মজলিসে শূরায় মহিলা সদস্য- সংশয় নিরসন
অনেক দিন আগে ইসলামী রাষ্ট্রের মজলিসে শূরায় নিয়মতান্ত্রিক মহিলা সদস্য রাখা যাবে কি’না ব্যাপারে একটা পোস্ট করেছিলাম। সেখানে ইসলাম আওর সিয়াসি নাজারিয়াত কিতাবে তাকি উসমানি সাহেব যে আলোচনা করেছেন সেটার খণ্ডন করা হয়েছিল। এর উপর এক ভাই আবেদন করেছিলেন,
“তাকি সাহেব এক্ষেত্রে দু’টি দলিল দিয়েছেন তার কিতাব- ইসলাম ও রাজনীতি- এর মধ্যে। একটি হল: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার ঘটনায় উম্মে সালামা রাযি. এর পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। তার পরামর্শমত আগে নিজে মাথা হলক করা শুরু দিয়েছেন, তখন সাহাবায়ে কেরাম উক্ত আদেশ মানতে প্রস্তুত হয়ে গেছে।
আরেকটি দলিল দেয় যে, ওমর রাযি. একটি বাজারের বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন একজন মহিলাকে। সম্ভবতা মহিলাকে কেরানী বানিয়েছিলেন।
তো আপনার নিকট আবেদন করব, এ দু’টি দলিলের হাকিকত স্পষ্ট করে আলোচনা করতে।”
উম্মে সালামা রাদি.র হাদিস
উম্মে সালামা রাদি.র হাদিসের ব্যাপারে তাকি উসমানি সাহেব নিজেই মন্তব্য করেছেন যে, মহিলাদের নিয়মতান্ত্রিক সদস্য বানানোর পক্ষে এ হাদিস দলীল হয় না। কারণ, ঘটনাবশত কোনো ক্ষেত্রে কোনো একটি বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করার দ্বারা এ কথা প্রমাণ হয় না যে, তাদেরকে নিয়মতান্ত্রিক সদস্য বানানো যাবে এবং নিয়মতান্ত্রিক তাদের পরামর্শ গ্রহণ করে কাজ করা যাবে।
এখানে বেশির চেয়ে বেশি যতটুকু আছে, স্বামী বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে মুনাসিব মনে করলে তার বুদ্ধিমতি স্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবে। মহিলারা যদিও নাকিসাতুল আকল তথা বুদ্ধি-জ্ঞান কম, তথাপি বিশেষ কোনো ক্ষেত্রে যদি অভিজ্ঞ এবং বুদ্ধিমতি কোনো মহিলা কোনো পরামর্শ দেয় আর তা শরীয়ত ও বাস্তবতার আলোকে মেনে নেয়া মুনাসিব মনে হয়, তাহলে মেনে নেয়া যাবে।
হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,
وفيه فضل المشورة ... وجواز مشاورة المرأة الفاضلة وفضل أم سلمة ووفور عقلها حتى قال إمام الحرمين لا نعلم امرأة أشارت برأي فأصابت إلا أم سلمة. كذا قال وقد استدرك بعضهم عليه بنت شعيب في أمر موسى. فتح الباري لابن حجر (5/ 347)
এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, পরামর্শ করে কাজ করা ভাল। বুঝা যায়, জ্ঞানী-গুণী মহিলা থেকেও পরামর্শ নেয়া যাবে। এও বুঝা যায় যে, আম্মাজান উম্মে সালামা রাদি. একজন বিদ্বান এবং জ্ঞানী ও বুদ্ধিমতি মহিলা ছিলেন। ইমামুল হারামাইন রহ. তো এ পর্যন্ত বলেছেন, ‘উম্মে সালামা রাদি. ব্যতীত আর কোনো মহিলার ব্যাপারে এ কথা জানা নেই যে, পরামর্শ দিয়েছে আর তার পরামর্শ সঠিক হয়েছে।’
এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, পরামর্শ করে কাজ করা ভাল। বুঝা যায়, জ্ঞানী-গুণী মহিলা থেকেও পরামর্শ নেয়া যাবে। এও বুঝা যায় যে, আম্মাজান উম্মে সালামা রাদি. একজন বিদ্বান এবং জ্ঞানী ও বুদ্ধিমতি মহিলা ছিলেন। ইমামুল হারামাইন রহ. তো এ পর্যন্ত বলেছেন, ‘উম্মে সালামা রাদি. ব্যতীত আর কোনো মহিলার ব্যাপারে এ কথা জানা নেই যে, পরামর্শ দিয়েছে আর তার পরামর্শ সঠিক হয়েছে।’
