিনষ্টকারী বিষয়গুলো বন্ধ করা হোক। এর জন্য আবশ্যক হলো, এ কুরআন বাদ দিয়ে অন্য কোনো কুরআন নিয়ে আসুন! যেখানে লাত, মানাত ও উজ্জার উপাসনার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা নেই। অথবা এ কুরআনে পরিবর্তন করুন। সেখান থেকে এমন সব কথা বের করে দিন; যাতে আমাদের জীবনব্যবস্থা ও মূর্তি সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করা হয়েছে। আমাদের কাছে আমাদের পার্লামেন্টে (দারুন নাদওয়া) অনুমোদিত আইন-কানুন ও জীবনব্যবস্থাকে ত্যাগ করার দাবি জানানো হয়েছে। আমাদের জীবনব্যবস্থায় যেসব বিষয়কে হারাম বলা হয়েছে, তা হালাল করে দেওয়া হোক। আমরা যাদেরকে উপাস্য বানিয়েছি, যাদেরকে আমরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সাথে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দিয়েছি; এ কুরআন তা হারাম বলছে, তাকে বাতিল ও তাগুত বলছে। সুতরাং তাতে সংস্কার করা হোক। যা হালাল বলা হয়েছে তা হারাম করা হোক।

    কিন্তু আসল উপাস্য আল্লাহ তা‘আলা প্রিয় নবীকে বলেছেন-

    قُلْ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أُبَدِّلَهُ مِن تِلْقَاءِ نَفْسِي إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوْحَىٰ إِلَيَّ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ ﴿يونس: ١٥﴾


    “তাহলে বলে দাও, একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়। আমি সে নির্দেশেরই আনুগত্য করি, যা আমার কাছে আসেআমি যদি স্বীয় পরওয়ারদেগারের নাফরমানী করি, তবে কঠিন দিবসের আযাবের ভয় করি।”(সূরা ইউনুস : ১৫)

    আজ চৌদ্দশ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও কুফরের মানস যেমন পরিবর্তিত হয়নি, তেমনি কাফের বিদ্রোহীদের কর্মপন্থাও পরিবর্তিত হয়নি। সারা বিশ্বের কুফরী শক্তি জাতীয় হোক বা প্রাদেশিক, এক আল্লাহকে উপাস্য মান্যকারীদের কাছে এমনই দাবি করছে যে, কুরআনের এমন সব কথা বলা থেকে বিরত থাকুন- যা কাফেরদের অপছন্দ হয়, যেসব কথায় কাফেরদের তৈরি আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় উপাস্যসমূহকে (জীবনব্যবস্থা ও রাষ্ট্র পরিচালনার আইন) মন্দ বলা হয় এবং এ কুফরীব্যবস্থা শেষ করে দিয়ে শুধুমাত্র এক আল্লাহর নাযিলকৃত জীবনব্যবস্থা বাস্তবায়নের কথা বলা হয়ে থাকে।

    চিন্তার মুহূর্ত



    আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রাসূলের পবিত্র মুখে ঘোষণা করিয়ে দিয়েছেন যে, এতে কোনো ধরনের পরিবর্তন করা অসম্ভব। এটিই কুরআন, যা আমার উপর অবতীর্ণ হয়েছে। এটাকেই মানতে হবে। সন্ধির অন্য কোনো ধরন অসম্ভব।

    কিন্তু আজকের যুগের ধর্মীয় সন্ধি স্থাপনকারীদের দেখুন! বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে আগামীর দিনগুলোতে কুফর ও ইসলামকে এক করার নামে মেলা সাজাচ্ছে। তাদের মাঝে পারস্পরিক ঐক্য, সৌহার্দ্য, মৈত্রী, সহমর্মিতা সৃষ্টি করার প্রয়াস চালাচ্ছে। কখনো জাতীয়তার দোহাই দিয়ে, কখনো গণতন্ত্রের ধোঁয়া তুলে, কখনো আবার রাষ্ট্রদেবীর পবিত্রতার নামে একাকার হওয়ার আতশবাজিতে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ওপরে উঠছে।

