Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ৩৬ || “আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা” ।। মাহমুদ শীছ খাত্তাব || ৯ম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ৩৬ || “আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা” ।। মাহমুদ শীছ খাত্তাব || ৯ম পর্ব

    আরব বিশ্বে ইসরাইলের আগ্রাসী নীল নকশা
    ।।মাহমুদ শীছ খাত্তাব ||
    এর থেকে৯ম পর্ব


    (খ) আরব ভূখণ্ডসমূহ: সম্প্রসারণ বজায় রাখা: দ্বিতীয় উদ্দেশ্য য়াহূ দীরা শক্তিছাড়া আর কিছুতেই বিশ্বাস করে না। তাদের সম্প্রসারণবাদী উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য তারা প্রথমেই নির্ভর করে নিজেদের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের উপর। এ বিষয়ে তারা তাদের আগ্রাসী মনোভাব কখনোই লুকিয়ে রাখেনি। অস্ত্রশস্ত্রের বিশাল ভাণ্ডার জড়ো করা, ইসরাঈলের যাবতীয় বস্তুগত ও নৈতিক সম্পদ পরিপূর্ণভাবে যুদ্ধের কাজে লাগানো প্রভৃতি স্বীয় সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখার ব্যাপারে ইসরাঈলের কঠিন প্রতিজ্ঞার নিশ্চিত প্রমাণ বহন করে--যা ব্যতীত সে কখনোই তার আগ্রাসী লক্ষ্যসমূহ অর্জনে সক্ষম হবে না ।

    ১৯৬৫ সালে একটি 'আমেরিকান ম্যাগাজিনে লিখিত এক নিবন্ধে ইস রাঈলী পররাষ্ট্র মন্ত্রী (তৎকালীন) আবা ইবান বলেন, এ কথা কল্পনা করা নির্বুদ্ধিতাপূর্ণ হবে না যে, আরব নেতারা আমাদেরকে ১৯৬৬ বা ৬৭ সালের সীমানায় ফিরে যেতে জিদ ধরবেন যেমন তারা জিদ ধরতেন ১৯৪৮ সালের সীমানায় ফিরে যাওয়ার জন্য যে সীমানা তারা এককালে অস্বীকার করেছিলেন।[1]

    ইসরাঈল তার যুদ্ধ প্রস্তুতিতে মোট জাতীয় আয়ের বৃহদাংশ ব্যয় করে, শতকরা হিসাবে যা পৃথিবীর অন্যান্য রাষ্ট্র, এমনকি আমেরিকা ও রাশিয়ার তুলনায়ও অধিক। ১৯৬৭ সালের জুন যুদ্ধের জন্য ইসরাঈলের সামরিক বাজেট মোট জাতীয় আয়ের শতকরা ৩০ ভাগ ছাড়িয়ে যায়, যা ঐ বৎসর চার বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়।

    সুইস ফেডারেল ব্যাংক ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে তার নিয়মিত মাসিক রিপোর্টে উল্লেখ করে যে, ১৯৬৭ সালের পরে ইসরাঈলের বার্ষিক সামরিক বাজেটের শতকরা হার পৃথিবীর যে কোন দেশের তুলনায় বেশী। ১৯৬৮ সালের সার্বিক বাজেট ১৯৬৭-এর তুলনায় বেশী ছিল। তেমনি ১৯৬৯-এর বাজেট ৬৮-এর তুলনায় ছিল আরও বেশী।

    আমরা যদি ইসরাঈলের জাতীয় আয়ের সাথে সেই বিরাট অংকের আয় শামিল করি, যা দানের আকারে কেবলমাত্র সামরিক খাতে ব্যায়ের জন্য তারা বিশ্বের বিভিন্ন এলাকার য়াহূ দীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকে, তাহলে আমরা ভালভাবে উপলব্ধি করতে সমর্থ হবো যে, এই বিরাট অংক কেবলমাত্র তার আগ্রাসী ও সম্প্রসারণবাদী উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যই ব্যয়িত হয়ে থাকে।

