Announcement

Collapse
No announcement yet.

পাঠচক্র- ০৬ || জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ || - শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি [এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)] || ৮ম পর্ব

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পাঠচক্র- ০৬ || জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ || - শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি [এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)] || ৮ম পর্ব

    আল-ক্বাদিসিয়াহ মিডিয়া
    কর্তৃক পরিবেশিত
    জিহাদের পথে স্থায়ী ও অবিচল বিষয় সমূহ
    -শাইখ ইউসূফ আল উয়াইরি
    [এর উপরে লেকচার দিয়েছেন ইমাম আনোয়ার আল-আওলাকি (রহিমাহুল্লাহ)||
    এর থেকে
    ৮ম পর্ব

    ==================================================
    ===============================
    অধ্যায়ঃ ৫


    পঞ্চম বৈশিষ্ট্যঃ বিজয় শুধু সেনাবাহিনীর বিজয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়

    আলী (রাযিঃ) -কে জিজ্ঞাসা করা হল, “তোমরা কিভাবে তোমাদের শত্রুদের পরাজিত কর?” তিনি বললেন, “যখন আমি আমার শত্রুর মুখোমুখী হই, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে থাকি যে, আমি তাকে পরাজিত করব আর যখন সে বিশ্বাস করে যে আমি তাকে পরাজিত করব। সুতরাং আমার থেকে এবং তার নিজ থেকে আমাকে তার বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে সাহায্য করে।”

    পঞ্চম বৈশিষ্ট্যঃ বিজয় শুধু সেনাবাহিনীর বিজয়ের মাঝে সীমাবদ্ধ নয়।

    জয়লাভের বিষয়টিকে আমাদের ভাষাগত এবং প্রথাগত জয়লাভের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়। ইসলাম তাই শব্দটিকে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছে। ইসলাম অনেক পুরানো শব্দের পরিমার্জন বা পরিবর্ধন করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসলাম পূর্ব যুগে আরবে সলাত বলতে দো‘আ বুঝানো হত। কিন্তু ইসলামের আগমনের সাথে সাথে তার একটি নতুন অর্থ প্রদান করে এবং সে অর্থেই আগে আমরা সলাতকে বুঝি, ইবাদত অর্থে। সিয়াম বলতে বুঝাতো কোন কিছু বর্জন করা। যেখানে ইসলাম এই অর্থ পরিবর্তন করে এইভাবে সংঙ্গায়িত করে যে, সুবহে সাদিক হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাদ্য ও পানীয় হতে বিরত থাকা। সুতরাং আমরা যখন বিজয়ের কথা বলি, আল্লাহ  বিজয়ের একটি নতুন অর্থ দিয়েছেন।

    মুসলিমদের একটি বড় অংশ মনে করে যে, মুসলিমদের জয় বলতে যুদ্ধ ক্ষেত্রে শারীরিক জয়কে বোঝায়আমরা যদি নিবিড়ভাবে কুরআন অধ্যায়ন করি তাহলে আমরা দেখি যে, আল্লাহ  এ ধরনের বিজয়ের ওয়াদা করেননি। একজন ব্যক্তি যে আল্লাহর পথে জিহাদ করে, এর মানে এই নয় যে সে প্রতিটি যুদ্ধেই জয় লাভ করবে। আল্লাহ্ মহামহিম বলেনঃ

    ﴿إِنْ يَمْسَسْكُمْ قَرْحٌ فَقَدْ مَسَّ الْقَوْمَ قَرْحٌ مِثْلُهُ وَتِلْكَ الْأَيَّامُ نُدَاوِلُهَا بَيْنَ النَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ الَّذِينَ آَمَنُوا وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ


    যদি তোমাদের আঘাত লেগে থাকে, অনুরূপ আঘাত তো তাদেরও লেগেছে। মানুষের মধ্যে এই দিনগুলির পর্যায়ক্রমে আমি আবর্তন ঘটাই, যাতে আল্লাহ্ মু’মিনগণকে জানতে পারেন এবং তোমাদের মধ্য হতে কতককে শহীদরূপে গ্রহণ করতে পারেন এবং আল্লাহ্ যালিমদেরকে পছন্দ করেন না।”

