আন নাসর মিডিয়াপরিবেশিত
“আল কুদসের প্রহরী”
।। উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
এরথেকে || ১ম পর্ব
=========================================
==============
“আল কুদসের প্রহরী”
।। উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহ
এরথেকে || ১ম পর্ব
=========================================
==============
بسم اللہ الرحمن الرحیم،الحمد للہ رب العالمین والصلاۃ والسلام علی رسولہ الکریم،رب اشرح لي صدری ویسر لي أمری واحلل عقدۃ من لسانی یفقہوا قولي!
ভারতীয় উপমহাদেশ ও পুরো দুনিয়ার প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা আমার!
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ :
বাইতুল মুকাদ্দাস আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের পূণ্যভূমি। যেখানে মুসলমানদের প্রথম কিবলা অবস্থিত। যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মিরাজ ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। মসজিদে হারাম ও মসজিদে নববীর পরে সবচেয়ে পবিত্রতম মসজিদ হলো এই মসজিদে আকসা। আজ এই বাইতুল মাকদিসকেই আমেরিকা ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করেছে। এটা বড়ই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, বড়ই বেদনাদায়ক ঘটনা। কিন্তু প্রিয় ভাইয়েরা আমার! এই ঘটনা ও দূর্যোগ হঠাৎ করেই আমাদের উপর আসেনি, বরং এর পূর্বে এ রকম ঘটনার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল, যার উপর উম্মত হিসাবে আমাদের অনুভূতিশূন্যতা ও নিশ্চুপতা ছিল চূড়ান্ত পর্যায়ের। যার কারণে আজ আমাদেরকে এই ঘটনা অবলোকন করতে হচ্ছে! আসলে প্রত্যেক ঘটনাই আমাদেরকে ভাল-মন্দ বুঝাতে, বন্ধু-শত্রু চিনতে, স্বপ্নের ঘোর থেকে জাগাতে ও উঠাতে যথেষ্ট ছিল। কিন্তু আফসোস আমরা জাগিনি... আমরা উঠিনি...।
খেলাফতে উসমানিয়ার পতন বিশ্বব্যাপী এক বেদনাদায়ক ঘটনা ছিল। তারপর মুসলিম বিশ্বের হৃদপিন্ডে ইসরাইল রাষ্ট্র কায়েম করা, বানর ও শুকরের বংশধর ইয়াহুদীরা মসজিদে আকসার জবর দখল করা এবং লাখো মুসলমানদেরকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া এক তোলপাড় করা ঘটনা ছিল। অত:পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র এক নিকৃষ্ট বন্দিখানায় পরিবর্তিত হয়ে গেল, মান-সম্মান ধূলোয় মিশে গেল আর মুসলমানদের রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল... বিভিন্ন ঘটনা পরম্পরায় ঘটতেই লাগল। যার দ্বারা হক-বাতিল ও লাভ-ক্ষতির পরিচয় চিনতে-জানতে কোন সমস্যাই ছিল না। কিন্তু আফসোস! উম্মত হিসাবে আমাদের এর পরিচয় জানা সম্ভব হয়নি।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
ইয়াহুদীদের অপরাধের জিম্মাদার কখনো একা ইসরাইল ছিল না এবং থাকবেও না। কিন্তু মুসলিম বিশ্বের হৃদপিন্ডে এই ইয়াহুদীদের শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে ইউরোপীয় খ্রিস্টানরাই এর ভিত্তি তৈরি করে। আর এ ইসরাইল তো সে ক্রুসেড যুদ্ধসমূহের ফলাফল, যা বৃটেন, ফ্রান্স ও রাশিয়া উপনিবেশবাদের নামে আমাদের বিরুদ্ধে লড়েছিল। অত:পর যখন আধুনিক বিশ্বে যুলুমের আইন প্রণীত হল এবং কুফরী রাষ্ট্রের মাতবরী আমেরিকার কাছে চলে গেল, তখনই আমেরিকা খ্রিস্টান দুনিয়ার এই জারজ সন্তানদেরকে কোলে তুলে নিল। তারপর সেই দিন আর আজকের দিন! ইসরাইলের স্থায়ীত্ব, তার শত্রুদের প্রতিহত করা এবং তাকে শক্তিশালী করাসহ সকল জিম্মাদারী এই জালিম আমেরিকা আঞ্জাম দিয়ে আসছে। ইসরাইলের সকল জুলুমকে আমেরিকা ন্যায়পরায়ণতা বলেছে, তার প্রত্যেক বাড়াবাড়িকে বৈধতা দান ও অবশ্য প্রয়োজনীয় কাজ বলে নাম দিয়েছে এবং প্রত্যেক ফোরামে, ময়দানে আমেরিকা ইসরাইলের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে... আজও করে যাচ্ছে...।
