তালিবুল ইলমগণ ফরযুল আইন জিহাদে কীভাবে শরীক হবে?
কেউ বলতে পারে, আচ্ছা বুঝলাম জিহাদ আমাদের উপর ফরযে আইন এবং এও বুঝলাম আমাদেরকে তালিবুল ইলম থাকাবস্থায়ই জিহাদে শরীক হতে হবে। এখন প্রশ্ন হল, তালিবুল ইলমদের জিহাদে শরীক হওয়ার বাস্তব সম্মত পদ্ধতি কী হবে?
এর উত্তরে আমরা বলব, আমরা পূর্বেই বলেছি যে, বর্তমানের জিহাদের পদ্ধতি পূর্বেকার জিহাদের মত নয়। এখন মুজাহিদদের সংখ্যা ও সামর্থ্য শত্রুদের তুলনায় 'অতুল্য' হওয়ায় মুজাহিদগণ গেরিলা যুদ্ধের পদ্ধতিকে বেছে নিয়েছেন। এ পদ্ধতির যুদ্ধে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হওয়ার জন্য দীর্ঘ সময় লাগে। কিন্তু এই পদ্ধতির উপকার হল, সামান্য সংখ্যক মুজাহিদ যৎসামান্য অস্ত্র নিয়েই অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত বিশাল বাহিনীর সাথে লড়ার সুযোগ পায়। গেরিলা মুজাহিদগণ জনতার সাথে মিশে থাকে। জনতা থেকে তাদেরকে বিশেষভাবে আলাদা করা যায় না। ফলে, শত্রু ধোঁকা খায়। শত্রু পক্ষ নিজের 'শক্রকে' শনাক্ত করার সুযোগ পায় না। ৫/৭জনের ছোট একটি সারিয়া অতর্কিত হামলা করে চোখের পলকে প্রস্থান করে। মুজাহিদবাহিনীর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয় না। কিন্তু শত্রু পক্ষের ক্যাম্প ও শিবিরে ছোটখাট কিয়ামত ঘটে যায়। এ পদ্ধতির যুদ্ধে এ পক্ষই শেষ বিজয়ের হাসি হাঁসতে পারে, যারা ধৈর্যের সাথে নিরাপত্তা অটুট রেখে অটল অবিচল থাকে। যাদের মনো সংযোগ ও মনোবল ঠিক থাকে। আর যে পক্ষ মনো সংযোগ হারিয়ে ফেলে, যাদের মনোবলে ধস নামে, যারা প্রতিপক্ষ কর্তৃক নিজেদেরকে অরক্ষিত মনে করতে বাধ্য হয়, তারা ধৈর্য হারা হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে এলোমেলো অভিযানের মাধ্যমে নিজেদের শেষ শক্তিটুকুও হারিয়ে ফেলে। তখন পরাজয় মেনে নেয়া ছাড়া তাদের আর কোনো গতি থাকে না। নিকট অতীতের সোভিয়েথ ইউনিয়নের পরাজয় এবং বর্তমানের ন্যাটো-তালেবান যুদ্ধ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
যাই হোক, গেরিলা যুদ্ধের ক্ষেত্রে তালিবুল ইলমগণ যেসব কাজের মাধ্যমে ফরযুল আইন জিহাদে শরীক হতে পারে তা নিম্নরূপঃ
১. নিজের সাধ্যমত তাহকীক করার পর কোনো সহীহ জিহাদী কাফেলার সঙ্গী হওয়া। কাফেলা কর্তৃক প্রদেয় দায়িত্বগুলো আদায় করা। বর্তমানে যেহেতু বাংলাদেশেও আল-কায়েদার কাজ চলছে (আলহামদুলিল্লাহ), তাই আমি সকলকে আল-কায়েদাকে বেছে নেওয়ারই পরামর্শ দিব। কারণ, তাদের রয়েছে সহীহ আকীদা ও মানহাজ এবং দীর্ঘ বিশ বছর বিশ্বময় জিহাদের অভিজ্ঞতা।
২. জিহাদ বিষয়ে বিশেষভাবে পড়াশুনা করা। জিহাদ কখন ফরযে কেফায়া, কখন ফরযে আইন, শক্র কে? মিত্র কে? জিহাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? তাওহীদ, শিরক, তাগুত, তাগুতবর্জন ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাপক পড়াশুনা করা। জিহাদকে দলীলের মাধ্যমে বুঝা। কোনো ব্যক্তির উপর নির্ভর করে জিহাদকে না বুঝা।
৩. জিহাদ বিষয়ে বিভিন্ন লেখা তৈরি করে তা ইলেক্ট্রনিক্স কিংবা প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারের ব্যবস্থা করা। তবে এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৪. জিহাদী কাফেলার মিডিয়া শাখার কোনো কিছুর অনুবাদ প্রয়োজন হলে অনুবাদ করে দেয়া।
৫. সময় সুযোগ করে ছোট ছোট কোর্সে শরীক হয়ে জিহাদের জরুরী বিষয়গুলোর শিক্ষা অর্জন করা।
৬. নিজের পিতা-মাতা, ভাই-বোন, উস্তাদ ও সহপাঠিদের মধ্যে দাওয়াতের কাজ করা। তাদেরকে জিহাদের গুরুত্ব, ফযীলত ও প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে দাওয়াত ও জিহাদের পথের পথিক বানানোর চেষ্টা করা।
৭. নিজে নিজের সাধ্যানুযায়ী জিহাদ বিল মালের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা। অন্যদেরকেও উৎসাহিত করা।
