আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
“এই তো গাযা…
উম্মাহর অগ্রবাহিনী আজ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত
[যুদ্ধের পঞ্চম সপ্তাহ]
”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– ২য় পর্ব
“এই তো গাযা…
উম্মাহর অগ্রবাহিনী আজ বিপ্লবের জন্য প্রস্তুত
[যুদ্ধের পঞ্চম সপ্তাহ]
”
।।সালেম আল শরীফ||
এর থেকে– ২য় পর্ব
আজ চিত্রের সমস্ত অংশ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। উম্মাহর বিরুদ্ধে শত্রুর সারিবদ্ধতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। অত্যাচারীরা তাদের সামরিক বাহিনীকে সারিবদ্ধ করছে। সমগ্র বিশ্বকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তারা গাজায় নির্যাতিতদের উপর সমস্ত নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা এবং নৃশংসতার সাথে হামলা করেছে। এদিকে আমাদের বাকি অপরাধী শাসকগোষ্ঠী তাদের সামরিক বাহিনীকে গাজায় তাদের ভাইদের সাহায্যে এগিয়ে যেতে বাধা দিয়েছে। আমাদের শাসকরা শত্রুদের দাস।
আমাদের সেনাবাহিনী যুদ্ধের মন-মানসিকতা এবং স্বাধীন নেতৃত্বের অভাবে ভুগছে; যে নেতৃত্ব তাদেরকে মুক্তির পথে নিয়ে যাবে। আমাদের সৈন্যদের সামনে এমন কোনো রোল মডেল নেই, যে তাদেরকে শাসকবর্গ ও দরবারী আলেমদের গোলকধাঁধা থেকে বের করে আনবে। সমাধানের অন্যতম ও সর্বাধিক উপযুক্ত পথ আজ বিক্ষুব্ধ জনতার কাছে। গণ বিক্ষোভগুলো অবশ্যই আন্দোলনের পরবর্তী পর্যায়ে উন্নীত হওয়া এখন সময়ের দাবি।
আমাদের আরব ও ইসলামিক দেশগুলোতে বিক্ষুব্ধ জনগণের সকল স্তরের দায়িত্ব হল:
তাবেদার সরকারগুলোর পতন না ঘটা পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি নাগরিক ধর্মঘট আরম্ভ করা। ট্রেন, বাস, বিমান সহ দেশের সব ধরনের যাতায়াত ব্যবস্থা আপনারা বন্ধ করে দিন। সরকারি কাজে যাবেন না। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ইত্যাদির বিল দেবেন না। আপনারা অর্থনীতির চাকা অচল করে দিন। কলকারখানা, দোকান এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যাবেন না, যেগুলো আপনাদের দিকে ছুঁড়ে দেওয়া মুনাফার অতি ছোট্ট অংশের বিনিময়ে আপনাদের মূল্যবান শ্রম কিনে নিয়ে আপনাদেরকে ক্লান্ত করে তোলে।
সেনাবাহিনীর সৈনিক, সক্রিয় অফিসার এবং নিয়োগপ্রাপ্তদের বলবো: আপনারা আজকের পর থেকে জাতির প্রকৃত নেতাদের পক্ষ থেকে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আপনাদের ইউনিটগুলিতে ফিরে যাবেন না।
জনসাধারণের দায়িত্ব হল:
রাষ্ট্রপ্রধানের প্রাসাদ, মন্ত্রিসভা, সংসদ, শহর ও গ্রাম পরিষদ, দলীয় সংস্থা এবং পুলিশ সদর দপ্তর এ সকল সেক্টরকে যেকোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা। জনসাধারণকে আরো বলবো: আপনারা বন্দী, নিখোঁজ, গুমের শিকার এবং দেয়ালের আড়ালে নির্যাতিত-নিপীড়িতদের মুক্তির ব্যবস্থা করুন। শহরে গ্রামে এবং জেলায় জেলায় আপনারা এমন সমান্তরাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলুন, যেগুলো আপনাদের আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি তুলে ধরবে এবং আপনাদের স্বার্থ রক্ষা করবে।
