আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১০
==================================================
===============================
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১০
==================================================
===============================
জিহাদি আন্দোলনের রাস্তায় আসল বাধা
আমরা এটা মানছি যে, দ্বীনদার নেতাদের এক শ্রেণি খুব দুনিয়াদার। এটাও মানছি যে, সমষ্টিগতভাবে এই দ্বীনী রাজনৈতিক দলগুলোর কাজ সঠিক নয়। তাদেরই কারণে কুফুরি শাসনব্যবস্থা শক্তি পাচ্ছে। তাগুতি শাসনব্যবস্থা তাদেরকে ইসলামের বিপক্ষে ব্যবহার করছে। এবিষয়ে সবাই একমত। রোগ নির্ণয়ে মতবিরোধ নেই, প্রশ্ন হলো চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে।
যদি আপনি এই সেক্যুলার, দ্বীনের দুশমন শ্রেণি, জালিম রাষ্ট্রের অস্ত্রধারী রক্ষীবাহিনীকে ছেড়ে, এই দ্বীনদারদের হিসাবনিকাশ শুরু করেন, তাদের বিরুদ্ধে কুফুরির ফতোয়া খুঁজতে থাকেন, তাহলে এটা চিকিৎসা নয়, বরং রোগবৃদ্ধি। এই শ্রেণি বর্তমান সময়ে জিহাদি আন্দোলনের পথে আসল বাধা নয়। এরা নিঃশেষ হয়ে গেলেও আপনার কাজ শেষ হবে না।
এখানে আসল বাধা হলো, ওই সকল ধর্মহীন নেতারা যারা অস্ত্র, জুলুম ও নিজেদের ভাড়া করা খুনিদের মাধ্যমে জীবনের সর্বক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করছে। এরাই বন্দুক উঁচিয়ে সাধারণ মানুষকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। কুফর নেফাকের চিহ্নধারী শাসকশ্রেণি, টাকা পয়সার গোলাম জেনারেলরা এবং মুসলমানদের হত্যাকারী এই ভাড়াটে খুনিরা এমন এক ক্ষত, যাদের অস্তিত্বের কারণেই সমস্ত ফাসাদের মূল -এই কুফুরি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত আছে। এরাই ওই ধোঁকাবাজ শ্রেণি যারা এসমস্ত দ্বীনদারদেরকে আমাদের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছে। এই দ্বীনের শত্রুরা চায় আমরা দ্বীনদার শ্রেণির সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকি, তাতে তারা বেঁচে যায়। এরপর তারা দ্বীনদারদের মাঝে অনৈক্য দেখিয়ে দ্বীনকেই দোষারোপ করে। তারা প্রোপাগান্ডা ছড়ায়, ধর্মই যত সমস্যার মূল, এজন্যই দ্বীনদাররা ঝগড়ায় লিপ্ত। অর্থাৎ এক তীরে দুই শিকার হয়ে যায়।
এমন অবস্থা হলে তো আমাদের দাওয়াত বদ-দ্বীন নয়, দ্বীনদারদের হাতেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। আমরা যতই এই দ্বীনদারদের বিরুদ্ধে ফতোয়া লিখবো, তাদের বিরুদ্ধে ঝগড়ার ময়দান গরম করবো, ততই আমাদের দাওয়াত অস্পষ্ট হতে থাকবে এবং আমরা লক্ষ্য থেকে দূরে সরতে থাকবো। এরপর আমাদের আন্দোলন খুব দ্রুত একাকীত্বের শিকার হয়ে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
তাই আমরা এসব দ্বীনদারদের সাথে ফতোয়ার ভাষায় কথা বলব না, দাওয়াতের ভাষায় কথা বলবো। হুমকি-ধমকি, অপদস্থকরণ, গালি-গালাজ নয়, বরং দলিল-প্রমাণ, দরদ-ব্যথার সাথে দাওয়াত দেয়া শিখে নিব। আর এর শরয়ী আহকামও জেনে নেয়া জরুরি, যাতে নিজেদের থেকে ইতেদাল না ছুটে না যায়।
আইএস থেকেও নিকৃষ্ট চিন্তা
দ্বীনী রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গ দ্বীনদার। তাদের সাথে কয়েক বিষয়ে আমাদের ঐক্য রয়েছে। আর কয়েক বিষয়ে মতবিরোধ আছে। তাদের মধ্যে ভালোও, আছে খারাপও আছে। সেক্যুলার দলগুলোর তুলনায় তারা আমাদের মিত্র। প্রতিপক্ষ নয়। ধর্মহীনদের তুলনায় তাদের ও আমাদের অনেক বিষয়ে মিল আছে। আর দাঈর তো চাহিদাই থাকে মিল থাকা বিষয়কে তালাশ করা। তারপর সামনে অগ্রসর হয়ে বাতিল বিষয়কে বাতিল প্রমাণ করা। তারপর যোগ্যতা ও আখলাকের বিচারেও এই দ্বীনদাররা সবাই এক কাতারে নয়।
আমি আবারও বলছি, প্রচলিত শাসনব্যবস্থার কথা হচ্ছে না। এটা তো কুফুরি। এই ব্যবস্থায় শরয়ী তাবিলের ভিত্তিতে ইসলামের নামে যারা এতে অংশগ্রহণ করে তাদের কথা বলছি। এরা কি কাফের? নাউজুবিল্লাহ! কখনও নয়। তাদের শরয়ী হুকুম ওলামায়ে জিহাদ বর্ণনা করেছেন। এই দ্বীনদার শ্রেণিকে কাফের বলা, সাধারণ মানুষকে ভোটের কারণে কাফের বলা অথবা হিলা-বাহানার দ্বারা মুসলমানের জান-মালকে জায়েয বানানো বড় ধরনের বাড়াবাড়ি। আর এটা ওই তাকফিরি চিন্তা, যা আলজেরিয়া থেকে শাম, ইরাক পর্যন্ত জিহাদি দাওয়াতকে ধ্বংস করেছে। এই চিন্তার অধিকারী ব্যক্তিদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও ছিল, যারা মুখে সাধারণ মুসলমানদেরকে বা অন্যান্য দ্বীনদারকে কাফের বলত না। তাদের কাছে যদি জানতে চাওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মুসলমানদেরকে মুসলমানই বলত। কিন্তু তাদের কাজ ছিলো পুরোপুরি এই দাবির বিপরীত।
তারা এমন দলান্ধ ছিলো, তাদের দলের বাইরের সাধারণ মুসলমান তো পরের কথা দ্বীনদার, মুজাহিদদের সাথে পর্যন্ত কাফের বা কমপক্ষে বিদ্রোহী মানুষের মতো আচরণ করত। তাদের জীবন, সম্পদ, সম্মানকে খুব হালকা করে দেখত। নিজেদের বানানো তাবীল দ্বারা তাদের জান মাল নিজেদের জন্য বৈধ করে নিত। কেন? কারণ কী ছিল?