    এই আয়াত যখন নাযিল হয়েছিল, তখন তারা অবাক হয়েছিল যে, তারা কেন হেরে গিয়েছিল? কারণ ‘বদরে' তাদের কৌশল এবং বিজয় তাদেরকে ভাবতে শিখিয়েছিল যে তারা সব যুদ্ধে জয়লাভ করবে। সুতরাং আল্লাহ্ তাদের কাছে বর্ণনা করেন যে এটা তার ইচ্ছা। একদিন তোমরা জয়লাভ করবে, একদিন তোমরা পরাজিত হবে। এই আয়াত এজন্যই নাযিল হয়েছে যে, আমরা যেন দেখি যে আল্লাহর এই বিধান চলতে থাকবে।

    আমরা যদি আমাদের পরিধীকে আরো প্রশস্ত করি, তাহলে আমরা অনুধাবন করতে পারবো যে, যে কেউ ইসলামের চূড়ায় (জিহাদ) পৌছাবে, তারা কখনও পরাজিত হবে না বরং সর্বদাই জয়ী হবে, তবে এক্ষেত্রে সবসময় শারীরিকভাবে জয়ী হওয়া শর্ত নয়।

    ইসলামে বিজয়ের ১১ টি অর্থ রয়েছেঃ


    বিজয়ের প্রথম অর্থঃ ৮টি প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে বিজয়


    সবচেয়ে বড় বিজয় হল নিজের বিরুদ্ধে, শয়তানের বিরুদ্ধে, দুনিয়ার বন্ধনের বিরুদ্ধে বিজয়। মুজাহিদীনরা এক্ষেত্রে বিজয় লাভ করে যেখানে উম্মতের অধিকাংশই তা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়।

    জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ তে যাওয়ার ব্যাপারে এবং ত্যাগ করার ব্যাপারে আল্লাহ্  বলেনঃ

    ﴿قُلْ إِنْ كَانَ آَبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ


    বল, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ্, তাঁর রসূল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের স্বজাতি, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশংকা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালবাস, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আল্লাহ্ সত্যত্যাগী সম্প্রদায়কে সৎপথ প্রদর্শন করেন না।”

    এখানে একজন মুসলিম এবং জিহাদের মাঝে ৮টি প্রতিবন্ধকতার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া অন্য প্রতিবন্ধতা থাকলে এগুলোর সাথে সম্পর্ক যুক্তই হবে। দেখা যাক প্রত্যেক প্রতিবন্ধকতা।

    ১) তোমাদের পিতাঃ বর্তমান সময় ইসলামের প্রতি দায়িত্ব পালনের জ্ঞানের ক্ষেত্রে উম্মাহ্ বেশ দূর্বল। তারা বলে তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল -কে ভালবাসে কিন্তু তারা সত্যিকার অর্থে জানেনা যে, আল্লাহ্ তাদের কাছে কি আশা করেন এবং তাদেরকে কিসের হুকুম করেন। জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ বর্তমানে একটি ফারদ্ (আবশ্যিক)। যদিও খুব কম ক্ষেত্রেই আমরা পিতামাতাকে তাদের সন্তানদের জিহাদের ব্যাপারে উৎসাহিত করতে দেখি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে পিতা শ্রেনী উম্মাহর মাঝে একটি বড় প্রতিবন্ধক। পিতারা তাদের পুত্রদের জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর অংশ গ্রহণের অনুমতি দেয় না। উমার বিন খাত্তাব (রাযিঃ) বলেনঃ “যদি আমরা আমাদের পিতাদের অমান্য না করতাম, আমাদের কেউই জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্-য় অংশ গ্রহণ করতে পারতাম না।” পিতা-মাতার অবাধ্যতা এক্ষেত্রে একটি গুণ, যেহেতু সে আল্লাহ-কে মান্য করেছে। এছাড়া যা শরীয়ার সাথে একই রেখায় অবস্থিত তার সবকিছুই মান্য করতে হবে। যখনই সেগুলোয় সংঘাতের সৃষ্টি হয়, তখন সকলকে আল্লাহর হুকুমকে প্রাধান্য দিতে হবে। সুতরাং এর মাধ্যমে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ পালন করার জন্য পিতা-মাতার অবাধ্য হয়, সে পিতা-মাতার সাথে আল্লাহর জন্যই সম্পর্ক বজায় রাখে। এটা আল্লাহ্-কে সন্তুষ্ট করার একটি উপায় মাত্র।

