Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ০৬ || জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ || - শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি [এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)] || ৫ম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ০৬ || জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ || - শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি [এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)] || ৫ম পর্ব

    আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
    কর্তৃক পরিবেশিত
    জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
    -শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
    [এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
    এর থেকে
    ৫ম পর্ব

    ==================================================
    ===============================
    অধ্যায়ঃ ২




    দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যঃ জিহাদ কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের উপর নির্ভরশীল নয়
    ﴿وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ


    আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তাহলে কি তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তূতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন।”



    ফলাফলের ভিত্তিতে বিচার করবেন নাঃ

    আমাদের এ জন্য কিছু করা উচিত না যে, এতে করে আমাদের বিজয় হবে বা ফলাফল আমাদের পক্ষে আসবে, বরং কেবল এজন্যই করা উচিত যে আল্লাহ্ আমাদের করতে বলেছেন। আর ফল সম্পূর্ণ আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া উচিত। আমরা আল্লাহর সৈন্য। আমাদের পরিণতির চিন্তা বাদ দিয়ে আল্লাহ্ যা আদেশ দিয়েছেন তা করে যাওয়া উচিত। আর সবকিছু আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া উচিত। আমরা তো গায়েবের জ্ঞান রাখি না। একই সাথে, আমাদের কাজটা কি ভুল ছিল না ঠিক ছিল, তা আমরা পরিণাম দেখে বিচার করি না। বরং আমরা কাজের বিচার করি এর ভিত্তিতে যে, তা আল্লাহর হুকুম মত হয়েছিল কিনা। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন অমুসলিমকে কোন মুসলিম ইসলাম কবুল করায়, তবে তার সম্পর্কে এমন বলা যাবে না যে, “সে কত ভাল দা’য়ী যে একজনকে ইসলামে নিয়ে এসেছে” সে কতজনকে ইসলামের ছায়াতলে এনেছে সেই সংখ্যার ভিত্তিতে আমরা তাকে বিচার করব না। বরং সে রসূলুল্লাহ্ এর পন্থায় দাওয়াত দিচ্ছে কি না- এর ভিত্তিতেই তার বিচার হবে। যদি তার দাওয়া, রসূল এর দাওয়ার পদ্ধতির অনুরূপ হয়, তবে সেই দাওয়াহ কেউ কবুল না করলেও সে সফলকাম। যদি তার পদ্ধতি রসূল -এর অনুরূপ না হয়, তাহলে সে ভুল করছে, যদিওবা দলে দলে লোক দাওয়াহ কবুল করতে থাকে। নূহ  এর কথা ভাবুন, তিনি কি সফল না ব্যর্থ? এ সমস্ত মানদন্ড অনুযায়ী তিনি ব্যর্থ, আর এটা বলাটা অনৈসলামিক ছাড়া আর কিছু না। আমরা জানি যে বিচার দিবসে কিছু আম্বিয়া আসবেন যাদের অত্যন্ত অল্প সংখ্যক অনুসারী থাকবে এবং কিছু আম্বিয়া আসবেন যাদের কোন অনুসারীই থাকবে না। তাহলেই কি আমরা বলতে পারি যে তাঁরা ব্যর্থ? তাঁরা আল্লাহর নবী ছিলেন এবং দাওয়াহ দেয়াই ছিল তাদের জীবনের লক্ষ্য। তাঁরা আল্লাহ্ যা বলেছেন তা-ই করেছেন। তাঁরাই ছিলেন সঠিক। অতএব, আমরা পরিণামের ভিত্তিতে বিচার করব না এবং রসূল এর পদ্ধতিরও পরিবর্তন করার চেষ্টা করব না এবং “আমরা আধুনিক যুগে বসবাস করছি” এ কারণে রসূল এর কোন পদ্ধতির পরিবর্তন করার চেষ্টা করব না।