    যুদ্ধের ক্ষতিপূরণস্বরূপ ইসরাঈল ১৯৬৯ সালে এপ্রিলে ১২টি ফ্যান্টম বিমান এবং ১৯৭০ সালের মে, জুন, জুলাই ও অক্টোবর মাসে আরও ৫৪টি ফ্যান্টম বিমান লাভ করে। এছাড়াও সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৮০টি স্কাইহক বিমান ও ৫০০ শত মিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্রশস্ত্র ও গোলা- বারুদ লাভ করেছে এবং এইভাবে চুক্তির বাকীগুলো সে পেতে থাকবে। বিমানের প্রথম চালান পাওয়ার বেশীর বেশী এক বছরের মধ্যেই, অর্থাৎ ১৯৭০-এর সেপ্টেম্বর-এর শেষ নাগাদ।

    এ ছাড়াও ইসরাঈল নিজদেশে অস্ত্র উৎপাদনের কোন প্রচেষ্টা বাদ রাখছে না। ১৯৬৭-৬৮ সাল থেকে ৭০-৭১ সাল পর্যন্ত ইসরাঈলের মোট জাতীয় বাজেট ছিল মিলিয়ন ডলারের হিসাবে যথাক্রমে ১৬৬৭, ১৬৮০, ২১৪৭ ও ২৮৩১ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় ছিল যথাক্রমে ৭৫০, ৬২৯, ৮৪০ ও ১৯৮৯ মিলিয়ন ডলার।

    ১৯৬৮-এর মাঝামাঝি নাগাদ তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে ১৯৬৭ সালের জুন যুদ্ধে অধিকৃত আরব ভূখণ্ড থেকে ইসরাঈলী প্রত্যাহার সম্পর্কে তাদের মতামত যাচাই করে একটি জরীপ চালানো হয়। তাতে দেখা যায় শতকরা ৪৪ জন সমস্ত অধিকৃত আরব ভূমি ইসরাঈলের সংগে সংযুক্তি সমর্থন করে। শতকরা ৩৭ জন সংযুক্তির বিপক্ষে, ১৯ জন কয়েকটি নির্দিষ্ট এলাকা সংযুক্তির পক্ষে এবং মাত্র ২ জন এগুলি ইসরাঈলী প্রত্যাহারের পক্ষে রায় দিয়েছে।

    ১৯৬৭-এর জুন যুদ্ধে ইসরাঈল যা কিছু দখল করেছে, তা সে কখনোই ছাড়বে না-- আরব শক্তি, হাঁ, কেবলমাত্র আরব শক্তির হস্তক্ষেপ ছাড়া ।

    ইসরাঈলের আগ্রাসী ও সম্প্রসারণবাদী লক্ষ্যসমূহ হাসিলের জন্য তাদের নেতারা ইসরাঈলকে একটি সৈনিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছে এবং সবকিছুতেই সামরিক ছাপ অংকিত করেছে।

    ১৯৬৭ সালের ১০ই অক্টোবর সংখ্যা য়াহূদী পত্রিকা হারেজ (Haaretz) -এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বেন গুরিয়ান বলেন যে, অধিকৃত জেরুজালেম চিরকালের জন্য ইসরাঈলের রাজধানী হিসেবে থাকবে যা ৩,০০০ বৎসর পূর্বে ছিল এবং তা প্রলয় কাল অবধি থাকবে।[2]

    ১৯৬৯ সালের ৯ই জুন তারিখে লণ্ডন পৌঁছে বেন গুরিয়ান ঘোষণা করেন যে, ইসরাঈল কখনোই জেরুজালেম ও গোলান মালভূমি ছেড়ে যাবে না, যদিও অন্যান্য সীমান্তে কিছু পরিবর্তন সম্ভব হতে পারে। যতদিন পর্যন্ত না একটা মীমাংসায় উপনীত হওয়া যাচ্ছে ততদিন পর্যন্ত ইসরাঈল কোনক্রমেই তার ছয়দিনের যুদ্ধে দখল করা আরব এলাকা থেকে ফিরে আসবে না। একই বছরের ২৪শে অক্টোবর লন্ডনের এক সাংবাদিক সম্মেলনে বেন গুরিয়ান পুনরায় বলেন যে, ইসরাঈল অবশ্যই জেরুজালেম ও গোলান মালভূমি নিজ দখলে রাখবে।