    ২) তোমাদের সন্তানঃ প্রত্যেক পিতা-মাতার কাছেই নিজের সন্তান অত্যন্ত প্রিয়। রসূল বলেনঃ “সন্তান তোমাদের কৃপণতা বা নীচতা এবং কাপুরুষতার কারণ।” এই দু’ধরনের অসুখই মানুষকে আক্রান্ত করে শুধু তারা ব্যতীত যাদেরকে আল্লাহ্ চান। কেন পিতা-মাতা কৃপণ হয়? যেহেতু সন্তান হওয়ার পরপরই তাদের পোশাক, খাবার, খেলনা ইত্যাদির জন্য এত অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন হয় যে, অর্থ প্রদানের ক্ষেত্রে তাদের হাত সংকীর্ণ হয়ে যায়। এটা একই সাথে মানুষকে দ্বিতীয়বার ভাবতে শিখায়। যখন কাউকে জিজ্ঞাসা করা হয়, “কেন তুমি জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর উদ্দেশ্যে বাইরে বেড়িয়ে পড়ছো না?” তারা উত্তর দেয়, “আমার পরিবারের দেখা শোনা করাই আমার জিহাদ।” সে বোকার মত নিজেকে মুজাহিদ ফী সাবিলিল্লিাহ্ মনে করে। তার পরিবার তার জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ পালন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা। এটা দূর্ভাগ্যজনক যে, এই অসুখ তাদের মাঝেও পৌছে গিয়েছে যারা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ বোঝে এবং যারা একসময় মুজাহিদীন ছিল কিন্তু তারা বিবাহ করার, সন্তান গ্রহণ এবং অন্য যেকোন কারণে তাদের পিছনে থেকে যাওয়ার বাহানা হয়ে দাঁড়ায়। এটা একটি ফিৎনা যা তাদের নিচে নামিয়ে দেয়। কাজেই যাদের ফিরে যাওয়ার জন্য পরিবার রয়েছে তাদের জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ পালনে দ্বিগুণ প্রতিদান পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। সাহাবাদের দিকে চেয়ে দেখ, তাঁরা অধিকাংশ ফিৎনার মুখোমুখী হয়েছেন। তারা একের অধিক স্ত্রীকে বিবাহ করেছেন। তাদের এক বা দু’এর অধিক সন্তান ছিল এবং পরিবারের প্রয়োজন পূরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদের পরিমাণ ছিল সীমিত। তবুও তারা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ জিহাদ ফী সাবিলিল্লায় অংশ নিয়েছিলেন। যখন রসূলুল্লাহ্ মক্কা হতে মদীনায় হিজরত করেন, কিছু সংখ্যক মুসলিম পিছনে থেকে গিয়েছিল, যেহেতু তাদের অন্তর তাদের পরিবারের দেখা শোনা করার জন্য পরিবারের মাঝেই বন্দী হয়ে গিয়েছিল, যদিও হিজরত করা তখন ফারদ্ আল-‘আইন ছিল। সপ্তাহ চলে গেল, এক এক করে মাস, বছর কেটে গেল এবং ক্রমান্বয়ে মুসলিমরা মক্কা জয় করে। এই মুসলিমরা যারা পিছনে থেকে গিয়েছিল, সবচেয়ে বড় সুযোগই তারা হারালো। রসূলুল্লাহ্ এর সহযোগী হয়ে যুদ্ধ করা, রসূলুল্লাহ্ হালাকাগুলোতে অংশগ্রহণ করা, মসজিদে আন-নববীতে রসূলুল্লাহ্ এর খুতবাহতে অংশগ্রহণ করা, রসূলুল্লাহ এর তারবিয়্যাহতে অংশগ্রহণ, মদীনার ইসলামিক গোষ্ঠীর সাথে বসবাস এবং এরূপ আরও কত কিছু। তারা এত কিছু হারিয়েছে শুধু একটি কারণে যে তারা হিজরত করেনিইবনুল কাইয়্যুম رحمه الله বলেনঃ “সৎকর্ম বাড়তে থাকে এবং গুনাহ্সমূহও বাড়তে থাকে।” হিজরত না করা একটি পাপ ছিল যা বেড়ে গিয়েছিল। তারা এমন কত কিছু যে হারিয়েছিল। ভাল কাজের বৃদ্ধি পাওয়ার একটি উদাহরণ হল যে, একজন মসজিদে যাওয়ার এবং জামা‘আতে প্রার্থনা করার জন্য মনস্থ করল। সুতরাং মসজিদের পথে প্রত্যেক পদক্ষেপে সে আজর লাভ করে। প্রত্যেকবার সে যখন তার ভাইদের সাথে হাত মিলায়, সে আজর প্রাপ্ত হয় এবং তার গুণাহসমূহ ঝড়ে পড়ে। সে তাহিয়্যাতুল মসজিদের সলাতের জন্য আজর প্রাপ্ত হয়। সে সুন্নাহ্ সলাতের জন্য আজর প্রাপ্ত হয়। সে জামা‘আতের সলাতের জন্য আজর প্রাপ্ত হয়। অতঃপর সে গৃহের ফিরতি পথে প্রতি পদক্ষেপে আজর প্রাপ্ত হয়। আর গুণাহসমূহ বৃদ্ধি লাভ করার উদাহরণ হল, একজন মদ খায় এবং মাতাল হয়। সে তখন জিনা বা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। অতঃপর সে বাইরে যায় এবং অন্যকে হত্যা করে। অতঃপর সে গাড়ি চালাতে গিয়ে র্দূঘটনার শিকার হয় এবং মদ্যপ হওয়ার কারণে অন্যকে হত্যা করে।
    সুতরাং মক্কার মুসলিমরা দেখল যে, এসব মুসলিমরা যাঁরা মক্কা বিজয় করেছে সম্মানের দিক দিয়ে তারা অধিকতর মহান। তাঁরা অনেক বেশি শুদ্ধ। তাঁদের জ্ঞানের পরিধিও বেশি। তাঁরা কুরআনের অধিকাংশ মুখস্ত করেছে, যেখানে মক্কার মুসলিমরা মাত্র কয়েক আয়াত জানে। তাঁরা বদর, উহুদ, খন্দক ইত্যাদি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। সুতরাং এসব মুসলিমরা তাদের পরিবার নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ল, যারা তাদের পিছনে থেকে যাওয়ার কারণ। আল্লাহ্ তখন কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন।

