আত তিবয়ান পাবলিকেশন্স মিডিয়া পরিবেশিত
“‘তাওহীদের পতাকাবাহীদের প্রতি
।।এর থেকে– শেষ পর্ব
“‘তাওহীদের পতাকাবাহীদের প্রতি
।।এর থেকে– শেষ পর্ব
মিল্লাতে ইব্রাহীমকে ধ্বংস করতে এবং দা’য়ীদের এই মিল্লাত থেকে সরিয়ে নিতে তাগুতদের নেয়া কিছু পদক্ষেপের বর্ণনা:
যদি মিল্লাতে ইব্রাহীমের ব্যাপারে আমাদের স্পষ্ট জ্ঞান হয়ে থাকে এবং আমরা যদি বুঝে ফেলি যে এটাই ছিল নবীদের এবং তাদের অনুসারীদের পথ এবং এই পথেই দুনিয়া এবং আখিরাতের সাফল্য ও সুখ পাওয়া সম্ভব – তাহলে আমাদের এটাও নিশ্চিতভাবে জেনে রাখা উচিত যে, তাগুতের বাহিনী কখনোই আমাদের কাজে খুশি হবে না বরং তারা নিশ্চিতভাবে এই শ্রেষ্ঠ মিল্লাতকে ভয় পায় এবং বিভিন্ন উপায়ে একে ধ্বংস করার এবং এর অনুসারী ও দা’য়ীদের এই মিল্লাত থেকে বের করে আনার চেষ্টা করতে থাকে। এ ব্যাপারে মক্কী সময়ে নাযিলকৃত সূরা আল-কালামের একটি আয়াতে আল্লাহ তা’আলা আমাদের বলেছেনঃ
“তারা চায় যে, তুমি নমনীয় হও, তাহলে তারাও কিছুটা নমনীয় হবে।” (সূরা কালাম ৬৮:৯)
অর্থাৎ তারা চায় যে, দা’য়ীরা মিল্লাতে ইব্রাহীম থেকে সরে গিয়ে অন্য এমন পথে চলে যাক, যে পথে গেলে তাদের দাওয়াহ আর নবীদের দাওয়াহর মতো মজবুত এবং সঠিক হতে পারবে না। তাগুত ততক্ষণ পর্যন্ত এই যড়যন্ত্র চালাতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত দা’য়ীরা তাদের দাওয়াহকে পরিবর্তন করে ফেলে, তাগুতের দোষ গোপন করতে শুরু করে এবং তাগুতকে খুশি করতে চেষ্টা করে যখন দা’য়ীরা এমন করবে, তখন তাগুতও তাদের জন্য ছাড় দিবে। এভাবেই দাওয়াহ ধ্বংস হয়ে যাবে, এর বক্তব্য হারিয়ে যাবে এবং দা’য়ীরা সরল সঠিক পথ থেকে সরে যাবে। তাগুত জানে দা’য়ীরা যদি একবার তাদের দাওয়াহ থেকে এক ধাপ সরে যায়, তাহলে তারা সরতেই থাকবে এবং একসময় দাওয়াহর মূল ভিত্তি থেকেই তারা দূরে চলে যাবে। আর দূরে সরে যাবার কারণেই তারা একসময় কাফিরদের কুফরী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। আর যখন দা’য়ীরা এতটা নিচে চলে যায়, তখন তাগুত তাদের খুশি প্রকাশ করে এবং এইসব বিভ্রান্ত দা’য়ীদের সাহায্য করে ও পৃষ্ঠপোষকতা করে। তাগুত এদেরকে প্রশংসা করতে শুরু করে এবং এদের প্রতি সহানুভূতি ও ভালবাসা দেখাতে থাকে। আল্লাহ বলেনঃ
“আমিতোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তা হতে তারা পদস্খলন ঘটাবার চেষ্টা প্রায়চূড়ান্ত করেছিল যাতে তুমি আমার সম্বন্ধে তার বিপরীত মিথ্যা উদ্ভাবন কর; তবেই তারা অবশ্যই তোমাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত।” (সূরা বনী ইসরাইলঃ ৭৩)
মুশরিকরা যখন রাসূল্লাহ ﷺ-কে তার দাওয়াহ এবং দ্বীনের ব্যাপারে কিছু ছাড় দিতে প্রস্তুত করেছিল এবং অনুরোধ করেছিল যে তিনি যেন মুশরিকদের দেব-দেবীদের বিরুদ্ধে কথা না বলে অন্য কিছুর বিরুদ্ধে কথা বলেন- এই ঘটনার উল্লেখ করে সায়্যিদ কুতুব (রহঃ) উপরের আয়াতের আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, “এই যে প্রচেষ্টা থেকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূল ﷺ-কে রক্ষা করেছেন, তা সর্বকালেই ক্ষমতাসীন মানুষেরা দা’য়ীদের উপর প্রয়োগ করতে চায়। এই প্রচেষ্টার উদ্দেশ্য হলো দা’য়ীদেরকে সঠিক পথ থেকে এক চুল পরিমাণ হলেও সরিয়ে দেয়া। যাতে তারা অনেক সওয়াবের পথ থেকে সরে এসে এই সাদামাটা জীবনের ছলনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনেক