আন-নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান”||
তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও!|| চতুর্থপর্ব।।
গণতন্ত্রের নর্দমা থেকে উত্তরণের “কাঙ্খিত সহজ কর্মপন্থা…!”।।
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এর থেকে || ৭ম পর্ব
==================================================
=====
“ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সমীপে দরদমাখা আহবান”||
তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও!|| চতুর্থপর্ব।।
গণতন্ত্রের নর্দমা থেকে উত্তরণের “কাঙ্খিত সহজ কর্মপন্থা…!”।।
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এর থেকে || ৭ম পর্ব
==================================================
=====
بِسْمِ اللّہِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
الحمد لله رب العالمين. والصلوة والسلام على رسوله الكريم. أما بعد...
হামদ ও সালাতের পর-
ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পৃক্ত মুহতারাম দ্বীনি ভাই ও বন্ধুগণ!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ.
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-
وَأَنَّ هَٰذَاصِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَاتَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ﴿الأنعام: ١٥٣﴾
“নিশ্চিত এটি আমার সরল পথ (অর্থাৎ এটি ইসলাম ও শরীয়তের আলোকে দেখানো সরল-সোজা রাস্তা)। অতএব, এ পথে চল এবং অন্যান্য পথে চলো না। তা হলে সেসব পথ তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে। তোমাদেরকে এ নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে তোমরা সংযত হও। (সূরা আন‘আম: ১৫৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র হাদীস শরীফে ইরশাদ করেছেন-
}قَدْتَرَكْتُكُمْ عَلَى الْبَيْضَاءِ لَيْلُهَا كَنَهَارِهَا{
“আমি তোমাদেরকে আলোকউজ্জ্বল দিনের মত সুস্পষ্ট পথের উপর রেখে যাচ্ছি, যার রাতগুলো দিনের মতেই আলোকউজ্জ্বল।” (মুসনাদে আহমাদ)
প্রিয় ভাইয়েরা!
আল্লাহ তা‘আলার দ্বীন ও শরীয়ত এবং এই শরীয়তের চাহিদা ও তাকাযাগুলো সবকিছুই প্রতীয়মান...তা আলোকউজ্জ্বল দিনের মতই প্রকাশমান। এখন কথা হচ্ছে: আল্লাহ তা‘আলার এই দ্বীন ও শরীয়তের মাঝে এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির কোন অবকাশ আছে কিনা? তারপর কথা হচ্ছে: এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির যে মন্দ পরিণতি; যার শিকার আমাদের দ্বীনদার ভাইয়েরা হয়েছেন এবং পুরো জাতি যার মন্দ পরিণাম ভোগ করছে, এই দ্বীনে কি এগুলো সহ্যক্ষম হতে পারে? এ ব্যাপারে আমাদের অবস্থান আপনারা জানেন বিধায় তা আর বলার অবকাশ রাখে না। কিন্তু কথা হলো: এসব কিছু বিদ্যমান থাকার পরেও যে সকল ভাইয়েরা আমাদের সাথে একমত হতে পারছেন না, তাদের খেদমতে আমাদের সবিনয় নিবেদন হলো: এ ব্যাপারে (اسْتَفْتِ قَلْبَكَ[1] ) অর্থাৎ আপনি আপনার অন্তরকে জিজ্ঞাসা করুন, এবং ([2]وَاسْتَفْتِ نَفْسَكَ ) অর্থাৎ আপনি আপনার নিজের কাছেই ফতোয়া তালাশ করুন- আপনার কি নিশ্চিত বিশ্বাস আছে যে, এই ধরনের রাজনীতি ও সংগ্রাম ইসলামে কাম্য? অথবা এই গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথে চলার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার দ্বীন বিজয়ী হবে ও দ্বীনের দুশমনরা পরাজিত হবে? অথবা আপনার অন্তর কি এ ব্যাপারে আশ্বস্ত যে, এই পথে চলার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার নাযিলকৃত শরীয়তের উপর আমল হচ্ছে? আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন, কিভাবে কারো অন্তর আশ্বস্ত হতে পারে? আর যদি অন্তর আশ্বস্ত নাই হয়, বরং সংশয়পূর্ণ হয়। তাহলে এমন সংশয়পূর্ণ বিষয়ের ক্ষেত্রে তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
}وَالْإِثْمُ مَاحَاكَ فِي صَدْرِك وَإِنْ أَفْتَاكَ عَنْهُ النَّاسُ{[3]
“গোনাহ হলো: যা তোমার মনে খটকা সৃষ্টি করে, যদিওবা মানুষ তা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া প্রদান করে।”
অন্য হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন-
۔}دَعْ مَايُرِيبُكَ إِلَى مالايُرِيبُكَ[4]{
“তুমি সন্দেহ-সংশয়পূর্ণ বিষয় ছেড়ে নিশ্চিত বিষয় গ্রহন কর।”
সুতরাং হে প্রিয় ভাই ও বন্ধুরা!
