Announcement

Collapse
No announcement yet.

সুযোগ, কৌশল, দুরদৃষ্টি: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে ইসলামপন্থীদের অংশগ্রহণ—উচিত নাকি অনুচিত?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সুযোগ, কৌশল, দুরদৃষ্টি: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনে ইসলামপন্থীদের অংশগ্রহণ—উচিত নাকি অনুচিত?

    চোখ বন্ধ করে কল্পনা করুন একটি উন্মুক্ত হাটবাজার। রোদে পুড়ছে চারদিক, দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে তীব্র গতিতে এগিয়ে চলছে সময়, সেসময় কিছু মানুষ তাদের মাথার উপর ছাউনি দেয়ার চেষ্টা করেছে সূর্যের প্রখরতা থেকে বাঁচার জন্য। কেউ একজন একটি অস্থায়ী ছাউনি গেড়েছেন এমন একটি জায়গায়, যা তার নিজের জায়গা নয়—বরং একটু সরে দাঁড়িয়ে অন্যের দিক ঘেঁষে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, ছাউনির ছায়া পড়ছে ঠিক তার মাথার উপর, কারণ সূর্য পশ্চিমের দিকে হেলে পড়েছে। একটু দূরে আরেকজন—সে পরিশ্রম করে নিজ মাথার উপর ছাউনি তৈরি করেছে, কিন্তু ছায়া তার গা ছুঁয়েও যায়নি; সূর্যের তীব্র আলোয় সে এখনো পুড়ছে।

    এই সাধারণ দৃশ্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে একটি গভীর প্রতীকী সত্য—ছাউনির অবস্থান নয়, সূর্যের দিকই নির্ধারণ করে কে ছায়া পাবে। জীবনের অনেক ক্ষেত্রেই এমন হয়, যেখানে নিজের জায়গায় বিনিয়োগ করেও ফল পাওয়া যায় না, আবার অন্যের ছাউনিরও সুফল কেউ পেতে পারে, যদি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে।

    এই প্রতীক আমাদের নিয়ে আসে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায়। এখন দেশজুড়ে চলছে একটি আন্দোলন—আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলন। বহু মতাদর্শের মানুষ এতে অংশ নিচ্ছে, তবে উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যাচ্ছে ইসলামপন্থীদের সক্রিয় উপস্থিতি। ইতিহাসে আমরা বহুবার দেখেছি, ইসলামপন্থীরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে সামনে থেকেছে, কিন্তু আন্দোলনের পর সেকুলার গোষ্ঠী তাদের ছুড়ে ফেলেছে, রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করে নিয়েছে এককভাবে।

    এই ইতিহাসের কারণে অনেকেই এখন ইসলামপন্থীদের নিরুৎসাহিত করছে—বলছে, “আবারও ব্যবহার হয়ে যাবে। আন্দোলনের ফল সেকুলাররাই ভোগ করবে, তোমাদের কোনো স্বীকৃতি দিবে না।” এই আশঙ্কা অমূলক নয়, তবে রাজনীতি সবসময় সরল অঙ্কের মতো চলে না—এখানে সূর্যের অবস্থান মানে হলো সামগ্রিক রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট।

    আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী ফ্রন্ট হিসেবে কাজ করেছে/করে/করবে। এই শক্তির পতন মানেই ভারতের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবের পতন, যা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থী শক্তির জন্য একটি নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে কোনো কৃতিত্ব বা ক্ষমতা মিলবে না, কিন্তু ভবিষ্যতে ক্ষমতা বা প্রভাব অর্জনের ক্ষেত্রে শক্তিশালী সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

    এই মুহূর্তে ইসলামপন্থীরা যদি আন্দোলনে অংশ না নেয়, তাহলে হয়তো আন্দোলন দুর্বল হবে, কিংবা সফল হলেও তাদের কোনো ভূমিকা গণনায় আসবে না। কিন্তু অংশ নিলে—এমনকি অন্যের জায়গায় ছাউনি তুললেও—ছায়া পড়তে পারে ঠিক নিজের মাথায়। এটা একপ্রকার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, যেখানে স্বল্পমেয়াদী অপমানকে মেনে নিলে দীর্ঘমেয়াদী সুযোগ সৃষ্টি হবে।

    এখানে আবার ফিরে আসি সেই হাটবাজারের দৃশ্যে—যেখানে একজন অন্যের জায়গায় ছাউনি দিয়েছে, কিন্তু সুফলটা সে-ই পাচ্ছে। আরেকজন নিজের পরিশ্রমে নিজ মাথার উপর ছাউনি তুলেছে, কিন্তু বাহ্যিক বাস্তবতা—সূর্যের দিক—তাকে ছায়া দিতে ব্যর্থ।