‘নাগরিক অবাধ্যতা’ অথবা ‘অসহযোগ আন্দোলন’ শব্দের অর্থ হল- তাবেদার সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক জীবন সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু করে দেয়া। এমন সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়া, যা জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করবে এবং গণ-আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি হবে। নিঃসন্দেহে মুসলিম গণ-আকাঙ্ক্ষার শীর্ষে রয়েছে- ফিলিস্তিন ও ইসলামী পবিত্র স্থানগুলোর স্বাধীনতা।
আপনাদের নাগরিক ‘অসহযোগ আন্দোলন’ হল এমন এক স্ফুলিঙ্গ, যা আরো একটা মহৎ কাজ সম্পাদন করবে। আপনাদের সেনাবাহিনীতে যাদের মাঝে কল্যাণের অবশিষ্টাংশ রয়ে গেছে, আপনাদের আন্দোলনের ফলে তারাও আপনাদের সঙ্গে যোগদান করবে।
গুরুত্বপূর্ণ আরো একটা বিষয় নিয়ে আমাদের বিক্ষুব্ধ জনগণের কয়েকটা স্তরকে উঠে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই গোপন ও প্রকাশ্য নিরাপত্তা ইউনিট সংগঠিত করতে হবে। উভয়টাই হতে হবে সশস্ত্র। প্রকাশ্য ইউনিটগুলোর কাজ হবে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সরকারি গুণ্ডা দল সহ সরকার-সহযোগী বিভিন্ন সংস্থার যেকোনো প্রকার প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া থেকে আন্দোলনকে নিরাপত্তা দেয়া। এই সেক্টরের লোকদেরকে সে সমস্ত প্রতিক্রিয়া মোকাবেলার এবং সর্বময় আন্দোলনরত প্রতিবাদী ভাইদের প্রতিরক্ষায় দৃঢ়তার অধিকারী হতে হবে।
মিশরীয় জনগণ সেখানকার বিশ্বাসঘাতকদের কাছ থেকে যে শিক্ষা পেয়েছে, তার স্ফুলিঙ্গ এখনো নিভে যায়নি। তাই আপনারা প্রস্তুত থাকুন। তারা আপনাদেরকে নির্মূল করার আগে কোনো করুণা না দেখিয়ে আপনারা তাদেরকে নির্মূল করুন। তারা আপনাদেরকে যেভাবে পুড়িয়েছে আপনারাও তাদেরকে সেভাবে পুড়িয়ে দিন। সিসি এবং তার বিশ্বাসঘাতক মিলিশিয়াদের প্রজ্বলিত আগুনে তাদেরকেই নিক্ষিপ্ত করুন। সেনাবাহিনী, পুলিশ, মিডিয়া এবং প্রচারকদের মধ্য থেকে যারা এই জালিমদের সহযোগী ছিল, তাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার সময় এসেছে। যাই হোক, গোপন নিরাপত্তা ইউনিটের কাজই হবে- এদেরকে হত্যা করা।
আপনারা কি আপনাদের সংকল্পকে দুর্বল মনে করছেন? ভূমি থেকে ভূমিতে বাস্তুচ্যুত শিশু ও নারীদের নিষ্প্রাণ চোখের দিকে তাকিয়ে আপনাদের সংকল্প ও ক্রোধকে জাগিয়ে তুলুন। তাদের সবচেয়ে বড় আশা হল- এমন একটি জায়গা, যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে এবং যেখানে কেউ তাদেরকে দেখবে না। তারা সুপেয় পানি এবং ঠাণ্ডা থেকে আত্মরক্ষার জন্য উষ্ণ কাপড়ের আশায় বুক বেঁধে রেখেছে। জায়নবাদী বোমা হামলার আগুন তাদেরকে আর কত পোড়াবে?
হে গাজাবাসী আল্লাহ সুবহানাল্লাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ ﴿٢٤﴾
অর্থঃ “তোমাদের সবরের কারণে তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর তোমাদের এ পরিণাম-গৃহ কতই না চমৎকার।” [সূরা রাদ ১৩: ২৪]
হে বিক্ষুব্ধ উম্মাহর জনসাধারণ!
