আল-হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
‘তুফানুল আকসা’ অভিযান এবং তার প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত কয়েকটি প্রশ্নোত্তর
|| শায়খ খালিদ বিন উমর বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ
এর থেকে || শেষ পর্ব
===================
মুজাহিদদের প্রতি বার্তা
প্রশ্ন: বিভিন্ন রণাঙ্গনে ও সীমান্ত প্রহরায় রত মুজাহিদ্বীনের প্রতি আপনাদের বার্তা কী?
ইসলামের সীমান্তগুলোতে অবস্থানকারী মুজাহিদ্বীনের প্রতি আমাদের বার্তা হল, তাদেরকে আমরা বলবো:
আমার প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা!
আপনারা প্রস্তুতি গ্রহণ করুন, আল্লাহর সাহায্যে ভবিষ্যতে হতে চলা চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করুন। কারণ এই অভিযান ও ‘তুফানুল আকসা’ অগ্রযাত্রা আল্লাহর সাহায্যে পরবর্তীতেও চলমান থাকবে। তাই আসন্ন যুদ্ধগুলোর জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করুন। শুধু তাই নয় বরং আপনারা মালহামা কুবরা তথা মহাকালের মহাযুদ্ধের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করুন। এই বিষয়ে মনস্থির করুন। সেই মহাযুদ্ধের কথা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে ইরশাদ করে গিয়েছেন। তাই সর্বদাই দ্বীন ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতিরক্ষার জন্য আপনারা প্রস্তুত থাকুন। আপনারা এই দ্বীনের জন্য দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়ে যান।
আল্লাহর তরে হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা!
বর্তমান সময়ে পৃথিবীর সর্বত্র ইহুদী ও আমেরিকানদেরকে টার্গেট করার প্রতি মনোনিবেশ করা আপনাদের একান্ত কর্তব্য। না ডুবিয়ে সমুদ্রে তাদের কোনো জলযান ছেড়ে দেবেন না। ভূপাতিত না করে আকাশে তাদের কোনো উড়োজাহাজ ছেড়ে দেবেন না। ঝড় বইয়ে না দিয়ে তাদের কোনো ব্যারাক ছেড়ে দেবেন না। পৃথিবী থেকে বিদায় না দিয়ে তাদের একজন সৈনিককেও আপনারা ছেড়ে দেবেন না। তাদের ঘর-বাড়ি অফিস-আদালত কোথাও তাদের ব্যাপারে নিজের দায়িত্ব পালন না করে তাদেরকে ছেড়ে দেবেন না। তাদের ঘরেই তাদেরকে লক্ষ্যবস্তু বানান। সর্বত্র তাদের উপর আঘাত হানুন। আজ বিশ্বের সকলেই ইহুদী আমেরিকান, ব্রিটিশ, ফরাসি এবং ইহুদী ও ক্রুসেডারদের জোটে অংশগ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের অপারেশনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
আপনারা আপনাদের জিহাদ চালু রাখুন। আল্লাহ আপনাদেরকে হেফাযত করুন। জেনে রাখুন, আল্লাহ তায়ালা আপনাদের সঙ্গে রয়েছেন। তিনি কিছুতেই আপনাদের আমল বিনষ্ট করবেন না। আপনারা মানুষকে জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহর জন্য উদ্বুদ্ধ করুন, যেমনটা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ইরশাদ করেছেন:
وَلَا تَهِنُوا فِي ابْتِغَاءِ الْقَوْمِ ۖ إِن تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ ۖ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لَا يَرْجُونَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا ﴿١٠٤﴾
অর্থ: “তাদের পশ্চাদ্ধাবনে শৈথিল্য করো না। যদি তোমরা আঘাতপ্রাপ্ত, তবে তারাও তো তোমাদের মতই হয়েছে আঘাতপ্রাপ্ত এবং তোমরা আল্লাহর কাছে আশা কর, যা তারা আশা করে না। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা নিসা ০৪: ১০৪]
তাই আপনারা অটল অবিচল থাকুন— আল্লাহ আপনাদেরকে হেফাযত করুন! আল্লাহর শত্রুদের বক্ষ ভেদ করার ক্ষেত্রে আপনাদের নিশানাকে তিনি সঠিক করে দিন। তাদের বক্ষ ও মস্তক চূর্ণ করার তাওফীক দান করুন!
