আল হিকমাহ মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ২২
==================================================
===============================
দাওয়াতের পদ্ধতি ও জিহাদী মানহাজের হেফাযত
শাইখ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ.
এর থেকে
পর্ব- ২২
==================================================
===============================
ইন্টারনেটের ষড়যন্ত্র এবং জিহাদ ও মুজাহিদীনের
হেফাযতের গুরুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক
জিহাদের দাঈদের খেদমতে কিছু কথা
হেফাযতের গুরুত্ব ও পারস্পরিক সম্পর্ক
জিহাদের দাঈদের খেদমতে কিছু কথা
আমরা আবার দাওয়াত বিষয়ে ফিরে আসি। জিহাদের দাওয়াত ও মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ত ভাইদের উদ্দেশ্যে কিছু কথা বলবো ইনশা আল্লাহ। আশা করি এই কথাগুলো জিহাদি মানহাজের উন্নতি ও হেফাযতের ক্ষেত্রে সাহায্যকারী হবে।
২৪. আমাদের সব কথা ও কাজ যেন জিহাদের সুউচ্চ উদ্দেশ্য ও দাবির বিশ্লেষণ করে হয়। দাওয়াতের মধ্যে এমন কোন কথা ও জিহাদের মধ্যে এমন কোন কাজ করা যাবে না, যার দ্বারা জনসাধারণের মনে আমাদের জিহাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অস্পষ্টতা তৈরি হয় এবং সেই কথা ও কাজ না বোঝার কারণে ফেতনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু তাআলা আনহু বলেন: “…… লোকদের সামনে যদি এমন কথা বল যা তারা বোঝে না, তাহলে ঐ কথা তাদের জন্য ফেতনার (হক থেকে দূরে সরার) কারণ হতে পারে।”
এজন্য এমন কোন কথা যা সম্বোধিত ব্যক্তি বুঝবে না তা বলা উচিৎ নয়। তেমনিভাবে যে কাজ সাধারণ মানুষের মনে জিহাদের উদ্দেশ্যের বিপরীত ধারণার সৃষ্টি করে তা করা থেকে দূরে থাকা উচিৎ, যদিও তা সঠিক হয়।
২৫. কাজের যিম্মাদার আসলে দাওয়াত। দাওয়াত একদিকে জিহাদ ও মুজাহিদদের উপকার করে, তেমনিভাবে তা অপূরণীয় ক্ষতিও করতে পারে। যদি দাওয়াত মুজাহিদদের ইনসাফকারী হিসেবে পেশ করে, যেমন, তাদের জিহাদ ভালো উদ্দেশ্যে, তারা নিরপরাধ মানুষের রক্ত প্রবাহিত করে না। শুধু ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের হত্যা করে। তাহলে জিহাদের সমর্থক বাড়বে। আর যদি দাওয়াত মুজাহিদদের ঘোষণাকৃত বিষয়ের বিপরীত দেখায় তাহলে তা ইসলামের শত্রুদের উপকার করে। কার্যক্রমের জিম্মাদারি নেয়া যেহেতু খুবই সংবেদনশীল ও খুবই দায়িত্বপূর্ণ কাজ, এজন্য দাওয়াতের দায়িত্ব যদি দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের হাতে না থাকে তাহলে এই একটি কাজই জিহাদের দাওয়াত নষ্ট হওয়ার কারণ হতে পারে।
২৬. দাওয়াত ও জিহাদের ক্ষেত্রে এমন বাক্য, দৃশ্যই দেখানো হবে, যা দাওয়াতের ক্ষেত্রে উপকারী প্রমাণিত হওয়াটা নিশ্চিত। যেক্ষেত্রে একটু সন্দেহ হবে, তা থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাকে যা সন্দেহে ফেলে তা তুমি ছেড়ে দাও এবং যে বিষয় শরিয়ত সম্মত হওয়া ও উপকারী হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত, সে বিষয় গ্রহণ কর।”