আপনারা জেনে রাখুন- আল্লাহ আপনাদের সহায়তা ও সাহায্যকারী। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা ইরশাদ করেছেন:
وَلَقَدْ سَبَقَتْ كَلِمَتُنَا لِعِبَادِنَا الْمُرْسَلِينَ ﴿١٧١﴾ إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنصُورُونَ ﴿١٧٢﴾ وَإِنَّ جُندَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ ﴿١٧٣﴾
অর্থঃ “আমার রাসূল ও বান্দাগণের ব্যাপারে আমার এই বাক্য সত্য হয়েছে যে, অবশ্যই তারা সাহায্য প্রাপ্ত হয়। আর আমার বাহিনীই হয় বিজয়ী।” [সূরা সাফফাত ৩৭: ১৭১-১৭৩]
আজ গর্বিত গাজায় আমাদের ভাইদেরকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে বিলম্ব করা কোনো অবস্থাতেই ঠিক নয়। কোনো বিবেকবান ব্যক্তির পক্ষে সেখানে আমাদের ভাইদেরকে ক্রুসেডার ইহুদীবাদী জোটের হাতে এই মনে ছেড়ে দেয়া বোকামি যে, শত্রুরা শুধু তাদেরকে শেষ করেই সন্তুষ্ট থাকবে। বরং প্রচলিত লোককথার মতো ব্যাপারটা এমনই হবে, বনের সিংহ তিনটে ষাঁড়কে একসঙ্গে পরাস্ত করতে না পেরে প্রথমে দুটোর সঙ্গে প্রতারণা করে একটাকে শেষ করে। এরপর দুটোর মধ্যে একটার সঙ্গে প্রতারণা করে আরেকটাকে শেষ করে। সবশেষে সাদা ষাঁড়কে হামলা করতে এলে সে বলে: “আমি তো সেদিনই মারা গিয়েছি, যেদিন লাল ষাঁড় তোমার হাতে মারা গিয়েছিল।”
এই গল্পে আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে। আমরা যদি এই শিক্ষা বুকে ধারণ করি, তাহলে গাজার ভাইদের বিপদ থেকে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য এই সংঘাতে আমাদের কি ভূমিকা পালন করা উচিত, তা বিবেকবান মানুষ মাত্রই অনুধাবন করতে পারছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لاَ يَظْلِمُهُ وَلاَ يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থঃ “মুসলিম মুসলিমের ভাই। সে তার উপর জুলুম করবে না এবং তাকে জালিমের হাতে সোপর্দ করবে না। যে কেউ তার ভাইয়ের অভাব পূরণ করবে, আল্লাহ তার অভাব পূরণ করবেন। যে কেউ তার মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দুর করবে, আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার বিপদসমূহ দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।” [সহীহ বুখারী: ২৪৪২ সহীহ মুসলিম: ২৫৮০]
এটা একটি সহীহ ও ‘মুত্তাফাক আলাইহ’ হাদীস; ইমাম বুখারী ও মুসলিম তাদের গ্রন্থে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।
আপনারা জেনে রাখুন হে বীরগণ!
এই যুদ্ধের পরে শত্রুদের আরও টার্গেট রয়েছে। আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ রণাঙ্গনে এই যুদ্ধ ছেড়ে বসে থাকি, তাহলে শত্রুপক্ষ আলাদা আলাদাভাবে আমাদের উপর হামলা করবে। সে সময় শত্রুর প্রতারণা দেখে অনুশোচনায় ঠোঁট কামড়ে ধরারও সময় আমরা পাবো না।
গাজার সাহায্যের জন্য এবং নিজ দেশে বিপ্লব সাধনের জন্য বলিষ্ঠ কণ্ঠে স্লোগান তুলুন। প্রত্যেক মুসলমানের অধিকার আছে নিজ উদ্দেশ্যকে সমর্থনের জন্য যেকোনো স্লোগান দেবার। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, কথার সাথে যেন কাজের মিল থাকে। তাই সকলেই জেগে উঠুন!! আপনাদের স্লোগানের প্রতিটি শব্দ ও কাজ নিঃসন্দেহে আসন্ন বিজয়-প্রাসাদের এক একটি ইটের মতো ইনশাআল্লাহ!
নিঃসন্দেহে উম্মাহর অবস্থা পরিবর্তনের জন্য করা কাজগুলোই হচ্ছে সবচেয়ে মূল্যবান; সাফল্য নিশ্চিতকরণে সবচেয়ে কার্যকর। এই কারণে নিজেদেরকে শুধু বিক্ষোভের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা আমাদের জন্য উচিত নয়। বরং আমাদের জন্য বিপ্লব সাধন করা আবশ্যক, যে বিপ্লব পশ্চিমাদের তাবেদার সরকারগুলোকে উৎখাত করার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। আর এই বিপ্লব সাধনের একমাত্র পথ হচ্ছে নাগরিক অবাধ্যতা, ধর্মঘট অথবা যাকে বলে ‘অসহযোগ আন্দোলন’।
***
Comment