    আজকের উম্মাহর জীবনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষণীয় ক্রটি। আমরা সবকিছুই ফলাফলের ভিত্তিতে বিচার করি, এমনকি ইসলামী আন্দোলনগুলোও এভাবেই কাজ করে। এটা পশ্চিমা প্রভাবের কারণেও হতে পারে। আমরা ইসলামকে ব্যবসা-বাণিজ্যের মত মনে করি না। ব্যবসার ক্ষেত্রে ফলাফলের ভিত্তিতেই সাফল্যের বিচার হয়। যদি দিন শেষে যথেষ্ট টাকা-পয়সা না হয়, তাহলে ধরে নেয়া হয় কিছু একটা সমস্যা আছে। আবার ভাল করে খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু আমরা আমাদের ইবাদতকে এভাবে নিতে পারিনা। আমরা যা কিছু করি, তা কেবল আল্লাহ্ বলেছেন বলেই করি, তা সেটার ফল ভাল হোক বা মন্দ, এটা পুরোপুরি আল্লাহর উপর। আমরা কোনকিছুর ফল-ই নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনা।

    আর যদি কেউ পরিণামের ভিত্তিতে বিচার করে, তবে তার বলার কথা যে উহুদ ছিল একটা ভয়াবহ ব্যর্থতা এবং রসূল এর এখানে যুদ্ধ করাই ঠিক হয়নি, এটা তার ভুল ছিল (নাউযুবিল্লাহ!)। কিন্তু এমন কথা কেউ ভয়ে বলে না। আমরা বলি রসূল ঠিক কাজই করেছেন, কেননা তিনি কেবল আদেশ পালন করেছিলেন (জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্)। মুনাফিকরা নিম্নোক্তভাবে জিহাদ সম্পর্কে ধারণা পোষণ করেঃ “যদি জিহাদের মাধ্যমে ক্ষমতা, পদমর্যাদা, সম্পদ ও গণীমতের মাল পাওয়া যায়, তবে আমরা মুজাহিদীনদের সাথে যোগ দিব। আর যদি জিহাদের কারণে আমাদের ক্ষমতা, পদমর্যাদা, সম্পদ, জীবন হারাতে হয় তবে, আমরা জিহাদে যোগ দিবনা। এটা হিকমত পরিপন্থী।

