আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
“‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ’ সম্পর্কে প্রচলিত আপত্তির জবাব
।।ভাই আবু আব্দুল্লাহ আল-মায়াফিরী||
এর থেকে– দ্বিতীয় পর্ব
“‘জামাআত কায়িদাতুল জিহাদ’ সম্পর্কে প্রচলিত আপত্তির জবাব
।।ভাই আবু আব্দুল্লাহ আল-মায়াফিরী||
এর থেকে– দ্বিতীয় পর্ব
১) সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের জন্য স্বয়ং আমেরিকা আল-কায়েদা সৃষ্টি করেছে এবং এখন তারা একে আরব বিশ্বের খনিজ সম্পদ লুণ্ঠনের অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে। উক্ত গুজবের কোনও ভিত্তি আছে কি?
উত্তর:
“চিরশত্রু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটাতে আমেরিকা নিজে আল-কায়েদার জন্ম দিয়েছে।” কথাটি যেমন একটি গুজব তেমনি অযৌক্তিক। আমেরিকা সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন চেয়েছিল - তা সত্য। তবে এ মর্মে তারা মুজাহিদগণকে সরাসরি কোনও সহযোগিতা করেনি। তারা না দেখার ভান করেছিল। সর্বোচ্চ এতটুকু বলা যায়, তাদের অবস্থান মুজাহিদগণের অনুকূলে ছিল, প্রতিকূলে ছিল না। শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহিমাহুল্লাহ আমেরিকার পক্ষ থেকে সরাসরি সহযোগিতার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, জিহাদের ব্যাপারে বিভ্রান্তি ছড়াতে এসব গুজব রটানো হচ্ছে। সরাসরি শুনতে সার্চ করুন-
http://youtube.com/watch?v=SBULjuOJeW4
যদি তর্কের খাতিরে মেনে নেওয়া হয় যে, আল-কায়েদা আমেরিকার সৃষ্টি - তাহলেও তাতে কী আসে-যায়? এখনতো আল-কায়েদা আমেরিকার প্রধান শত্রু এবং সম্ভাব্য সব উপায়ে তারা আল-কায়েদাকে খতম করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এই উত্তর কেবল ওই বিবেকবানদের জন্য, যে নিরপেক্ষতার সাথে সত্যের সন্ধান চায়। নয়তো এসব অভিযোগের সাথে বাস্তবতার দূরতম সম্পর্কও নেই। তথাকথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে আমেরিকা কী পরিমাণ ডলার ব্যয় করেছে, যারা তার কিছুটা খবর রাখেন তাদের প্রতি আমার কয়েকটি প্রশ্ন-
আল-কায়েদা ও মুজাহিদগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়ে আমেরিকা নিজের অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে, হাজার হাজার সৈনিক হারিয়েছে, বিশ্ব দরবারে তার ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ হয়েছে এবং একক মোড়লগিরীর ইতি ঘটেছে। সুতরাং এটা কিভাবে বোধগম্য হয় যে, আমেরিকা যাদেরকে সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেই সে তার সর্বস্ব হারাতে বসেছে? তারা কি সোভিয়েত ইউনিয়নকে ভাঙ্গতে অন্য কোনও অজুহাত বের করতে পারত না? যেমনটি ইরাকের ক্ষেত্রে করেছে? ইরাকের হাতে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের জুজু দেখিয়ে তারা কি নিজেদের জাতি ও বিশ্ববাসীকে প্রতারিত করেনি? ইরাকের সেই ব্যাপক বিধ্বংসী মারণাস্ত্রের সন্ধান কি তারা আদৌ পেয়েছে?
