Announcement

Collapse
No announcement yet.

গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (ষষ্ঠ পর্ব)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (ষষ্ঠ পর্ব)

    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন

    (ষষ্ঠ পর্ব)
    যুগে যুগে গণতন্ত্রীদের পরিণতি ও শারিয়াহ প্রতিষ্ঠার উপায় :
    মুসলিম অধ্যুষিত দেশসমূহের অনেক ইসলামি দল গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে, এসব দল দ্বারা ইসলামের শাখাগত কিছু খেদমত ও উপকার হয়েছে। কোথাও কোথাও আংশিকভাবে সাময়িক সময়ের জন্য কিছু আইনগত পরিবর্তন আনার চেষ্টাও করা হয়েছে। কিন্তু মৌলিক ও চূড়ান্তভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তারা পরিপূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এখানে বিশ্বের একাধিক দেশে ইসলামি রাজনীতি চর্চাকারী কয়েকটি বৃহৎ প্রাচীন ইসলামি দলের শুধু শারিয়াহ প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতার উপাখ্যান তুলে ধরব।

    বিভিন্ন ইসলামি গণতন্ত্রী দলের ব্যর্থতার ইতিহাস :

    ০১. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম :
    ১৯১৯ সালে ভারতবর্ষকে ব্রিটিশদের গোলামি থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে এ দল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে এ দলের অনেক শীর্ষ নেতাসহ কর্মীরা অমানুষিক জুলুম-নির্যাতন ভোগ করেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালে যখন ব্রিটিশরা এদেশকে চলে যায় তখন এ দলটি দুভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।
    ক. জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ :
    দেশভাগের সময় তারা ভারতেই থেকে যান। কিন্তু তারা রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরে এসে দলটিকে দাওয়াতি সংগঠনে রূপ দান করেন। কিন্তু যেহেতু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে এ দলের অবদান অপরিসীম, তাই ভারত সরকার তাদেরকে পার্লামেন্টে স্থায়ী কয়েকটি সংরক্ষিত আসন দান করে। তখন থেকেই তারা ভারতের অন্যতম বড় দল কংগ্রেসকে সমর্থন দিয়ে আসছেন।
    খ. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম পাকিস্তান :
    পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তারা রাজনৈতিক চর্চা শুরু করেন। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে সত্তর দশকে পাকিস্তানের সীমান্ত প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে দলটির প্রধান মুফতি মাহমুদ রহ. উক্ত প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তিনি মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর সীমান্ত প্রদেশে মদ, সুদ ইত্যাদি নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু তা কার্যকর হওয়ার পূর্বেই ক্ষমতাসীন জুলফিকার আলী ভুট্টো সরকার তাকে পদচ্যুত করে! বর্তমানে তাঁর ছেলে মাওলানা ফজলুর রহমান সাহেবের নেতৃত্বে জমিয়ত পরিচালিত হচ্ছে। বিগত কয়েক নির্বাচনে তাদের অবস্থা হচ্ছে-
    * ১৯৯৩ সালে বেনজীর ভুট্টোর সাথে জোট গঠন করে সংসদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সভাপতি হন। ১৯৯৬ সালে নওয়াজ শরিফ ক্ষমতা দখলের আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে সমাসীন থাকেন।
    * ১৯৯৭ সালের নির্বাচনে জমিয়ত অংশগ্রহণ করলেও কোনো আসনে জয়লাভ করেনি।
    * ২০০২ সালে সব ইসলামি দলকে একসাথে করে ‘মুত্তাহিদা মজলিসে আমল নামে জোট করে এবং সে নির্বাচনে এককভাবে জমিয়ত ৪১টি, মতান্তরে ৪৫টি আসন এবং জোট হিসেবে মোট ৭২টি আসন লাভ করে। মাওলানা ফজলুর রহমান একবার সীমান্ত প্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী হলেও সেখানে শরিয়া প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হন।
    * ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৪টি আসনে জমিয়ত জয়লাভ করে।
    * ২০১৩ সালের নির্বাচনে ১২টি মতান্তরে ১৫টি আসনে জমিয়ত জয়লাভ করে।
    * ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তাতে জমিয়ত কোনো আসনে জয়লাভ করতে পারেনি।
    উল্লেখ্য, এ দলটির মধ্যে একাধিকবার ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। বর্তমানে পাকিস্তানে জমিয়ত দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি জমিয়ত ‘এফ এবং অন্যটি জমিয়ত ‘এস নামে পরিচিত।

    ০২. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ :
    স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে এ দলটির কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য। দলটির মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাস রাহিমাহুল্লাহ তিনটি প্রতীক (লাঙ্গল, খেজুরগাছ ও ধান) নিয়ে তিনবারের নির্বাচিত এমপি। এরশাদের আমলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। তারপরও ইসলামি শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় দলটির কার্যকরী কোনো ভূমিকা দৃশ্যমান হয়নি। এ দলের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে আপনারাই ভাবুন। পরে ২০০১ সালে এ দলটির মধ্যেও ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়। সবকিছু মিলিয়ে বলা চলে যে, তারা খুব একটা কার্যকরী অবস্থানে নেই।