    লেডি ইসক্ল বলেন, ১৯৬৭-এর জুন যুদ্ধের পূর্ববর্তী অবস্থায় কোন- মতেই ফিরে আসা হবে না। বর্তমানের যুদ্ধ বিরতি রেখার কোন পরিবর্তন হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না একটা স্থায়ী শান্তিচুক্তির কাঠামোর মধ্যে নিরাপদ সীমানা লাভ করা যায়। আমরা পশ্চিম তীরের কোন বসতি এলাকা- যেমন, নাবলুস, জেনিন বা অন্যান্য কোন এলাকা আটকে রাখতে চাই না। আমরা যেটার উপর জোর দিতে চাই, সেটা হলো জর্ডান নদী সত্যিকার অর্থেই আমাদের জন্য একটি নিরাপদ সীমা হবে এবং আমাদের সেনাবাহিনী কেবল ঐ সীমানা বরাবর এলাকাগুলোই দখল করবে।

    আমরা বিশেষভাবে কোন বিষয়ে জোর করি না। আমরা সিনাইকে অস্ত্রমুক্ত এলাকা হিসেবে দাবী করেছি। তথাপি আমরা 'শেরম আল-শেইখে একটি ঘাঁটি রেখে দেব যাতে আমাদের পশ্চাদরক্ষী সেনাদল সরাসরি 'তিরান' ( Tiran) এলাকার প্রতিরক্ষায় কাজে লাগতে পারে। আমরা এই সব ব্যাপারে কোন চুক্তির উপরে কিংবা কোন বিদেশী (সেনাবাহিনীর) উপরে ভরসা রাখতে পারি না। জেরুজালেম এবং গোলান উপত্যকার ব্যাপারে আমাদের কোনরূপ নমনীয়তা নেই। আমরা কখনোই এগুলো ছাড়বো না।[3]

    ১৯৬৯ সালের ৩রা জুনে প্রকাশিত এক ভাষণে তৎকালীন ইসরাঈলী প্রধান মন্ত্রী মিসেস গোড়ামেয়ার বলেন, ১৯৬৭-এর পরে যুদ্ধ বিরতি সীমান্তের চাইতে উত্তম কোন সীমান্তের কল্পনাও আমরা করি না। আমরা অন্য কোন সীমান্ত চাই না।

    ইসরাঈলী সেনাবাহিনীর কাছে প্রদত্ত অন্য এক ভাষণে, যা ১৯৬৯- এর ১০ই জুলাইয়ে প্রকাশিত হয়েছে, মিসেস গোল্ডামেয়ার বলেন যে,

    অন্যেরা সিদ্ধান্ত নেবে না আমাদের সীমানা কতদূর হবে। তোমরা যতদূর পৌছতে পারবে এবং দখল করতে পারবে তা-ই আমাদের সীমানার একটি অংশে পরিণত হবে ।

    এই বৎসর ২০শে অক্টোবরের এক ঘোষণায় তিনি বলেন, ১৯৬৭ সালের পূর্বের কোন সীমানার অস্তিত্ব এখন আর নেই। আমরা বর্তমান অধিকৃত সীমানা থেকে একইঞ্চি সরে আসবো না, যতদিন না আরবদের সংগে একটি মজবুত শান্তিচুক্তি সম্পাদিত হয়।

    ইসরাঈলী পার্লামেন্ট 'নেসেট'-এ নতুন মন্ত্রীসভা শুরু করার সময় ] ১৯৬১-এর ১৪ই সেপ্টেম্বর গোল্ডামেয়ার বলেন, ইসরাঈল তার বিজিত আরবভূমিতে অবস্থান করবে যতদিন মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বহাল থাকবে। কোন আন্তর্জাতিক চাপ কিংবা আরব সন্ত্রাসবাদ ইসরাঈলকে জোর করে *৬৭-এর ছয়দিন যুদ্ধের পূর্বেকার সীমান্তে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারবে না।

    ১৯৬৮-এর ১৫ই জুনে মোশেদায়ান ঘোষণা করেন যে, আমাদের পুরুষেরা 'পার্টিশন স্কীমে'র আওতায় আরোপিত সীমান্ত স্বীকার করে নিয়ে ছিলেন। আমাদের বংশধরেরা সেটা সংশোধন করেছে এবং ছয়দিনের বাড়িয়ে যুদ্ধে সেটা বাড়িয়ে সুয়েজ, জর্ডান ও গোলান ভূমিকে শামিল করে নিয়েছে। এটাই শেষ নয়। আমাদের নতুন যুদ্ধ বিরতি সীমান্ত জর্ডানের সীমানা অতিক্রম করবে- এমনকি লেবানন ও মধ্য সিরিয়া পর্যন্ত।