আমেরিকার সামনে এসকল ধ্বংসাত্মক অবস্থার মুখোমুখি হওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ কি খোলা ছিল না? অথচ আমেরিকা ইচ্ছা করলে মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে আঙ্গুলের ইশারায় নাচাতে পারে। আমেরিকার হাতে এই তল্পিবাহক শাসকরা দাবার গুটি ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে আল-কায়েদা গঠনের বিষয়টি ছিল কেবল শাইখ উসামার একটি কল্পনা। তিনি মুজাহিদগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাচ্ছিলেন এবং উন্নত প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি ইসলামি সেনাবাহিনী গঠন করতে চাচ্ছিলেন। যাতে প্রয়োজন হলে বিশ্বের যে কোন জায়গায় অপারেশন চালাতে পারেন।
কমিউনিস্টদের সাথে সম্মিলিত মুজাহিদ বাহিনীর বিজয়লাভের পর শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ সুদানে চলে যান। তার সাথীদের আরেকটি অংশ মার্কিনীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীক হতে সোমালিয়ায় পাড়ি জমান। এক পর্যায়ে শাইখ উসামা সুদান ছেড়ে আফগানিস্তানে ফিরে আসেন। এর পূর্বেই তালেবান আফগানিস্তানের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেন এবং যুবকরা প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।
এসময় তিনি “আল-জাবহাতুল ইসলামিয়া আল আলামীয়্যা লী কিতালিল ইয়াহুদ ওয়াস্ সলিবিয়্যিন” নামে একটি ফ্রন্ট খোলার ঘোষণা করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে আল-কায়েদা, জামায়াতুল জিহাদ ও বাংলাদেশের একটি দল নিয়ে উক্ত ফ্রন্ট গঠিত হয়। এটি সে সময়কার কথা যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়ে গেছে এবং আমেরিকা নতুন পরাশক্তিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। তখন থেকেই মার্কিনীদের উপর ও আমেরিকান স্বার্থের উপর হামলার সূত্রপাত হয়। হামলা হয় নাইরোবি, দারুসসালাম ও এডেনে।
৯/১১-এর হামলার পূর্বে ড. আইমান আয যাওয়াহিরীর নেতৃত্বে জামায়াতুল জিহাদ পুরোপুরিভাবে আল-কায়েদায় যোগদান করে। আমির ও নায়েবে আমির নির্বাচিত হন যথাক্রমে শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ এবং ড. আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ। এ পর্যায়ে মুসলিম বিশ্বে আমেরিকার নাক গলানো বন্ধ করতে এবং তাদেরকে ধীরে ধীরে দুর্বল ও নিঃশেষ করতে - আমেরিকাকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের ময়দানে টেনে আনতে গেরিলা যুদ্ধের পরিকল্পনা হাতে নেন। আর এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয় ৯/১১-এর হামলার মাধ্যমে।
২) শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ নিহত হওয়ার পর আল-কায়েদা কি বদলে গেছে?
এই প্রশ্ন উত্থাপনের কারণ হচ্ছে, যারা এই প্রশ্ন তুলছে তারা জানে যে, আল-কায়েদা কেবল আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই করে। কিন্তু তারা এখন দেখছে যে, আল-কায়েদা আমেরিকার স্থানীয় তাবেদারদের সাথেও লড়তে শুরু করেছে।
আসলে আল-কায়েদা তার মূলনীতি থেকে এক বিন্দুও সরেনি। পূর্বের মতো এখনো আল-কায়েদা আমেরিকার সাথে লড়াইকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কারণ আল-কায়েদা জানে যে, আমেরিকা যদি তাবেদারদেরকে সহায়তা দিয়ে যায় তাহলে এই তাবেদারদের সাথে লড়াই করা বৃথা। এ জন্যই আল-কায়েদা আমেরিকাকে ময়দানে টেনে এনেছে।
যখন তারা বুঝতে পারল যে, তারা ফাঁদে পড়েছে এবং আল-কায়েদার সাথে সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে, তখন তারা বিকল্প চিন্তা শুরু করল এবং তাদের আঞ্চলিক দোসরদের আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিয়ে দিল। ২০০৬-২০০৭ ও ২০০৮ সালের RAND CORPORATION কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে এর বিস্তারিত তথ্য বিদ্যমান। ইন্টারনেটে তাদের ওয়েবসাইট থেকে যে কেউ তা দেখে নিতে পারেন। আল কায়েদা নীতিগতভাবে আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে প্রাধান্য দেওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে একান্ত অনিচ্ছায় এবং আত্মরক্ষার স্বার্থে স্থানীয় তাবেদারদের সাথে যুদ্ধ করছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা সামনে আসছে।
