আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“এই তো গাযা…
যা মানবাধিকারের
লজ্জাজনক সুর তুলে ধরেছে
দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– ২য় পর্ব
“এই তো গাযা…
যা মানবাধিকারের
লজ্জাজনক সুর তুলে ধরেছে
দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহ”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– ২য় পর্ব
মুনাফিকদের দৌঁড়ঝাঁপ:
ইহুদীদের অস্ত্রের ভয়ে, তাদের হীন আত্মার নীচতার কারণে, ভিন্নমতের প্রতি ইহুদীদের অসহনশীলতা ও সহিংস মনোভাব এবং ইহুদীদের কাছে থাকা স্বর্ণের লোভে অনেকেই তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এমন ব্যক্তিদের মাঝে আমরা দেখতে পাই আলবেনিয়ার প্রতিনিধি সহ আরো বেশ কিছু ব্যক্তিকে তাদের দিকে ছুটে আসতে। যারা ফিলিস্তিনের মুজাহিদীনকে একটি জনপ্রিয় স্বাধীনতাকামী আন্দোলনের প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে দেখে না; ফিলিস্তিনের মুজাহিদীনকে —তাদের ভাষায়— ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবেও তারা বিবেচনা করে না। ফিলিস্তিনের যোদ্ধাদের নিজেদের দেশ স্বাধীন করার অধিকার রয়েছে বলেও তারা মনে করে না।
নিকৃষ্টতা ও তুচ্ছতা হিসেবে এতোটুকুই যথেষ্ট। কারণ আমরা (মুসলিমরা) তোমাদেরকে বিশ্বাস করি না। তোমাদের ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানগুলিতেও বিশ্বাস করি না, যেগুলি শুধু ক্ষমতাবানদের জন্য তৈরি। তোমরা ভালো করেই জানো যে, আমরা তোমাদেরকে এমন একটি শাসক শ্রেণি হিসেবে স্বীকৃতি দিই না, যারা বিশ্বকে ন্যায়ের সঙ্গে শাসন করে। তোমাদের আইনি অসার বিষয়গুলোর প্রতিও আমাদের কোনো আস্থা নেই। কারণ এই আইনগুলো দিয়ে তোমরা অন্যদের অধিকার বিনষ্ট করে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করো। এই আইন ব্যবহার করে তোমরা অন্যদের সম্পদ লুণ্ঠন করো।
এসব কিছুর পর তোমরা নিজেদের এই জুলুম-অত্যাচারকে ন্যায়বিচার ও ইনসাফ হিসেবে প্রচার করো। কারণ তোমাদের বিশ্বাস শুধু বাস্তব শক্তির প্রতি, যা তোমাদের হাতে রয়েছে। তোমরা কসাই, খুনি ও লুটেরা। তোমরা অন্য কোনো ভাষা বোঝো না। নিপীড়িতদের প্রয়োজনের সময় বা তাদের অনুভূতিকে প্রশমিত করার জন্য বা তাদের নিরপেক্ষ করার জন্য তোমাদের মিষ্টি কথা ছাড়া বেশি কিছু তোমাদের কাছে আশা করা যায় না।
আমাদের ব্যাপারে বলবো: আমরা সত্যের শক্তিতে বিশ্বাস করি, যা আমাদের সাথে রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, কল্যাণ একদিন এই পৃথিবীতে রাজত্ব করবে- অকল্যাণ অত্যাচারীর যুগ যতই দীর্ঘ হোক না কেন। তোমাদের শাস্তি অবশ্যই তোমরা পেয়ে যাবে; দুনিয়াতে এবং আখিরাতে।
আমরা (মুসলিমরা) এমন এক জাতি, যারা তোমাদের সাথে কঠোর আচরণ করি না। তবে যতটুকু করি তা এই জন্যই, তা যেন তোমাদেরকে সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত রাখে। তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং তোমাদের অন্তরকে ঈমানের জন্য উন্মুক্ত করে। কারণ আমরা এমন এক জাতি, যাদের মনে এই প্রত্যাশা রয়েছে যে, তোমরা আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করে আমাদের দীনি ভাই হিসেবে আখিরাতে মুক্তি লাভ করবে। উম্মাহ হিসেবে এটা আমাদের বিশ্বাসের আভিজাত্য, পরিশীলিত দৃষ্টিভঙ্গি, কল্যাণমুখী লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং হৃদয়ের সততা।
তোমাদের মধ্যে যাদের অন্তর কঠোর হয়ে গিয়েছে; যারা সীমা অতিক্রম করেছে, প্রতিশ্রুতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, নিপীড়িতদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, নিরপরাধদের রক্তের জন্য যারা আগ্রহী ও পিপাসার্ত, তাদের ঘাড়ে আমাদের তলোয়ার ছাড়া আর কিছুই নেই।