    ০৩. ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা ব্রাদারহুড :
    খিলাফতের পতন হয় ১৯২৪ সালে। তখন মুসলিমদের একতা ধরে রাখতে এবং তাদেরকে সঠিক নির্দেশনা দিতে ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয় ‘ইখওয়ানুল মুসলিমিন তাদের শ্লোগান ছিলো- জিহাদ, তারবিয়াত ও দাওয়াত। তাদের মনোগ্রামই এর প্রমাণ বহন করে।
    ইখওয়ানুল মুসলিমিন বায়তুল মাকদিস রক্ষার্থে ইহুদিদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে দলে দলে মুজাহিদ পাঠিয়েছিল। কিন্তু অল্পদিনেই ইখওয়ান সরকারের চক্ষুশুলে পরিণত হয়। শুরু হয় ইখওয়ান নেতাদের ধর-পাকড়। ১৯৪৯ সালে তখনকার মিসরের রাজা ফারুকের গুপ্তবাহিনী শহিদ করে দেয় ইখওয়ানের প্রতিষ্ঠাতা হাসানুল বান্না রাহিমাহুল্লাহ-কে।
    এরপর ইখওয়ানের সাহায্যে ১৯৫২ সালে সেনাঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজা ফারুককে উৎখাত করে রোমে নির্বাসিত করা হয়। যেহেতু সেনা অভ্যুত্থানের প্রতি ইখওয়ানের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা ছিল, তাই সেনা সরকার নজিব তাদেরকে অনেক সমীহ করে। কিন্তু নজিবের পর যখন জামাল আব্দুন নাসের ক্ষমতায় আসল তখন সে প্রথমে ইখওয়ানকে সমর্থন করলেও পরবর্তী সময়ে ইখওয়ানকে আতঙ্ক মনে করে ইখওয়ান দমনে লিপ্ত হয়ে পড়ে এবং সে তৎকালীন দ্বিতীয় পরাশক্তি রাশিয়া ব্লকে যোগ দেয়। তার আমলেই সাইয়িদ কুতুব শহিদ রাহিমাহুল্লাহ-কে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়। এভাবে ইখওয়ান প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তথাকথিত নুসরার দ্বারা প্রতারিত হয়।
    জামালের পর ক্ষমতায় আসল আনওয়ার সাদাত। সে ক্ষমতায় এসে ইখওয়ানিদেরকে জেল থেকে মুক্ত করে দেয় এবং ইসরাইলের সাথে ১৯৭৩ সালে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। যুদ্ধে প্রথমে কিছুটা জয় লাভ করলেও পরে মারাত্মকভাবে পরাজিত হয়। তখন বাধ্য হয়ে ইসরাইলের সাথে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিতে আবদ্ধ হয় এবং রাশিয়ান ব্লক থেকে মার্কিন-ইসরাইল ব্লকে যোগ দেয়। এর পুরস্কার স্বরূপ প্রথম একজন আরব হিসেবে তাকে শান্তিতে নোবেল প্রাইজ দেওয়া হয়। যেহেতু ইখওয়ান তা মেনে নেয়নি তাই শুরু হয় ইখওয়ানের ওপর নির্যাতন। এভাবে ইখওয়ান দ্বিতীয়বারের মতো প্রতারিত হয়।
    আনওয়ার সাদাতের পর ১৯৮০ ক্ষমতায় আসল হোসনি মোবারক। হোসনি মোবারকের পতনের পর ইখওয়ান নতুন বন্ধুরূপে গ্রহণ করল গণতন্ত্রকে। তাই ফ্রিডম জাস্টিস পার্টি নামে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ক্ষমতায় গেল। কিন্তু গণতন্ত্র তাদেরকে উগড়ে ফেলল। এভাবে ইখওয়ান তৃতীয়বারের মতো প্রতারিত হলো।
    গণতন্ত্রের পর ইখওয়ান অহিংস আন্দোলন করার স্বার্থে বেছে নিল রাজপথকে। গঠন করল সমমনাদের নিয়ে নতুন জোট ‘আত-তাহালুফুল ওয়াতানি লিদামিশ শারইয়্যাহ (التحالف الوطني لدعم الشرعية) অর্থাৎ শরীয়াহর সমর্থনে জাতীয় ঐক্য। যার লক্ষ্য স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার, প্রগতি, গণতন্ত্র এবং সেনা স্বৈরশাসনের অবসান।
    মোটকথা, ইখওয়ানের হেটে চলার পথ যখন বাধাপ্রাপ্ত হলো তখন তারা বসে বসে চলার পথ অবলম্বন করল। যখন বসার পথ বন্ধ হলো তখন তারা ধরল হামাগুড়ির পথ। কিন্তু এতকিছুর পরও আমাদেরকে শুনতে হলো ইখওয়ানের নিষিদ্ধ হওয়ার মতো প্রক্রিয়া, ইখওয়ানি নেতাদের সম্পত্তি জব্দ হওয়ার নির্মম খবর।
    এই তথাকথিত অহিংস আন্দোলন তাদেরকে কী উপহার দিল? অহিংসবাদের এই ধর্মটি কি আসলে মুসলিমদের? যে ইখওয়ানের সূচনা হয়েছিল জিহাদ দ্বারা (তাদের মনোগ্রাম এবং শ্লোগান এখনও যার নিদর্শন বহন করে যাচ্ছে) আজ কোথায় সে ইখওয়ান? হাসানুল বান্না রাহিমাহুল্লাহ এর সময় যে ইখওয়ান ছিল মরুর সিংহ, আজ সে ইখওয়ান হলো রাজপথের হাতি। যাদের সদস্যসংখ্যা তো বিশাল, কিন্তু সিংহের মতো আগের সেই বুদ্ধিদীপ্ত ক্ষিপ্রতা, সুদৃঢ় লক্ষ্য ও সঠিক টার্গেট নেই।
    নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্যিই বলেছেন :
    إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ، وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ، وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ، وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ، سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ.
    যখন তোমরা ইনা পদ্ধতিতে ব্যবসা করবে, গরুর লেজ আঁকড়ে ধরবে, কৃষিকাজেই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ ছেড়ে দেবে তখন আল্লাহ তোমাদের ওপর এমন লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেবেন, যা তোমাদের থেকে তিনি অপসারিত করবেন না; যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের (সেই আগের প্রকৃত) দ্বীনে ফিরে আসো। [সুনানু আবি দাউদ : ৩/২৭৪, হাদিস নং ৩৪৬২, প্রকাশনী : আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরূত]