পারতপক্ষে আল-কায়েদা স্থানীয় সরকারে সাথে যুদ্ধে জড়ায় না। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের সাথে যুদ্ধ করা অবৈধ মনে করে। এর প্রকৃত কারণ হচ্ছে, আল-কায়েদার জানা আছে, আমেরিকা যতদিন পর্যন্ত এদের পেছন থেকে শক্তি যোগাবে ততদিন এদেরকে পরাজিত করা সম্ভব হবে না। সুতরাং সাময়িকভাবে তাদের সাথে যুদ্ধে জড়ানোর অর্থ এই নয় যে, আল-কায়েদা তার মূলনীতি থেকে সরে এসেছে।
উল্লেখ্য, এসব তাবেদার সরকারকে আল-কায়েদা অবৈধ মনে করে এবং অস্ত্রের মাধ্যমে হলেও এদের পতন ঘটানো আবশ্যক মনে করে।
আমার বক্তব্যের সমর্থনে এই পর্যায়ে শাইখ উসামার বক্তব্যের কিছু চুম্বকাংশ তুলে ধরছি। অ্যাবোটাবাদ নথিতে শাইখ উসামার পক্ষ থেকে শাইখ আতিয়্যাতুল্লাহ আল-লিব্বীকে পাঠানো কিছু চিঠি পাওয়া গেছে। সে চিঠিগুলোর ৩য় পর্বে এসেছে, শাইখ বলেন, “আপনারা মিডিয়ার মাধ্যমে জেনে থাকবেন যে, তিউনিসিয়ার স্বৈরশাসকের পতনের দশদিনের মাথায় মিশরের বিপ্লব শুরু হয়। আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির প্রধান মিত্র ও মিশরের দুর্বিনীত একনায়কের পতন ঘটাতে শুধু কায়রোতেই সমবেত হয় চার মিলিয়নেরও অধিক মানুষ। তার পতনের পূর্বেই এই বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ে ইয়েমেন এবং লিবিয়ায়। গাদ্দাফী সরকার বিপ্লব থামাতে রীতিমতো পাগল হয়ে গেছে। আশাকরি, বিপ্লবের এই ধারা অচিরেই মুসলিমদের অনুকূলে চলে আসবে।”
‘ইলা ইখওয়ানিনা ফী বাকিস্তান’ (পাকিস্তানী ভাইদের প্রতি) শিরোনামে শাইখ উসামার রহিমাহুল্লাহ’র একটি বক্তব্য আস-সাহাব মিডিয়া থেকে প্রচারিত হয়। শাইখ সেখানে বলেন, পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও মার্কিন সেনাবাহিনী একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা মুসলিমদের উপর ওয়াজিব।
যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইকে ‘মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই’ বলে অভিযোগ তুলে, শরিয়তের দৃষ্টিতে তাদের এ অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। উপরন্তু উক্ত অভিযোগের মাধ্যমে তারা মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিয়ে যাচ্ছে।
‘আরব বসন্ত’ চলাকালে ১৬ জুমাদাল উখরা, ১৪৩২ হিজরি মোতাবেক ১৯শে মে ২০১১ ইং তারিখে মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে এক বার্তায় শাইখ বলেন, “হে উম্মাহর সন্তানরা! তোমাদের সামনে রয়েছে কণ্টকাকীর্ণ পথ। সেই সাথে রয়েছে স্বৈরশাসকদের প্রবৃত্তি পূজা, মানবরচিত আইনের বাধ্যবাধকতা ও পাশ্চাত্যরীতি থেকে মুক্তির সুবর্ণ সুযোগ।”
‘রিসালাতুন ইলা ইখওয়ানিনাল মুসলিমীন ফিল ইরাক’ (ইরাকী মুসলিম ভাইদের প্রতি বার্তা) শিরোনামে অপর এক বার্তায় শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমেরিকা এবং যারা তাদের সাথে জোট বেধে মুসলিমদেরকে হত্যা করছে, তাদের সকলের বিরুদ্ধে লড়াই করা মুসলিমদের উপর ওয়াজিব। এটা সবারই জানা আছে। তবে কখন লড়াই করতে হবে, সে বিষয়ে কিছুটা মতভিন্নতা রয়েছে।”
উক্ত বার্তায় তিনি আরও বলেন, “একের পর এক তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটতে থাকার এই উত্তপ্ত যুগসন্ধিক্ষণে প্রত্যেক সত্যিকার মুমিনের কর্তব্য হলো, আমেরিকার গোলামদের গোলামি থেকে মুক্তি পেতে এবং দুনিয়ার বুকে আল্লাহর বিধান কায়েম করতে উম্মাহকে উৎসাহিত করা। পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে জর্ডান, মরক্কো, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, মক্কা, মদিনা ও ইয়েমেন হতে পারে সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ও উর্বর ভূমি।”
মোটকথা আল-কায়েদা-এর নেতৃবর্গ ও সদস্যবৃন্দ একই নীতি ও চেতনার ধারক-বাহক। অনৈক্য থেকে বাঁচতে এবং ঐক্য অটুট রাখতে এর বিকল্প নেই।
আরও পড়ুন
প্রথম পর্ব --------------------------------------------------------------------------------------------- তৃতীয় পর্ব
Comment