দা’য়ীই এভাবে সঠিক পথ থেকে সরে গেছে, কারণ তারা এটাকে এমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করেনি। ক্ষমতাসীনরা দা’য়ীদেরকে দাওয়াহ পুরোপুরি বন্ধ করতে বলে না, বরং তাদেরকে তাদের দাওয়ার মাঝে অল্প কিছু পরিবর্তন আনতে বলে – যাতে দুই পক্ষই কিছু ছাড় দিয়ে অবশেষে একমত হতে পারে। শয়তান অনেক সময় এমনভাবে দা’য়ীদের বিভ্রান্ত করে ফেলে যে, তারা ভাবতে শুরু করে, যেকোনো উপায় এমনকি কিছুটা ছাড় দিয়ে হলেও ক্ষমতাসীনদের হাত করতে পারাটাই হলো সবচেয়ে ভালো দাওয়াহ। অথচ দাওয়াহর শুরুতেই যদি সামান্য পথভ্রষ্টতা আসে, তাহলে শেষ পর্যন্ত এটা সঠিক পথ থেকে অনেক অনেক দূরে সরে যাবে। যে দা’য়ী একবার ছাড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে, তা সেটা যত সামান্য বিষয়েই হোক না কেন – সে কিছুতেই থামতে পারে না, তার ছাড় দেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকে। ক্ষমতাধররা দা’য়ীদেরকে এভাবেই আস্তে আস্তে ছাড় দেয়ার দিকে নিতে থাকে, যতক্ষণ না তারা তাদের মর্যাদাবোধ এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যেসব দা’য়ী এই ফাঁদে পড়ে তারা বুঝতে পারে যে, বেশি বেশি ছাড় দেয়া এবং ক্ষমতাধরদের নিজেদের সাথে বরণ করে নেয়াটা আসলে দাওয়াহকে বিজয়ী করতে পারে না, বরং এটা পরাজিতই হয় – কারণ এক্ষেত্রে দাওয়াহর সাফল্য চলে যায় ক্ষমতাশীলদের হাতে, অথচ মু’মিনরা কেবলমাত্র আল্লাহর কাছ থেকেই সাফল্য কামনা করে। সত্যিই, এখন অনেক দা’য়ীকে দেখা যায় যাদেরকে তাগুত বন্ধু হিসেবে নিয়ে নিয়েছে এবং তাগুত এদের কোন ক্ষতি করে না, এদের বাধা দেয় না এবং এদের প্রতি শত্রুতাও দেখায় না- কারণ এই দা’য়ীরাও তাগুতকে তাদের কিছু কিছু সীমালঙ্ঘনে বাধা দেয় না, বরং তাগুতকে সমর্থন করে। এরা তাগুতের সাথে সমঝোতা করে, একসাথে সভা-সেমিনার করে, উৎসব করে ইত্যাদি। তাগুত যেসব উপায়ে দা’য়ীদের ধ্বংস করে দেয় তার কিছু নমুনা হলঃ-
- তাগুত কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে, যেমন – পার্লামেন্ট, জাতিসংঘ, ইত্যাদি যেখানে তারা একত্রিত হতে পারে। তারা দা’য়ীদের আহ্বান করে তাদের সাথে এসব জায়গায় বসে আলোচনার মাধ্যমে সব বিষয়ের ফয়সালা করতে। এর ফলে, তাগুতের প্রতি, তাদের কুফরের প্রতি এবং তাদের বানানো আইনের প্রতি বারা’ প্রদর্শন করা হয়না- বরং তাদের সহযোগিতাই করা হয়। এই আলোচনার উদ্দেশ্য হয়ে দাড়ায় দেশের উন্নয়ন, অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাগুতকে সাহায্য করা ও উপদেশ দেয়া – অথচ দেশ থেকে যাচ্ছে তাগুতের অধীনে এবং তাদের মনগড়া ও ভ্রান্ত আইনের মাধ্যমে শাসিত হয়ে। এমন অনেককেই এখন দেখা যায় যারা নিজেদেরকে সালাফদের পথের অনুসারী বলে দাবী করে এবং সাইয়্যেদ কুতুবের কথা থেকে উদ্ধৃতি পেশ করে- অথচ তারাই তাগুতের এই ফাঁদে পড়ে এক সময় তাগুতের প্রশংসা করতে শুরু করে, তাদের উপস্থিতিতে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখায় এবং সম্মানজনক উপাধি দিয়ে তাগুতদের সম্বোধন করে। এমনকি তারা জনগণকে তাদের সরকারের প্রতি আনুগত্য করার ডাক দেয়, তাগুতের সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সাহায্য করতে বলে, তাগুতের সংবিধান ও আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাহলে দাওয়াহর আর কি বাকী থাকলো? আমরা আল্লাহর কাছে এই গোমরাহী থেকে আশ্রয় চাই।