    আল্লাহ আমাদের সহায় হোক! বিবেক তখন কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়, যখন সেই মেলায় এমন সব লোককেও দেখি- যাদেরকে দ্বীনি ইলমের ধারকবাহক ভাবা হয়। কুফর ও ইসলামের মাঝে ঐক্য ও সৌহার্দ্য, আল্লাহ ও মূর্তির মাঝে ঐক্যবদ্ধতা- এ ব্যাপারে শ্রেষ্ঠ নবী এর ভাষায় দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে যে-

    قُلْ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أُبَدِّلَهُ مِن تِلْقَاءِ نَفْسِي إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ﴿يونس: ١٥﴾


    “তাহলে বলে দাও, একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়। আমি সে নির্দেশেরই আনুগত্য করি, যা আমার কাছে আসে।”(সূরা ইউনুস : ১৫)

    কিন্তু সেই জ্ঞানপাপীদের আল্লাহর উপর কী দুঃসাহস দেখো, কেমন হঠকারিতার সাথে এসব কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করছে এবং তা ছবি বানিয়ে ও ভিডিও ধারণ করে বিশ্ববাসীকেও সেই দুঃসাহসের সাক্ষী বানাচ্ছে। এসব জ্ঞানপাপীরা সেসব মেলায় এ জন্যই অংশ নেয় যে, নিজের কথা ও লেখা বিক্রি করে পার্থিব ভোগ-বিলাসের উপকরণ কিনবে। আল্লাহর আয়াতের কথা বলে নিজেদের পেটকে জাহান্নামের গর্তে পরিণত করবে।

    إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴿البقرة: ١٧٤﴾


    “নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব।” (সূরা বাকারাহ : ১৭৪)
    أُولَٰئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوُا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَىٰ وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ فَمَا أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ ﴿البقرة: ١٧٥﴾


    এরাই হল সে সমস্ত লোক, যারা হেদায়েতের বিনিময়ে গোমরাহী খরিদ করেছে এবং (খরিদ করেছে) ক্ষমা ও অনুগ্রহের বিনিময়ে আযাব। অতএব, তারা দোযখের উপর কেমন ধৈর্য্য ধারণকারী।”(সূরা বাকারাহ : ১৭৫)
    দ্বিতীয় প্রস্তাবনা



    এ প্রস্তাবনায় মুফাসসিরগণ বিভিন্ন পয়েন্ট উল্লেখ করেন। ইমামুল মুফাসসিরীন ইবনে জারীর তবারী রহ. ইবনে আব্বাস রাযি. এর রেওয়ায়েত বর্ণনা করেন, একদিন মক্কার সর্দারশ্রেণীর কিছু লোক নবী কারীম এর সাথে সাক্ষাৎ করল। তারা বলল, হে মুহাম্মাদ! আমরা আপনাকে এত সম্পদ দেব যে, আপনি মক্কার সবচেয়ে ধনী হয়ে যাবেন এবং আরবের সবচেয়ে সুন্দরী রমণীকে আপনার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দেব। এটি আমাদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে প্রস্তাবনা। এর বিনিময়ে আপনি আমাদের প্রভুদের ব্যাপারে মন্দ কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন। তাদের মানহানি করবেন না। যদি এটি আপনি গ্রহণ না করেন; তবে আরও একটি প্রস্তাব আমাদের পক্ষ থেকে আছে, যাতে রয়েছে আমাদের উভয়ের কল্যাণ। রাসূল জিজ্ঞাসা করলেন, সেটি কী? তারা বলল, এক বছর আপনি আমাদের প্রভু লাত-উজ্জার উপাসনা করুন। আমরা এক বছর আপনার প্রভুর উপাসনা করব। এই প্রেক্ষিতেই সূরা কাফিরূন অবতীর্ণ হয়।




    আরও পড়ুন
    ৭ম পর্ব ---------------------------------------------------------------------------------------------------- ৯ম পর্ব

    Last edited by tahsin muhammad; 1 week ago.
Working...
X