    আরেকভাবে প্রমাণ করা যায় যে, জিহাদ-ই সঠিক পথ এবং ফলাফল নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হবার প্রয়োজন নেই। সেটা হচ্ছে রসূল মৃত্যুর পূর্বে, রোমান সাম্রাজ্যের বিরূদ্ধে ৩০০০ সৈন্যের একটি বাহিনী পাঠানতিনি যখন মারা গেলেন, সেই বাহিনী তখনও রোমান সাম্রাজ্যে যায় নি, সৈন্যদের একত্রিত হবার স্থান ছিল। ঐটাই ছিল সৈন্য ঘাটি। রসূলুল্লাহ্ মৃত্যুর পর মদীনার আশপাশের সমস্ত আরব গোত্ররা মুরতাদ হয়ে গেল। তাই সাহাবাগণ বলল যে, এই ৩০০০ সৈন্য এখন এখানেই থাকুক, কারণ এখানেই এদের বেশি দরকার। তারা বললঃ “আমাদের জন্য এখন রোমানদের সাথে যুদ্ধ করাটা যথাযথ হবে না, যেখানে মদীনার অদূরেই আমাদের বিপদ অপেক্ষা করছে।” এমনকি এই বাহিনীর সেনাপতি উসামা বিন যায়েদ (রাযিঃ) -এরও একই মত। উসামা (রাযিঃ), উমার (রাযিঃ) এর মাধ্যমে মৌখিক বার্তা পাঠালেন যে, অধিকাংশ মুসলিমই তাঁর সাথে এবং তাঁরা সবাই এ ব্যাপারে একমত যে, রসূল এর খলিফা ও তাঁর স্ত্রীদের অরক্ষিত অবস্থায় মদীনায় রেখে যাওয়াটা উচিত হবে না। তাছাড়া, তারা মদীনাকে সৈন্যহীন অবস্থায় রেখে যেতে চাননি। তখন আবু বকর (রাযিঃ) কি বলেছিলেন? তিনি বলেছিলেনঃ “যদি রসূল -এর স্ত্রীদের পা কামড়ে ধরে কুকুর টেনেও নিয়ে যায়, তারপরও আমি এই বাহিনী পাঠাব। আর যদি মদীনায় আমি ছাড়া আর কেউ নাও থাকে, তারপরও আমি এই বাহিনী পাঠাব, কারণ রসূলুল্লাহ্ -এর আদেশ দিয়েছেন।” আবু বকর (রাযিঃ) -এর কথা থেকে বুঝা যাচ্ছে উনি ফলাফল নিয়ে একটুও উদ্বিগ্ন ছিলেন না। যদি সবাই মারা যায় আর উনি একাই জীবিত থাকেন, তারপরও তিনি সেই সেনাবাহিনী পাঠাবেন। যদি পরিস্থিতি এতই খারাপ হয় যে কুকুর রসূল -এর স্ত্রীগণদের পা টেনে নিয়ে যেতে থাকে, তারপরও তিনি এই বাহিনী প্রেরণ করবেন। তিনি বলতে চান যে, যদিও বা পরিণতি অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হয়, তারপরও তিনি রাসূলের কথানুযায়ী কাজ করবেন। এটা সেইসব লোকদের কথার পরিপন্থী যারা প্রতিটি কাজের লাভ, লোকসান হিসাব করতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না শরীয়াহর সমস্ত বিষয় ভেজিটেবল স্যুপে পরিণত হয়, অর্থাৎ সবকিছু নষ্ট হয়ে হারিয়ে যায়। তখন শরীয়াহর কোন কিছুই আর বাকি থাকবে না, কারণ তারা সবকিছুকেই লাভ-লোকসান দিয়ে হিসাব করে আয়ত্তে আনতে চায়। সুবহানাল্লাহ! জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ তো সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিই বয়ে আনে, তোমরা কি তোমাদের জীবন ও সম্পদ বিপদে ফেলতে যাচ্ছ! এটা তো নাফ সাদা, মাসলাহা নয়, যেহেতু তুমি তোমার জীবন ও সম্পদ বিপদে ফেলছ।

    তাছাড়া, আমরা জিহাদের ব্যাপারে কোন ইজতিহাদ করতে পারি না। আপনারা কি সালাতের ব্যাপারে ইজতিহাদ করেন, যে সলাত পড়বেন কি না? সালাতের আদেশ নির্দিষ্ট ও স্থায়ী। আবু বকর (রাযিঃ) -এর ব্যাপারটি ছিল ইজতিহাদের বিষয়। যদি তা না হত, তাহলে সাহাবাগণ এর বিরূদ্ধে কথা বলতেন না।


    অনেকেই জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ’র বিরূদ্ধে অনেক যুক্তি খাড়া করে যে, এর পরিণাম ভাল হবে না। আমাদের জবাব হওয়া উচিত “ফলাফলের জন্য আমরা দায়ী নই। জিহাদ হচ্ছে ফারদুল ‘আইন, অতএব এটা আমাদের করতেই হবে, যদিওবা কুকুর আমাদের পরিবারবর্গকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।”