    উল্লেখ্য যে, ইনা পদ্ধতির ব্যবসা হলো শরিয়া-নিষিদ্ধ এক ধরনের লেনদেন। হানাফি মাজহাব অনুসারে ‘ইনা বলা হয় এমন লেনদেনকে, যেখানে ঋণপ্রত্যাশী ব্যক্তির নিকট বিক্রেতা বাকিতে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অধিক দামে কোনো পণ্য বিক্রি করে, অতঃপর ঋণপ্রত্যাশী ক্রেতা পণ্যটিকে বাজারে গিয়ে তার প্রকৃত মূল্যে অন্য কারও কাছে বিক্রি করে তার মূল্য গ্রহণ করে এবং নিজের প্রয়োজন মেটায়। এরপর ঋণ পরিশোধের সময় হলে বিক্রেতা থেকে বাকিতে কেনা পণ্যের মূল্য ক্রেতা পরিশোধ করে। এটাই হলো হানাফি ফুকাহায়ে কিরামের নিকট ঈনার সংজ্ঞা ও পদ্ধতি। তবে এর আরও কিছু পদ্ধতি আছে, যা বিস্তারিতভাবে ফিকহের কিতাবসমূহে লিখিত আছে। এটার বিধান নিয়েও মতভেদ আছে। ইমাম মুহা্ম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ এর নিকট এটা মাকরুহে তাহরিমি বা নাজায়িজ। আর ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ এর মতানুসারে এটা মাকরুহে তানজিহি বা অনুত্তম। ইমাম ইবনুল হুমাম রাহিমাহুল্লাহ-সহ প্রমুখ এখানে এ দুই মতের মাঝে এভাবে সমন্বয় করেছেন যে, যে পদ্ধতিতে বিক্রেতার বিক্রিত পণ্য আবার বিক্রেতার কাছেই ফিরে আসে, যেমন : বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রেতা পণ্যটি অধিক দামে কিনে আবার তৃতীয় কোনো ব্যক্তির মধ্যস্থতায় সে বিক্রেতার কাছেই পণ্যটিকে প্রকৃত মূল্যে বিক্রি করল, তাহলে এটা মাকরুহে তাহরিমি বা নাজায়িজ হবে। আর যে পদ্ধতিতে বিক্রিত পণ্য পুনরায় বিক্রেতার কাছে ফিরে আসে না, যেমন : ক্রেতা পণ্যটিকে বাজারে গিয়ে তার প্রকৃত মূল্যে অন্য কারও কাছে বিক্রি করল, তাহলে এটা মাকরুহে তানজিহি বা অনুত্তম। আল্লামা শামি রাহিমাহুল্লাহও ইমাম ইবনুল হুমাম রাহিমাহুল্লাহ এর এ সমন্বয়কে পছন্দ করেছেন। [রদ্দুল মুহতার : ৫/৩২৫-৩২৬; আল-মাবসুত, সারাখসি : ১১/২১১; আল-মুহিতুল বুরহানি : ৭/১৩৯]
    এখন আমরা উমর রাযিয়াল্লাহু আনহুর সেই ঐতিহাসিক কথাটি স্মরণ করি, যার বাস্তবতা আজ আমরা মুসলিম উম্মাহ হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছি, যার সত্যতা আজ অক্ষরে অক্ষরে প্রত্যক্ষ করছি। ইমাম হাকিম রাহিমাহুল্লাহ তারিক বিন শিহাব রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন :
    خَرَجَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِلَى الشَّامِ... فَقَالَ عُمَرُ:..إِنَّا كُنَّا أَذَلَّ قَوْمٍ فَأَعَزَّنَا اللَّهُ بِالْإِسْلَامِ فَمَهْمَا نَطْلُبُ الْعِزَّةَ بِغَيْرِ مَا أَعَزَّنَا اللَّهُ بِهِ أَذَلَّنَا اللَّهُ.
    উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু একবার সিরিয়া সফরে বের হলেন। ... অতঃপর উমর রাযিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমরা ছিলাম অসম্মানিত এক জাতি। এরপর আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে ইসলাম দ্বারা সম্মানিত করেছেন। সুতরাং যখনই আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুর মধ্যে সম্মান খুঁজব তখনই আল্লাহ আমাদেরকে অপমানিত করবেন। [মুসতাদরাকুল হাকিম : ১/১৩০, হাদিস নং ২০৭, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত]
    এখন তাহলে বলুন, গণতন্ত্র/অহিংসবাদ কোন ধরনের ইসলাম যে, এটার মধ্যে আমরা ইসলাম খুঁজব এবং এর মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করব? এটা কি ইসলাম ছেড়ে অন্য কিছুর মধ্যে সম্মান ও মুক্তি খোঁজা হচ্ছে না? আর এজন্যই তো পুরো মুসলিম উম্মাহর ওপর আজ নেমে এসেছে লাঞ্ছনা আর বঞ্চনার গ্লানি। এতকিছুর পরও আমরা ইসলামের দিকে ফিরে আসছি না, ওই দ্বীনের দিকে প্রত্যাবর্তন করতে চাচ্ছি না, যে দ্বীন আমাদের কাছে রেখে গিয়েছেন সাহাবায়ে কিরাম ও তৎপরবর্তী প্রত্যেক হকপন্থী জামাত।
    সর্বশেষ ২০১২ সালের জুন মাসে ইখওয়ান তাদের দীর্ঘ দিনের লালিত গণতান্ত্রিক আন্দোলন সাফল্যের মুখ দেখে। নির্বাচনে তারা ব্যাপক জয়লাভ করে প্রথমবারের মতো সরকার গঠন করে। ইখওয়ানের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ড. মুহাম্মাদ মুরসি রাহিমাহুল্লাহ দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ২০১৩ সালের ৩রা জুলাই আমেরিকা-ইসরাইলের যোগসাজসে ড. মুরসি রাহিমাহুল্লাহ এর বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। ইখওয়ানের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থদের হত্যা করা হয়। ড. মুরসি রাহিমাহুল্লাহ-কে গ্রেফতার করে বিচারের নামে দীর্ঘ প্রহসন করে অবশেষে তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কারাগারে নানারকম অমানুষিক জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়ে ড. মুরসি রাহিমাহুল্লাহ সর্বশেষ ২০১৮ সালে আদালত চত্বরেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন। বর্তমানে মিশরের জালিম সরকার ইখওয়ানের অন্যান্য নেতা-কর্মীদেরকেও জুডিশিয়াল কিলিংয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

