ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা নিম্ন মানের, একথা ইসলামের আলেম ও চিন্তাবিদগণ চিহ্নিত করেছেন; একইভাবে চিহ্নিত করেছে সুবিধাবাদী, পপুলিস্ট সেক্যুলার রাজনীতিবিদ ও এক্টিভিস্টরাও।
.
অতিসরলতা, উদাসীনতা ও অন্যান্য অনিবার্য জটিলতার প্রভাবস্বরূপ,
ইসলামপন্থীদের কাছে কেবল "ইসলামী শা'আয়ের, পরিভাষার সাথে জড়িত বিষয়"গুলোই কেবল প্রাসঙ্গিক সাব্যস্ত হয়। অর্থাৎ, দাড়ি, টুপি, কুরআন, সংবিধান বা বিসমিল্লাহ ইত্যাদি ইস্যুতেই ইসলামপন্থীদের অবস্থান জানা যায়। এটা অপরিহার্য ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্য সন্দেহ নেই।
.
কিন্তু আমরা দেখি,
রাজনৈতিক ইতিহাসের জবরদস্তিমূলক অপব্যাখ্যা, অর্থনৈতিক বৈষম্য, সাধারণ মানুষের উপর নিপীড়ন, শত্রুরাষ্ট্রের (যেমন, ভারত, আমেরিকা) সাথে দীর্ঘমেয়াদী আত্মঘাতি চুক্তি ইত্যাদিসহ বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ইসলামপন্থীদের নিরবতা মোটামুটি দৃশ্যমান।
.
অথচ, বাস্তবতা হচ্ছে,
মানুষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও জাতীয় সমস্যার সমাধানও তো ইসলামী বিষয়। অন্যথায় শরিয়াহর শাসন, আল ওয়ালা ওয়াল বা'রার মতো বিষয়গুলো এত গুরুত্বপূর্ণ কেন!?
.
.
প্রাত্যাহিক ও জাতীয় জীবনের ঘটনাবলী মানুষ ও জাতিকে সরাসরি প্রভাবিত করে। ফলত, সরকারী ও পোষা মিডিয়ার গৎবাঁধা বক্তব্যের বাইরে গিয়ে, জনসাধারণ সঠিক বাস্তবতা ও বিশ্লেষণ জানতে চায়, বুঝতে চায়।
.
শূণ্যস্থান পূরণে তাই সাধারণ মুসলিমদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয় #পপুলিস্ট এক্টিভিস্টগণ; অর্থাৎ, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ জণগণের আবেগ ও উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ইতিহাস ও রাজনীতির প্রয়োজনীয় বিশ্লেষণ ও ধারাবিবরণী সাজিয়ে উপস্থাপন করেন।
.
ফলত দেখা যায়, ফরহাদ মজহার, পিনাকী ভট্টাচার্য, মাহমুদুর রহমান বা আসিফ নজরুলরা একারণেই নিপীড়িত সাধারণ মুসলিম জনতার অন্যতম আশ্রয়!
আগেই বলা হয়েছে,
#পপুলিস্ট চিন্তাধারা হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠের আবেগ-অনুভূতিকে উত্তেজিত না করে, তাদের সমর্থন আদায়কে সামনে রেখে রাজনীতি ও এক্টিভিজম করা। যেখানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে পপুলিস্টরা মুসলমদের স্বার্থ-চাহিদাকে প্রাধাণ্য দেয়, যেখানে হিন্দু বা খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেখানে হিন্দু বা খ্রিস্টানদের প্রাধান্য দেত।
.
ব্রিটেনের টোরি পার্টি, আমেরিকার রিপাবলিকান পার্টি, ভারতের বিজেপি ইত্যাদি পপুলিস্ট সেক্যুলার ধারার রাজনৈতিক দল।
আমাদের দেশে পিনাকী ভট্টাচার্য, ফরহাদ মাজহার ও বিএনপি-এরশাদপন্থীরা এঘরানার এক্টিভিজম ও রাজনীতিতেই লিপ্ত।
.
.
স্রোতের বিপরীতে গিয়ে আরা শাসকগোষ্ঠীর বিরোধিতা করছেন; এটা প্রশংসনীয়, সন্দেহ নেই।
.
কিন্তু, জানা/ স্মরণ করা প্রয়োজন,
আওয়ামীলীগের পতন তো ইসলামপন্থীদের মূল লক্ষ্য না; ইসলামের মূল উদ্দেশ্য তো সেক্যুলার শাসনব্যবস্থার ক্ষয়করণ ও প্রতিস্থাপন।
কিংবা অন্তত, আপামর জনসাধারণের কাছে ব্রিটিশ শাসনের বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে পাওয়া, এই বিষাক্ত চিন্তাধারার অসারতা স্পষ্টকরণ!
.
.