মুসলিম উম্মাহ হিসেবে আমরা সবকিছু এড়িয়ে ক্ষমা করে দিতেও জানি। কিন্তু একথাও মনে রাখতে হবে, আমরা এমন এক উম্মাহ, যারা খুব ভালোভাবে প্রতিশোধ নিতে জানি। আমাদের ক্ষমাশীল অনুগ্রহশীল রব আমাদেরকে এই প্রতিশোধ নেয়া শিখিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পরাক্রমশালী; তিনিও প্রতিশোধ গ্রহণকারী। ইতিহাস সাক্ষী! এই উম্মাহর শত্রুদের কাছ থেকে কেমন করে প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
فَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِ رُسُلَهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ ﴿٤٧﴾
অর্থ: “অতএব আল্লাহর প্রতি ধারণা করো না যে, তিনি রাসূলগণের সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করবেন; নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।” [সূরা ইবরাহীম 14: ৪৭]
***
ষষ্ঠ মূল্যায়ন: বাইডেনের সফর এবং তার সীমাহীন সমর্থন:
আমি আগে লিখেছিলাম যে, বাইডেন আমেরিকান জনগণের অর্থের কোষাগার জায়নিস্টদের জন্য খুলে দিয়েছে। গাজার মুসলিম জনগণের উপর বোমা ফেলার ক্ষেত্রে ইহুদীবাদীরা যা ব্যয় করেছে, তার চেয়েও বেশি অর্থ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইহুদীবাদীদের ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। সে দুটি বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়েছে। এর পরপরই আবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে ইহুদীদের কাছে পাঠিয়েছে। সে ইউরোপে তার অনুসারীদেরকে নির্দেশ দিয়েছে, ইহুদীদের সমর্থনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
আমেরিকার বিশেষ ইউনিটের দুই হাজার যোদ্ধা, যারা আফগানিস্তান থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে এসেছিল, তাদেরকে ইহুদীদের সাহায্যের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে। মুসলিমদেরকে হত্যা করার জন্য, ইহুদীদেরকে রাজনৈতিক সাপোর্ট ও ব্যাকআপ দিয়েছে। বাইডেন তার ভেটো প্রদানের ক্ষমতা ব্যবহার করে জায়নবাদীদের গণহত্যা চালিয়ে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিয়েছে। তাই আমাদের বুঝতে হবে, আমেরিকা প্রথম মুহূর্ত থেকেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। যুদ্ধে পুরোপুরি অংশগ্রহণ বলতে যা বোঝায়, পুরোটাই করে দেখিয়েছে আমেরিকা। এরপরেও স্বয়ং প্রেসিডেন্টের কেন আসতে হবে ইহুদীদের কাছে?
এর কিছু কারণ নিচে বলা হচ্ছে:
প্রথমত, তিনি সিয়োনের সন্তানদের (জায়নবাদীদের) বাছুরের প্রতি তার আনুগত্য নিশ্চিত করতে এসেছে। সে এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল, এ কারণেই তার আসতেই হত। এছাড়াও তার একটা স্বপ্ন রয়েছে, যা কখনোই বাস্তবায়িত হবে না। সেই স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা হিসেবেও সে ছুটে এসেছে। তার স্বপ্ন ছিল রক্তে, মাংসে আকীদা ও মতবাদে সে একজন ইহুদী হবে। যেহেতু স্বপ্ন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তাই তার পরিবর্তে সে বিভ্রমের ছায়ায় জায়নবাদী হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য এসেছে।
দ্বিতীয়ত,- কী লজ্জাজনক! – সে নিজে সরাসরি এ কথায় জোর দিতে চেয়েছে, মুসলিমদের মাঝে আরও বেশি রক্তপাত ঘটালেও ‘নেতানিয়াহু’র কোনো ক্ষতি হবে না। কেউ তাকে কিছু বলতে পারবে না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জোর দিতে চেয়েছে এ বিষয়ের উপর যে, ফিলিস্তিনি মুজাহিদীনের নামে যারা সন্ত্রাসবাদ (!) চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার অধিকার ইহুদীবাদীদের রয়েছে।
হে পশ্চিমারা! তোমাদেরকে আমরা ঘৃণা করি, এটা শুনলে কেন তোমাদের চেহারার রং বদলে যায়?