    ০৪. জামায়াতে ইসলামি :
    ১৯৪১ সালে এ দলটির জন্ম। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। আজ পর্যন্ত তারা কোথাও এককভাবে বা নেতৃত্ব দিয়ে জোটবদ্ধভাবে চূড়ান্ত ক্ষমতায় যেতে পারেনি। এমনকি কোনো প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীও হতে পারেনি। তারা সর্বদা অন্যের ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর এখন দিনদিন ক্রমেই সংকীর্ণ পথ দিয়ে যাত্রা করছে, যা তাদের চরম ব্যর্থতারই পরিচয় বহন করে।
    এ দলগুলো ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে আরও গণতান্ত্রিক ইসলামি দল আছে। যদি এগুলোর তালিকা দিতে থাকি তাহলে হয়তো তালিকা শেষ করতে না করতেই খবর আসবে, এ মুহূর্তে আরেকটি ইসলামি দলের জন্ম হয়েছে। শুধু বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলোর সংখ্যাই এত বেশি যে, এদের সবার নাম-হিস্ট্রির হিসাব রাখা কঠিন। গণতান্ত্রিক পন্থায় তুরস্ক, আলজেরিয়া, তিউনিশিয়াসহ অনেক দল নির্বাচিত হলেও অনেকে ক্ষমতায় যাওয়ার পুর্বেই ছিটকে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ সাময়িক ক্ষমতায় গেলেও সামান্য সময়ের জন্যও কোথাও; এমনকি একটি গ্রামেও পরিপূর্ণ শারিয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। এ রকম কিছু উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হলো :