তিনি এমনটাই বলেছেন। তবে কেউ কেউ এখানে মূসা আলাইহিস সালামের ব্যাপারে শুআইব আলাইহিস সালামের কন্যা যে পরামর্শ দিয়েছিলেন সেটাও যুক্ত করেছেন। -ফাতহুল বারি ৫/৩৪৭
সুবহানাল্লাহ! আইম্মায়ে কেরামের দৃষ্টিতে এ দু’জন মহিলাই শুধু ধরা পড়লো, যাদের পরামর্শ সঠিক হয়েছিল। অর্থাৎ সাধারণত স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার কারণে মহিলাদের পরামর্শ যথাযথ হয় না। এ ধরনের দু/চারজন মহিলার দু/চারটি ঘটনাই শুধু ব্যতিক্রম। নতুবা আমভাবে মহিলাদের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটে যে, তাদের তুলনায় পুরুষরাই ভাল বুঝে। এরপরও পুরুষদের ছেড়ে মহিলাদের সদস্য বানানো উম্মাহর সাথে খিয়ানত ছাড়া কিছু নয়। এ ধরনের জাতির ধ্বংস অনিবার্য।
রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরাশাদ করেন,
لن يفلح قوم ولوا أمرهم امرأة . صحيح البخاري : 4163
যে জাতি নিজেদের নেতৃত্ব কোনো মহিলার হাতে সোপর্দ করেছে, তারা কিছুতেই কামিয়াব হতে পারবে না। -সহীহ বুখারি ৪১৬৩
যে জাতি নিজেদের নেতৃত্ব কোনো মহিলার হাতে সোপর্দ করেছে, তারা কিছুতেই কামিয়াব হতে পারবে না। -সহীহ বুখারি ৪১৬৩
মহিলাকে বাজারে দায়িত্ব দেয়ার বর্ণনা
এ বর্ণনার ব্যাপারে ইবনুল আরাবি রহ. (৫৪৩ হি.) যা বলেছেন সেটাই যথেষ্ট,
وقد روي أن عمر قدم امرأة على حسبة السوق، ولم يصح؛ فلا تلتفتوا إليه؛ فإنما هو من دسائس المبتدعة في الأحاديث. أحكام القرآن لابن العربي ط العلمية (3/ 482)
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে যে, উমার রাদি. এক মহিলাকে বাজার দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এ বর্ণনা সহীহ নয়। এর দিকে ফিরেও তাকাবে না। বিদআতিরা ষড়ন্ত্রমূলকভাবে কৌশলে একে হাদিসের কিতাবে অনুপ্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। -আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবি ৩/৪৮২
কোনো কোনো বর্ণনায় এসেছে যে, উমার রাদি. এক মহিলাকে বাজার দেখাশুনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এ বর্ণনা সহীহ নয়। এর দিকে ফিরেও তাকাবে না। বিদআতিরা ষড়ন্ত্রমূলকভাবে কৌশলে একে হাদিসের কিতাবে অনুপ্রবেশ করিয়ে দিয়েছে। -আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবি ৩/৪৮২
সম্ভবত বানোয়াট হওয়ার কারণেই তাকি উসমানি সাহেব একে দলীল হিসেবে আনেননি।
পরিশেষে একটি কথা বলতে চাই,
عن يَحْيَى - وَهُوَ ابْنُ سَعِيدٍ - عَنْ عَمْرَةَ بِنْتِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ أَنَّهَا سَمِعَتْ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِىِّ -صلى الله عليه وسلم- تَقُولُ لَوْ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- رَأَى مَا أَحْدَثَ النِّسَاءُ لَمَنَعَهُنَّ الْمَسْجِدَ كَمَا مُنِعَتْ نِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ. قَالَ فَقُلْتُ لِعَمْرَةَ أَنِسَاءُ بَنِى إِسْرَائِيلَ مُنِعْنَ الْمَسْجِدَ قَالَتْ نَعَمْ. -صحيح مسلم : 1027، صحيح البخاري : 831