হে মার্কিন বুদ্ধিজীবীরা! তোমাদের দেশের অপরাধের তালিকা এত দীর্ঘ হওয়া সত্ত্বেও সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখ মঙ্গলবার দিনের ঘটনায় কেন তোমরা আশ্চর্যবোধ কর? ধ্বংস তোমাদের জন্য!
তৃতীয়ত, হোয়াইট হাউসে থাকার প্রচারাভিযানে নিজের প্রতি ইহুদীদের সমর্থন নিশ্চিত করা। এ সফরের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন -ট্রাম্পের সাথে প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে প্রমাণ করতে চেয়েছে যে, ইহুদীরা মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তার চেয়ে বেশি ইহুদী স্বার্থের প্রতি অনুগত দাস আর কাউকে খুঁজে পাবে না। বাইডেন ইহুদীদের এমন অনুগত দাস, যে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে ইহুদীদের স্বার্থে কাজ করতে পারে। সম্ভবত বাইডেনের কিছু উপদেষ্টা তার বিবেককে জাগ্রত করেছে এবং তাকে বলেছে: আপনার গাল মুছুন, কেননা ফিলিস্তিনের মুসলিমদের রক্ত গালের পাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
হে আমেরিকান জনগণ!
ফিলিস্তিন ও নিপীড়িতদের পক্ষে যেকোনো জায়গায় তোমাদের বিক্ষোভ আমাদের জন্য যথেষ্ট নয়। আমরা তোমাদেরকে রাজপথে এবং হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভরত অবস্থায় দেখতে দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমরা তোমাদের এই অবস্থান থেকে কিছুই পাইনি, কিংবা নিজেদের এই অবস্থান দিয়ে তোমরাও কিছু হাসিল করতে পারনি।
এখন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে তোমাদের যা করা উচিত, তাই তোমরা কর! ক্ষমতাসীনেরা ডেমোক্র্যাট ব্লকের হোক কিংবা রিপাবলিকান ব্লকের, তাদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। যা করার তোমরা নিজেরাই কর। আরো একবার আমেরিকার মাটিতে মুজাহিদীনের হাত পৌঁছে যাবার আগেই তোমরা কিছু কর!
মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকায় - নিরুপায় অসহায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও নিপীড়িতদের রক্ত মাংসের উপর বসবাসকারী আবর্জনা-খেকো প্রাণী হল মার্কিন শাসক এবং তাদের সমর্থকেরা। এখন তাদেরকে বর্তমান রূপ ও চরিত্র থেকে বের করার প্রয়াস হিসেবে এবং তাদেরকে সুসভ্য বিশুদ্ধ মানুষে রূপান্তরিত করার জন্য আমেরিকায় একটি নতুন গৃহযুদ্ধের প্রয়োজন, যেন মানুষ হিসেবে তাদের পাশে থেকে বসবাস করা যায়। তাহলে তারা সুস্থ মস্তিষ্ক ও বিশুদ্ধ বিবেকবোধের ডাকে সাড়া দেবে এবং ইসলামী দাওয়াতের সৌন্দর্য ও মাধুর্যতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে। এছাড়া কিয়ামত পর্যন্ত লড়াই বন্ধ হবে না।
হে আমেরিকান অধিবাসীরা!
যদি তোমরা গৃহযুদ্ধের পথ প্রস্তুত না কর, তাহলে এভাবেই চলতে থাকবে। আর এক সময় ইহুদীদের বিলুপ্তি তোমরা দেখতে পাবে। অচিরেই হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী পাথর ও বৃক্ষের ডাকে সাড়া দিয়ে মুসলিমরা ইহুদীদেরকে হত্যা করবে। কারণ ইহুদীরা চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করেছে, এমনকি জড়বস্তুও যেন তাদের অনাচারে অতিষ্ঠ হয়ে চিৎকার করে উঠেছে।
আরও পড়ুন