এধারার বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিবিদ ও এক্টিভিস্টরা জানেন-
ক) ইসলামপন্থীদের ব্যাপক জনমত লাভ ব্যাতীত- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হোক, সামরিক প্রক্রিয়ায় হোক কিংবা জনআন্দোলনের আকারে হোক; ক্ষমতার পরিবর্তন ও সুসংহতকরণ সম্ভব না।
.
খ) যে প্রক্রিয়াতেই (গণতান্ত্রিক, সামরিক বা গণআন্দোলন) ক্ষমতার কাঠামোর পুনর্বিন্যাস হোক না কেন; অসংগঠিত, অসচেতন, মধ্যবিত্ত মানসিকতায় আচ্ছন্ন ও বাগাড়ম্বরে অভ্যস্ত নের্তৃত্বের অনুগত ইসলামপন্থীদের পক্ষে ক্ষমতার পরিবর্তনে নিয়ামক ভূমিকা রাখা সম্ভব হলেও, ক্ষমতার কেন্দ্রে যাওয়ার মতো সক্ষমতা তারা রাখে না।
চূড়ান্ত ফলাফল যাবে বিএনপি, সামরিক বাহিনী, ভিপি নূর-রেজা কিবরিয়া গং ইত্যাদির মতো কোনো পশ্চিমাপন্থী, পপুলিস্ট সেক্যুলার গ্রুপের পক্ষেই, যারা ডানপন্থীও বলে চিহ্নিত হয় প্রায়শই।
.
হ্যা, এনাম অথবা কৌশল হিসেবে আপসকামী ইসলামপন্থীদের কাউকে কাউকে শিল্প, কৃষি, সমাজকল্যাণ বা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আলংকরিক পদ হয়তো দেয়া হবে; কিন্তু সাধারণত উক্ত মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর কিছু করার সক্ষমতা থাকবে না, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নিয়োজিত কোনো প্রভাবশালী সেক্যুলার সচিবের প্রভাবে।
.
কথাগুলো ঘোলাটে বা জটিল লাগলেও; সংক্ষেপে সম্ভাব্য সংকটের বাস্তব চিত্র এমনটাই।
.
এ দুটি মৌলিক বিষয় জানেন বলেই,
পপুলিস্ট সেক্যুলার বুদ্ধিজীবি, এক্টিভিস্ট ও রাজনীতিবিদগণ ইসলামপন্থীদের আবেগ, অনুভূতি ও আকাঙ্ক্ষাকে এত বেশী গুরুত্ব দেন।
হতে পারে, তারা নিজ ইচ্ছা বা আদর্শের প্রতি আন্তরিক হয়েই তা করেন; তবে তারা যে সেক্যুলার ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে গিয়ে কিছু ভাবেন কিংবা ইসলামী শাসনব্যবস্থার আশা/কল্পনা করেন, এমনটা আমরা কখনো দেখিনি, দেখিনা।
.
অতএব, ইসলামপন্থীদের জন্য উচিৎ হবে না,
i) প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষণ বা ইতিহাসের সঠিক বয়ান জানতে গিয়ে, সেক্যুলারদের আদর্শিক গোলামে পরিণত হওয়া।
.
ii) হিন্দুত্ববাদ ও উগ্র সেক্যুলারিজমের বিরোধিতা করতে গিয়ে, ইসলামপন্থা বাদ দিয়ে নিজের অজান্তেই পপুলিজমের মোড়কে আবৃত সেক্যুলারিজমকে আঁকড়ে ধরা বা শক্তিশালী করা।
.
এছাড়াও, ইসলামপন্থীদের মধ্যে অগ্রগামী ও আন্তরিক ভাইদের কর্তব্য হচ্ছে,
প্রয়োজনীয় ও প্রাসঙ্গিক জাতীয়-আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও ঘটনাপ্রবাহের বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ জাতির সামনে সামর্থ্য অনুযায়ী তুলে আনা; অন্যথায়, পুনরায় একটি সম্ভাবনাময় ইসলামী প্রজন্মের অপমৃত্যু ঘটবে '৪০ ও '৮০র দশকের ন্যায়।
.
যেভাবে পপুলিজমের প্রতারণার শিকার হয়ে সেসময়কার ইসলামপন্থীদের উন্মেষ ছিনতাই হয়েছিল জিন্নাহ-জিয়া-এরশাদের মতো অপরচুনিস্ট, সেক্যুলার ক্ষমতালোভীদের হাতে,
যেভাবে হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছিল তাদের দ্বারা প্রবঞ্চিত বা প্রলুব্ধ 'ইসলামী' নের্তৃবৃন্দ্ব-
ঠিক একই ঘটনা আবারো মঞ্চস্থ হতে পারে- যদি না ইসলামপন্থীরা যুগের দাবী মেটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হয়!
Comment