    ১৯৬৯-এর ২৭ শে জুন তিনি আরও বলেন, গোলান মালভূমি কখনোই সিরিয়াকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না। আমরা অবশ্যই শেরম আল-শেইখ এবং ইলিয়ট[4] বন্দরমুখী প্রণালী আমাদের আয়ত্তে রাখবো। একীভূত জেরুজালেম আর কখনোই বিভক্ত হবে না। তবে ইসরাঈল ইগান এলোন পরিকল্পনা (Jgan Allon Project) কাঠামোর অধীনে অধিকৃত পশ্চিম তীর জর্ডানের নিকট ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত আছে। যেখানে শর্ত রয়েছে যে, পশ্চিম তীরকে জর্ডানের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া হলে সেটাকে অস্ত্রমুক্ত করা হবে। কেবলমাত্র কয়েকটি ইসরাঈলী কূটনৈতিক সৈন্য ছাউনি ছাড়া, যা জর্ডান নদী বরাবর বিস্তৃত থাকবে।

    ১৯৬৯ সালের ৩রা আগস্ট এক শ্রমিক সম্মেলনে ভাষণ দিতে গিয়ে মোর্শেদায়ান বলেন যে, জর্ডান নদী—যাকে আমরা ইসরাঈলের পূর্ব সীমানা বলে মনে করি, সিরিয়ার গোলান মালভূমি ও গাযা এলাকা কখনোই ত্যাগ করা হবে না। ইলিয়ট বন্দরে ও এর দক্ষিণের নৌপথ অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে এবং আমাদের সেনাবাহিনী দ্বারা তাকে অবশ্যই নিরাপদ রাখতে হবে। যারা অবশ্যই প্রণালী এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে যা ঈসরাঈলের আঞ্চলিক সীমানার একটি অংশ

    ২০শে আগস্ট তিনি পুনরায় ঘোষণা করেন যে, লেবার পার্টির বার্ষিক পরিকল্পনা আসলে ইসরাঈল সরকারের বিবৃতি ও সিদ্ধান্তসমূহের ব্যাখ্যা বা পর্যালোচনাযার উদ্দেশ্য আরব সেনাবাহিনীকে জর্ডান নদীর সীমায় পৌঁছতে বিরত রাখা এবং গাযা, গোলান ও শেরম আল-শেইখ এলাকা— যা একটি স্থল করিডোর দ্বারা ইসরাঈলের সংগে যুক্ত হয়েছে, এসবের উপরে স্থায়ীভাবে দখল কায়েম রাখা।

    ১৫ই আগস্ট তিনি বলেন, আমাদেরকে নতুনভাবে ইসরাঈলের মানচিত্র অংকন করতে হবে। যেখানে জেরুজালেম গাযা, শেরম আলশেইখ ও গোলান এলাকা অন্তর্ভুক্ত হবে। যদি আরবরা এই মানচিত্র প্রত্যাখান করে তবে আমরা তাদেরকে যুদ্ধে বাধ্য করবো।

    ২১শে অক্টোবর '৬৯ তিনি ঘোষণা করেন, নতুন প্যালেস্টাইন অবশ্যই বিস্তৃত হবে উত্তরে গোলান মালভূমি, জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এবং শেরম আল-শেইখ পর্যন্ত। সিনাই এলাকার একটি অংশকে অন্তর্ভুক্ত করবার জন্য- যা সিনাই উপদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তের একটি সামরিক গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত। যাকে 'য়াহূ দী জিব্রাল্টার' হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে।

    ২২শে অক্টোবর তিনি পুনরায় ঘোষণা করেন, একমাত্র সেই শান্তি- চুক্তিতে ইসরাঈল বিশ্বাস রাখতে পারে—যা একথা মেনে নেবে যে, সমস্ত ইসরাঈলী সীমান্ত কেবলমাত্র ইসরাঈলী সেনাবাহিনী দ্বারাই রক্ষা করা হবে।