    ﴿ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنَّ مِنْ أَزْوَاجِكُمْ وَأَوْلَادِكُمْ عَدُوًّا لَكُمْ فَاحْذَرُوهُمْ ...


    হে মু’মিনগণ! তোমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিগণের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু, অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক থাকবে...।”
    পৃথিবীর দৃষ্টিকোণ থেকে যারা তোমার সবচেয়ে কাছের দেখাচ্ছে, হতে পারে সত্যিকার অর্থে, তারা তোমাদের বড় শত্রুতারা তোমার জিহাদের সময় তোমাকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। তখন এসব মুসলিম গৃহে গমন করে লাঠি নেয় এবং তাদের স্ত্রীদের ও সন্তানদের প্রহার করতে শুরু করে এই বলে যে, “দেখ তোমরা আমার কি করেছ? আমি তোমাদের জন্য সব নেকী লাভে ব্যর্থ হয়েছি। তখন আল্লাহ্ বাকি আয়াত নাযিল করলেনঃ

    ﴿... وَإِنْ تَعْفُوا وَتَصْفَحُوا وَتَغْفِرُوا فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ


    “....তোমরা যদি তাদেরকে ক্ষমা কর, তাদের দোষ-ক্রটি উপেক্ষা কর, তাদেরকে ক্ষমা কর, তবে জেনে রাখ, আল্লাহ্ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”
    এখন তোমাদের স্ত্রীদের ও সন্তানদের উপর কোন বেদম প্রহার তোমাদের জন্য কোন ভাল কিছু বয়ে আনবে না। এটা কোন কিছু পরির্তন করতে পারবে না। অনেক দেরী হয়ে গিয়েছেসর্বোচ্চ যা তুমি করতে পারো তা হল, তাদের ক্ষমা করতে এবং কাজে লিপ্ত হতে। সুতরাং আমাদেরকে পরিবার সম্পর্কে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে, কারণ তারা আমাদের উপর অবশ্যকরণীয় ইবাদত জিহাদ ফী সাবিলিল্লিাহর পথে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে।

    ৩) তোমাদের ভাইঃ এটা হতে পারে যে তারা তোমার জন্য একটি বাধা, হতে পারে তারা তোমাকে সমর্থন করছে না বা সাহায্য করছে না বা তারা তোমার বিষয় সমূহের যত্ন করছে না, যা তুমি পিছনে ফেলে এসেছ।