আপনাদের নিকট আমাদের প্রথম নিবেদন হলো: আপনারা গণতন্ত্রের প্রকৃত বাস্তবতা ও পরিণতি এবং শরীয়তের চাহিদা ও তাকাযাগুলো সামনে রেখে নিজেদের মুহাসাবা (হিসাব গ্রহন) করুন। কারণ, আমরা সকলেই তো সেই মহাদিবসের দিকে যাত্রা করছি, যার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন-
يَقُولُ الْإِنسَانُ يَوْمَئِذٍأَيْنَ الْمَفَرُّ﴿القيامة: ١٠﴾ كَلَّا لَاوَزَرَ ﴿القيامة: ١١﴾ إِلَىٰ رَبِّكَ يَوْمَئِذٍ الْمُسْتَقَرُّ ﴿القيامة: ١٢﴾ يُنَبَّأُ الْإِنسَانُ يَوْمَئِذٍ بِمَا قَدَّمَ وَأَخَّرَ﴿القيامة: ١٣﴾ بَلِ الْإِنسَانُ عَلَى نَفْسِه بَصِيرَةٌ ﴿القيامة: ١٤﴾ وَلَوْأَلْقَىٰ مَعَاذِيرَهُ ﴿القيامة: ١٥﴾
“সে দিন মানুষ বলবেঃ পলায়নের জায়গা কোথায় ? (১০) না কোথাও আশ্রয়স্থল নেই। (১১) আপনার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাঁই হবে। (১২) সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পশ্চাতে ছেড়ে দিয়েছে। (১৩) বরং মানুষ নিজেই তার নিজের সম্পর্কে চক্ষুমান। (১৪) যদিও সে তার অজুহাত পেশ করতে চাইবে (১৫)।” (সূরা কিয়ামাহ: ১০-১৫)
অতএব, হে প্রিয় ভাইয়েরা!
আসুন, আমরা প্রত্যেকই আমাদের আখেরাতের জীবন নিয়ে চিন্তা-ফিকির করি। কেননা, আমাদের সকলকেই মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সামনে একাই উপস্থিত হতে হবে। (তারপর নিজেদের কৃতকর্মের হিসাব দিতে হবে।) তাই এখানে সর্বাগ্রে আমাদের নিজেদের মুক্তির ফিকির করতে হবে, তারপর নিজেদের সন্তানাদি, বন্ধু-বান্ধব ও নেতাদের মুক্তির ফিকির করা উচিত।
সুপ্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ,
অতঃপর কথা হচ্ছে: যখন আমরা গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে অগ্রাহ্য করি এবং তা পরিত্যাগ করার প্রতি জোরদার আবেদন পেশ করি, তখন সাথে সাথেই আমাদেরকে বলা হয় যে, তা হচ্ছে সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা উঠানোর নামান্তর। পাশাপাশি আরো বলা হয় যে, এই মুজাহিদীনরা আমাদেরকে অস্ত্র ধারণ করে নিজেদের মাথা কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছে।
মুহতারাম ভাইয়েরা আমার!