    রোমান সাম্রাজ্যের দিকে যাবার পথে মুসলিম বাহিনী এমন এক আরব এলাকা অতিক্রম করে যাচ্ছিল, যারা মুসলিমদের আক্রমণ করার ফন্দী করছিল। তারা তখন দেখল যে মুসলিম বাহিনী রোমানদের আক্রমণ করতে যাচ্ছে, তারা নিজেদের বললঃ “যদি রোমানদের সাথে যুদ্ধ করার মত শক্তি এদের থাকে, তবে নিশ্চয়ই মদীনায় প্রতিরক্ষার জন্য এর চেয়েও বেশি শক্তি সেখানে রয়েছে, অতঃপর তারা তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করল এবং মুসলিম বাহিনীকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকল। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ্ কুফ্ফারদের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দিলেন, এমনকি যখন মুসলিমরা ছিল দূর্বল। যদি মুসলিমরা খাঁটি ও আন্তরিক হয়, তবে আল্লাহর সাহায্য আসবেই। যখন রোমানরা মুসলিম বাহিনীর আগমনের খবর পেল, তাদের কি অবস্থা হল? হিরাকল একই দিনে রসূল -এর মুসলিম বাহিনীর আগমনের সংবাদ পেয়েছিল। সে বললঃ “যদি এদের নেতার মৃত্যুর দিনেই তাঁর বাহিনী যুদ্ধ করতে পাঠান হয়, তবে নিশ্চয়ই এর মধ্যে কোন ব্যাপার আছে”।


    অতঃপর তারা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানাল। এমনই হয় যখন কেউ পরিণামের ভার পুরোপুরিভাবে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়। এমন দৃষ্টান্ত আমাদের সাম্রাজ্যে প্রবেশ করল অর্থাৎ একজন রোমানও তাদের সম্মুখীন হল না। তারা গণীমতের মাল সংগ্রহ করে মদীনায় ফিরে গেল। এই আয়াতের অর্থ এটাই-

    ﴿... وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا ... وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا ﴾

    “... যে কেউ আল্লাহ কে ভয় করে আল্লাহ্ তার পথ করে দিবেন, ..... যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহ্-ই যথেষ্ট। আল্লাহ্ তার ইচ্ছা পূরণ করবেনই; আল্লাহ্ সমস্ত কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।”

    যতক্ষণ আপনার তাক্ওয়া আছে, আল্লাহও আপনার সাথে ততক্ষণই আছেন। তাক্ওয়া যতই বৃদ্ধি পাবে, আল্লাহ্ও তত বেশি আপনাকে সাহায্য করবেন।

    ফলাফলের ভিত্তি বিচার করলে তা কুফর আর হতাশাই বয়ে আনেঃ

    যারা ফলাফলের ভিত্তিতে বিচার করে, পরিণাম স্বরূপ তা হয় কুফরের দিকে নিয়ে যায় অথবা হতাশা বয়ে আনে। এটা ভীষণ বিপজ্জনক। দুঃখজনকভাবে, অনেক মুসলিমই আজ তাই করছে। অনেক মুসলিমই বিজয় ও পরাজয়ের ব্যাপারে ভীষণ কপটতাপূর্ণ অভিমত পেশ করে। যদি তারা কোথাও মুসলিমদের বিজয় দেখে, তবে তারা এর প্রশংসা করবে এবং মানুষকে দেখাবে যে তারাও এর-ই অংশ ছিল। আর যদি মুসলিমদের পরাজয় দেখে, তবে এর সমালোচনা করবে এবং মানুষকে দেখাবে যে, তাদের সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই। ইতিহাসেই এর উত্তম প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমন করল, তখন অনেক মুসলিমকেই এর জন্য প্রস্তুতি নিতে, এর পক্ষে খুতবাহ দিতে, এসবের প্রশংসা করতে দেখা গেল। আবার যখন আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমণ করল, তখন ঠিক এদেরকেই আমরা পুরো উল্টা অবস্থান নিতে দেখি। তারা মুজাহিদীনদের সমালোচনা করে, তাদের অপমানিত করে, তাদের জঙ্গী-সন্ত্রাসী হিসাবে আখ্যায়িত করে আর বলে যে ওদের কোন হিকমাহ নেই। এ দু'য়ের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, মুসলিমরা আমেরিকাকে ভয় করে। কারণ তারা দাবী করে যে তারা মানুষের ক্ষতি করতে সক্ষম। তারা আমেরিকাকে এর ¯স্লোগান আর কাজকর্মের জন্য ভয় পায়। বুশ বলেছে যে, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন ন্যায়-বিচারের(প্রকৃতপক্ষে জুলুমের) দীর্ঘ হস্ত আপনাকে ধরবেই। অতএব, মানুষ আল্লাহর ক্রোধ আর অভিশাপকে ভয়ের বদলে আমেরিকার ক্রোধকে ভয় করে। আজকালকার বেশিরভাগ উলামাই জিহাদের বিরুদ্ধে কেন? এর একমাত্র কারণ হচ্ছে, আমেরিকা এর সাথে জড়িত। এটি নিফাকের একটি চিহৃ। আফগানিস্তান এর আগেও কুফ্ফারদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। এবারও কুফফারদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। মুজাহিদীনদের পরাজয়ের সবচেয়ে বড় লাভ হচ্ছে যে তাদের বাহিনী পরিশুদ্ধ হয়; কারা কুফ্ফারদের পক্ষে জয়ধ্বনি দেয় তা প্রকাশ হয়ে যায়। মানুষ তখন জানতে পারে, কারা মু’মিন আর কারা মুনাফিক। আল্লাহ্ তাদের সম্পর্কে বলেছেনঃ