- তাগুতের আরেকটি কাজ হলো আলেমদের এমন কোন কাজে নিয়োজিত করা এবং ব্যস্ত রাখা যা তাগুতের জন্য লাভজনক। যেমন – বিরোধীদল বা অন্য কোন রাজনৈতিক শক্তি যা তাগুতের বিরুদ্ধে হুমকি স্বরূপ, তাদের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য আলেমদের উস্কানি দেয়া, যেমন – সমাজতন্ত্রী, শিয়া বা কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে। এভাবেই ভ্রান্ত আক্বীদার (শিয়া, সমাজতন্ত্রী ইত্যাদি) প্রতি আলেমদের ঘৃণাকে কাজে লাগিয়ে তাগুত নিজেকে বাঁচাতে চেষ্টা করে। তাই তাগুত আলেমদের সাহায্য করতে থাকে অন্যান্য শত্রুর বিরুদ্ধে, যারা আসলে তাগুতেরও শত্রু। তাগুত বাইরে বাইরে ইসলামের জন্য ভালবাসা দেখায় এবং আলেমদের কাজের জন্য উৎসাহ ও পুরষ্কার দেয়, বড় বড় উপাধি দেয় – অথচ আসলে সে নিজেরই উপকার করছে। যারা এই ফাঁদে পড়ে নিজেদের জীবন ও সময় বিলিয়ে দিচ্ছে তারা বুঝাতেও পারছে না যে, তারা আসলে ইসলামের এক শত্রুর বিরুদ্ধে ইসলামের আরেক শত্রুকে সাহায্য করছে। এভাবে ক্রমে ক্রমে অনেক আলেম তাদের নিকট-শত্রু তাগুতের প্রতি শত্রুতা করা বন্ধ করে দিয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের বন্ধু, সহায়ক এবং উপদেষ্টা হয়ে গেছে। তাগুতের সেবা এবং তাগুতের ক্ষমতা ও শাসনকে সুরক্ষিত রাখাই এখন এসব আলেমের একমাত্র কাজ- কেউ বুঝে করছে আবার কেউবা করছে না বুঝে। আমরা আশা করছি মহামহিমান্বিত আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে এই আয়াতটি বোঝার তওফিক দিবেন – “হে আমার প্রতিপালক! তুমি যেহেতু আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছ, আমি কখনও অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না।” (সূরা কাসাসঃ ১৭)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় কুরতুবী বলেছেন, “যে বনী ইসরাইলের লোকটি মুসা (আঃ)-এর কাছে সাহায্য চেয়েছিল, সে কাফির ছিল এবং সে তার দলে যোগ দিয়েছিল কেবলমাত্র ইসরাইলী বংশের কারণে দ্বীনের প্রতি আনুগত্যের কারণে নয়। এ জন্যই মুসা (আঃ) আক্ষেপ করেছেন যে, তিনি এক কাফিরের বিরুদ্ধে আরেক কাফিরকে সাহায্য করেছেন। তাই তিনি বলেছেন, “আমি এর পরে আর কখনো কোন কাফিরের সাহায্যকারী হব না।” এবং এখানে ‘যাহির’-এর অর্থ হলো ‘সাহায্যকারী’।
আমরা আরও আশা করি তারা আল্লাহ তা’আলার এই কথা বুঝতে পারবেঃ
“হে মু’মিনগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ কর এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। জেনে রেখ, আল্লাহ তো মুত্তাকীদের সাথে আছেন।” (সূরা তাওবাহ ৯:১২৩)
এই আয়াতটি বুঝলে তারা বুঝতে পারতো যে, যদিও সমাজতন্ত্রী বা শিয়ারা যে ইসলামের শত্রু এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই এবং তাদের প্রতি শত্রুতা এবং বারা’আ প্রদর্শন করাটাও নিশ্চয়ই আমাদের কর্তব্য – কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, মুসলিমরা শুরু করে কাছের শত্রুকে দিয়ে, তারপর তার থেকে দূরের, এভাবে শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সীরাত থেকেও এটাই পাওয়া যায়। এমনকি সাধারণ বিচার-বুদ্ধি থেকেও বলা যায় যে, কাছের শত্রু বেশী ভয়ংকর কারণ সে সরাসরি সম্পর্কিত এবং তার করা ক্ষয়ক্ষতি আমাদের উপর বেশী প্রভাব ফেলবে। এই একই কারণে সাধারণত নিজের নাফস এবং শয়তানের সাথে আগে লড়াই করতে হয়, শত্রুর সাথে জিহাদ পরে।