তাদেরকে ছেড়ে দেবেন না বরং সর্বত্র তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকুন। নিশ্চয়ই বিজয় সন্নিকটে... ইনশা আল্লাহ, সন্নিকটে। বিজয় তো শুধু এমন লোকদের হাতেই আসবে, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকারের ব্যাপারে সত্যবাদী; তাদের মাঝে কেউ কেউ নিজেদের মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন, আবার কেউ কেউ অপেক্ষায় রয়েছেন, তারা কৃত অঙ্গীকার একটুও পরিবর্তন করেননি।
মুসলিম জনসাধারণের উদ্দেশ্যে বার্তা
প্রশ্ন: মুসলিম জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আপনাদের বার্তা কী?
মুসলিম জনসাধারণের প্রতি আমাদের বার্তা হল, তাদেরকে আমরা বলবো:
হে মুসলিম উম্মাহ!
আজ ইহুদী ও ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে আমাদের এই লড়াই ধর্মীয় লড়াই। তাই কেউ যেন আপনাদেরকে এ কথা বলে প্রতারিত না করে যে, আমরা ইহুদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি শুধু এজন্যই যে, তারা মুসলিমদের ভূমি দখল করেছে অথবা আমেরিকানরা মুসলিমদের ভূমিতে আগ্রাসন চালিয়েছে কিংবা তারা আমাদের উপর চেপে বসেছে। যেগুলো বলা হলো এগুলোও আমাদের লড়াইয়ের কারণ কিন্তু এছাড়াও আমাদের মূল লড়াই এজন্যই যে, তারা মহান আল্লাহর প্রতি কুফরী করেছে। তারা মুসলিম উম্মাহর উপর চেপে বসেছে এবং তাদের সম্পদ চুরি করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত হবার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এক হাদীসে এভাবে ইরশাদ করেছেন:
"بعثت بالسيف بين يدي الساعة حتى يعبد الله وحده لا شريك له، وجعل رزقي تحت ظل رمحي، والذلة والصغار على من خالف أمري، ومن تشبه بقوم فهو منهم."
“কিয়ামতের পূর্বে আমাকে তরবারি দিয়ে পাঠানো হয়েছে, যেন অংশীদারবিহীন এক আল্লাহর ইবাদত হয়; আমার বর্শার ছায়া তলে আমার রিযিক রাখা হয়েছে, আমার হুকুমের বিরোধিতাকারীর জন্য লাঞ্ছনা গঞ্জনা অবধারিত হয়ে গিয়েছে, যে ব্যক্তি কোনো গোত্রের সঙ্গে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।[1]”
অপর একটি সহীহ হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
"أمرت أن أقاتل الناس حتى يشهدوا أن لا إله إلا الله وأني رسول الله ويقيموا الصلاة ويؤتوا الزكاة، فإن فعلوا ذلك فقد عصموا مني دماءهم وأموالهم إلا بحق الإسلام، وحسابهم على الله."
“আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি মানুষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকি, যতক্ষণ তারা এই সাক্ষ্য না দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল; এরপর যতক্ষণ তারা সালাত কায়েম না করবে, যাকাত প্রদান না করবে। যখন এগুলো তারা পালন করবে, তখন আমার থেকে নিজেদের রক্ত ও সম্পদ তারা মুক্ত করে নিলো, তবে ইসলামের কোনো হুকুমের কারণে হলে ভিন্ন কথা; আর তাদের হিসাব আল্লাহর কাছে হবে।[2]”
এ সমস্ত হাদীস থেকে বোঝা যায়, আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবো আর আমাদের লড়াই হবে ধর্মীয়। হয় তারা ইসলাম গ্রহণ করবে অথবা বশ্যতা স্বীকার করে অবনত মস্তকে নিজেদের হাতে জিযিয়া প্রদান করবে অথবা আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হওয়া পর্যন্ত আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই থাকবো। আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী করার লক্ষ্যেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।
সেই সাথে আমাদের দেশ ও পবিত্র স্থানগুলো তাদের হাত থেকে রক্ষা করাও আমাদের লড়াইয়ের উদ্দেশ্য। এই স্তর পার হলে আমাদের আক্রমণাত্মক জিহাদ ও লড়াই আরম্ভ হবে। কিন্তু আজ আমাদের লড়াই তাদের বিরুদ্ধে রক্ষণাত্মক ও প্রতিরক্ষামূলক। আমরা আমাদের দ্বীন, পবিত্র স্থান, দেশ ও সম্পদ রক্ষার জন্য তাদের বিরুদ্ধে লড়ছি।
হে মুসলিমগণ!
