Announcement

Collapse
No announcement yet.

ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির); ০৯- তিন-চার. বন্দী ও প্রহার

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ইসলামে দণ্ডবিধি (হদ-তা’যির); ০৯- তিন-চার. বন্দী ও প্রহার

    তিন. বন্দী করে রাখা
    এখানে জেলে বন্দী বা নিজ গৃহে নজরবন্দী উভয়টাই উদ্দেশ্য। কুরআন সু্ন্নাহয় এ উভয়টাই এসেছে।

    আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    {وَاللَّاتِي يَأْتِينَ الْفَاحِشَةَ مِنْ نِسَائِكُمْ فَاسْتَشْهِدُوا عَلَيْهِنَّ أَرْبَعَةً مِنْكُمْ فَإِنْ شَهِدُوا فَأَمْسِكُوهُنَّ فِي الْبُيُوتِ حَتَّى يَتَوَفَّاهُنَّ الْمَوْتُ أَوْ يَجْعَلَ اللَّهُ لَهُنَّ سَبِيلًا}
    “তোমাদের নারীদের মধ্য হতে যারা অশ্লীল কাজ করবে, তাদের ব্যাপারে তোমাদের মধ্য হতে চার জন সাক্ষী রাখবে। তারা সাক্ষ্য দিলে সেসকল নারীকে গৃহে বন্দী করে রাখবে, যাবৎ না মৃত্যু তাদের তুলে নিয়ে যায় কিংবা আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য কোন ব্যবস্থা দেন।” [ নিসা: ১৫]

    ইসলামের শুরু যামানায় যিনার নির্ধারিত কোন শাস্তি ছিল না। সে সময়ে ব্যবস্থা ছিল- যিনায় লিপ্ত নারীদের গৃহে বন্দী করে রাখা। পরবর্তীতে এ বিধান রহিত হয়ে গেছে। অবিবাহিতদের জন্য একশো বেত্রাঘাত আর বিবাহিতদের জন্য রজম করে হত্যা নির্ধারিত হয়েছে।

    এ আয়াত যদিও মানসূখ হয়ে গেছে, তবে এ থেকে এতটুকু বুঝে আসে যে, যেসকল অপরাধের জন্য শরীয়তে নির্ধারিত কোন শাস্তি নেই, সেসবের ক্ষেত্রে বন্দী করে রাখা একটা শাস্তি হতে পারে।

    শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮হি.) বলেন,
    قوله تعالى: {فأمسكوهن في البيوت حتى يتوفاهن الموت أو يجعل الله لهن سبيلا} [النساء: 15] قد يستدل بذلك على أن المذنب إذا لم يعرف فيه حكم الشرع فإنه يمسك فيحبس حتى يعرف فيه الحكم الشرعي فينفذ فيه. اهـ
    “আল্লাহ তাআলার বাণী: [সেসকল নারীকে গৃহে বন্দী করে রাখবে, যাবৎ না মৃত্যু তাদের তুলে নিয়ে যায় কিংবা আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য কোন ব্যবস্থা দেন।] এ থেকে এ বিষয়ে দলীল দেয়া যায় যে, অপরাধীর ব্যাপারে যদি শরীয়তের বিধান জানা না যায়, তাহলে তার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান জানা যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাকে আটক করে বন্দী করে রাখা হবে। বিধান জানা গেলে তখন বাস্তবায়ন করা হবে।” [ আলফাতাওয়াল কুবরা: ৫/৫২৭]

    এক হাদিসে এসেছে,
    عن بهز بن حكيم عن أبيه عن جده: (أن النبي صلى الله عليه وسلم حبس رجلا في تهمة ثم خلى عنه)
    “হযরত বাহয ইবনে হাকিম তার পিতৃসূত্রে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন- অভিযোগের ভিত্তিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বন্দী করেছিলেন। এরপর (নির্দোষ প্রমাণিত হলে) তাকে ছেড়ে দেন।” [ তিরমিযি: ১৪১৭, আবু দাউদ: ৩৬৩০]

    সাহাবায়ে কেরাম থেকে বন্দী করে রাখার অজস্র ঘটনা বর্ণিত আছে।



    চার. প্রহার
    প্রহার তা’যিরের অত্যধিক প্রসিদ্ধ পন্থা। বরং তা’যির বলতে যেন সাধারণত প্রহারকেই বুঝিয়ে থাকে। কুরআন সুন্নাহয় প্রহারের দ্বারা তা’যিরের কথা এসেছে। খুলাফায়ে রাশিদিনসহ পরবর্তী সকল যুগে প্রহারের মাধ্যমে তা’যিরের ধারা চলে আসছে।