এখন প্রশ্ন হলো: এটি কি এক চরম বাস্তবতা নয় যে, শক্তি, জুলুম ও জাহিলিয়্যাতের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতার মুকাবিলা কখনো তাদের সামনে নত হওয়ার দ্বারা অর্জিত হয়না? বাতিলদের চিহিৃত পথে/দেখানো পথে সংগ্রাম করার দ্বারা এবং তাদের সংবিধানের অনুগত থাকার দ্বারা কখনো বাতিলদের একচ্ছত্র শাসনব্যবস্থা নিশ্চিহৃ হবে না। জাহিলিয়্যাতের মুকাবিলা, ইসলামের প্রতিরক্ষা ও বিজয় অর্জন করা যদি কখনো জাহিলিয়্যাতের সাথে সমঝোতা করার দ্বারা এবং তার শর্তাবলী মেনে নেওয়ার দ্বারা সম্ভবপর হতো, তাহলে সশস্ত্র জিহাদ কখনো ফরয হতো না। এমনিভাবে وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ (অর্থাৎ আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা/ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায় এবং كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ (অর্থাৎ তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে,)সহ আরো অসংখ্য জিহাদের আয়াত নাযিল হত না। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াত ও তাবলীগ করার সাথে সাথে হিজরত ও জিহাদের পথে বের হতেন না।
সুতরাং প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
আল্লাহ তা‘আলার নামে কসম করে বলছি; ঐ সমস্ত লোকেরা সৌভাগ্যবান, যারা বর্তমান যামানার ত্বাগুতদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছে এবং আল্লাহ তা‘আলার আহবান- انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا (অর্থাৎ তোমরা বের হয়ে পড় স্বল্প বা প্রচুর সরঞ্জামের সাথে...)এর উপর সাড়া দিয়ে ‘লাব্বাইক’ বলে জিহাদের ময়দানে অবতীর্ণ হয়ে গেছেন। কিন্তু এমতাবস্থায় এখানে কেউ এই কথা বলতে পারেন যে, আমাদের সাধ্য নেই, আর সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা কি কেউ কারো উপর কখনো চাপিয়ে দিতে পারে? তাহলে এখানে আমার প্রিয় ভাইদের কাছে একটি প্রশ্ন রাখছি...যদি ধরে নেয়া হয় যে, বাতিলদের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত শক্তি আমাদের নেই, তথাপি কি এখানে বাতিলদের সৈনিক হওয়ার এবং তাদের রঙে রঙিন হওয়ার কোন সুযোগ আছে?! বর্তমানে দুর্বলতা ও অক্ষমতার দরুন কি বাতিল শাসনব্যবস্থার অনুগত হওয়ার ও জাহিলিয়্যাতের ঝান্ডাবাহী হওয়ার কোন অনুমতি এই দ্বীন প্রদান করে? এখানে কি এই দু’টি উপায়ই আছে; হয়তো এই বাতিল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা, আর যদি এটির সক্ষমতা না থাকে, তাহলে নিজেরাই বাতিল শাসনব্যবস্থার হাতিয়ার হয়ে যাওয়া; তার থেকে ভরপুর ফায়েদা (সুবিধা) নেওয়া, গুণগান গাওয়া, তার অনুসরণে গোমরাহীর পথে চলা, তার প্রতিরক্ষা, শক্তি যোগানো ও উন্নতি করা এবং নিজেদের সুবিধা আচ্ছামত ভোগ করা?!
[1] মুসনাদে আহমাদ
[2] মুসনাদে আহমাদ
[3] মুসনাদে আহমাদ
[4] সহীহ বুখারী
আরও পড়ুন
Comment