আজ গোটা উম্মাহ আগ্রাসন কবলিত। শত্রুরা তাদের উপর চেপে বসেছে। হয় এই শত্রু বিদেশি, যারা আমাদের দেশে এসে আমাদের বিরুদ্ধে লড়ছে কিংবা এই শত্রু আমাদের ঘরের, যারা আমাদের শাসক সেজে আল্লাহর শরীয়ত পরিবর্তন করে কাফেরদের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে।
তাই হে আল্লাহর বান্দাগণ!
লক্ষ্য করে দেখুন, শত্রুরা কেমন করে আমাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় চেতনা নিয়ে লড়াই করছে! এইতো আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অধিকৃত ফিলিস্তীনে ইহুদীদের কাছে এসে তাদেরকে বললেন:“আমি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তোমাদের কাছে আসিনি; আমি এমন একজন ইহুদী হিসেবে এসেছি, যার দাদা হত্যা থেকে বাঁচতে পলায়ন করেছিলেন।” তিনি জার্মানিতে নাৎসিদের গণহত্যার কথা বুঝিয়েছেন।
তাই আপনারা লক্ষ্য করুন, কেমন করে তারা তাদের বিকৃত ধর্মের শ্লোগান তুলে ধর্মীয় লড়াই আমাদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করছে। এ অবস্থায় কেমন করে কেউ এ কথা ভাবতে পারে যে, তারা ফিলিস্তীনে মুসলিমদের বিরুদ্ধে এজন্য লড়াই করছে যে, ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসী অথবা তারা অমুক দলের সদস্য কিংবা অমুক জামাআতের সদস্য? কিংবা তারা কি আল-কায়েদা কিংবা কাসসাম ব্রিগেডের বিরুদ্ধে শুধু লড়াই করছে?! এগুলো আজেবাজে কথা। তারা আমাদের সাথে যুদ্ধ করছে কারণ আমরা মুসলিম। এর প্রমাণ হলো তাদের ওই সমস্ত কর্মকাণ্ড, যা তারা আজ গাজা ও অন্যান্য জায়গায় করছে।
বৃদ্ধদের কী দোষ?! নারীদের কী দোষ?! আমাদের ধর্মে তাদের হত্যা করা হারাম। আপনাদের ভাইয়েরা নারী শিশুদেরকে হত্যা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যে সমস্ত শিশু বোমার আঘাতে নিহত হচ্ছে তাদের কী অন্যায়?! তাদের কী দোষ?! তাদের এক রাজনীতিবিদকে টেলিভিশনের পর্দায় দেখেছি সে বলছে, এই মহিলারা হত্যার যোগ্য। কেন? কারণ তারা নিজেদের স্বামীদেরকে তালাক দেয় না, যারা ইহুদীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে।” এটা হল তাদের হিংসা-বিদ্বেষ, যা তাদের কথার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তাদের অন্তরে লুক্কায়িত বিদ্বেষ আরও ভয়ানক।
হে আল্লাহর বান্দারা!