    ৪) তোমাদের আত্মীয়-স্বজনঃ বর্তমান সময়ে আমরা এটাকে জাতি বলে অভিহিত করি বা স্বদেশ ভূমি, দেশ এবং জাতীয়তাবাদ, এসব কিছুই প্রতিবন্ধক, মানুষ অবশ্যকরণীয় জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর পূর্বে জাতি সত্তার গুরুত্ব দেয়। মানুষ বলে, তাদের জাতির মাঝে শান্তি বজায় রাখা কেন প্রয়োজন? কারণ এটি জাতির একটি মাসায়েল। এটা বলা ভুল, প্রথমত, আমাদের দ্বীন এর মাসায়েল দেখতে হবে, জাতির নয়, বিভিন্ন জাতি আসবে যাবে। কিন্তু আমাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের জন্য কাজ করতে হবে।

    অনেক ভাই এবং ইসলামিক জামা‘আহ আছে যারা জাতির বিভিন্ন সমস্যা প্রতিহত করার নামে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ হতে বিরত থাকে। উদাহরণস্বরূপ, কিছু মুসলিম দেশের কতিপয় মুসলিমরা বলে যে, তারা জিহাদ চায় না, কারণ এর ফলে কুফ্ফাররা আসবে এবং তাদের সমস্যা সৃষ্টি করবে। এটা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর বিরুদ্ধে কোন যুক্তিই হতে পারেনা। তোমাকে তাই করতে হবে যা আল্লাহ্ তোমাকে দিয়ে করাতে চান এবং ফলাফলের জন্য দুঃখ করা যাবে না। এটা আল্লাহর হাতে। আল্লাহ্ তাদের ধ্বংস করে দিতে পারেন, অথবা তাদের অন্তর ইসলামের জন্য খুলে দিতে পারেন।

    তুমি এ ব্যাপারে চিন্তিত হয়ো না। তুমি বিশ্বচালক নও। আল্লাহ্ আমাদেরকে তার জন্য যুদ্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। অনেক মুসলিম জাতীয়তাবাদ বা জাতির পতাকার নিচে যুদ্ধ করে। এটা জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ নয়। তারা শোনে যে তাদের কুরআনের অবমাননা করা হচ্ছে ,অথচ তারা কিছুই করে না। তারা জানে মুসলিম মহিলাদের ধর্ষন করা হয়, তবু তারা কিছুই করে না। কিন্তু যদি তাদের প্রেসিডেন্ট বা রাজা তাদেরকে কোন মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে বলে, তারা সারি বেঁধে দাড়ায় এবং যুদ্ধ করে। তারা ইসলামের জন্য যুদ্ধ করে না।

    ৫) সম্পদ যা তুমি অর্জন করেছো এবং সেই ব্যবসা যেটার লোকসান হবার ভয় করঃ এখানে দু’টি প্রতিবন্ধকতা আছে যা সম্পর্ক যুক্ত। সেই সম্পদ যার সাথে তুমি রয়েছো। যে নগদ অর্থ তোমার আছে এবং যে ব্যবসা তোমার আছে। কিছু মানুষ পিছিয়ে থাকে এবং দোকান, রেস্তোরা, এমনকি তাদের অধীনস্থদের জন্য জিহাদ ফী সাবিলিল্লায় অংশগ্রহণ করে না, এসবই প্রতিবন্ধক। কেউ আবার সামাজিক মর্যাদা যেমন- ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কারণে জিহাদ ফী সাবিলিল্লায় অংশ গ্রহণ করে না। কিন্তু জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ ফারদ্-আল-‘আইন হলে তুমি উদাসীন ভাবে বসে থাকতে পারনা। হ্যাঁ, আমাদের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকের প্রয়োজন আছে, কিন্তু কেউ কি বলতে পারে যে, “আমি ডাক্তার হওয়ার জন্য সলাত ও সীয়াম পালন করব না?” কেউ কি তা বলে? জিহাদ এবং সলাত এবং সাওমে কোন পার্থক্য নেই। এসবই ইবাদত। যখন সাহাবীগণ এই মর্মে বাইয়্যাত নিল যে, তারা রসূলুল্লাহ -কে সেভাবে নিরাপত্তা দিবে, যেভাবে তারা তাদের পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে, তখন তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের অবনতি ঘটল। তারা তাদের ব্যবসা ক্ষেত্র বা খামারের যত্ন নিতে পারত না, যদিও সেগুলোর ভাল যত্নের প্রয়োজন ছিল। সুতরাং তাদের আয়ের উপর বিশেষ প্রভাব পড়ল। কিন্তু যখন রসূলুল্লাহ্ মক্কা জয় করলেন এবং তারা বলল, “আলহামদুলিল্লাহ, আমরা সবসময় রসূলুল্লাহ্কে সমর্থন করেছি এবং এখন তাঁর জন্মভূমি যুক্ত হয়েছে এবং এখন আমরা ফিরে গিয়ে আমাদের খামারের দেখা শোনা করতে পারব। আল্লাহ্ এই আয়াত নাযিল করলেনঃ