অন্যদিকে আমাদের মাথার উপর যে গোত্রগুলিকে এখানকার শাসক বানিয়েছে, তাদের প্রধান কাজই হল তার বৈশ্বিক প্রভুদের গোলামী করা। যখনই ফিলিস্তিনে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তখনই তার থেকে উম্মাতের মুজাহিদদেরকে দূরে রাখার জন্য এবং এই আন্দোলনের বুকে ছুরি চালানোর কাজটা আরব বিশ্বের বিশ্বাসঘাতক শাসকেরা খুব ভাল ভাবেই আঞ্জাম দিয়েছে। এই জালিম শাসকেরা আল্লাহর বিরুদ্ধে, ইসলামের বিরুদ্ধে আরব জাতীয়তাবাদের পূজা করেছে। তারা নিজেদেরকে হিরো দেখানোর জন্য এক দুইবার ইসরাইলকে চোখ রাঙ্গিয়েছে, কিন্তু আল্লাহদ্রোহী, নফস ও শয়তানের গোলাম উম্মতের এই গাদ্দারেরা কখনো কুফরী বিশ্বের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারেনি। তাদের মুখের ক্ষমতা এমনভাবে হারিয়ে ফেলেছে যে, তারা ইহুদীদের পায়ের তলা চাটার মধ্যেও নিজেদের সুরক্ষা ও সুবিধা দেখতে পায়। অত:পর উপসাগরীয় যুদ্ধের বাহানায় যখন আমেরিকা মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র হারামাইন শরীফাইনের পাশে নিজের ত্রুসেডার বাহিনী অবতরণ করিয়েছে, যার মাধ্যমে আরেকবার এই বাস্তবতা আমাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, আমেরিকা, ইসরাইল এবং মুসলিম বিশ্বে আধিপত্য স্থাপনকারী স্থানীয় তাগুত শাসকেরা সবাই এক জোট এবং তারা একে অপরের সুযোগ-সুবিধার সাথে জড়িত। ঠিক এ সময়ের মধ্যেই আল্লাহর রহমতে আবির্ভাব হয় জিহাদের পুনর্জীবন দানকারী শায়েখ উসামা বিন লাদেন রহ. ...। তিনি উম্মতের সামনে তাদের প্রথম দুশমন আমেরিকার পরিচয় তুলে ধরেন...। তিনি আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষনা করেন। আমেরিকাকে জুলুমের শাসন ব্যবস্থার পৃষ্ঠপোষক ও সাপের মাথা বলে আখ্যায়িত করেন। স্বীয় মাজলুম উম্মতকে বুঝিয়েছেন যে, ইসরাইলের বাইতুল মুকাদ্দাস জবর দখল করা ও মুসলিম বিশ্বে গাদ্দার শাসকদের আধিপত্য বিস্তার করা, এ সব কিছুরই মূল হোতা ও পৃষ্ঠপোষক হলো এই আমেরিকা। সুতরাং আমেরিকার দাপট চূর্ণ করা ব্যতীত ইসলাম ও মুসলমানদের স্বাধীনতার স্বপ্ন কখনো বাস্তবায়িত হতে পারে না।
শাইখ উসামা রহ. এক মুবারক কসম খেয়ে বলেছিলেন-
أقسم بالله العظيم ألذي رفع السماء بلا عمد لن تحلم أمريكا و لا من يعيش في أمريكا بالأمن قبل أن نعيشه واقعا في فلسطين و قبل أن نخرج جميع الجيوش الكافرة من أرض محمد صلى الله عليه و سلم
.
অনুবাদ : “মহান আল্লাহ তায়ালার নামে কসম করে বলছি, যিনি আসমানকে খুঁটিবিহীন দাঁড় করিয়েছেন। আমেরিকা ও আমেরিকাতে বসবাসরত লোকেরা কখনো শান্তির স্বপ্নও দেখতে পারবে না, যতক্ষণ না আমরা ফিলিস্তিনে বাস্তবে শান্তিতে বসবাস করতে পারব এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জমিন থেকে সকল কাফির সৈন্যকে প্রত্যাহার করে নেয়া হবে”।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার!
মুজাহিদদের টার্গেট আমেরিকা ছিল। শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. ইহুদী ও ত্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদের আহবান করেছিলেন। মুজাহিদরা রিয়াদের ক্ষমতার পতন ঘটানোর আহবান করেননি। তারা ইসলামাবাদের দিকেও নিজেদের হাতিয়ার তাক করেননি। তারা শুধু আমেরিকাকে মেরেছেন এবং আমেরিকাকেই মারার প্রতি উম্মাতকে আহবান করেছেন!