আজ মুসলিম উম্মাহ আগ্রাসন কবলিত। তাই আমাদের জেগে উঠতে হবে। আবশ্যকীয়ভাবে আল্লাহর পথে লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করতে হবে। যেই গোলক-ধাঁধায় আমরা বসবাস করছি, তা থেকে আমাদের এই উম্মাহকে উদ্ধার করতে হবে। সেই দায়িত্ব শুধু আল-কায়েদা অথবা অন্য কোনো দলের মুজাহিদীনের নয়; হে মুসলিম ভাই! এ দায়িত্ব আমার আপনার, আমাদের সকলের। হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
لا تَحاسَدُوا، ولا تَناجَشُوا، ولا تَباغَضُوا، ولا تَدابَرُوا، ولا يَبِعْ بَعْضُكُمْ علَى بَيْعِ بَعْضٍ، وكُونُوا عِبادَ اللهِ إخْوانًا. المُسْلِمُ أخُو المُسْلِمِ، لا يَظْلِمُهُ، ولا يَخْذُلُهُ، ولا يَحْقِرُهُ. التَّقْوَى هاهُنا. ويُشِيرُ إلى صَدْرِهِ ثَلاثَ مَرَّاتٍ. بحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أنْ يَحْقِرَ أخاهُ المُسْلِمَ. كُلُّ المُسْلِمِ علَى المُسْلِمِ حَرامٌ؛ دَمُهُ، ومالُهُ، وعِرْضُهُ.
“তোমরা একে অপরের প্রতি হিংসা করো না, (ক্রয় করার ভান করে) মূল্য বৃদ্ধি করে ধোঁকা দিও না। একে অপরের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে না। একে অপরকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন (অবজ্ঞা প্রকাশ) করবে না। তোমাদের একজনের সাওদা করা শেষ না হলে ঐ বস্তুর সাওদা কিংবা কেনা-বেচার প্রস্তাব করবে না। হে আল্লাহর বান্দাগণ! তোমরা পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে যাও। মুসলিম মুসলিমদের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, অসম্মান করবে না, তুচ্ছ ভাববে না। ‘তাকওয়া’ এখানে’- এটা বলার সময় তিনি স্বীয় বক্ষস্থলের প্রতি তিনবার ইঙ্গিত করেছিলেন। কোনো মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করাটা মন্দ ব্যবহারের জন্য যথেষ্ট (অর্থাৎ এরূপ তুচ্ছ জ্ঞান প্রদর্শন দ্বারা পাপ কার্য হওয়া সুনিশ্চিত) এক মুসলিম অন্য মুসলিমকে খুন করা, তার মাল গ্রাস করা ও সম্মানে আঘাত দেয়া হারাম।” [মুসলিম: ২৫৬৪]
সুতরাং একজন মুসলমানের জন্য তার অপর মুসলিম ভাইয়ের উপর জুলুম করা জায়েজ নয়। এমনিভাবে একজন মুসলমানের পক্ষে তার অপর মুসলিম ভাইকে তুচ্ছ জ্ঞান করাও জায়েজ নয়।
ইমাম বুখারী ও মুসলিম হযরত আবু মুসা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন:
إنَّ المُؤْمِنَ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا. وَشَبَّكَ بيْنَ أَصَابِعِهِ.
অর্থ: “একজন মুমিন আরেকজন মুমিনের জন্য ইমারত তুল্য, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে থাকে। এ বলে তিনি এক হাতের আঙুল অপর হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন।” [সহীহ বুখারী: ৪৮১, ২৪৪৬, সহীহ মুসলিম: ২৫৮৫)
আল্লাহর তরে হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা!
