আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত
“ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
একবিংশ শতাব্দীর গণতন্ত্র’’
(সূরা আসরের আলোকে)
।।মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহ ||
এর থেকে– ২৯তম পর্ব
মানবতা ধ্বংসের দায়ভার কার ঘাড়ে?
এর দায়ভার ঐ শ্রেণীর উপর যারা বৈশ্বিক পুঁজিবাদের দোহাই দিয়ে গণতান্ত্রিক ও অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পরিচালনা করছে এবং আল্লাহর বান্দাদেরকে এ কুফরী ও অত্যাচারী ব্যবস্থার দাস বানিয়েছে। বৈশ্বিক ব্যাংকার, অসংখ্য জাতীয় কোম্পানি, ইবলিসকে নিজেদের প্রভু হিসেবে স্বীকৃতিদানকারী, প্রভাবশালী কিছু আত্মপূজারি- আত্মপূজাই যাদের দ্বীন, এরা এমন কিছু লোকের বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাদেরকে রব হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে; যারা পুরো মানবতাকে সুদ ও পুঁজিবাদের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে এবং আল্লাহর শরীয়তের বিপরীতে গণতন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের বানানো আইনকে মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক এ কুফরী ব্যবস্থার সংরক্ষণের জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন দেশগুলোতে স্থানীয় ব্যাংকারদের থেকে ঋণের মাধ্যমে কয়েক শ্রেণীর সৈন্যবাহিনী গঠন করেছে, যাদের উপরস্থ শ্রেণী এসব দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠিত সুদি ব্যবস্থাগুলোর সংরক্ষণে নিয়োজিত রয়েছে। সেটা যে দেশই হোক না কেন, শাসনব্যবস্থা যার হাতেই যাক না কেন এ সুদিব্যবস্থা চালু থাকবে।
এ বাস্তবতাকে কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। ইউরোপ-আমেরিকার উপর আধিপত্য বিস্তারকারী শক্তিগুলো নিজেদের জনগণের সাথে সে আচরণ করেছে, যা ফিরআউন তার জাতির সাথে করেছিল।
فَاسْتَخَفَّ قَوْمَهُ فَأَطَاعُوهُ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا فَاسِقِينَ ﴿الزخرف: ٥٤﴾
“অতঃপর সে তার সম্প্রদায়কে বোকা বানিয়ে দিল, ফলে তারা তার কথা মেনে নিল। নিশ্চয় তারা ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়।” (সূরা যুখরুফ: ৫৪)
সুতরাং ইউরোপের এ প্রভাবশালী শক্তিগুলো তাদের জাতিকে ‘জনগণের শাসন’ নামক শ্লোগানে তাদেরকে খেল-তামাশার সেই ষাঁড় বানিয়েছে যে, ইউরোপের পুনঃজাগরণ, ফ্রান্স ও আমেরিকার বিপ্লবের আজ শতবর্ষ অতিক্রান্ত হলো; অথচ এখনো জনগণ খেলার সেই ষাঁড়ই রয়ে গেল। তারা তাদের আখিরাত তো অনেক আগেই বরবাদ করে দিয়েছে, দুনিয়াতেও এ জনগণরা বিশ্বের সুদখোরদের মজুরি করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি।
মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ بَدَّلُوا نِعْمَتَ اللَّهِ كُفْرًا وَأَحَلُّوا قَوْمَهُمْ دَارَ الْبَوَارِ ﴿ابراهيم: ٢٨﴾ جَهَنَّمَ يَصْلَوْنَهَا وَبِئْسَ الْقَرَارُ ﴿ابراهيم: ٢٩﴾
“তুমি কি তাদের কে দেখনি, যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফরে পরিণত করেছে এবং স্ব-জাতিকে সম্মুখীন করেছে ধ্বংসের আলয়ে।দোযখের? তারা তাতে প্রবেশ করবে সেটা কতই না মন্দ আবাস।” (সূরা ইবরাহীম: ২৮-২৯)
পশ্চিমা বিশ্বে নিজেদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার পর সুদখোরেরা মুসলিম বিশ্বে নিজেদের ছল-চাতুরী শুরু করেছে। উসমানী খিলাফতকে ধ্বংস করেছে। উম্মাতে মুসলিমাহকে খিলাফতের বন্ধন থেকে বের করে অভিশপ্ত জাতীয়তাবাদে বিভক্ত করেছে এবং তাদের উপর নিজেদের দালাল একনিষ্ঠ দাস শাসকবর্গ ও জেনারেলদের বসিয়ে দিয়েছে, যারা নিজেরাই মুহাম্মাদ ﷺ এর আনীত শরীয়তের দুশমন।