মুজাহিদদের ১১ই সেপ্টেম্বরের মুবারক হামলা তো আমেরিকানদের উপরই হয়েছে, তা ইসলামাবাদ বা রিয়াদ বা কায়রোর উপর হইনি। কিন্তু ১১ই সেপ্টেম্বরের মুবারক হামলার পর ইসলাবাদ, কায়রো ও রিয়াদের প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধান মুজাহিদদের পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াল। তারা আল্লাহর বাহিনী ও শয়তানের বাহিনীর মাঝে চলমান যুদ্ধে সর্বদা যুগের শয়তানদেরই আনুগত্য, সহায়তা ও নিরাপত্তার রাস্তা বেঁচে নিয়েছে। তারা তাদের আকাশসীমা, সমুদ্র বন্দর ও ভূমি আমেরিকান সৈন্যদের ব্যবহারের জন্য ছেড়ে দিয়েছে। আমেরিকার যুদ্ধকে নিজেদের যুদ্ধ বলেছে। আমেরিকার প্রতিরক্ষার জন্য তারা তাদের জাতির নিরাপত্তাকে ভূলুন্ঠিত করেছে। যে সমস্ত মুজাহিদীন আল কুদসকে মুক্ত করার জন্য লড়াইয়ের পণ করেছেন এবং ইয়াহুদীদের ও ত্রুসেডারদেরকে মেরে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য কসম খেয়েছেন, এ সমস্ত শাসক ও সেনাপ্রধানরা মুজাহিদদেরকে খুঁজে খুঁজে শহীদ করতে লাগল, তাঁদেরকে ধরে ধরে আমেরিকানদের কাছে বিক্রি করে দিতে লাগল, তাদের জেলখানা ও বন্দিখানাগুলো মুজাহিদদের দিয়ে ভরে ফেলল এবং যারাই জিহাদের সহযোগিতা করেছে, তাঁদের গ্রামের পর গ্রাম উজাড় করে দিতে লাগল...!
আফসোসের কথা হল. এ সমস্ত গাদ্দার শাসকেরা এত কিছুর পরেও এ সত্য স্বীকার করেনি যে, তারা বাইতুল মুকাদ্দাসকে বেচা-কেনার পণ্য বানিয়েছে। তাদের নিজেদের বিলাসিতা ও শাসন ক্ষমতা খুব প্রিয় হওয়ার কারণে সব ধরনের কাফের ও জালিমদের সাথে উঠা-বসাকে ন্যায়ানুনাগ ও ইনসাফ ভেবেছে! ফিলিস্তিনকে তারা বিক্রি করে দিয়েছে, কিন্তু ফিলিস্তিনের আলোচনা এখনো ঐ সমস্ত গাদ্দারেরা ছাড়েনি। আসলে তারা কার্যতভাবে আমেরিকা ও ইসরাইলের স্থলাভিসিক্ত। কিন্তু ফিলিস্তিনের নামের আলোচনা বিভিন্ন কন্ফারেন্সে ও চুক্তিতে অভিনয় করে উল্লেখ করা থেকে এখনো বিরত থাকছে না।
ফিলিস্তিনের অর্ধেকের চেয়ে বেশী ভূমি ইয়াহুদীদের, এ কথা তারা প্রকাশ্যে স্বীকার করেছে। ১৯৬৭ সালের সীমানাকে আসল সীমানা বলা হচ্ছে, অথচ ১৯৬৭ সালের আগে ইসরাইলের ভূমিও ফিলিস্তিনেরই ছিল। এই সেই ইসলামী ভূখন্ড যাকে স্বাধীন করার জন্য পুরো উম্মতের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায়। এখন তারা ফিলিস্তিনের দুই তৃতীয়াংশ ভূমি দিয়ে শুধু এক তৃতীয়াংশের জন্য যাচনা করছে। কিন্তু আমেরিকা তো আমেরিকাই! নিজেরা ইসলামের দুশমন এ বিষয়টি লুকানো তো এই সমস্ত গাদ্দার শাসক ও সেনাপ্রধানদের দরকার, আমেরিকার তো কোন দরকার নেই। আর তাই আজ আমেরিকা চূড়ান্ত গোয়ার্তুমির সাথে পুরো বাইতুল মুকাদ্দাসকে ইয়াহুদীদের অধিকার বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
আরও পড়ুন
Comment