[ইসলামী ফিকহের বইতে এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে ‘কাছের শত্রু’ এবং ‘দূরের শত্রু’ অধ্যায়। যেমন – ইবনে ক্বুদামাহ বলেছেন, “বিষয়ঃ ‘প্রত্যেকের উচিত সবচেয়ে কাছের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা’ আর এর পেছনে মূলনীতি হল আল্লাহর বাণী – “হে মু’মিনগণ! কাফিরদের মধ্যে যারা তোমাদের নিকটবর্তী তাদের সাথে যুদ্ধ কর…” (সূরা তাওবাহ ৯:১২৩)] এবং যেহেতু কাছের শত্রু বেশী ক্ষতিকর, আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাধ্যমে যারা সরাসরি এদের সামনে আছে তারা রক্ষা পেতে পারে। আর দূরের শত্রুকে নিয়েই ব্যস্ত থাকলে এই কাছের শত্রুরা অপ্রস্তুত মুসলিমদের ক্ষতি করার সুযোগ পেয়ে যাবে।” তিনি আরো বলেছেন, “তবে তারপরও যদি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে দূরের শত্রুকে আগে আক্রমণ করা দরকার – যেমন, সে যদি বেশী ভয়ংকর হয় বা কাছের শত্রু আনুগত্য স্বীকার করে নেয় বা কাছের শত্রুর সাথে যুদ্ধে কোন বাধা থাকে, তাহলে দূরের শত্রুকে আক্রমণ করতে কোন সমস্যা নেই কারণ এটা হলো ‘নিদ’-এর অবস্থা।” (আল-মুগনী ওয়া আশ শারহ আল-কাবীর, ১০ম খন্ড, পৃঃ ৩৭২-৩৭৩)
উপরোক্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর (রহঃ) বলেছেন, “ইসলামী রাষ্ট্রের সবচেয়ে কাছের শত্রুর বিরুদ্ধে আল্লাহ্ মু’মিনদের সবচেয়ে আগে যুদ্ধ করতে বলেছেন, এবং সবচেয়ে দূরের শত্রুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে পরে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রথমে জাজিরাতুল আরবের মুশরিকদের সাথে যুদ্ধ করেন। এদের সাথে যুদ্ধ হলে এবং আল্লাহ তাকে মক্কা, মদীনা, তায়িফ, ইয়েমেন, ইয়ামামাহ, হিজর, খায়বার, হাদরামাউত এবং অন্যান্য আরব এলাকার উপর আধিপত্য দান করলে এবং আরব গোত্রগুলো দলে দলে ইসলামে প্রবেশের পরে তিনি রোমানদের সাথে যুদ্ধ শুরু করেন যারা ছিলো আরবের সবচেয়ে কাছে, এবং এই কারণেই তাদেরই ইসলামের ডাক পাওয়ার বেশি অধিকার ছিল, তাছাড়া তারা ছিল আহলে কিতাব।” (তাফসীর ইবনে কাসীর ২য় খন্ড)
- তাগুত অনেক সময় কিছু নির্বোধ আলেমকে ব্যবহার করে অন্যান্য দা’য়ীদের বাধা দেয়ার জন্য। যাদের দাওয়াহ, মাযহাব বা কর্মপদ্ধতি (মিনহাজ) এইসব আলেমদের মতের সাথে মিলে না- সেই সব দা’য়ী এবং তাদের দলের বিরুদ্ধে তাগুত – এই আলেমদের লেলিয়ে দেয়। এমনকি তাগুত এসব আলেমদের মাধ্যমে ফতোয়াও জারী করে, যেখানে দা’য়ীদেরকে খারিজী, বিদ্রোহী (বুগাত) বা ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অথচ, “সাবধান! তারাই অশান্তি সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না।” (সূরা বাকারা ২:১২)
- আর এসব আলেমের বোঝা উচিত যে দা’য়ীদের মাঝে অনেক ধরনের বিভ্রান্তি থাকতে পারে, কিন্তু সেটা কখনোই তাগুতের বিভ্রান্তির সমপর্যায়ের নয়। কারণ, তাগুত হলো আল্লাহ ও তাঁর দ্বীনের সরাসরি বিরুদ্ধে।