    ক. তুরস্ক:
    ১. আরবি ভাষায় আজান পুনরায় চালু করার জন্যে ১৯৬০ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আদনান মেন্দারেসের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। এরপর তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
    ২. ১৯৮০ সালে মধ্যমপন্থী-ইসলামপন্থী কোয়ালিশনের সরকারকে তুরস্কের সেক্যুলার সেনাবাহিনী আবার ক্ষমতাচ্যুত করে এবং ইসলামী দল নিষিদ্ধ করে।
    ৩. ১৯৯৭ সালে তুরস্কের ইসলামপন্থী প্রধানমন্ত্রী নাজিম উদ্দীন আরবাকান কট্টর ইসলামবিদ্বেষী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী সেনাবাহিনীর চাপের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
    খ. তিউনিসিয়া :
    ১৯৮৯ সালে তিউনিসিয়ার সেনাবাহিনী ও পশ্চিমা সমর্থিত শাসক যখন দেখতে পেলো, নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া সত্ত্বেও রশিদ ঘানুশির নেতৃত্বাধীন ‘আন-নাহদাহ স্বতন্ত্রভাবেই বিপুল ভোট পাচ্ছে তখন ২৫ হাজার ইসলামপন্থীকে বিশৃঙ্খলা ও রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে জেলে ঢুকিয়ে দেয় আর সেই সাথে কয়েকজন নেতাকে ফাঁসিতেও ঝুলিয়ে দেয়।
    গ. আলজেরিয়া :
    ১৯৯২ সালে আলজেরিয়াতে ‘ইসলামিক স্যালভেশন ফ্রন্ট যখন বিপুল ভোটে বিজয়ী হলো তখন সেখানে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হলো। ৩০ হাজার ইসলামপন্থীকে জেলে ঢুকানো হলো। এরপর শুরু হয় গৃহযুদ্ধ।
    ঘ. ফিলিস্তিন :
    ২০০৬ সালে ফিলিস্তিনের নির্বাচনে হামাস বিজয়ী হয়। শুরু হয়ে যায় ইজরাইল ও পশ্চিমা বিশ্বের হাউকাউ। ইসরাইল গাজা আক্রমণ করে এবং গাজাকে চতুর্দিক থেকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
    ঙ. মিশর :
    ২০১২ সালে মিশরে ড. মুরসি রাহিমাহুল্লাহ এর নেতৃত্বে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ব্রাদারহুড ক্ষমতায় আসে। তখন এটাকে গণতান্ত্রিক পন্থায় ইসলামের বড় একটি বিজয় হিসাবে দেখানো হচ্ছিল। কিন্তু এক বছরের মাথায়ই সেনা অভ্যত্থান ঘটল এবং ড. মুরসি রাহিমাহুল্লাহ-সহ হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে ঢুকানো হলো এবং অনেককে জুলুম-নির্যাতন ও স্লো পয়জনের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হলো।
    বিশেষ দ্রষ্টব্য :উপরে যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের বেশিরভাগকেই প্রকৃত অর্থে ইসলামি দল বলা যায় না, বড়জোর ইসলাম ঘেঁষা জাতীয় রাজনৈতিক দল বলা যায়। আর যাদেরকে কিছুটা বলা চলে তারাও তাদের ক্ষমতাসীন অবস্থায় দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। কারণ, ইসলামি রাষ্ট্রের মূল মানদণ্ড পূরণ করতে তারা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
    যদি আমরা গণতান্ত্রিক দলগুলোর প্রতি চোখ রাখি তাহলে দেখতে পাবো-
    * তারা বারবার আদর্শ বদলিয়েছে।
    * নিজেদের মধ্যে ভাঙ্গন তৈরি বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে।
    * নিজেদের প্রধান শত্রু বানিয়েছেন স্বদেশের ভিন্ন মতাবলম্বী জনতাকে।
    * আসন অর্জনের মধ্যে আবহাওয়ার মতো পরিবর্তন হয়েছে।
    * একই নামে একাধিক দেশে অনেক দল আছে, কিন্তু একটির সাথে আরেকটির কোনো সম্পর্ক নেই।
    * উম্মাহর দুর্দিনে তাদের অবস্থান হচ্ছে, প্রথমে সভা-সেমিনার, এরপর প্রতিবাদ-সমাবেশ, সর্বশেষ নীরব দর্শক।

