আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ৮
==================================================
===============================
দাওয়াতের তরিকার মধ্যে বাড়াবাড়ি কেন সৃষ্টি হয়?
দ্বিতীয় কারণ: বুঝ কম থাকা
দাওয়াতের উসলুবে গুলু আসার দ্বিতীয় কারণ হলো, বুঝ কম থাকা। আল্লাহ তাআলার শরয়ী ও তাকবীনী উসুল সম্পর্কে যার ধারণা আছে সে জানে যে, জিহাদের ময়দানে কামিয়াবির জন্য আল্লাহর পরে নিজেকে মুসলমান জনসাধারণের সাহায্য-সমর্থনের মুখাপেক্ষী মনে করতে হবে। সে জানে, মুমিনের সমর্থন আল্লাহর নুসরতের একটি সুরত।
هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ
“তিনিই আপনাকে তার সাহায্য ও মুমিনদের একতা দ্বারা শক্তিশালী করেছেন। [সুরা আনফাল ৮:৬২]
এ কারণেই দাওয়াতের শুরুতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেলার মধ্যে আরব গোত্রগুলোকে দাওয়াত পেশ করতেন। তখন একথাও বলতেন, ‘আমাকে কে আশ্রয় দেবে? আমাকে কে সাহায্য করবে?’
এতএব মুসলমান জনসাধারণকে নিজেদের সমর্থনকারী, সাহায্যকারী বানানো শরিয়ত ও বিবেকের দাবি। শরয়ী সীমারেখার মধ্যে থেকে মুসলমান জনসাধারণকে নিজেদের জিহাদের অংশ বানানোর চেষ্টা করা ওয়াজিব। কিন্তু জিহাদের প্রতি দাওয়াত প্রদানকারীদের কম বুঝের অবস্থাটা দেখুন-
তারা কয়েক ডজন বা কয়েকশ মানুষ নিজেরাই দুনিয়ার সব মুসলমানকে নিজেদের বিরোধী বানিয়ে নেয়। তারপর আবার পুরো দুনিয়ায় বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তারা কুফুরি নেজাম বিলুপ্তি ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার মতো বড় দাবি করে, কিন্তু জনসাধারণ ও দ্বীনদার লোকদেরকে নিজেদের সাথে শরিক করার কোন চেষ্টাই তাদের মাঝে নেই। মুসলমান জনসাধারণকে নিজেদের সমর্থনকারী, সাহায্যকারী বানানো ছাড়া কুফুরি শাসনব্যবস্থাকে বিলুপ্ত করে ইসলামি শরিয়ত প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা, নিজেদের আন্দোলনকেই বেশিদিন চালু রাখা সম্ভব নয়, এ বুঝটা তাদের মাঝে আসে না।
শায়খ আবু মুসআব যারকাবী রহিমাহুল্লাহ আমেরিকাকে ইরাকে থাকা প্রায় অসম্ভব বানিয়ে দিয়েছিলেন। শেষ মেশ আমেরিকা ইরাক থেকে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। সেসময় শায়খ আইমান যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ, আবু মুসআব যারকাবী রহিমাহুল্লাহকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। সেই চিঠিতে শায়খ আইমান হাফিজাহুল্লাহ বলেন:
“যখন আমরা দুই টার্গেটের দিকে তাকাবো, অর্থাৎ আমেরিকাকে ইরাক থেকে বের করা ও এখানে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করা, তখন আমরা দেখতে পাব, আল্লাহর সাহায্য ও তাওফিকের পরে মুজাহিদদের জন্য সব থেকে প্রভাব বিস্তারকারী ও শক্তিশালী অস্ত্র হলো ইরাক এবং তার আশেপাশের মুসলমান জনসাধারণের সমর্থন। আমাদের জন্য জরুরি হলো, এই জনসমর্থন রক্ষা করা এবং শরয়ী সীমারেখার মধ্যে থেকে এই সমর্থনকে বাড়ানো।
এ প্রেক্ষিতে আমি আপনাকে কয়েকটি কথা আরজ করছি -
প্রথমত, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এখানে (ইরাকে) ইসলামের বিজয় এবং খিলাফত আলা মিনহাজিন নবুওয়ত প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুরতাদ শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ছাড়া তাদেরকে হটানো সম্ভব নয়। এটাও বাস্তবতা যে, জনসাধারণের সাহায্য ও সমর্থন ছাড়া এই মহান লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। যদি কোথাও জনসাধারণের সাহায্য ও সমর্থন ছাড়া বিজয় হয়েও যায়, তবুও যেকোন সময় এই বিজয় পরাজয়ে পরিণত হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, যদি জিহাদি আন্দোলনের সাথে জনগণের সমর্থন না থাকে তাহলে এই আন্দোলন মানুষের দৃষ্টি থেকে দূরে সরে একসময় হারিয়ে যায়। এই অবস্থায় জিহাদি কাফেলা ও রাষ্ট্রের ওপর চেপে বসা জালিম সম্প্রদায়ের মধ্যকার এই যুদ্ধ নিঃশেষ হয়ে যায়।
একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, ক্ষমতাশীলরা সবসময় জনগণকে জিহাদি দল ও জিহাদি আন্দোলনের ব্যাপারে একদম অন্ধকারে রাখতে চায়। আমাদের ওপর চেপে বসা সেকুলাররা এটাই চায়। তারা জানে জিহাদি আন্দোলনকে দমন করা সম্ভব নয়। কিন্তু এ আন্দোলনকে ধোঁকা ও শক্তির মাধ্যমে জনসমর্থন থেকে দূরে রাখা সম্ভব। এজন্য এই যুদ্ধে আমাদের জন্য জরুরি হলো, আমরা জনগণকে আমাদের সাথে রাখব। জিহাদি আন্দোলনের নেতৃত্বেও তাদেরকে অংশীদার বানাব। আমাদের এমন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে যা আমাদেরকে জনসাধারণ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।”
শায়খ যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ অন্য এক জায়গায় বলেন: “গেরিলা হামলাকারী মুজাহিদদের যদি পিছিয়ে আসতে হয় তাহলে তার কারণে পেরেশান হওয়া উচিৎ নয়। কারণ তাদের যুদ্ধ জনগণকে নিজেদের সাথে সম্পৃক্ত করার যুদ্ধ, জমিন দখলের যুদ্ধ নয়।”
আরও পড়ুন
Comment