    ﴿ وَأَنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ﴾


    তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় কর এবং নিজেদের হাতে নিজদেরকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না। তোমরা সৎকাজ কর, আল্লাহ্ সৎকর্মপরায়ণ লোককে ভালবাসেন।”

    যা আনসাররা করতে যাচ্ছিল তা আল্লাহর পক্ষ হতে ধ্বংস হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। সব মিলিয়ে তারা যা করতে চেয়েছিল,তা হল ফিরে গিয়ে নিজেদের খামার-এ কাজ করা। কিন্তু আল্লাহ্ একে ধ্বংস বললেন, যদিও জিহাদ তখন ফারদ্ কিফায়া। আবু আইয়্যুব (রাঃ) বলেনঃ “এই আয়াত আমাদের উপর নাযিল হয়েছিল, যারা ছিল একদল আনসার। যখন আল্লাহ্ তাঁর রসূল -কে সাহায্য করলেন এবং ইসলামকে আধিপত্য ও কর্তৃত্ব দান করলেন, আমরা বললাম, চল আমরা আমাদের সম্পদের কাছে ফিরে যাই এবং এর উন্নতি করি।”

    ৬) বাসগৃহ যা তোমাকে প্রশান্তি দেয়ঃ গৃহের আরবী শব্দ ‘মাসকান’, ‘মাসকান’ শব্দ ‘সাকিনা’ হতে এসেছে। যখন আমরা গৃহে অবস্থান করি, তখন শান্তি ও উদ্ধেগ মুক্ততা অনুভব করি । আমরা প্রাকৃতিকভাবে আমাদের বাসগৃহের সাথে আবদ্ধ থাকি, বিশেষত আমাদের গৃহের কিছু আচার ব্যবস্থায় আমরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ি যেমন- যে খাদ্য আমরা খাই, যে বিছানায় আমরা শুই, যে সময়সূচী আমরা অনুসরণ করি। যা কিছুই এই নির্দিষ্ট কর্মসূচীর ব্যঘাত ঘটায়, তা কোন প্রশান্তি নয় বরং নিরাপত্তাহীনতা। একজন মুজাহিদ ফী সাবিলিল্লাহর এই নির্দিষ্ট কর্মসূচীর পরির্বতন হয়। সে এমন খাদ্য খায় যা তার ঘরে খাওয়া খাদ্যের অনুরূপ নয়। সে যে বিছানায় শোয় তা আরামদায়ক নাও হতে পারে, তার ঘুমের সময়সূচীর পরিবতর্ন হতে পারে। এসবই তাকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং একজন আরব মুজাহিদ যে কোন আফগানের সাথে যুক্ত হবে, সে খাদ্যকে খুব ঝাল হিসেবে দেখবে, তাপমাত্রা এবং কর্মসূচীর পরিবর্তন দেখবে। আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) আরবের বাইরে এসে আরমেনিয়ায় এক জিহাদে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি গরম আবহাওয়ায় অভ্যস্ত ছিলেন। কিন্তু সেখানে তিনি কয়েক ফুট বরফে যুদ্ধ করেছেন। এটা মোটেও সহজ নয় এবং অবশ্যই তা একটি ত্যাগ স্বীকার। আর এজন্যই হয়ত হজ্জ জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর সাথে সম্পর্কযুক্ত। যদিও হজ্জ জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য। মানুষকে তার সময়সূচীর পরিবর্তন করতে হয়। যে পোশাক হজ্জে পড়া হয়, তা প্রতিদিনের ব্যবহার্য পোশাক নয়। তুমি চুল ও নখ কাটতে পারবেনা। এসবই হলো ফিতরার সুন্নাহ। কিন্তু তুমি এসব করতে অনুমতি প্রাপ্ত নও। হজের জন্য অর্থেরও প্রয়োজন। যদি তোমার গৃহের প্রতি ভালবাসা থাকে এবং তুমি তীব্র আকাঙ্খী হও এবং এ কারণে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ্ হতে দূরে থাক, তখন এটা একটি প্রতিবন্ধকতা। মাঝে মাঝে কোন মুজাহিদ এক বছর বা তার অধিক সময় বাইরে থাকতে পারে। এই প্রতিবন্ধকতার সমাধান হল সবর।