    ﴿ وَإِنَّ مِنْكُمْ لَمَنْ لَيُبَطِّئَنَّ فَإِنْ أَصَابَتْكُمْ مُصِيبَةٌ قَالَ قَدْ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيَّ إِذْ لَمْ أَكُنْ مَعَهُمْ شَهِيدًا

    আর তোমাদের মধ্যে এমনও কেউ কেউ রয়েছে, যারা অবশ্য বিলম্ব করবে এবং তোমাদের উপর কোন বিপদ উপস্থিত হলে বলবে, আল্লাহ্ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন যে, আমি তাদের সাথে যাইনি।”

    যেসব মানুষ জিহাদে যাওয়ার কথা ভেবেছিল আর পরে এর পরিণতি দেখে বলল, আলহামদুলিল্লাহ্! আমি যাইনি। তা নাহলে আমি এখন হয়ত কোন দ্বীপে আটকে থাকতাম।” আল্লাহ  বলেনঃ

    ﴿الَّذِينَ يَتَرَبَّصُونَ بِكُمْ فَإِنْ كَانَ لَكُمْ فَتْحٌ مِنَ اللَّهِ قَالُوا أَلَمْ نَكُنْ مَعَكُمْ وَإِنْ كَانَ لِلْكَافِرِينَ نَصِيبٌ قَالُوا أَلَمْ نَسْتَحْوِذْ عَلَيْكُمْ وَنَمْنَعْكُمْ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ فَاللَّهُ يَحْكُمُ بَيْنَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَنْ يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا﴾

    এরা এমনি মুনাফেক যারা তোমাদের কল্যাণ-অকল্যাণের প্রতীক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকে। অতঃপর আল্লাহর ইচ্ছায় তোমাদের যদি কোন বিজয় অর্জিত হয়, তবে তারা বলে, আমরাও কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? পক্ষান্তরে কাফেরদের যদি আংশিক বিজয় হয়, তবে বলে, আমরা কি তোমাদেরকে ঘিরে রাখিনি এবং মুসলমানদের কবল থেকে রক্ষা করিনি? সুতরাং আল্লাহ্ তোমাদের মধ্যে কেয়ামতের দিন মীমাংসা করবেন এবং কিছুতেই আল্লাহ্ কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর বিজয় দান করবেন না।”