আমাদের অবশ্যই এমন হতে হবে। আমরা একে অপরের জন্য ইমারত তুল্য। আমাদের এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে—যেমনিভাবে দালানকোঠার একাংশ অন্য অংশকে শক্তিশালী করে। তাই গাজায় আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের সঙ্গে যা হচ্ছে, ফিলিস্তীনে আমাদের মুসলিম ভাই-বোনদের সঙ্গে যা হচ্ছে, পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় আমাদের মুসলিমদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তা অনুভব করতে হবে। এই আঘাত আমার নিজের শরীরের বলে অনুভব করতে হবে। এই জুলুম প্রতিরোধে আমাদের জেগে উঠতে হবে। পৃথিবীর যেকোনো জায়গায় আমাদের মুসলিম ভাই-বোন ও আল্লাহর বান্দাদের উপর থেকে এই জুলুম অপসারণ করতে হবে।
হযরত নোমান ইবনে বাশির রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
تَرَى الْمُؤْمِنِينَ فِي تَرَاحُمِهِمْ وَتَوَادِّهِمْ وَتَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ إِذَا اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ جَسَدِهِ بِالسَّهَرِ وَالْحُمَّى
অর্থ: “তুমি মুমিনদের পারস্পরিক দয়া ভালবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শনে একটি দেহের ন্যায় দেখতে পাবে। যখন দেহের একটি অঙ্গ রোগে আক্রান্ত হয়, তখন শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রাত জাগে এবং জ্বরে অংশ গ্রহণ করে।[3]” [সহীহ বুখারী: ৬০১১, সহীহ মুসলিম: ৬৭৫১]
তাই আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে আমরা একা ছেড়ে দিতে পারি না। হে আল্লাহর বান্দারা! নিজেদের মুসলিম ভাইদেরকে এভাবে একা ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। যদি আমরা এই কাজ করি, তাহলে এই বিপদ ঘুরে আমাদের নিজেদের উপরেই আসবে। হাদীসে এসেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত; হযরত জাবের এবং হযরত আবু তালহা রাযিয়াল্লাহু আনহুমা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন:
ما من امرئ يخذل امرأ مسلما في موطن ينتقص فيه من عرضه وينتهك فيه من حرمته إلا خذله الله تعالى في موطن يحب فيه نصرته، وما من أحد ينصر امرأ مسلما في موطن ينتقص فيه من عرضه وينتهك فيه من حرمته إلا نصره الله في موطن يحب فيه نصرته
অর্থ: “যে ব্যক্তি অপর মুসলিমের মান-ইজ্জত নষ্ট হওয়ার স্থানে তাকে ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করা থেকে বিমুখ থাকবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য কামনা করে। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের মান-ইজ্জত নষ্ট হওয়ার স্থানে তাকে সাহায্য করে, আল্লাহ তাকে এমন স্থানে সাহায্য করবেন, যেখানে সে তাঁর সাহায্য প্রত্যাশা করে।” [ইমাম আহমদ রহ., ইমাম আবু দাউদ রহ. সহ আরও কতক মুহাদ্দিস হাদীসটি বর্ণনা করেছেন]
তাই মুসলিম ভাই-বোনদের সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং তাদেরকে একা ছেড়ে না দেয়া আমাদের বাস্তবমুখী আবশ্যকীয় কর্তব্য। এছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় নেই। আমরা যদি গুনাহের মাঝে ডুবে থাকি, তাহলে এটাও মুসলিমদেরকে একা ছেড়ে দেওয়ার শামিল হবে। আমরা যদি মুমিনদের অনুভূতি গ্রহণ না করি, তাদের দুঃখে দুঃখিত না হই, তাহলেও আমাদের দায়িত্ব লঙ্ঘন হবে।
হে মুসলিমরা! সকল স্থানের হে মুসলিম ভাই-বোনেরা!
আমাদেরকে একান্ত মনে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করতে হবে, তাঁর কাছে ফিরে আসতে হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার অধিকার ও পাওনাগুলো আমাদের জানতে হবে। আমাদের ভাইদের অধিকারগুলো আমাদের জানতে হবে। আমরা যদি এই কাজগুলো করতে পারি তাহলে নিশ্চিত জেনে রাখুন! ইনশা আল্লাহ, এসব কাজ সাফল্যের ভিত্তি হবে এবং আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের জান্নাতের প্রবেশের উপায় হবে।
তাই আল্লাহর তরে হে আমার প্রিয় ভাইয়েরা!