যারা প্রকাশ্যে মুসলমানদের ন্যায় নাম ধারণ করেছে; কিন্তু তাদের অন্তর কাফেরদের চিরসঙ্গী। তারা নিজ দেশ ও জাতির সাথে গাদ্দারি করল আর কাফেরদের একান্ত আস্থাভাজনে পরিণত হলো। মুহাম্মাদ ﷺ এর আনীত শরীয়ত থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করল, আর কাফেরদের দ্বীনকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করল। এটা এমন একশ্রেণী যারা স্বীয় জনগণকে দারিদ্রসীমার নিচে রেখে নিজেদের ও বৈশ্বিক পুঁজিবাদের উদরগুলো পূর্ণ করে। নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যতকে উজ্জ্বল করার জন্য স্বজাতির লোকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন করে।
মানবতার মুক্তি: স্রষ্টার সৃষ্টির মাঝে একমাত্র স্রষ্টার বিধান বাস্তবায়নে
মানবতার মুক্তি ফিরিয়ে আনার পথ একটিই। সেটা ঐ পথ, যার উপর চলে মানবতা সর্বদা সফল হয়েছিল। এটা এমন পথ যে, যদি দিকভ্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত জাতিগুলো এর উপর চলে; তাহলে বিশ্বের প্রধান ও পথপ্রদর্শকে পরিণত হবে। আরব-আজম, পূর্ব-পশ্চিমের রাজা বাদশাদের বাদশাহী তাদের ঘোড়ার পদতলে পিষ্ট হবে। দুনিয়ার বড় বড় পরাশক্তিগুলো তাদের পদচুম্বন করবে।
যে পথ অনুসরণ করে মানুষ তার স্রষ্টা পর্যন্ত পৌঁছেছে। নিজেকেও পৌঁছিয়েছে, এবং জিন্দেগীর মূল উদ্দেশ্যকেও পৌঁছিয়েছে। মানবসমাজ চরিত্রের সর্বোচ্চ অলঙ্কারে সজ্জিত হয়েছে।
যেখানে নিরাপত্তা ও স্থিরতা, ইজ্জত-সম্মান, লজ্জা-শরম, অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতিপূরণ, আত্মত্যাগ ও প্রাধান্যতা, এবং আত্মীয়-স্বজনের পবিত্র সম্পর্ক সবকিছুই অর্জিত হয়েছিল।
মানব ইতিহাস সাক্ষী যে, এসব গুনাবলি মানুষের জন্য অর্জিত হয়েছিল কেবল একটিমাত্র পথেই, আর তা হলো- আল্লাহর নাযিলকৃত কিতাবকে বিধান ও জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে নেওয়া। রাহমাতুল্লিল আলামীন তথা বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ মুহাম্মাদ ﷺ এর আনীত শরীয়তকে জীবনাদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে দেশসমূহে তা বাস্তবায়ন করা।
পৃথিবী এবং তার মধ্যে অবস্থিত যা কিছু আছে সবগুলোকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর একমাত্র পথ হলো, এ পৃথিবীকে আল্লাহর নাযিলকৃত ব্যবস্থা অনুযায়ী শাসন করা। কেননা, আল্লাহ তা‘আলার সত্তা হলো, সারা পৃথিবীকে লালনকারী সত্তা। তিনিই মানবজাতিকে সঠিক পথে চালানোর জন্য তাঁর রাসূলগণকে পাঠিয়েছেন। সবশেষে মুহাম্মাদ ﷺ কে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছেন। যে শরীয়ত দিয়ে মুহাম্মাদ ﷺ কে পাঠানো হয়েছে, তা কেবল মুসলমানদের জন্য নয়; বরং পুরো বিশ্বের জন্য রহমতস্বরূপ।
মানুষের ভালো-মন্দের ব্যাপারে মহান আল্লাহ থেকে কে বেশি অবগত আছে? যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাকে মায়ের পেটে তিনটি আবরণের মাঝে জীবন দান করেছেন এবং দুর্বলতা থেকে শক্তিমান করেছেন। সুতরাং, তিনি যে জীবনব্যবস্থা (দ্বীন) মুহাম্মাদ ﷺ কে দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তা শুধু মুসলিমদের জন্য নয়; বরং কাফেরদের জন্য এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের প্রত্যেক অনু-পরমাণু, জড়পদার্থ, জীবজন্তু এবং উদ্ভিদের জন্যও রহমতস্বরূপ।
সুতরাং যখন আল্লাহ তা‘আলার প্রকৃতিগত আইনের সাথে বিদ্রোহ করা হবে এবং তাঁর নাযিলকৃত জীবনব্যবস্থা প্রত্যাখ্যান করে শাসকগোষ্ঠীর বানানো ব্যবস্থাকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা হবে, তখন তার পরিণামস্বরূপ ব্যাপকভাবে ধ্বংস ও বড় বিপর্যয়ের দৃশ্য বিশ্বকে প্রত্যক্ষ করতে হবে।
মানবজাতিকে পরিপূর্ণ ধ্বংসের হাত থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত রক্ষা করা যাবে না, যতক্ষণ না আল্লাহর জমিনে আল্লাহর বিধানকে বিজয়ী করা হবে। যেটাকে আল্লাহ তা‘আলা জীবনব্যবস্থা হিসেবে মানুষের জন্য পছন্দ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন-
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا …﴿المائدة: ٣﴾
“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন(জীবনব্যবস্থা) হিসেবে পছন্দ করলাম।”(সূরা মায়েদা: ০৩)