তাছাড়া এমন দাওয়াতের ক্ষেত্রে এমন কোন কথা বা দৃশ্য দেখানো যাবে না, যার দুই অর্থ হয়, আপনি তো ভালো অর্থ নিলেন কিন্তু অন্যরা খারাপ অর্থ নিল, আর এর দ্বারা প্রতিপক্ষ প্রোপাগান্ডার সুযোগ পেল। দাওয়াত ও জিহাদি মিডিয়ায় সাধারণত শুধু ওই অর্থ উদ্দেশ্য নেয়া হয়, যা সাধারণ মানুষ বোঝে। হতে পারে এটা আপনার বুঝের বিপরীত। এজন্য আপনার কথা দ্বারা মানুষ কি বার্তা পায় সেটাই হলো আসল। আর এটাকেই সঠিক ও উপকারী রাখার গুরুত্ব দিতে হবে। এর একটি উদাহরণ হলো গোয়েন্দা ও সৈন্যদের জবাই করার দৃশ্য, এমন ছবি প্রকাশ করার দ্বারা জিহাদি মিডিয়ার ক্ষতি হয় এবং মুজাহিদদেরকে নির্দয় প্রমাণকারীরা একটি সুযোগ পেয়ে যায়।
২৭. সাধারণ মানুষের সাথে আমরা দুঃখ কষ্ট পেরেশানিতে শরিক থাকব। তাদের সাথে আমরা অবস্থা অনুপাতে কথা বলব। উদাহরণস্বরূপ যদি তাদের ওপর কোন আসমানি মছিবত আসে, যেমন বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি। তাহলে আমরা তাদেরকে সান্ত্বনা দেব। যদি তাদের জন্য কিছু নাও করতে পারি তাহলে কমপক্ষে কিছু ভালো কথা তো বলতে পারি। কিন্তু এই অবস্থায় যখন তারা কষ্টে আছে, সন্তানাদি নিয়ে একটু আশ্রয় খুঁজছে তখন যদি বলি, এসবই তোমাদের বদ আমলের ফল। তাহলে এটা কোনভাবেই ঠিক হবে না, আর এ ধরণের কথা বললে আমাদের কথা কে শুনবে? এই কথা তাদেরকে আরও গুনাহের দিকে ধাবিত করতে পারে।
২৮. মাজলুম ব্যক্তিদের সাহায্য করা অবশ্যই আমাদের মৌলিক বিষয়। কিন্তু মাজলুমের সাহায্যের আহবানে কোনভাবেই গোত্র বা ভাষাগত জাতীয়তার আশ্রয় নেয়া যাবে না। এমন কোন কথা বা কাজ করা যাবে না যার দ্বারা জাতীয়তার স্বীকৃতি থাকে। বরং দাওয়াতের মধ্যে দেশাত্মবোধ, গোত্রপ্রীতি, ভাষা ও সবধরণের জাতীয়তার অস্বীকৃতি থাকবে। এবং এক উম্মাহ হওয়ার আহবান হবে। মনে রাখতে হবে এমন স্বজনপ্রীতির আশ্রয় কখনও জিহাদ ও উম্মতের পক্ষে থাকেনি। এটাকে সর্বদা জিহাদ ও উম্মাহর শত্রুরা ব্যবহার করেছে। আমাদের সমর্থন ও বিরোধিতার মাপকাঠি কেবল ইসলামই হবে। ঐ ইসলাম যা ভিনদেশ থেকে আসা সুহাইব ও সালমানকেও (রাযিয়াল্লাহু আনহুম) ভাই বানায় এবং নিজেদের গোষ্ঠির লোক আবু জাহল, আবু লাহাবকে শত্রু বানায়।
২৯. জিহাদি মিডিয়ার দায়িত্ব শুধু জিহাদের দাওয়াত ও জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা নয়। বরং তার একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো জিহাদের বুঝকে ব্যাপক করা, জিহাদের সংশোধন ও মুজাহিদদের তরবিয়ত। সুতরাং কুফুরি শাসনব্যবস্থার প্রত্যেকটি দিকের সমালোচনা এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ যেখানেই করা হবে সেখানেই মুজাহিদদের ফিকরি আখলাকি তরবিয়ত ও সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ করার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
৩০. বর্তমান সময়ের জিহাদি আন্দোলনের মাঝে বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়িমুক্ত মধ্যপন্থী মানহাজ ও বাড়াবাড়ির শিকার মানহাজের মাঝে পার্থক্য নিজে বোঝা এবং অপরকে বোঝানো জিহাদের দাঈদের জিম্মাদারী। ইন্টারনেটে দাওয়াত প্রদানকারী ভাইদের খুবই গুরুত্বের সাথে এই দায়িত্ব পালন করা উচিৎ। তেমনিভাবে কোনটা জায়েয, কোনটা নাজায়েয, কার জান-মাল নিরাপদ আর কার জান-মাল অনিরাপদ, কোন কাজ দাওয়াতের জন্য উপকারী আর কোন কাজ জায়েজ হওয়া সত্ত্বেও জিহাদের জন্য ক্ষতির কারণ, জিহাদের দাঈ ভাইদের ইন্টারনেটে এ বিষয়ে আলোচনা করতে থাকা জরুরি। আমি আবারো বলছি, এই কাজের জন্য শুধু জিহাদি আন্দোলনের গ্রহণযোগ্য ওলামায়ে কেরাম ও নেতাদের কিতাব ও দিকনির্দেশনার প্রতি লক্ষ করা হবে।
আরও পড়ুন