আমরা এই পৃথিবীতে পরীক্ষার হলে রয়েছি। আমরা সফরে আছি। আমাদের এই জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত; যেকোনো সময় শেষ হয়ে যাবে। যখন আমরা মৃত্যুবরণ করবো, তখনই কবরে আমাদের হিসাব আরম্ভ হবে, এরপর বারযখ জগতে। এরপর আমরা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার সামনে দাঁড়াবো। তাই প্রত্যেকের উচিত- নিজের জন্য জবাব তৈরি করে নেয়া, নিজের কাজের জবাব আল্লাহর কাছে পেশ করতে প্রস্তুত থাকা। সৌভাগ্যবান ওই ব্যক্তি, যে অন্যের দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করে। সৌভাগ্যবান ও বুদ্ধিমান ঐ ব্যক্তি, যে নিজের নফসকে শাসন করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে।
আমরা মহান আরশের অধিকারী আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করি- তিনি আমাদেরকে এবং সকল মুসলিম ভাই-বোনকে তাঁর সন্তুষ্টির পথে চলার তাওফীক দান করুন। আমাদের তাওবা কবুল করুন। পৃথিবীর সর্বত্র ইসলাম ও মুসলিমদের সাহায্যে এগিয়ে যাবার তাওফীক আমাদেরকে দান করুন। নিশ্চয়ই তিনি উত্তম অভিভাবক। তিনি সর্বশক্তিমান।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.
*****
আরও পড়ুন
২য় পর্ব
[1] হাদীসের ভাষ্যটি অন্যত্র বিশুদ্ধ সূত্রে এভাবে এসেছে-
بُعِثْتُ بِالسَّيْفِ حَتَّى يُعْبَدَ اللهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَجُعِلَ رِزْقِي تَحْتَ ظِلِّ رُمْحِي وَجُعِلَ الذِّلَّةُ وَالصَّغَارُ عَلَى مَنْ خَالَفَ أَمْرِي وَمَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“আমি (কিয়ামতের পূর্বে) তরবারি-সহ প্রেরিত হয়েছি, যাতে শরীকবিহীনভাবে আল্লাহর ইবাদত হয়। আমার জীবিকা রাখা হয়েছে আমার বর্শার ছায়াতলে। অপমান ও লাঞ্ছনা রাখা হয়েছে আমার আদেশের বিরোধীদের জন্য। আর যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে, সে তাদেরই দলভুক্ত।” (আহমাদ: ৫১১৪-৫১১৫, ৫৬৬৭, শুআবুল ঈমান: ৯৮, সহীহুল জামে’: ২৮৩১) [সম্পাদক]
[2] হাদীসের ভাষ্যটি অন্যত্র বিশুদ্ধ সূত্রে এভাবে এসেছে- " أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَشْهَدُوا أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَيُقِيمُوا الصَّلاَةَ، وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ، فَإِذَا فَعَلُوا ذَلِكَ عَصَمُوا مِنِّي دِمَاءَهُمْ وَأَمْوَالَهُمْ إِلاَّ بِحَقِّ الإِسْلاَمِ، وَحِسَابُهُمْ عَلَى اللَّهِ ". “আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য আদিষ্ট হয়েছে, যতক্ষন না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নেই ও মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল, আর সালাত (নামায/নামাজ) কায়েম করে ও যাকাত দেয়। তারা যদি এ কাজগুলো করে, তবে আমার পক্ষ থেকে তাদের জান ও মালের ব্যাপারে নিরাপত্তা লাভ করল; অবশ্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি কোন কারণ থাকে, তাহলে স্বতন্ত্র কথা। আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহ্র উপর ন্যস্ত।” (সহীহ বুখারী: ২৫) [সম্পাদক]
[3] হাদীসের ভাষ্যটি অন্যত্র বিশুদ্ধ সূত্রে এভাবে এসেছে- مَثَلُ المُؤْمِنِينَ في تَوادِّهِمْ، وتَراحُمِهِمْ، وتَعاطُفِهِمْ مَثَلُ الجَسَدِ إذا اشْتَكَى منه عُضْوٌ تَداعَى له سائِرُ الجَسَدِ بالسَّهَرِ والْحُمَّى “মু’মিনদের আপোসের মধ্যে একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, দয়া ও মায়া-মমতার উদাহরণ (একটি) দেহের মতো। যখন দেহের কোন অঙ্গ পীড়িত হয়, তখন তার জন্য সারা দেহ অনিদ্রা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়।” (সহীহ মুসলিম: ২৫৮৬) [সম্পাদক]
Comment