    শারিয়াহ প্রতিষ্ঠার উপায় :
    এবার ভেবে দেখুন, বর্তমানে বিশ্বে কোন পদ্ধতিতে শারিয়াহ প্রতিষ্ঠিত আছে? খিলাফাহর পতন পরবর্তী কারা আবারও সক্ষম হয়েছে মুসলিম ভূখণ্ডে ইসলাম ও তাওহিদের পতাকা উড্ডয়ন করতে? এবার আসুন তাদের আদর্শ একটু পর্যালোচনা করি।
    তাঁরা প্রকৃতার্থেই চিনতে পেরেছেন যে, মুসলিমদের আসল শত্রু স্বদেশী জনতা নয়; বরং বিদেশি ক্রুসেডার ও স্বদেশী দালাল। তারা শরীরের ঘাম ঝরিয়েছেন, নিজেদের রক্ত দিয়েছেন, ভুখা-অভুক্ত থেকেছেন, তবুও হিকমতের নামে মালহামার নবির (অর্থাৎ যুদ্ধের নবির) আদর্শ বদলাননি। তাঁরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন নামে অবস্থান করলেও সবগুলো প্রায় একইসূত্রে গাঁথা। খারিজি চিন্তাধারার অধিকারী বিচ্ছিন্ন দুয়েকটি দল বাদে অধিকাংশই সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় এক ছায়াতলে ঐকবদ্ধ ও বাইআতবদ্ধ। অলরেডি তাঁরা বিশ্বের পরাশক্তিকে পরাজিত করে বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে নববি পন্থার কার্যকারিতা। পুনর্দখল করে নিয়েছে তাঁরা তাঁদের হারানো ভূমি এবং প্রতিষ্ঠা করেছে সেথায় আল্লাহর দ্বীন। দিন যত যাচ্ছে, আল্লাহর প্রশস্ত জমিনে তাঁদের ও তাঁদের অনুসারীদের দখলকৃত ভূখণ্ডের পরিধি ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সত্বরই হয়তো পুরো বিশ্ব আবারও কালেমাখচিত পতাকাবাহীদের দখলে আসছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
    গণতান্ত্রিক পন্থায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকারীদের বয়স প্রায় শত বছর হতে চলল। আর নববি পন্থায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকারীদের সূচনা এই তো সেদিনের কথা। নব্বইয়ের দশকে। আজ প্রায় শতাব্দীকাল হয়ে গেলেও গণতান্ত্রিক পন্থায় বিশ্বের কোথাও এক সেকেন্ডের জন্যও পরিপূর্ণভাবে শারিয়াহ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু নববি পন্থায় আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকারীরা যেখানে শারিয়াহ প্রতিষ্ঠা করেন তা সবসময় ‘খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নাবুওয়্যাহ এর আদলেই করে থাকেন।
    অনেকে হয়তো বলতে পারেন, কিছু দেশ যেমন, লিবিয়া সরকার তো সংসদে শারিয়াহ আইন পাশ করেছে; অথচ এটা তো গণতান্ত্রিক পন্থা। আমরা বলব, দেখুন, লিবীয় প্রধানমন্ত্রী আলি জাইদান কিছুদিন আগেই আমেরিকা-বৃটেনের কাছে সামরিক সহায়তা চেয়েছেন। বুঝতেই পারছেন, তারা অন্যের কৃপায় ক্ষমতায় আছে, নিজেদের সক্ষমতায় নয়। তাই তাদের এটা পূর্ণাঙ্গ শারিয়াহ নয়। এখানে কেবল ততটুকুই কার্যকর, যতটুকু আমেরিকা অনুমতি দেয়। তাই এটা কখনো নবিজির আনীত সেই শারিয়াহ হতে পারে না, যার বিরুদ্ধে ইহুদি-খ্রিষ্টানসহ পুরো কুফফারবিশ্ব একমত। তাছাড়াও আমরা ইতোপূর্বে প্রমাণ করে দেখিয়েছি যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটে সকল আইনকেও যদি ইসলামের অনুকূলে নিয়ে আসা হয়, তবুও তা ইসলামি আইন হবে না। কেননা, এটা অধিকাংশ সাংসদের চাওয়ার ভিত্তিতে আইন হয়েছে, আল্লাহ হুকুম দিয়েছেন সে ভিত্তিতে নয়। তাই এটাকে কখনো শারিয়াহ প্রতিষ্ঠা বলা যায় না।
    গাদ্দাফির পতন কি গণতান্ত্রিক পন্থায় হয়েছিল? বা বর্তমানে কোনো শাসক কি এমন রয়েছে, যাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেই হাদিসের ওপর আমল না করে উৎখাত করা সম্ভব? সহিহ মুসলিমে জুনাদা বিন আবু উমাইয়া রাহিমাহুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন :

