আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
ভারতের মুসলিমদের প্রতি পয়গাম
“ইসলাম তোমার দেশ, তুমি মুহাম্মাদের সৈনিক!”
।।উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এরথেকে || ২য় পর্ব
==================================================
=====
ভারতের মুসলিমদের প্রতি পয়গাম
“ইসলাম তোমার দেশ, তুমি মুহাম্মাদের সৈনিক!”
।।উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ এরথেকে || ২য় পর্ব
==================================================
=====
প্রিয় ভাইয়েরা!
আমাদের মনে রাখতে হবে, মুসলিম ও হিন্দু এবং ইসলাম ও শিরক; একটি আরেকটির সম্পূর্ণ বিপরীত বস্তু। ইসলাম হচ্ছে মানুষের রবের পক্ষ থেকে দেওয়া এক মহান আলোকবর্তিকা। পক্ষান্তরে শিরক অন্ধকার এবং নিরেট অজ্ঞতা। এটা আত্মহননের চূড়ান্ত আত্মপ্রবঞ্চনা হবে, যদি আমরা হাতের উপর হাত রেখে ‘হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই’ জাতীয় নির্জলা মিথ্যা আর ‘ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা’ নামক প্রতারণাকে বিশ্বাস করি। আমাদের এ বাস্তবতা মানতেই হবে, মুশরিক হিন্দু কখনো মুসলমানদের কল্যাণকামী হতে পারে না। আল্লাহর কিতাবই বলে দিচ্ছে, ইহুদীদের পরে মুসলমানদের সবচেয়ে নিকৃষ্ট শত্রু হচ্ছে মালাউন মুশরিকরা। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
لَتَجِدَنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَدَاوَةً لِّلَّذِينَ آمَنُوا الْيَهُودَ وَالَّذِينَ أَشْرَكُوا …﴿المائدة: ٨٢﴾
“আপনি সব মানুষের চাইতে মুসলমানদের অধিক শত্রু ইহুদী ও মুশরিকদেরকে পাবেন।” (সূরা মায়িদা: ৮২)
স্বয়ং আল্লাহর কিতাব মুসলিমদের বুঝ দিচ্ছে, এই মুশরিকদের মিষ্টি কথায় কখনো ভুলে যেওয়া না... ‘বগলের নিচের দোধারী ছুরি মুখে রাম রাম’ হচ্ছে এই নরাধমদের পুরনো খাছলত। আল্লাহর কিতাব আমাদের বলে দিচ্ছে, যদি মুসলমান নিরস্ত্র থাকে, আত্মরক্ষার অস্ত্র নিজের কাছে না রাখে, তবে মুশরিকদের চেয়ে নিকৃষ্ট কোন দুশমন পাওয়া যাবে না।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অন্যত্র ইরশাদ করেছেন-
كَيْفَ وَإِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ لَا يَرْقُبُوا فِيكُمْ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً يُرْضُونَكُم بِأَفْوَاهِهِمْ وَتَأْبَىٰ قُلُوبُهُمْ وَأَكْثَرُهُمْ فَاسِقُونَ ﴿التوبة:
٨﴾
٨﴾
“কিরূপে? তারা তোমাদের উপর জয়ী হলে তোমাদের আত্নীয়তার ও অঙ্গীকারের কোন মর্যাদা দেবে না। তারা মুখে তোমাদের সন্তুষ্ট করে, কিন্তু তাদের অন্তরসমূহ তা অস্বীকার করে, আর তাদের অধিকাংশ প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী।”(সূরা তাওবা: ৮)
অর্থাৎ كَيْفَ وَإِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُم“কিভাবে মুশরিকরা সন্ধির উপর অটল থাকতে পারে? যদি তারা তোমাদের উপর ক্ষমতা পেয়ে বসে, তাহলে لَا يَرْقُبُوا فِيكُمْ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً “তারা তোমাদের ব্যাপারে না আত্মীয়তার বা প্রতিবেশী হওয়ার কোন তোয়াক্কা করবে, না নিজেদের করা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে? يُرْضُونَكُم بِأَفْوَاهِهِمْ “তারা শুধু মুখের কথায় তোমাদের সন্তুষ্ট করে।’ (অর্থাৎ এটা তাদের মুখের জমা খরচ। যখন তারা অপারগ হয় বা তাদের কোন প্রয়োজন পড়ে, তখন বলে ভারতবর্ষে কোন ধর্মীয় বিভেদ নেই। সব ধর্মের লোকেরা এখানে সমানভাবে বাস করবে। يُرْضُونَكُم بِأَفْوَاهِهِمْ ‘তারা মুখের কথায় তোমাদের সন্তুষ্ট করে’ অথচ বস্তবতা হচ্ছে) وَتَأْبَىٰ قُلُوبُهُمْ ‘তাদের অন্তর তা প্রত্যাখান করে’। তাদের অন্তরে তা না থাকার দরুন-ই অস্বীকার করে। وَأَكْثَرُهُمْ فَاسِقُونَ ‘আর তাদের অধিকাংশরাই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী।’ তারা যখন ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব পায়, মুসলমনরা যখন নিরস্ত্র আর দুর্বল হয়, তখন পুনরায় তারা কোন প্রতিশ্রুতি, ওয়াদা, চুক্তি বা আইনের তোয়াক্কা করে না।
প্রিয় ভাইয়েরা!