    অতঃপর তা আল্লাহ্ সূরা আত-তাওবার এই আয়াতের ধারাবাহিকতায় নাযিল করলেন, “...যদি আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল এবং তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর আদেশের এবং আল্লাহ্ ফাসিক লোকদের পথ দেখান না।” এখানে আল্লাহর আদেশ বলতে তার শাস্তি বুঝানো হয়েছে। যখন কেউ এই ৮টি প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে জয়ী হয়, সে এক বিশাল বিজয় লাভ করে এবং সেই সাথে আরেকটি বিজয়ঃ ফাসিক হওয়া থেকে বেঁচে যায়, যেমন আল্লাহ বলেছেন যে, যারা এই সব প্রতিবন্ধকতাকে পরাস্ত না করবে, তারা ফাসিকুন। তুমি এই বিজয় অর্জন করতে পারবে, যখন তুমি প্রমাণ করবে যে, তুমি শুধু মৌখিকভাবে নয়, বাস্তবক্ষেত্রেও আল্লাহকে, তাঁর রসূল -কে এবং জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহকে ভালবাস। অনেক ইসলামিক জামা’আ দাবী করবে যে, তারা তোমাকে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল -কে কিভাবে ভালবাসতে হয় দেখাবে। তারা নাশীদ গাবে, কুরআন তিলওয়াত করবে, কুরআন নিয়ে আলোচনা করবে, সুন্নাহ নিয়ে আলোচনা করবে এবং এভাবে আরও অনেক কিছু করবে। কিন্তু তুমি যদি সত্যি সেই ভালবাসা দেখাতে চাও, তবে বেড়িয়ে পড় এবং মুজাহিদ হও। তখন তোমার আর অধিক কথা বলার প্রয়োজন নেই, কারণ তুমি তা কাজে দেখিয়েছ। ঈমানকে কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে হবে।


    আরও পড়ুন
    ৭ম পর্ব ------------------------------------------------------------------------ ৯ম পর্ব

    Last edited by tahsin muhammad; 09-26-2023, 04:11 PM.

  • #2
    প্রিয় শায়েখ গন আস্ সালামু আলাইকুম।
    আল্লাহর জন্য আপনাদের ভালোবাসি।
    আলকায়দা এবং আই এস,
    সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন।
    আমরা আল্লাহর জন্য কাকে ভালোবাসবো এবং কাকে আল্লাহর জন্য ঘৃণা করবো।
    কাদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো..?
    আমি খুবই চিন্তায় আছি।
    উভয়ের আকিদা কি..?
    কোথায় তাদের মতভেদ...?
    আমাকে অবহিত করুন।
    ​​​​​​
    Last edited by tahsin muhammad; 09-26-2023, 04:20 PM.

    Comment


    • #3
      ভাই, আপনি নেদায়ে তাওহিদ নামক কিতাবে আল-কায়েদা সম্পর্কে জানতে পারেন।

      Comment


      • #4
        প্রিয় শায়েখ গন আস্ সালামু আলাইকুম।
        আল্লাহর জন্য আপনাদের ভালোবাসি।
        আলকায়দা এবং আই এস,
        সম্পর্কে আমাকে অবহিত করুন।
        আমরা আল্লাহর জন্য কাকে ভালোবাসবো এবং কাকে আল্লাহর জন্য ঘৃণা করবো।
        কাদের জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো..?
        আমি খুবই চিন্তায় আছি।
        উভয়ের আকিদা কি..?
        কোথায় তাদের মতভেদ...?
        আমাকে অবহিত করুন।
        মুহতারাম ভাই, আপনি নিচের লিঙ্কের পোস্ট ও পোস্টের কমেন্টগুলো পড়লে আশা করি একটা ধারণা পাবেন ইনশা আল্লাহ।

        Comment

        Working...
        X