    دَخَلْنَا عَلَى عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ، وَهُوَ مَرِيضٌ، قُلْنَا: أَصْلَحَكَ اللَّهُ، حَدِّثْ بِحَدِيثٍ يَنْفَعُكَ اللَّهُ بِهِ، سَمِعْتَهُ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: دَعَانَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَايَعْنَاهُ، فَقَالَ فِيمَا أَخَذَ عَلَيْنَا: أَنْ بَايَعَنَا عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ، فِي مَنْشَطِنَا وَمَكْرَهِنَا، وَعُسْرِنَا وَيُسْرِنَا وَأَثَرَةً عَلَيْنَا، وَأَنْ لاَ نُنَازِعَ الأَمْرَ أَهْلَهُ، إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا، عِنْدَكُمْ مِنَ اللَّهِ فِيهِ بُرْهَانٌ.
    আমরা উবাদা বিন সামিত রাযিয়াল্লাহু আনহুর নিকট ছিলাম। তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন। আমরা বললাম, আল্লাহ আপনাকে সুস্থ করুন। আপনি আমাদের এমন একটি হাদিস বর্ণনা করুন, যা আপনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শুনেছেন, যদ্বারা আল্লাহ আপনাকে (সওয়াব ও বিনিময় দান করে) উপকৃত করবেন। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (একবার) আমাদেরকে ডাকলেন। অতঃপর আমরা তার হাতে বাইআত হলাম। তিনি আমাদের থেকে যে সকল বিষয়ে প্রতিশ্রুতি নিলেন তা হলো, আমাদের পছন্দে ও অপছন্দে, আমাদের সংকটে ও স্বাচ্ছন্দ্যে এবং আমাদের ওপর কাউকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও আমরা (শাসকের কথা) শুনব ও মানব। আর আমরা শাসকের সাথে কর্তৃত্ব নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হবো না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তবে হ্যাঁ, যদি তোমরা কুফরে বাওয়াহ বা সুস্পষ্ট কুফর দেখো, যে ব্যাপারে তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রমাণ রয়েছে তাহলে ভিন্ন কথা। [সহিহু মুসলিম : ৩/১৪৭০, হাদিস নং ১৭০৯, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত]
    সালাফে সালিহিন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন ও পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কিরামের মধ্যে এ ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে যে, কোনো মুসলিম এলাকার শাসকের মধ্যে এ রকম সুস্পষ্ট কুফরি দেখা গেলে তাকে হটিয়ে একজন ন্যায়পরায়ণ শাসক (যিনি এসব কুফরি করবেন না; বরং ইসলামি শরিয়ত অনুযায়ী শাসন করবেন) নিয়োগ দেওয়া ওই এলাকার সামর্থ্যবানদের ওপর ফরজে আইন। আর সেই শাসকের সমর্থনে যদি কোনো বাহিনী থাকে তাহলে ওই বাহিনীসহই ওই শাসককে হটানো ফরজে আইন বা সবার ওপর আবশ্যক।
    আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি রাহিমাহুল্লাহ বলেন :
    وَقَالَ الدَّاودِيّ: الَّذِي عَلَيْهِ الْعلمَاء فِي أُمَرَاء الْجور أَنه إِن قدر على خلعه بِغَيْر فتْنَة وَلَا ظلم وَجب، وإلاَّ فَالْوَاجِب الصَّبْر، وَعَن بَعضهم: لَا يجوز عقد الْولَايَة لفَاسِق ابْتِدَاء، فَإِن أحدث جوراً بعد أَن كَانَ عدلا اخْتلفُوا فِي جَوَاز الْخُرُوج عَلَيْهِ، وَالصَّحِيح الْمَنْع إلاَّ أَن يكفر فَيجب الْخُرُوج عَلَيْهِ.
    ইমাম দাউদি রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আলিমরা এ ব্যাপারে একমত যে, শাসক জালিম হলে যদি ফিতনা ও জুলমের আশঙ্কা ছাড়া তাকে অপসারণ করার সামর্থ্য থাকে তাহলে তা আবশ্যক। আর তা না হলে ধৈর্য ধারণ করা আবশ্যক। কতিপয় উলামায়ে কিরামের মতে, ফাসিকের নেতৃত্ব শুরু সময় থেকে প্রতিষ্ঠিতই হয় না (বিধায় তাকে যে কোনো মূল্যে অপসারণ করতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই) আর যদি সে প্রথমে ন্যায়পরায়ণ থাকে, পরবর্তীতে সে জুলুম করে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ব্যাপারে মতভেদ আছে। সঠিক মত হচ্ছে, এটা নিষিদ্ধ। তবে যদি সে কুফরি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা অপরিহার্য হয়ে যায়। [উমদাতুল কারি : ২৪/১৭৯, হাদিস নং ৭০৫৬ সংশ্লিষ্ট আলোচনা, প্রকাশনী : দারু ইহইয়াইত তুরাসিল আরাবিয়্যি, বৈরুত]
    সার্বিক দিক বিবেচনা করলে আমাদের এ ভূখণ্ডে ইসলামি শারিয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য দাওয়াত, তারবিয়াত ও ইদাদএই তিনটি কাজের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এ তিনটি জিনিসের প্রথমটির দায়িত্বই এখনও পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে আদায় করা হয়নি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কাজের দায়িত্ব পালন তো পড়েই আছে। দাওয়াতের মধ্যে প্রাধান্য পাবে, কুফর-শিরকের পরিচয়, যুগের লাত-উজ্জা ও হুবালদের পরিচিতি, বিভিন্ন কুফরি-শিরকি মতবাদের মুখোশ উন্মোচন, তাওহিদ ও ইমানের পরিচয়, ইমান ভঙ্গের কারণসমূহের বিবরণ, আল-ওয়ালা ওয়াল-বারার পরিচয় ও আধুনিক সভ্যতায় তার রূপরেখা, দ্বীনের মৌলিক বিধিবিধান, ইসলাম ও কুফরের সংঘাত ও এসংক্রান্ত সকল আহকাম, নবিজির সিরাত পাঠ ও তা থেকে শিক্ষা, সাহাবিদের জীবনী পাঠ ও তাঁদের কর্মপন্থা জানা। এসব বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষদের মাঝে ব্যাপক দাওয়াতি কাজ করা দরকার।
    এগুলো ওয়াজ-মাহফিলে বলা জরুরি নয়; বরং প্রত্যেকের সামর্থ্য অনুসারে ব্যক্তি পরিসরে, বন্ধুমহলে, পরিবার ও আত্মীয়দের মাঝে, অফলাইনে বা অনলাইনে প্রতিটি ক্ষেত্রেই এসংক্রান্ত ইসলামের সঠিক ও অবিকৃত দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এসব কাজ বাদ দিয়ে প্রথমেই যদি কেউ ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া জিহাদের কথা বলে এবং এটা নিয়ে ব্যাপক ফ্যান্টাসিতে ভোগে তাহলে দ্রুতই সে দ্বীনের সঠিক ট্র্যাক থেকে ছিটকে পড়তে পারে। তাই যাদের উপরিউক্ত বিষয়গুলো জানা আছে, তাদের উচিত হবে দাওয়াতি ময়দানে মেহনত বাড়ানো, আর যাদের উপরিউক্ত বিষয়গুলো এখনও অজানা, তাদের অন্য সব চিন্তা-ভাবনা বাদ দিয়ে আগে এসব বিষয়ে বেসিক নলেজ অর্জন করা আবশ্যক। বিষয়টি একটু তিক্ত লাগলেও এটাই বাস্তবতা। অতএব, সকল অলসতা কাটিয়ে আজ থেকে নিজে শিখতে শুরু করি এবং অন্যদের দাওয়াহ দিতে থাকি। কে কী করছে, কে কী বলছে, তা দেখার দরকার নেই। নিজের আকিদা-মানহাজ ঠিকভাবে বুঝাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। নিষ্ঠার সাথে এভাবে দাওয়াতি মেহনত চালালে এ ভূখণ্ড ইসলাম প্রতিষ্ঠার উর্বর ক্ষেত্র হতে বেশি সময় লাগবে না ইনশাআল্লাহ।