ইয়াহইয়া বিন সায়িদ রহ. থেকে বর্ণিত; তিনি আমরাহ্ বিনতে আব্দুর রহমান রাদি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আম্মাজান আয়েশা রাদি.কে বলতে শুনেছেন, মহিলারা যা-সব শুরু করেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তা দেখতেন, তাহলে তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিতেন, যেমন বনী ইসরাইলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছিল। ইয়াহইয়া রহ. বলেন, আমি আমরাহকে জিজ্ঞেস করলাম, বনী ইসরাইলের মহিলাদের কি মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি উত্তর দেন, হাঁ। -সহীহ বুখারি ৮৩১, সহীহ মুসলিম ১০২৭
ইয়াহইয়া বিন সায়িদ রহ. থেকে বর্ণিত; তিনি আমরাহ্ বিনতে আব্দুর রহমান রাদি. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি আম্মাজান আয়েশা রাদি.কে বলতে শুনেছেন, মহিলারা যা-সব শুরু করেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তা দেখতেন, তাহলে তাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ করে দিতেন, যেমন বনী ইসরাইলের মহিলাদের নিষেধ করা হয়েছিল। ইয়াহইয়া রহ. বলেন, আমি আমরাহকে জিজ্ঞেস করলাম, বনী ইসরাইলের মহিলাদের কি মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছিল? তিনি উত্তর দেন, হাঁ। -সহীহ বুখারি ৮৩১, সহীহ মুসলিম ১০২৭
ইমাম তিরমিযি রহ. বলেন,
وَرُوِي عَنِ ابْنِ الْمُبَارَكِ أَنَّهُ قَالَ: أَكْرَهُ اليَوْمَ الخُرُوجَ لِلنِّسَاءِ فِي العِيدَيْنِ ... وَيُرْوَى عَنْ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ: أَنَّهُ كَرِهَ اليَوْمَ الخُرُوجَ لِلنِّسَاءِ إِلَى العِيدِ. –سنن الترمذي: 2\420، ط. مصطفى البابي الحلبي - مصر
ইবনুল মুবারক রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, বর্তমান যামানায় ঈদের জামাতে মহিলাদের যাওয়াটা আমার কাছে অপছন্দনীয়। … সুফিয়ান সাওরি রহ. থেকেও বর্ণিত যে, মহিলাদের ঈদের জামাতে যাওয়াটা তিনি অপছন্দ করেছেন। -সুনানে তিরমিযি ২/৪২০
ইবনুল মুবারক রহ. থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, বর্তমান যামানায় ঈদের জামাতে মহিলাদের যাওয়াটা আমার কাছে অপছন্দনীয়। … সুফিয়ান সাওরি রহ. থেকেও বর্ণিত যে, মহিলাদের ঈদের জামাতে যাওয়াটা তিনি অপছন্দ করেছেন। -সুনানে তিরমিযি ২/৪২০
ফিতনার আশঙ্কায় পরবর্তী উলামায়ে কেরাম ঢালাওভাবে মহিলাদের মসজিদ ও জুমা জামাতে যেতে নিষেধ করেছেন। -রদ্দুল মুহতার ১/৫৬৬
যেখানে নিজের বাড়ির পাশের মসজিদটি কিংবা ঈদগাহটিতে যাওয়াও নিষিদ্ধ, সেখানে কিভাবে দেশের একপ্রান্ত থেকে একটি মহিলা রাজধানীতে এসে শত পুরুষের সাথে মজলিসে শরীক হওয়া জায়েয হবে? আল্লাহ তাআলা আমাদের সহীহ বুঝ দান করুন।
***
Comment