- তাগুতের আরেকটি চাল হলো আলেমদেরকে এবং দা’য়ীদেরকে উচ্চ পদমর্যাদা, চাকরি, উপাধি, প্রচুর সম্মান এবং সম্পদ দান করা, যাতে তারা তাগুতের বিরুদ্ধে কিছু করা থেকে বিরত থাকে। যেসব আলেম মনে করে – ‘নুন খাই যার, গুণ গাই তার’ – তারা এই ফাঁদে পড়ে একসময় তাগুতের সব খারাপ কাজকে সমর্থন করতে শুরু করে, তাদের পক্ষে ফতোয়া দেয়, তাদের গুনের বর্ণনা করে এবং তাদের কাজের প্রশংসা করে। ইবন আল-জাওযি বলেছেন, “ইবলিস ফকিহদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্য তাদেরকে সুলতান ও আমিরদের সাথে ঘনিষ্ঠ করে দেয় যাতে তারা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরোধিতা না করে।” (তালবিসুল ইবলিস, পৃঃ ১২১) এবং তিনি আরো বলেছেন যে, সুলতানদের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়ার উদ্দেশ্য প্রথমে হয়তো ভালো থাকে, কিন্তু পরে সুলতানদের উপঢৌকন এবং পুরষ্কার পেয়ে এবং নিজেদের লোভের কারণে এই ভালো উদ্দেশ্য বদলে যায়। একসময় আর তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ না হয়ে পারা যায়না এবং তাদের বিরোধিতাও করা যায়না। সুফিয়ান আস-সাওরী বলেছেন, ‘আমি এই ভয় করিনা যে, সুলতানরা আমাকে অপমানিত করবে, বরং আমি ভয় করি যে তারা তাদের দানের মাধ্যমে আমাকে তাদের পক্ষে টেনে নিবে।”’ (তালবিস ইবলিস, পৃঃ ১২২) আর চিন্তা করে দেখুন সুফিয়ান কাদের ব্যাপারে এই কথা বলেছেন আর আজকের তাগুত তো তাদের চেয়ে অনেক বেশী সীমালংঘনকারী।
- তাগুত ইসলামের কিছু শাখা-প্রশাখা নিয়ে খুব আগ্রহ দেখায় এবং ঐসব বিষয়ে দাওয়াহ দেয়ার অজুহাতে সেইসব আলেমদের জড়ো করে, যাদের ন্যায়-নিষ্ঠতাকে তাগুত ভয় পায় এবং যারা মানুষের কাছে প্রিয়। তাই তাগুত এদের জন্য স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ইত্যাদি তৈরি করে দেয়, রেডিও-টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করতে দেয়। সরকারি নানা কাজে নিয়োগ দেয়, বিভিন্ন বই লিখতে দেয়- ইত্যাদি অনেক কাজে ব্যস্ত করে রাখে যাতে তারা তাদের প্রধান কাজ অর্থাৎ তাগুতের সীমালঙ্ঘনের বিরুদ্ধে কিছু করতে সময় পায় না। এছাড়া তাগুত ইসলামের নামে বিভিন্ন সংস্থা তৈরি করে এবং আলেমদেরকে সেখানে সদস্য হতে বলে। যেমন, সউদী সরকার তৈরি করেছে ‘মুসলিম লীগ’। আলেমরা জানে যে এগুলোর সদস্য হওয়ার অর্থ হলো তাগুতের সাথে ঘনিষ্ঠতা করা, কিন্তু তারপরও অনেক আলেম এই ধোঁকায় প্রতারিত হয়ে যায়। বর্তমানে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে, অধিকাংশ ইসলামী বইতেই সউদী তাগুত সরকারের প্রশংসা করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হচ্ছে। যদি কোন দেশের সাথে তাগুতের বিরোধিতা থাকে, কেবলমাত্র তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে। যেমন, একসময় গাদ্দাফীর সাথে সউদী সরকারদের শত্রুতা ছিল, তখন তার বিরুদ্ধে অনেক লেখালেখি, অনেক ফতোয়া হয়েছে। কিন্তু যখন, এই বিরোধ মিটে গেল তখন সব ফতোয়াও হারিয়ে গেল। এখন এসব তাগুত কা’বা তাওয়াফ করে, অথচ আলেমরা কিছুই বলেনা। একমাত্র আল্লাহর কাছেই আমরা আমাদের এই বিপদের কথা বলতে পারি। যখনই দেখা যাবে যে, কোন প্রতিষ্ঠানের পেছনে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা আছে, তখনই ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থাকতে হবে।
- তাগুত কিছু কিছু দা’য়ীকে বাছাই করে তাদেরকে দাওয়াহ এবং খুতবা দেয়ার লাইসেন্স দেয়। তারা ‘আমর বিল মারুফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার কমিটি’ তৈরি করে এবং আলেমদের এই কমিটিকে ঢুকিয়ে সন্তুষ্ট করতে চায়, যাতে আলেমরা এই কাজেই ব্যস্ত থাকে এবং সরকারের দোষত্রুটি, রাজনীতি এবং তাগুতের সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে চুপ থাকে। তাগুত তাদেরকে ব্যস্ত রাখে জনগণের কিছু সমস্যা নিয়ে যা কিনা সরকারের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে (যেমন-ঘুষ, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি)। ফলে আলেমরা এসব ছোট ছোট সমস্যা নিয়েই ব্যস্ত থাকে, সবচেয়ে বড় সমস্যা নিয়ে তারা ভাবারই সময় পায়না। কারণ তাদের কর্মকাণ্ড ও দাওয়াহর পরিচালনার দায়িত্ব থাকে এসব কমিটির হাতে।