    বাংলাদেশের রাজনীতিও এখন সেই মুহূর্তে এসে পৌঁছেছে, যেখানে “কে নেতৃত্ব দিচ্ছে” তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে “এই আন্দোলনের সফলতা ভবিষ্যতের জন্য কী বার্তা বয়ে আনবে”। ইসলামপন্থীদের তাই এই সময়ে কৌশলী হতে হবে, আবেগপ্রবণ নয়। কখনো কখনো অন্যের জায়গায় ছাউনি তুলেও ছায়া পাওয়া যায়—শর্ত একটাই, সূর্য কোন দিকে তাকিয়ে আছে সেটা বোঝার মতন দৃষ্টিশক্তি থাকতে হবে।

  • #2
    আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবীর পাশাপাশি মানবতন্ত্র-মন্ত্রের জীবন-ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে দাওয়াহ এর কার্যক্রম আরো জোরদার করা খুব জরুরী। নচেৎ মুসলিমসমাজে লীগের স্থানে অন্যদল এসে লীগের মতো জুলুম করবে। ফলে লীগ নিষিদ্ধের স্থায়ী ফল পাওয়া যাবে না।

    Comment


    • #3
      বর্তমান সময়ের আলোচিত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের ফলাফল কি? আশা করি শের খাঁ ভাই এই বিষয়ে লিখবেন।
      আমার কাছে মনে হচ্ছে, যেই লাউ, সেই কদু অবস্থা। কারণ, আগে থেকেই তো আওয়ামী লীগের কার্যক্রম পরিচালনা নিষিদ্ধ ছিল।
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment


      • #4
        আবু যুবাইর ভাই,

        আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

        বর্তমান সময়ের আলোচিত আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের ফলাফল কি?

        সম্মানিত ভাই, বর্তমানে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে যে আন্দোলন চলছে, তা যদি সফল হয়—তাহলে তো ভালোই। আর যদি কোনো কারণে ব্যর্থও হয়, তবুও আমরা মুসলমানদের জন্য এতে একটা বড় ইতিবাচক দিক থাকবে। কারণ এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা ইসলামী চিন্তাধারা ও অবস্থানকে উম্মাহর সামনে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে পারছি।

        এই আন্দোলনের ধারায় এমন কিছু মানুষ সামনে আসছেন—যারা হয়তো সরাসরি কোনো জিহাদি কাফেলার সদস্য না, বা কেউ হয়তো আগে কখনো দ্বীনি কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না। কিন্তু তারা এখন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন, জনগণের পক্ষে কথা বলছেন, এবং ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠছেন। এটাই আমাদের জন্য দাওয়াতের বড় সুযোগ। এইসব মানুষ যদি এখন মানুষের মধ্যে পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে, তাহলে ভবিষ্যতে ইসলাম ও উম্মাহর জন্য তারা অনেক কাজে আসতে পারে। এটা আমাদের জন্য নিঃসন্দেহে একটি লাভের দিক।

        আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—সাধারণ মানুষ এখন এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছে, যদিও তারা জানে এখানে অনেক ইসলামী শক্তি সক্রিয়। এর মানে কি? এর মানে হলো—আমরা যারা গত কয়েক বছর ধরে দাওয়াতি কাজ করেছি, আমরা হয়তো অল্প হলেও মানুষের হৃদয়ে ইসলাম সম্পর্কে একটা ভাল ধারণা তৈরি করতে পেরেছি। ইসলামকে নিয়ে মানুষের আগ্রহ, শ্রদ্ধা ও আবেগ জন্ম নিয়েছে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সেই পরিবর্তনটা এখন আরও পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে।

        তাই এই সুযোগে যত বেশি সম্ভব দ্বীনদার, চিন্তাশীল ও দায়িত্বশীল ইসলামী মানুষদেরকে সামনে নিয়ে আসা দরকার। কারণ, সমাজে যখন ইসলামিক মূল্যবোধ নিয়ে মানুষ কথা বলে, তখন আস্তে আস্তে একটা ইসলামিক কালচার তৈরি হয়। মানুষের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে, এবং ইসলাম নিয়ে খোলামেলা আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়।

        সবশেষে, আমাদের লক্ষ্য কেবল একটি রাজনৈতিক দলের নিষিদ্ধ হওয়া নয়। বরং আমাদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত—এমন একটি সমাজ গঠন, যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার বিধান অনুসারে মানুষ চলবে, ইনসাফ প্রতিষ্ঠা হবে, এবং ইসলামী নেতৃত্ব সামনে আসবে। সেজন্য যেকোনো ব্যক্তি, দল বা সত্তা যারা আল্লাহর বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ করে, তাদের চিন্তা-চেতনা থেকে সমাজকে দূরে রাখা এবং ইসলামী চিন্তাসম্পন্ন নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠিত করাই আমাদের বড় দায়িত্ব।
        فَاَعۡرِضۡ عَنۡهُمۡ وَ انۡتَظِرۡ اِنَّهُمۡ مُّنۡتَظِرُوۡنَ

        Comment

        Working...
        X