৮. জিহাদের জন্য প্রয়োজনীয় গুণাগুণ অর্জন করা। যথা তাকওয়া ও সবরের গুণে গুনান্বিত হওয়া।
৯. আখেরাত নিয়ে বেশি বেশি চিন্তা ভাবনা করা। জান্নাতে বড় মর্যাদা হাসিলের ফিকির রাখা। শাহাদাত অর্জনের মাধ্যমে সবেচ্চি মর্যাদা অর্জেনের জন্য উদ্যেলিত হওয়া। দুনিয়ার সব ধরণের লোভ ত্যাগ করা।
১০. জিহাদের ময়দানে সৈনিকের সংকট পড়লে দায়িত্বশীল ভাইয়ের কাছে নিজেকে পেশ করা। সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে আল্লাহর শত্রুদেরকে তাদের উচিত পাওনা বুঝিয়ে দেয়া।
১১. জিহাদ কেন্দ্রিক ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে শিখা। জিহাদময় এক স্বপ্নীল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখা। মাদরাসা-মসজিদের খেদমতকে ছাড়িয়ে আল্লাহর আইন দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনার মত বড় স্বপ্ন দেখা।
১২. নিজের সব কিছু সাহাবায়ে কেরাম রাযি. এর মত গড়ার চেষ্টা করা। সাহাবায়ে কেরাম রাযি. যেমন আখেরাত নিয়ে এবং জিহাদ ও শাহাদাত নিয়ে স্বপ্ন দেখতেন, নিজেও তেমন স্বপ্ন দেখা। পুরো পৃথিবীময় দ্বীনের বিজয় সাধনের জন্য নিজেকে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত করা।
১৩. দৈনিক কিছু সময় ব্যায়াম করার চেষ্টা করা। সম্ভব হলে, নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করে, কারাতে-কুংফুর প্রশিক্ষণ অর্জন করা।
১৪. জিহাদের ময়দানে কাজে লাগবে এমন সব যোগ্যতা অর্জন করা যেমনঃ সাতার, মোটর বাইক, প্রাইভেট কার, ট্রাক, নৌকা, ট্রলার ইত্যাদি চালনা রপ্ত করা। নার্সিং এর উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা, ইলেক্ট্রনিক্স ও পদার্থ বিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। লেদ মেশিন (লৌহজাত দ্রব্য দিয়ে বিভিন্ন আকার আকৃতির বস্তু বানানোর মেশিন) এর কাজ শেখার চেষ্টা করা। এ যোগ্যতাগুলো যুদ্ধের ময়দানে অনেক কাজে লাগবে।
১৫. কষ্ট সহ্য করার যোগ্যতা অর্জন করা। বিশেষ করে ক্ষুৎপিপাসার কষ্ট সহ্য করার যোগ্যতা অর্জন করা। মাঝ পথে আরাম না করে স্বাভাবিক গতিতে ধারাবাহিক ২-৩ ঘন্টা হাঁটার চেষ্টা করা। সম্ভব হলে ১৫-২০ কেজি ওজন বহন করে হাঁটা।
১৬. সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখার চেষ্টা করা এবং আইয়্যামে বিযের দিনগুলোতেও (আরবী মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখ) রোযা রাখার চেষ্টা করা। মাঝে মাঝে শুধু শুকনো খাবার (চিড়া, মুড়ি, খেজুর, রুটি) এর উপর ২/৩ দিন থাকার চেষ্টা করা।
১৭. খাবারের ক্ষেত্রে সব ধরনে বাছবিচার পরিত্যাগ করা। যেকোনো হালাল বস্তু খাওয়ার মানসিকতা রাখা।
১৮. সব ধরণের বিলাসিতা ও অহেতুক খরচ পরিত্যাগ করা। জিহাদ বিরোধী অভ্যাস পরিত্যাগ করা, যথা বেশি খাওয়া, বেশি ঘুম, অলসতা, প্রতিদিন গোসল করা, প্রতিদিন কাপড় পরিবর্তন, পান বা এজাতীয় অন্য কিছুকে অভ্যাসে পরিণত করা থেকে বাঁচা।
১৯. উম্মাহর কল্যাণ চিন্তা নিজের মধ্যে প্রোথিত করা। গুনাহ ছেড়ে দেয়া বিশেষ করে বদ নজরীর গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করা।
২০. নিয়মিত তাহাজ্জুদ ও সালাতুল হাজত পড়ে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য, উম্মাহর জন্য এবং মুজাহিদ ভাইদের সফলতার জন্য দুআ করতে থাকা। আশা করা যায় তালিবুল ইলম ভাইয়েরা ইলমী ইদারায় ইলম অর্জনে মাশগুল থেকেও উল্লেখিত কাজগুলোর প্রায় সবকটি কাজই করতে পারবে। আর এভাবে তারা গেরিলা যুদ্ধের যমানায় তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব আদায়ে সক্ষম হবে ইনশা আল্লাহ।
নেদায়ে তাওহীদ বইয়ের একটি আলোচনার চুম্বক অংশ থেকে নেওয়া
Comment