কারণ শুধুমাত্র নিজের দলে না থাকা। অমুক লোক মুসলমান, দ্বীনদার, মুজাহিদও। শরিয়ত তার জান মাল ইজ্জতকে সংরক্ষিত বলে। কিন্তু এই লোকেরা শুধুমাত্র এই কারণে তাকে সহ্য করে না যে, সে তাদের দলে নেই কেন? কেন সে আমার দলকে শক্তিশালী করে না?
এই চিন্তার অধিকারী ব্যক্তিরা সর্বদাই দাওয়াত ও জিহাদের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ আছে যারা নিজেদেরকে আইএস বলে না, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সাথে মিশে থাকে। শুধুমাত্র মিশে থাকার দ্বারা কি হয়?
এই চিন্তা চেতনা ‘আহলুস সুন্নাহ’র নয়। এই চেতনাই জিহাদের অনেক বদনাম করেছে। বাস্তবতা হলো আইএস হওয়া কোন বিশেষ দলের সদস্য হওয়ার সাথে সম্পৃক্ত নয়। এটা চিন্তা-চেতনা, আমল, আখলাক, কীর্তির নাম। যদি কোন ব্যক্তি দলগতভাবে আইএস নাও হয়, কিন্তু তার চিন্তা চেতনায় গুলু থাকে, আহলুস সুন্নাহ ও বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ জিহাদি আলেমদের থেকে তার মানহাজ ভিন্ন হয়, নফসের পূজা, দলান্ধতা এবং নফসের অনুসরণে লিপ্ত হয় এবং হিলা বাহানায় মুসলমানের জান-মাল বৈধ করে নেয়, তাহলে সে যতই আই-এসের বিরোধিতা করুক না কেন, সে প্রথম স্তরের আইএস। বরং বাস্তবতা হলো এসমস্ত লোক জিহাদি আন্দোলনের জন্য আইএস থেকেও ভয়ঙ্কর।
কারণ আইএসের বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে গেছে। এখন আইএস শব্দটি ফাসাদকারী অর্থে ব্যবহার করা হয়। আর তারা এখন নিঃশেষের পথে। অথচ এই লোক নিজেকে আইএসের বিরোধী বলেও কথা ও কাজ দ্বারা দাওয়াত ও জিহাদের ক্ষতি করছে। সুতরাং আইএস যেভাবে জিহাদের ক্ষতি করেছে, তেমনি গুলুর শিকার চিন্তা-চেতনাও জিহাদের দুশমনদের কম খেদমত করেনি।
সুতরাং জিহাদি আন্দোলনকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করার জন্য গুলুর শিকার এই চিন্তা-চেতনা, আখলাক ও মানহাজকে জানতে হবে। এটি একটি অকল্যাণ, আর কল্যাণের ওপর আমল করার জন্য অকল্যাণের জ্ঞান থাকা ওয়াজিব। সুতরাং এই মানহাজকে চেনা, তার থেকে দূরে থাকা, মুসলিম যুবকদের এর থেকে দূরে রাখা জিহাদের দাঈ ও মুজাহিদদের জন্য ফরয হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর কোন বিষয়ে আমল করার জন্য সে বিষয়ে ইলম অর্জন করা ওয়াজিব, নতুবা আল্লাহ না করুন আমাদের মধ্য থেকে কেউ ওই দলে চলে যেতে পারে; যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
هَلْ نُنَبِّئُكُم بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا ﴿١٠٣﴾ الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا
অর্থ: . . . বলে দেন আমি কি তোমাদেরকে বলে দেব কারা আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত? যাদের দুনিয়ার জীবনের সব পরিশ্রম নষ্ট হয়ে গেছে আর তারা ধারণা করছে যে, তারা ভালো কাজ করছে। [সূরা কাহাফ ৯:১০৩-১০৪]
Comment