    কুরআনে কারীম থেকে সূরা নিসার পূর্বোল্লিখিত ৩৪ নং আয়াত এর দলীল। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
    {وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا}
    “যে সকল স্ত্রীর ব্যাপারে তোমরা অবাধ্যতার আশঙ্কা কর, তাদেরকে (প্রথমে) বুঝাও এবং (তাতে কাজ না হলে) তাদের সাথে একই বিছানায় শয়ন ছেড়ে দাও এবং (তাতেও সংশোধন না হলে) তাদের প্রহার করতে পার। অতঃপর তারা যদি তোমাদের আনুগত্য করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা গ্রহণের পথ খুঁজো না। নিশ্চিত জেনো- আল্লাহ সবার উপরে, সবার বড়।” [ নিসা: ৩৪]

    এক হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
    (مُرُوا أولادَكم بالصلاة وهم أَبناءُ سبع ، واضربوهم عليها وهم أبناءُ عشْر ، وفرِّقُوا بينهم في المضاجع)
    “তোমাদের সন্তানরা যখন সাত বৎসরে উপনীত হয়, তখন তাদেরকে নামাজের আদেশ কর। আর দশ বৎসরে উপনীত হলে তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দাও।” [ আবু দাউদ: ৪৯৫]

    এখানে নাবালেগকে নামায তরক করার কারণে প্রহারের আদেশ দেয়া হয়েছে, অথচ নাবালেগের উপর শরীয়তের বিধি বিধান বর্তায় না; তাছাড়া নামায না পড়ার দ্বারা শুধু ব্যক্তির নিজেরই ক্ষতি হয়, অন্যের ক্ষতি হয় না। তাহলে বালেগ ব্যক্তিদের এবং ঐ সকল অপরাধ, যেগুলোর দ্বারা অন্যের ক্ষতি হয় বা হক নষ্ট হয়- সেগুলোতে এর আগেই প্রহার বৈধ হবে।

    অন্য হাদিসে এসেছে,
    (لا يجلد فوق عشر جلدات إلا في حد من حدود الله)
    “আল্লাহ তাআলার কোন হদ ভিন্ন অন্য কোথাও দশের অধিক বেত্রাঘাত করা যাবে না।” [ সহীহ বুখারী: ৬৪৫৬]

    এখানে হদ দ্বারা গুনাহ উদ্দেশ্য। অর্থাৎ গুনাহ নয় এমন বিষয়ে দশের অধিক বেত্রাঘাত করা যাবে না। অর্থাৎ আদব-কায়দা ও সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় বৈধ রীতি-নীতির বিপরীত করলে, যদি তা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে গুনাহের পর্যায়ে না পড়ে, তাহলে বেত্রাঘাত করা যাবে, তবে দশের অধিক নয়। আর কোন গুনাহে লিপ্ত হলে তখন মুনাসিব মতো দশের অধিক বেত্রাঘাত করা যাবে।

    এক হাদিসে এসেছে, নিজ স্ত্রীর বাঁদিকে বৈধ মনে করে সহবাস করলে একশো বেত্রাঘাত লাগানো হবে। [ সহীহ বুখারী: ২২৯০, মুসনাদে আহমাদ: ১৪৫১]

    কুরআনে কারীমের মুতাশাবিহ আয়াত নিয়ে ফিতনা সৃষ্টির অপরাধে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইরাকের সাবিগ ইবনে ইসলকে পেটাতে পেটাতে রক্তাক্ত করেছেন। [ সুনানে দারেমী: ১৪৪] অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি তাকে দুইশত বেত্রাঘাত করেছেন। [ মুসনাদে বাযযার: ২৯৯]


    মোটকথা: প্রহারের দ্বারা তা’যির বৈধ। তবে এর সর্বোচ্চ পরিমাণ কত হবে তা নিয়ে আইম্মায়ে কেরামের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। সামনে এর আলোচনা আসবে ইনশাআল্লাহ।

  • #2
    জাযাকাল্লাহ আখি। আল্লাহ আপনার মেহনত কবুল করুন, আমিন।
    والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

    Comment


    • #3
      মাশা আল্লাহ। আল্লাহ আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুন।
      প্রত্যেক পর্ব কপি করে রেখেছি।

      ভাই ৩ ও ৫ নং পর্ব ফোরামে দেওয়া হয়েছে কি?
      জাযাকাল্লাহ।

      Comment


      • #4
        Originally posted by হিন্দের আবাবিল View Post
        মাশা আল্লাহ। আল্লাহ আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুন।
        প্রত্যেক পর্ব কপি করে রেখেছি।

        ভাই ৩ ও ৫ নং পর্ব ফোরামে দেওয়া হয়েছে কি?
        জাযাকাল্লাহ।
        ৩ নং পর্ব এই লিংকে পাবেন-