    ২৩শে অক্টোবর জেরুজালেমের এক নির্বাচনী সভায় মোশেদায়ান ঘোষণা করেন যে, 'আমি শেরম আল-শেইখকে যুদ্ধাবস্থায় ইসরাঈলী সেনা- বাহিনীর দখলে রাখাকে অধিকতর পছন্দ করি শাস্তি বহাল করে তাকে আরবদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার চাইতে।

    ১৯৬৮ সালের ২৮ শে মে মেনাহিম বেগিন ঘোষণা করেন যে, আরব ভূমিতে আমাদের এই বর্তমান অধিকার একটি আইনগত সার্বভৌমত্বের পর্যায়ে রূপান্তরিত হওয়া উচিত। কেননা অধিকৃত আরব ভূমি আসলে সেই ভূমি যা অন্যের অবৈধ দখল থেকে ইসরাঈল মুক্ত করেছে।

    ১৯৬৭-এর যুদ্ধের পর পরই 'নেসেট'-এর এক আলোচনায় তিনি বলেন, আমি আমার এই অটল দাবী কখনোই পরিত্যাগ করবো না যে, জর্ডান ও গাযার সমন্বয়ে ইসরাঈলের যে ঐতিহাসিক সীমান্ত (নীল থেকে ইউফ্রেটিস), তা-ই ইসরাঈলের প্রকৃত সীমান্ত ।

    ১৯৬৮-এর ১৮ই সেপ্টেম্বর ইসরাঈলী হেরাট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে বক্তৃতা করার সময় তিনি বলেন, আমাদের শত্রুদের মুকাবিলায় ভালভাবে সফলতা অর্জনের জন্য আমাদেরকে অধিকৃত এলাকাসমূহে কলোনী স্থাপন অভিযান শুরু করা উচিত। অধিকৃত ভূমিতে বসতি স্থাপন কেবল যথার্থ নয়। বরং কর্তব্যও বটে। যার সম্পাদন আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য অতি জরুরী।

    ১৯৬৯-এর ৪ঠা সেপ্টেম্বর ইসরাঈলী ভাইস প্রেসিডেন্ট (তৎকালীন ) ইগাল এলোন এক ঘোষণায় বলেন, জেরুজালেম চিরদিন ইসরাঈলের রাজধানী হিসেবে অবিভক্ত থাকবে।

    তেলআবিব থেকে প্রকাশিত ইসরাইলের অন্যতম সংবাদ-পত্র হারেসকে ( Haaretz) দেওয়া '৬৯-এর ১২ই সেপ্টেম্বর এক ঘোষণায় তিনি বলেন, যুদ্ধ বিরতি সীমারেখা অবশ্যই বাড়াতে হবে। কৌশলগত সুবিধার জন্যই এটা আমাদের প্রয়োজন। খুবই পরিতাপের বিষয় যে, '৬৭-এর যুদ্ধে ইসরাঈল সিরিয়ার আরও অভ্যন্তরে জাবাল আজ দ্রুম' (Jobel-el Druze ) পর্যন্ত এগিয়ে যায়নি।

    একই দিনে অপর এক ঘোষণায় তিনি বলেন, 'কেবল সামরিক উপস্থিতি আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। বরং আমাদের অবশ্যই সারা বছর ধরে নাগরিক উপস্থিতি বজায় রাখতে হবে।

    Fait accompli-এর ভিত্তিতে রচিত সম্প্রসারণবাদী লক্ষ্য ইসরাঈল কোন প্রকার চুক্তির অপেক্ষা না করে তার অধিকৃত ভূমিতে সঠিক ছক অনুযায়ী বাস্তব পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
    ৬৭-এর জুন যুদ্ধের পরে সমস্ত ইসরাঈলী নেতা একসংগে বা একের পরে এক সর্বত্র একই ঘোষণা দিয়েছেন যে, ইসরাঈল কখনোই জেরুজালেম থেকে অধিকার প্রত্যাহার করবে না এবং শান্তি আলোচনা কখনোই জেরুজালেমকে জড়াবে না।