- তাগুত পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে থেকে এই মিল্লাত দূরে সরিয়ে দিতে তাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মিডিয়া এবং আরো অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে। এই তাগুতরা আসলে ফিরাউনের চেয়েও খারাপ। কারণ, ফেরাউন পরবর্তী প্রজন্মকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে যখন তার সবকিছু ব্যর্থ হয়েছে – আর আজকের তাগুত প্রথম থেকেই সেই চেষ্টা শুরু করেছে। তাগুত এসব ছেলেমেয়েকে বড় করে তোলে এমন এক পরিবেশে যেখানে তাদের তাগুতকে শ্রদ্ধা করতে শেখানো হয়, তাগুতের আইনকে এবং দেশকে ভালবাসতে বলা হয়। এই শিক্ষা দেয়া হয় স্কুল-কলেজে এবং মিডিয়ায় আর মুসলিমরা তাদের বোকামীর কারণে স্বেচ্ছায় নিজের সন্তানকে এর মাঝে ঠেলে দেয়। এই তাগুত যদি ফিরাউনের মতো করে হত্যা করা শুরু করতো তাহলে জনগণ বিদ্রোহ করতো- কিন্তু তাদের এই গভীর ষড়যন্ত্রের ফলে জনগণ বিদ্রোহ করা তো দূরের কথা, বরং তাগুতকে ভালবাসতে শুরু করে। জনগণ মনে করে তাগুত অশিক্ষা দূর করছে, মানুষকে সভ্যতা ও উন্নতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ, এসবের আড়ালে তাগুত আসলে তার সরকার ও আইনের প্রতি অনুগত ও বিশ্বস্ত সেবক তৈরি করে নিচ্ছে। আর এতটা যদি নাও হয় তাহলেও অন্ততে এমন এক প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে যারা পথহারা, অজ্ঞ এবং অবুঝ। এই প্রজন্ম সঠিক মিল্লাত থেকে দূরে চলে যায়, এবং তাগুতের বিরোধিতা করা তো পরের ব্যাপার তাগুতের বিরোধিতা করার চিন্তাও এদের মাথায় আসে না। তাগুতের এসব ফাঁদে পড়ে অনেক আলেমই পথভ্রষ্ট হয়ে গেছে। ফলে মানুষ এখন আলেম এবং ইসলামী নেতাদের উপর ভরসা হারিয়ে ফেলেছে। আর তাগুতের চোখেও এমন আলেমরা অত্যন্ত তুচ্ছ হয়ে গেছে, কারণ তাগুত এখন আর এদের ভয় পায়না, এদের দাওয়াহকেও ভয় পায়না এবং এমনকি এদের ব্যাপারে দুশ্চিন্তাও করে না, অথচ এই আলেমরাই যদি তাদের দাওয়াহ দৃঢ় রাখতো, পাহাড়ের মতো অটল থাকতো, তাগুতের প্রতি বারা’আ প্রদর্শন করতো এবং তাদের কথামতো সঠিক পথ থেকে সরে যাওয়াকে ঘৃণা করতো- তাহলে তাগুত এই আলেমদের ভয় পেতো এবং বিচলিত হতো। আল্লাহ তাগুতদের মনে মু’মিনদের প্রতি ভয় ঢুকিয়ে দেন, যেমন তিনি সেই সময়ের কাফিরদের মনে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন, এবং এই ভয়ের মাধ্যমেই এক মাসের দূরত্ব থেকেই কাফিরদের উপর বিজয় লাভ করেন। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলূল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আমাকে এমন পাঁচটি জিনিষ দেয়া হয়েছে যা আগে কাউকে দেয়া হয়নিঃ (১) আমাকে শুধুমাত্র ভয়ের মাধ্যমেই এক মাসের দূরত্বে থেকে বিজয় দেয়া হয়েছে; (২) সমস্ত দুনিয়াকেই আমার জন্য ইবাদতের জায়গা করা হয়েছে-যেখানেই আমার উম্মাতের যে কেউ ইবাদত করতে চাইবে, সেখানেই সে করতে পারবে, (৩) গণিমতের মাল আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে যা আগে বৈধ ছিলনা (৪) আমাকে সুপারিশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে,(৫) অন্য নবীরা ছিলেন কেবল তাদের নিজ নিজ জাতির জন্য প্রেরিত, কিন্তু আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে সমগ্র মানব জাতির জন্য।” (বুখারী