        আর ৫ নং পর্ব এই-
        ৫. চুরি
        চুরির শাস্তি হাত কাটা। তবে যে স্থান থেকে চুরি করেছে সেটা সংরক্ষিত হতে হবে আর চুরিকৃত সম্পদের মূল্য কমপক্ষে দশ দিরহাম (বর্তমান হিসাব অনুযায়ী দুই/আড়াই হাজার টাকা) হতে হবে। কাজেই যদি খোলা ময়দান থেকে চুরি করে তাহলে হাত কাটা হবে না। তদ্রূপ চুরিকৃত সম্পদের মূল্য দশ দিরহাম পরিমাণ না হলেও হাত কাটা হবে না। চুরিকৃত মাল ফিরিয়ে দিতে হবে সাথে মুনাসিব মতো অন্য কোন শাস্তি প্রদান করা হবে (যেমন- প্রহার, জেল ইত্যাদি)।
        প্রথমবার চুরি করলে ডান হাতের কব্জি কেটে দেয়া হবে, সাথে চুরিকৃত মাল ফিরিয়ে দিতে হবে। দ্বিতীয়বার চুরি করলে বাম পা কেটে দেয়া হবে। তৃতীয়বার চুরি করলে আর হাত-পা কাটা হবে না। জেলে বন্দি করে রাখা হবে। তবে বার বার চুরি করলে ইমামুল মুসলিমীন সিয়াসত হিসেবে সমাজের শান্তি-শৃংখলার প্রতি লক্ষ্য করে চোরকে হত্যাও করতে পারবেন। যাতে সমাজের মানুষ তার অনিষ্ট থেকে রেহাই পায়।
        যদি চোর একজন না হয়ে একাধিক বা এক দল লোক হয়, তাহলে দেখতে হবে: চুরিকৃত সম্পদের পরিমাণ এত কি’না যে, প্রত্যেকের ভাগে দশ দিরহাম করে পড়ে। যদি প্রত্যেকের ভাগে দশ দিরহাম করে পড়বে মতো হয়, তাহলে সকলেরই হাত কাটা হবে। আর যদি এর কম করে পড়ে, তাহলে হাত কাটা হবে না। মুনাসিব মতো অন্য শাস্তি দেয়া হবে, সাথে চুরকৃত সম্পদ ফিরিয়ে দেয়া হবে। চোর পুরুষ হোক বা মহিলা হোক- উভয়ের একই বিধান। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
        {وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوا أَيْدِيَهُمَا جَزَاءً بِمَا كَسَبَا نَكَالًا مِنَ اللَّهِ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ}
        “পুরুষ চোর, নারী চোর- তোমরা উভয়ের হাত কেটে দাও; ওদের কৃতকর্মের বদলায়, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিস্বরূপ। আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।” [মায়েদা: ৩৮]
        ফাতহে মক্কার সময় কোরাইশ বংশের এক মহিলা চুরি করে ধরা পড়ে। সম্মানী বংশের মহিলা হওয়ার কারণে মহিলার হাত কাটা কোরাইশদের জন্য লজ্জার কারণ ছিল। তারা হযরত উসামা ইবনে যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে দিয়ে সুপারিশ করায় যেন তার হাত না কাটা হয়। উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সুপারিশ শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারাজ হন। বলেন,
        أتشفع في حد من حدود الله؟
        “তুমি কি আল্লাহ কতৃক নির্ধারিত এক হদের ব্যাপারে সুপারিশ করছো?”
        উসামা রাদিয়াল্লাহু আনহু অত্যন্ত লজ্জিত হন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আরজ করেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’
        এরপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরে আরোহণ করে ভাষণ দেন,
        إنما أهلك الذين قبلكم أنهم كانوا إذا سرق فيهم الشريف تركوه وإذا سرق فيهم الضعيف أقاموا عليه الحد وايم الله لو أن فاطمة بنت محمد سرقت لقطعت يدها.
        “তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে শুধু এ কর্মই ধ্বংসের মুখে নিক্ষেপ করেছে যে- কোন সম্ভ্রান্ত লোক চুরি করলে তাকে ছেড়ে দিতো, আর কোন দুর্বল লোক চুরি করলে তার উপর হদ কায়েম করতো। আল্লাহর কসম! যদি মুহাম্মাদের কন্যা ফাতেমাও চুরি করতো, তাহলে আমি তার হাতও কেটে দিতাম।”
        এরপর ঐ মহিলার হাত কেটে দেয়ার আদেশ দেন। তাঁর আদেশের ভিত্তিতে মহিলার হাত কাটা হয়। [সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৩৪৭৫; সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৫০৫]