    গোল্ড মেয়ার নিজে দম্ভভরে বলেন যে, জর্দানী পতাকা আর কখনোই জেরুজালেমে উড়বে না।

    ইসরাঈলীরা এ কথা কখনো অনুভব করে না যে, ১৯৬৭ সালে দখলীকৃত সিনাই, আল-আরিশ, গাযা, পশ্চিম তীর ও গোলান মালভূমি প্রভৃতি এলাকা তাদের অস্থায়ী দখলে রয়েছে। য়াহূ দীদের দাবী অনুযায়ী এইসব এলাকার সংগে য়াহূ দীদের সম্পর্ক একটি দেশ ও তার জনগণের মধ্যকার দীর্ঘদিনের গভীর সম্পর্কের ন্যায়। এবং যেহেতু তারা এককালে বহুদিন যাবত এসব এলাকায় বাস করতো, সে কারণে তাদের আইনগত অধিকার রয়েছে এখানে দখল কায়েম করার---যা কেউ রাখতে পারে না। ইসরাঈল এইরূপ একটা সুযোগের জন্য বহুদিন ধরে অপেক্ষায় ছিল।

    য়াহূদী প্রশ্নে য়াহূ দীবাদী আন্দোলনের সমাধান ছিল মূলত কতগুলো ধারণা, বাস্তবতা ও ধর্মীয় অংগীকার ও মতবাদের উপর ভিত্তিশীল। এইভাবে বহু পূর্বে ১৯০৭ সালে ইসরাঈলীদের সুসংগঠিতভাবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সময় থেকেই য়াহূ দী আন্দোলনের লক্ষ্য একই আছে।

    ইসরাঈলের তৎকালীন শাসক পার্টি' 'মাপাই' (Mapai) বিষয়টি আরও সুষ্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে১৯৫৯ সালের নির্বাচনের সময় ২৩ তম য়াহূ দী সম্মেলনের প্রতিনিধিদের সম্মুখে যখন পার্টির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হয় নিম্নোক্তভাবে 'য়াহূ দী আন্দোলনের কাজ একটাই হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে, সেটা হলো য়াহূ দী প্রশ্নের সমাধান হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন এলাকার য়াহূ দীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন।

    প্রাক্তন ইসরাঈলী প্রধান মন্ত্রী লেডী ইস্‌কল ১৯৬৪-৬৫ সালের জন্য লিখিত ইসরাঈল সরকারের বার্ষিক রিপোর্ট বইয়ের ভূমিকায় লিখেন যে, আমরা যদি সত্যিকারের য়াহূ দীবাদী হই, প্যালেস্টাইনের য়াহূ দী প্রত্যাগমনের ব্যাপারে আমাদের দাবী পরিত্যাগ করতে পারি না। বরং সকল ব্যাপারেই তাদেরকে সাহায্যের নিশ্চয়তা দিতে হবে।

    বেন গুরিয়ান ১৯৬১ সালে এক বক্তৃতায় বলেন, প্রত্যেক য়াহূ দী তাদের প্রতিশ্রুত ভূমিতে আসতে অস্বীকার করবে, সে ইসরাঈলের প্রভুর দয়া-অনুকম্পা থেকে বঞ্চিত হবে।

    য়াহূ দী জনগণের জন্য য়াহূ দী আন্দোলনের মতবাদগত লক্ষ্যের সার- সংক্ষেপ হলো, এককথায় 'ইসরাঈলের সীমানা নীল থেকে ইউফ্রেটিস পর্যন্ত বিস্তৃত করা এবং এখানে পৃথিবীর সকল য়াহূদীর বসতি স্থাপন করা। যারা এ ব্যাপারে কিছু সন্দেহের মধ্যে ছিল ১৯৬৭-এর যুদ্ধ তাদের উত্তর জওয়াব ।[5]



    [1].`Foreign Affiars’, July 965.
    [2]. Haaretz newspaper, Tel-Aviv. 20. 1. 1970.
    [3]. The American Newsweek Review – Interview of Levi, Ishkol, issue 11, 17.2.1969.
    [4]. মূলবইয়ের৬৫পৃষ্ঠায়দুইস্থানেদুধরনেরবানানরয়েছেযেমনএকস্থানে Eliat অন্যস্থানে Elait - অনুবাদক
    [5]. বিস্তারিতবিবরণেরজন্যদেখুন, ‘Israeli militarism’ P. 58-63





    ​আরও পড়ুন
Working...
X