আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ১৯
==================================================
===============================
ইন্টারনেটের ষড়যন্ত্র এবং জিহাদ ও মুজাহিদীনের
হেফাযতের গুরুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক
হেফাযতের গুরুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক
জিহাদের দাঈদের খেদমতে কিছু কথা
আমরা আবার দাওয়াত বিষয়ে ফিরে আসি। জিহাদের দাওয়াত ও মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ভাইদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলবো ইনশা আল্লাহ। আশা করি এই কথাগুলো জিহাদি মানহাজের উন্নতি ও হেফাযতের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হবে।
১. দাওয়াতের ময়দানে জিহাদি আন্দোলন যেন কখনও রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত না হয়। লক্ষ্য যেন এমন না হয় যে, এক শ্রেণির শাসকদেরকে ক্ষমতা থেকে অপসারণ করে আরেক শ্রেণির শাসকদেরকে ক্ষমতায় বসানো। আর এমনটা হলে সেটা আর জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ থাকবে না।
আমাদের মনে রাখতে হবে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ আল্লাহর সবচাইতে পছন্দের ইবাদত। আর এটি তখনই জিহাদ ও ইবাদত থাকে যখন তার সর্বদিকেই আল্লাহর সাথে এক গভীর সম্পর্ক তৈরি করা হয় এবং সুন্নতের অনুসরণ করা হয়। আল্লাহর সাথে এই সম্পর্ক ও সুন্নতের পাবন্দি আমাদের দাওয়াত, মিডিয়া এবং জিহাদের অন্যান্য আমলে স্পষ্ট থাকা উচিৎ।
২. জিহাদের দাঈ শুধু ফিকরী আলোচনা করবে না। অন্তর ও আত্মাকে পবিত্র রাখা, আখলাক চরিত্র সমুন্নত হওয়ার আলোচনাও খুব জরুরি। এটাও দাওয়াতের মৌলিক টার্গেট।
সুতরাং জিহাদের দাঈর জন্য তাযকিয়া, ইহসান, সীরাত ও আখলাক সুন্দর করার বিষয়বস্তুকেও দাওয়াতের স্বতন্ত্র অংশ বানানো উচিৎ। যার দ্বারা দাঈরও উপকার হবে, শ্রোতারও উপকার হবে। যদি এ বিষয়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা না হয় তাহলে অন্তর শক্ত হয়ে যায় আর এর দ্বারা আচরণ-উচ্চারণ এমন শক্ত হয়ে যায় যে, এর দ্বারা দাঈ নিজেও ধ্বংস হয়ে যায় এবং দাওয়াতেরও ক্ষতি করে।
৩. যেহেতু কথা ও কাজ উভয়টি সঠিক হওয়ার জন্য শরীয়তের ইলম জরুরি। কিন্তু দাওয়াতের বিষয়টি আরো একটু সংবেদনশীল। কারণ এর দ্বারা অন্যদেরকেও একটি বিশেষ ফিকির ও চেষ্টার দিকে আহবান করা হয়। একারণে দাওয়াতের জন্য ইলমকে সহীহ করা বেশি জরুরি। এ উদ্দেশ্যে ইন্টারনেটে জিহাদের দাওয়াতের দায়িত্বে নিয়োজিত ভাইদের জন্য জরুরি হলো, ইলমে দ্বীন ও ফাহমে জিহাদ বাড়ানো এবং দাওয়াতের পদ্ধতি সুন্দর করার জন্য বিশেষ দৃষ্টিপাত করা উচিৎ। তার জন্য অন্যান্য ওলামায়ে কেরামের সাথে জিহাদি আন্দোলনের ওলামায়ে কেরাম ও তাদের কিতাবসমুহের দিকে দৃষ্টিপাত জরুরি। সবচেয়ে উত্তম হলো দাওয়াত ও মিডিয়ার কাজ পুরোপুরি ওলামায়ে কেরামের নেগরানীতে করা। এর কারণ হলো ভাসাভাসা ইলমের কারণে অযথা তর্ক বিতর্ক, বেহুদা বাকবিতণ্ডা হতে পারে। কিন্তু দাওয়াত হতে পারে না। জিহাদের দাঈর জন্য জরুরি হলো, যে বিষয়ের দাওয়াত দেবে তার ফরজ ওয়াজিব মুস্তাহাব আদাবের বিষয়গুলো জানবে।
৪. দাওয়াতের মধ্যে শক্ত ব্যবহার, গালমন্দ, ভুল উপাধি এবং সব ধরণের খারাপ কথা বলা থেকে বিরত থাকবে। জরুরি হলো দাঈর কথা কোমল, মন-মস্তিষ্ক আকর্ষণকারী দলিল ও পদ্ধতিতে হবে। এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, যার সাথে আলোচনা পর্যালোচনা চলছে সেখানে শুধু সেই সম্বোধিত ব্যক্তিই থাকে না। বরং অন্যান্য শ্রোতা-পাঠকও থাকে। তারা যদিও সমর্থক না হয় কিন্তু উভয় পক্ষের দলিল ও দাওয়াতের পদ্ধতি পর্যালোচনা করে। যদি দাঈ ধৈর্য সহকারে দলিলের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে এই অসমর্থক শ্রেণির ওপরও প্রভাব পড়ে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তাদেরও কেউ কেউ দাঈর পক্ষে কথা বলে। আমরা যেন এই নীতি গ্রহণ না করি যে, সম্বোধিত ব্যক্তি যদি নরম হয় তাহলে আমিও নরম, আর সে যদি শক্ত হয় তাহলে আমিও কঠোর আচরণ করবো। বরং উচিৎ হলো সে যেমনই হোক দাঈর ব্যবহার সুন্দর হতে হবে।