সুতরাং আমাদের এইসব ফাঁদ থেকে সাবধান হওয়া উচিত, আল্লাহ্ আমাদের কাছে এইসব ষড়যন্ত্র প্রকাশ করে দিয়েছেন, ফাঁদগুলো চিনিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদের সাবধান করে দিয়েছেন। এবং সেই সাথে তিনি এর সমাধান দিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদেরকে সঠিক পথটিও দেখিয়ে দিয়েছেন। যেমনঃ
“তারা চায় যে, তুমি নমনীয় হও, তাহলে তারাও কিছুটা নমনীয় হবে।” (সূরা কালাম ৬৮:৯)
আয়াতটি বলার আগেই আল্লাহ বলে দিয়েছেন-
“সুতরাং তুমি মিথ্যাচারীদের অনুসরণ করো না।” (সূরা কালাম ৬৮:৮)
তাদের আনুগত্য করা যাবেনা, তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়া যাবেনা এবং তাদের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ারে পরিণত হওয়া যাবে না, কারণ আল্লাহ আমাদের সত্য দ্বীন দিয়েছেন, সঠিক পথ দেখিয়েছেন এবং মিল্লাতে ইব্রাহীমের দিকে চালিত করেছেন।
- যেমন মক্কী যুগে অবতীর্ণ সূরা আল-ইনসানের একটি আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ
“সুতরাং ধৈর্যের সাথে তোমার প্রতিপালকের নির্দেশের প্রতীক্ষা কর এবং তাদের মধ্যে যে পাপিষ্ঠ অথবা কাফির তার আনুগত্য করো না।” (সূরা ইনসান ৭৬:২৪)
এখানে আল্লাহ্ তা’আলা দুষ্কৃতকারী কাফিরদের আনুগত্য করতে নিষেধ করেছেন। এই পথ দা’য়ীদের নিজেদের মনগড়া কোন পথ নয়- তারা ইচ্ছামতো এই পথকে পরিবর্তন করার বা এর কোন বৈশিষ্ট্য বদলে দেবার অধিকার রাখে না। বরং এটা হলো ইব্রাহীম (আঃ) এর মিল্লাত এবং অন্য সব নবী ও রাসূলের পথ, যার বর্ণনা কুরআনে আছে।
- মক্কী যুগের আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছেঃ
“সুতরাং তুমি কাফিরদের আনুগত্য করও না এবং তুমি কুরআনের সাহায্যে তাদের সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাও।” (সূরা ফুরকান ২৫:৫২)
সুতরাং কুরআনে বর্ণিত পথ ছাড়া অন্য কোন পথে বা পদ্ধতিতে দাওয়াহর কাজ করা যাবে না। তাদেরকে এই কুরআনের মাধ্যমেই সতর্ক করতে হবে এবং কোন বাতিল, বিকৃত পথ অনুসরণ করা যাবেনা, যেসব পথে গেলে কাফিরদের আনুগত্য করতে হয় বা তাদের কুফরীর ব্যাপারে চুপ থাকতে হয়।
- একই ভাবে আল্লাহ তা’আলা তাঁর রাসূলকে আদেশ করেছেন কুরআন থেকে কিছু কিছু করে ‘তিলাওয়াত’ করতে। এখানে ‘তিলাওয়াত’ অর্থ হলো অনুসরণ। এবং এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই যে, দ্বীনে দৃঢ় থাকার জন্য কিতাব পড়া, বোঝা এবং মজবুতভাবে অনুসরণ করার চেয়ে ভালো কোন উপায় থাকতে পারে না এবং ঈমানের দৃঢ়তা আরো বাড়ানো যায় আল্লাহর বেশি স্মরণ এবং ‘ক্বিয়াম-উল-লাইল’ (রাত্রির নামাজ)-এর সাহায্যে, যেমন বলা হয়েছে-
“এবং তোমাদের প্রতিপালকের নাম স্মরণ কর সকাল ও সন্ধ্যায়, রাত্রির কিয়দংশে তাঁর প্রতি সিজদায় নত হও, এবং রাত্রির দীর্ঘ সময় তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর।” (সূরা ইনসান ৭৬:২৫-২৬)
“তুমিনিজেকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদের সাথে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহ্বান করেতাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনেরশোভা কামনা করো না তাদের হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নাও। তুমি তাদের আনুগত্যকরোনা যাদের চিত্তকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল–খুশির অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।” (সূরা কাহাফ ১৮:২৮-২৯)
এবং এই আয়াতগুলোও নাযিল হয়েছিল মক্কী সময়ে। একইভাবে সূরা আশ-শুরার এই আয়াতটিও মক্কী সময়ের যেখানে তিনি বলেছেন পূর্বের নবীদের প্রতি তাঁর দেয়া বিধানের কথা:
“….. যেভাবে আদেশ করা হয়েছে, সেভাবেই প্রতিষ্ঠিত থেকো এবং ওদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ করো না—।” (সূরা আশ-শুরা ৪২:১৫)
এবং কিছুটা পরেই তিনি কাফিরদের প্রতি ঘোষণা করতে বলেছেন,
“–আমাদের কাজ আমাদের কাছে এবং তোমাদের কাজ তোমাদের কাছে….।” (সূরা জাছিয়াহ ৪৫:১৮)
এই ঘোষণার মাধ্যমে কাফিরদের ভ্রান্ত ইচ্ছা, পদ্ধতি এবং পথের প্রতি বারা’আ প্রদর্শিত হয়। একই কথা বলা হয়েছে সূরা জাছিয়াতে।
“এরপর আমি তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করেছি দ্বীনের বিশেষ বিধানের উপর সুতরাং তুমি তার অনুসরণ কর, অজ্ঞদের খেয়াল-খুশির অনুসরণ কর না।” (সূরা আশ-শুরা ৪২:১৫)
আমরা কুরআন থেকে গবেষণা করলেই দেখতে পাবো প্রচুর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি মানুষকে খেলার ছলে সৃষ্টি করেননি এবং কোন দায়িত্ব ছাড়াই ছেড়ে দেননি। আল্লাহর দেয়া পদ্ধতির স্পষ্টতা এবং দৃঢ়তা কি দা’য়ীদের জন্য যথেষ্ট নয়? নবীরা যেই পথে সন্তুষ্ট ছিলেন, দা’য়ীরা কি সেই পথ নিয়ে সন্তুষ্ট নয়? দা’য়ীদের জন্য এখনও ঘুম থেকে জাগার এবং বিপথগামীতা থেকে ফিরে আসার সময় হয়নি? তারা ইতিমধ্যেই তাগুতের ফাঁদে পড়ে তার দোষ গোপন করছে, মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এবং নিজেদের আমল ধ্বংস করছে – তারা কি আরো খারাপ হতে চায়? আল্লাহর শপথ, এখন শুধু একটিই সিদ্ধান্ত নিতে হবে – হয় আল্লাহর দেয়া শরীয়াহ, আর না হলে ঐসব অজ্ঞ মানুষের খেয়ালখুশি। এর বাইরে তৃতীয় কোন পথ নেই কারণ এই দুইয়ের মাঝামাঝি বলতে কোন কিছু নেই।
এসব আয়াত একজন দা’য়ীকে তার পথ চিনিয়ে দেয়। নিশ্চিতভাবেই, এই শরীয়াহ এবং এর বাইরে যা কিছু আছে তার সবই হলো বাতিল এবং নিছক খেয়ালখুশি যা অজ্ঞতা থেকে জন্ম নিয়েছে। দা’য়ীর দায়িত্ব হলো শরীয়াহকে গ্রহণ করা এবং অন্য সবকিছু ছেড়ে দেয়া। একজন দা’য়ী কখনোই এই শরীয়াহ থেকে সামান্যও সরতে পারবে না বা অন্য কারো মনগড়া মতের দিকে সামান্যও ঝুঁকে পড়তে পারবে না। কারণ ঐসব মত ও পথ যারা তৈরি করেছে তারা একতাবদ্ধ হয়ে ইসলামকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করছে। তাই তাদের সাহায্য করা যাবেনা। তারা সবাই দাওয়াহ ও দা’য়ীদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ এবং একে অন্যের সাহায্যকারী। কিন্তু তারপরও তারা দা’য়ীর কোন ক্ষতি করতে পারবে না, সামান্য বিরক্তি ছাড়া। কারণ, স্বয়ং আল্লাহ্ তাকে সাহায্য করবেন ও বিজয় দিবেন। আল্লাহু সুরক্ষা ও সাহায্যের তুলনায় ঐসব তাগুতদের পারস্পরিক সহায়তা কিছুই না। আর শারীয়াহ আঁকড়ে রাখা দা’য়ী যে কিনা আল্লাহর সাহায্য পেয়েছে তার সামনে এইসব ভাঁড়গুলো কতোই না দুর্বল যাদের সাহায্যকারী কেবলমাত্র তারা নিজেরাই।
“…..আর মুত্তাকীদের আসল বন্ধু হচ্ছেন আল্লাহ্।” (সূরা জাছিয়াহ ৪৫:১৯)
Comment