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি আমাদের সামনে রাখতে হবে, তা হচ্ছে, আমরা বিপ্লব করি বা না করি, বাতিল কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব করবেই। সে কখনোই থেমে থাকবে না। তারা আমাদের দ্বীনদারী সহ্য করবে, এটা কখনই সম্ভব নয়। শোয়াইব আ. ও তাঁর কওমের মাঝে যে আলোচনা হয়েছিল, তা কুরআন খুলে দেখুন। এ আলোচনা আজকের মুশরিকদের স্বভাব বুঝার জন্য যথেষ্ট। শোয়াইব আ. তাঁর কওমকে সম্বোধন করে বলেছিলেন-
وَإِن كَانَ طَائِفَةٌ مِّنكُمْ آمَنُوا بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ وَطَائِفَةٌ لَّمْ يُؤْمِنُوا فَاصْبِرُوا حَتَّىٰ يَحْكُمَ اللَّهُ بَيْنَنَا وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ ﴿الأعراف:
٨٧﴾
٨٧﴾
“আর যদি তোমাদের একদল ঐ বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে যা নিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি এবং একদল বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে ছবর কর যে পর্যন্ত না আল্লাহ আমাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন। তিনিই শ্রেষ্ট মীমাংসাকারী।” (সূরা আ‘রাফ: ৮৭)
উলামায়ে কেরাম এখানে ব্যাখ্যা করেছেন যে, শোয়ায়েব আ. তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেননি, তাদেরকে ধমক দেননি, উল্টো তিনি তাদেরকে যুদ্ধ-বিগ্রহ বাধাতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন, কেউ কারো বিরুদ্ধে কোন ধরণের এ্যাকশন নিবে না। দেখা যাক আল্লাহ কী ফায়সালা দেন, অবস্থা কোন দিকে মোড় নেয়? ব্যস, আপনারা তার অপেক্ষা করুন। এরই মধ্যে ক্ষমতাধর লোকেরা বলে উঠল-
قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِن قَوْمِهِ لَنُخْرِجَنَّكَ يَا شُعَيْبُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَكَ مِن قَرْيَتِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَارِهِينَ ﴿الأعراف:
٨٨﴾
“তার সম্প্রদায়ের দাম্ভিক সর্দাররা বললঃ হে শোয়ায়েব, আমরা অবশ্যই তোমাকে এবং তোমার সাথে বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে শহর থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করবে। শোয়ায়েব বললঃ আমরা অপছন্দ করলেও কি?” (সূরা আ‘রাফ: ৮৮)
অর্থাৎ হে শোয়ায়েব! অবশ্যই আমরা তোমাকে এবং তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে, তাদের সবাইকে আমাদের এলাকা থেকে বের করে দেবো। (তোমাদের জন্য রাস্তা একটাই, তা হলো-) অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে। (নাউযুবিল্লাহ, তারা মুশরিক হয়ে যাবে!)... এ ধরণের ধমক কুফর ও শিরকের পন্ডিতরা সর্বদা ঈমানদারদের দিয়ে থাকে। ‘মতবিনিময়’ আর সহাবস্থানের ধ্বজাধারীরা আজও যখন মুসলমানদের দুর্বল পায়, তখন তাদের সুর বদলে যায়। ‘অসাম্প্রদায়িকতা আর আইনের শাসন’ জাতীয় দাবিগুলির পর্দা চেহারাগুলো থেকে খুব দ্রুতই খুলে পড়ে যায়।
আমার ভাইগণ!
বলুন তো, মিয়ানমারের মুসলমানরা কাকে কষ্ট দিয়েছিল? তারা কার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল? তারা কখন চরমপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদের দাওয়াত দিয়েছিল? তারা তো লাঠি পর্যন্ত উঠায়নি। তারা তো একেবারে নিরস্ত্র ছিল। অসহয় দুর্বল ছিল। তারা মানবতা এবং স্বদেশের দোহাই দিয়ে নিরাপত্তা আর বেঁচে থাকার প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিল। তাদেরকে কি মাফ করা হয়েছে? তাদের প্রাণ ভিক্ষা দেওয়া হয়েছে? না, বরং তাদের উপর গণহত্যা চালানো হয়েছে। প্রায় লক্ষ মুসলিম নদীতে ডুবে মরেছে। হিংস্র হায়েনার হৃদয়েও দয়া-মায়া থাকে। মিয়ানমারের ভূমিতে মুসলিমদের সাথে যা কিছু করা হয়েছে, তা এমন নির্দয়ভাবে করা হয়েছে যে, বনের হিংস্র জানোয়াররা পর্যন্ত ব্যথায় ব্যথিত হয়েছে। এসব নির্যাতন আজকের মিডিয়া যুগে এবং বিশ্বশক্তির চোখের সামনে হয়েছে। চুপিসারে পর্দার আড়ালে হয়নি। বরং দিবালোকে... ক্যামেরার সামনে হয়েছে। লাঠি, খঞ্জর, আগুন আর পেট্রোল নিয়ে মুশরিক বৌদ্ধরা মুসলিমদের উপর হামলে পড়েছিল। পুলিশ আর সেনাবাহিনী ঐ গুন্ডাদের সমর্থন আর নিরাপত্তায় ছিল... নির্মমভাবে নতুন নতুন পন্থায় নির্যাতন করা হয়েছে... তাদেরকে কষ্ট দিয়ে দিয়ে মারা হয়েছে... শিশু-বাচ্চাদেরকে মা-বাবার সামনে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। জীবিত মানুষের পর্যন্ত হাত-পা এবং কান কেটে ফেলা হয়েছে। মুসলিম নারীদের সাথে প্রকাশ্যে দুর্ব্যবহার করার পর তাদের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়েছে। এমন একটি দু’টি ঘটনা নয়, বরং অসংখ্য অগণিত ভিডিও ফুটেজ আছে। গ্রামের পর গ্রাম অল্প কিছুদিনের মধ্যে বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। এখনো আমাদের লাখ লাখ বোন ঘর ছাড়া হয়ে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়ে নিজেদের সে সব জুলুমের দাস্তান শোনাচ্ছে।
আরও পড়ুন
Comment