    মানুষ মুজাহিদীনদের নিয়ে লাফালাফি করে, কিন্তু যখন ওদের পরাজয় হয় তখন তারা বলে যে, ওদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। জিহাদ এমন একটি ইবাদত যা কেবল তাদের পক্ষেই সম্ভব যারা এর উপযুক্ত। এটা তাদের জন্য, যারা দুঃখ ও কষ্টের পরীক্ষা সামাল দিতে পারে। কখনও কখনও জিহাদের সাথে বিজয় বা বীর প্রমাণিত হওয়া কিংবা গণীমতের মাল ইত্যাদির কোনও সম্পর্ক থাকে না। আজকের দিনে জিহাদ করা মানেই হয় নিহত হওয়া বা গ্রেফতার হওয়া। তথাপি এটা জিহাদে না যাবার কোন অজুহাত নয়। আমাদের সম্পদ ও সমস্ত প্রচেষ্টা কেবল এদিকেই পরিচালিত করা উচিত। যদি কেউ জিহাদ করে আর ভেবে নেয় যে, জিহাদ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা পরাজয়ের সম্মুখীন হবে। যদিওবা এটা যুদ্ধরে ময়দানে পার্থিব পরাজয় নাও বয়ে আনে, তথাপি এটা তাদের অন্তরে নৈতিক পরাজয় বয়ে আনবে, যখন তারা দেখবে যে, তারা যে নেতার উপর জিহাদের বিজয় নির্ভরশীল ভেবেছিল, তার মৃত্যু হয়েছে। অতএব, কোন ব্যক্তি বা নেতার উপর নির্ভরশীল হওয়াটা অনুচিত। জিহাদকে কোন ব্যক্তির উপর নির্ভশীলতা থেকে মুক্ত করা উচিত। হ্যাঁ, অবশ্যই সমস্ত পরিকল্পনা ও অন্যান্য কাজে সমন্বয়ের জন্য আমাদের নেতৃত্বের প্রয়োজন, তবে নেতৃত্ব হারানোর সাথে সাথে যেন মুসলিমদের সাথে জিহাদের সম্পর্ক শেষ না হয়ে যায়। কোন বিশৃঙ্খল অবস্থার প্রতি আহবান জানাচ্ছিনা। পরিকল্পনাকারী, সমন্বয়কারী হিসেবে আমীর থাকবে কিন্তু জিহাদ চালু রাখার জন্য তার বেঁচে থাকা জরুরী নয়। যখন সে মারা যাবে, তখন অন্য আমীর তাঁর জায়গায় আসবে। আল্লাহ্ তার জায়গায় এর চেয়েও উত্তম আমীর দিতে পারেন। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে আছে এমন সব সিংহের, যাদের সামর্থ্যের ব্যাপারে মানুষ ভাবতেও পারেনি। এই উম্মাহ বৃষ্টি বর্ষনের মত! আপনি বুঝতে পারবেন না কখন এই উম্মাহর সবচেয়ে শক্তশিালী অংশ আসতেছে অথবা চলে যাচ্ছে , তখন এ সব ব্যাপারে সমঝদার মুসলিমরা এ পথে কেবল আরও দৃঢ়ই হবে, কেননা তারা জিহাদের রবের ইবাদত করে, জিহাদের নেতৃত্বের না। নেতার মৃত্যুর সম্ভাবনা তো অন্য যেকোন সাধারণ সৈন্যের মৃত্যুর সম্ভাব্যতার মতই। আমাদের নেতারা তো আসলে শাহাদাহ’র সন্ধানেই রয়েছে, যাতে করে তারা জান্নাতে তাদের স্ত্রীদের সাথে মিলিত হতে পারে এবং আল্লাহর এত নিকটবর্তী হতে পারে, যা এর পূর্বে কখনও হয়নি। তারা অধীর আগ্রহে সেই দিনের অপেক্ষাই করছে। অতএব, দেখা যাচ্ছে যে, জিহাদ একটি ধ্রুবক, কেননা রসূল এর মৃত্যুর পর জিহাদ তো কমেইনি, বরং বেড়েছে। খুলাফা আর রাশিদীনের সময় ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটল। জিহাদ নিজেই এত শক্তিশালী যে, নেতার অনুপস্থিতি একে নাড়া দিতে পারে না।


    আরও পড়ুন
    ৪র্থ পর্ব --------------------------------------------------------------- ৬ষ্ঠ পর্ব












    Last edited by tahsin muhammad; 09-23-2023, 04:31 PM.
Working...
X