৫. জিহাদের দাঈর ওপর নফসের চাহিদা, অতি জযবা, গোস্বা ও প্রতিশোধস্পৃহা যেন প্রবল না হয়। তার পুরো দাওয়াতি আমল বুদ্ধি হেকমত, জ্ঞান ইনসাফ এবং কল্যাণকামীদের মাশওয়ারার অধীন হবে। সে তো বাহাদুর নয় যে সম্বোধিত ব্যক্তিকে আছাড় দেয়। দাঈ তো সেই হেকিম যে সর্বদা চিন্তা করে তার কোন ভুলের কারণে রোগীর অসুস্থতা বেড়ে না যায়। সে ইলম ও হেকমতের সাথে কাজ নেয় এবং সর্বদা চেষ্টা করে, যেকোনভাবে সম্বোধিত ব্যক্তির মনের দরজা খুলে তাতে নিজের কথা প্রবেশ করাবে।
৬. দাঈ সম্বোধিত ব্যক্তির মন ও মস্তিস্ক উভয়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে। তার কথা দলিলসমৃদ্ধ হবে যা সম্বোধিত ব্যক্তির মেধাকে আকর্ষণ করবে এবং দরদ ব্যথার সাথে হবে যা তার অন্তরকে প্রভাবিত করবে। সবসময় শুধু যৌক্তিক কথা প্রভাবিত করে না। আবার সবসময় জযবাতি কথাও উপকারী হয় না। দাঈর জন্য হেকমত ও মাওয়ায়েযে হাসানা উভয়টি দ্বারাই কাজ নিতে হবে। হেকমত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ওই পদ্ধতি যা মেধাকে প্রভাবিত করে, আর মাওয়ায়েযে হাসনা হলো যা অন্তরকে প্রভাবিত করে।
৭. জনসাধারণের সামনে আমাদের বক্তব্য শক্তিশালি হওয়া উচিৎ। দুর্বল বক্তব্য অনুচিৎ। অর্থাৎ এমন বক্তব্য দেয়া হবে, যা কল্যাণ ও সফলতার পথ দেখাবে এবং অপমান লাঞ্ছণা থেকে মুক্তির রাস্তা দেখাবে। তবে আমাদের কথার মাঝে যেন গর্ব অহঙ্কারের কোন ঘ্রাণও না থাকে; বরং সম্বোধিত ব্যক্তি যেন আমাদের কথায় দরদ ব্যথা বুঝতে পারে।
৮. আমাদের সাথে মতবিরোধ পোষণকারী ভাইদেরকে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে দরদ-ব্যথা সমবেদনা এবং কল্যাণকামিতার প্রাধান্য থাকবে। অপমান অপদস্থ করা, গালমন্দ করা, কাফের ফতোয়া দেয়া থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিরত থাকতে হবে। তেমনিভাবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও একই আচরণ করা হবে।
৯. দাঈর মুদারাত ও মুদাহানাত (সৌজন্য আচরণ ও চাটুকারিতা) এর মাঝে পার্থক্যের জ্ঞান থাকতে হবে। উভয়ের মাঝে পার্থক্যকারী সীমারেখার প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে। অর্থাৎ তার দাওয়াত নরম ভাষায় হতে হবে তবে অসত্যকে কখনও সত্য বলবে না। বরং সমস্ত নরম ব্যবহারের সাথে সাথে হককে হক ও বাতিলকে বাতিল বলবে।
১০. কুফুরি শাসনব্যবস্থা, তার নেতৃত্ব ও হেফাযতকারীদের শরয়ী হুকুম এবং অন্যান্য কুফুরিগুলো বিস্তারিত বোঝা এবং অন্যকে বোঝানো, এই ব্যাপারে সতর্ক করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটাকে গ্রহণযোগ্য ওলামায়ে কেরামের কিতাবের মাধ্যমে দাওয়াতের অংশ বানানো উচিৎ। যাতে এ কাজের ভয়াবহতার অনুভূতি তৈরি হয় এবং অন্তরে কুফুরি শাসনব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ বিদ্বেষ তৈরি হয়। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কাউকে কাফের ফতোয়া দেয়া ভিন্ন বিষয়। আর তা বিচার ফায়সালার বিষয়, যার দায়িত্ব মুত্তাকি পরহেজগার, বুঝমান, বিচক্ষণ ও গ্রহণযোগ্য ওলামায়ে কেরামের ওপর দেয়া উচিৎ। নির্দিষ্ট তাকফিরের ক্ষেত্রে ওয়াজিব হলো গ্রহণযোগ্য ওলামায়ে কেরামের অনুসরণ করা। নিজের পক্ষ থেকে কোন ব্যক্তি বা দলকে কাফের বলা থেকে বিরত থাকা। যদি এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা না হয় তাহলে তা নিজের ঈমানের জন্য আশংকাজনক এবং দাওয়াত ও জিহাদের ক্ষেত্রে অনেক বড় ক্ষতির কারণ।
আরও পড়ুন
১৮ তম পর্ব ----------------------------------------------------------------- ২০ তম পর্ব
Comment