    চলবে ইনশাআল্লাহ...


    ✍️
    Collected‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬

    অসমাপ্ত
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

  • #2
    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (ভূমিকা পর্ব)
    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%8D%E0%A6%AC

    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (প্রথম পর্ব)
    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%8D%E0%A6%AC

    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (দ্বিতীয় পর্ব)
    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%8D%E0%A6%AC

    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (তৃতীয় পর্ব)

    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%8D%E0%A6%AC

    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (চতুর্থ পর্ব)

    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...A7%8D%E0%A6%AC

    গণতন্ত্র ও নির্বাচন : কিছু নিবেদন (পঞ্চম পর্ব)

    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      barakallahu fii ilmi

      Comment


      • #4
        শারিয়াহ আর গণতন্ত্র সম্পূর্ণ আলাদা দুটি বিষয়।

        ইসলামে গণতন্ত্রের কোনো স্থান নেই, বিষয়টি পরিষ্কার করতে এই প্রকাশনাগুলো খুবই ফলদায়ক। আলহামদু লিল্লাহ।



        দুনিয়া অর্জন নয়, দুনিয়া বিমুখতাতেই রয়েছে দেহ ও মনের প্রশান্তি। - [উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)]

        Comment


        • #5
          গণতন্ত্র হচ্ছে দাজ্জালের ফেতনার তুনীরের তীরসমুহের সবচেয়ে মারাত্মক তীর।

          Comment


          • #6
            جزاک اللہ محترم بھای۔
            بارک اللہ فی علمی

            Comment


            • #7
              মু​​​হতারাম ভাই !সিরিজ টা শেষ হলে পিডিএফ বা ডক্স ফাইল করে দেওয়ার অনুরোধ রইলো

              Comment


              • #8
                সকল কমেন্টকারী ভাইদের আন্তরিক শুকরিয়া জ্ঞাপন করছি।
                জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
                ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                Comment


                • #9
                  আল্লাহ আমাদের সবাইকে গণতন্ত্রের ধোঁকা বুঝার তাওফিক দান করুন,,,,,,,
                  Last edited by Munshi Abdur Rahman; 10-02-2022, 10:12 AM.

                  Comment


                  • #10
                    ভাইজান! আপনার পরবর্তী পোষ্টের অপেক্ষায়...
                    সব পর্ব শেষ হলে পিডিএফ ও ওয়ার্ড ফাইল করে এখানে লিংক দেয়ার বিশেষ অনুরোধ করছি।
                    আল্লাহ তা'য়ালা প্রতিটা ভাইকে দ্বীনের জন্য কবুল করেনিন,আমিন ইয়া রব্বাল আলামিন।

                    Comment


                    • #11
                      Originally posted by জুবায়ের313 View Post
                      আল্লাহ আমাদের সবাইকে গণতন্ত্রের ধোঁকা বুঝার তাওফিক দান করুন,,,,,,,
                      আমীন। ছুম্মা আমীন
                      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                      Comment


                      • #12
                        Originally posted by Rumman Al Hind View Post
                        ভাইজান! আপনার পরবর্তী পোষ্টের অপেক্ষায়...
                        সব পর্ব শেষ হলে পিডিএফ ও ওয়ার্ড ফাইল করে এখানে লিংক দেয়ার বিশেষ অনুরোধ করছি।
                        আল্লাহ তা'য়ালা প্রতিটা ভাইকে দ্বীনের জন্য কবুল করেনিন,আমিন ইয়া রব্বাল আলামিন।
                        প্রিয় ভাইয়েরা, ১ থেকে ৬নং পর্বগুলো থেকে উপকৃত হতে পারি। পরবর্তী পর্বগুলো সংগ্রহ করতে পারিনি ভাই...
                        জাযাকাল্লাহু খাইরান
                        ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                        Comment


                        • #13
                          ইতিহাসের একটা ভয়ঙ্কর শিক্ষা হল, বেশিরভাগ মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না।

                          Comment


                          • #14
                            আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করে অকল্যাণকে কল্যাণ দ্বারা বদল করে দিন, আমীন

                            Comment

                            Working...
                            X