        হযরত সফওয়ান ইবনে উমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু তার একটা চাদর মাথার নিচে দিয়ে মসজিদে শোয়ে ছিলেন। চাদরের মূল্য ছিল ত্রিশ দিরহাম। একটা চোর এসে চাদরটি চুরি করে নিয়ে যাওয়র সময় ধরা খেয়ে যায়। তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে হাজির করা হয়। তিনি তার হাত কাটার আদেশ দেন। সফওয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তার হাত কাটা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। ত্রিশ দিরহামের কারণে আপনি তার হাত কেটে দেবেন? আমি চাদরটি তাকে দান করে দিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে ধরে আমার কাছে নিয়ে আসার আগে কেন তুমি তা করলে না? এরপর তিনি লোকটির হাত কেটে দেন। [আবু দাউদ ৪৩৯৪, নাসায়ী ৪৮৮৩] কারণ, ইমামের কাছে দলীল-প্রমাণ দিয়ে হদ প্রমাণিত হওয়ার পর আর তা মাফ করার অবকাশ থাকে না।
        এক লোক স্বীকার করলো যে, সে চুরি করেছে। তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আনা হল। তিনি বললেন, ‘আমার মনে হয় না তুমি চুরি করেছো।’ ঐ লোক বলতে লাগলো, ‘না, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি চুরি করেছি।’ এভাবে কয়েকবার স্বীকারোক্তি দেয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত কাটার আদেশ দেন। [আবু দাউদ ৪৩৮০, নাসায়ী ৪৮৭৭]
        চুরি কিভাবে প্রমাণ হবে?
        দু’জন আদেল পুরুষের সাক্ষ্য কিংবা চোরের নিজের এক বার স্বীকারোক্তির দ্বারা চুরি প্রমাণ হবে এবং তার হাত কাটা হবে।
        ৬. ডাকাতি ও রাহাজানি
        ডাকাতি ও রাহজানির শাস্তি অপরাধের মাত্রা হিসেবে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।
        - যদি রাহাজানি করতে গিয়ে কাউকে হত্যা করে, তাহলে হদস্বরূপ তাকেও হত্যা করা হবে।
        - যদি হত্যার পাশাপাশি মালও লুণ্টন করে, তাহলে শূলে চড়িয়ে হত্যা করা হবে কিংবা হত্যা করে তিন দিন পর্যন্ত শূলে লটকিয়ে রাখা হবে।
        - যদি হত্যা না করে, শুধু মাল লুণ্টন করে: তাহলে বিপরীত দিক থেকে হাত-পা কেটে দেয়া হবে (অর্থাৎ ডান হাত ও বাম পা)।
        - আর যদি হত্যাও না করে, মালও লুণ্টন না করে বরং এর আগেই ধরা পড়ে যায়, তাহলে পাকড়াও করে প্রথমত প্রহার করা হবে অতঃপর জেলে বন্দী করে রাখা হবে। যখন তাওবা করে ভাল হয়ে যাবে এবং চেহারা ও চাল-চলনে তাওবার সুস্পষ্ট আলামত প্রকাশ পাবে, তখন ছাড়া হবে। অন্যথায় মৃত্যু পর্যন্তই জেলে বন্দী করে রাখা হবে।
        আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
        {إِنَّمَا جَزَاءُ الَّذِينَ يُحَارِبُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَسْعَوْنَ فِي الْأَرْضِ فَسَادًا أَنْ يُقَتَّلُوا أَوْ يُصَلَّبُوا أَوْ تُقَطَّعَ أَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ مِنْ خِلَافٍ أَوْ يُنْفَوْا مِنَ الْأَرْضِ ذَلِكَ لَهُمْ خِزْيٌ فِي الدُّنْيَا وَلَهُمْ فِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ}
        “যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং যমিনে ফাসাদ-বিশৃংখলা সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি এটাই যে- তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত পা কেটে দেয়া হবে অথবা দেশ থেকে ওদের নির্বাসিত করা হবে। এটা দুনিয়াতে ওদের লাঞ্চনা, আর আখেরাতে ওদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” [মায়েদা: ৩৩]
        বি.দ্র.
        একাধিক ব্যক্তি বা এক দল মিলে রাহাজানি করলে সবার উপরই সমান শাস্তি বর্তাবে। যেমন, কেউ লুণ্টন ও হত্যা করেছে আর কেউ পাহারা দিয়েছে- তাহলে হদরূপে সকলকেই হত্যা করা হবে। হত্যাকারীদেরকেও হত্যা করা হবে, পাহারাদারদেরকেও হত্যা করেছে। কারণ, হত্যাকারীরা মূলত পাহারাদারদের পাহারার কারণেই হত্যা করতে সমর্থ্য হয়েছে। কাজেই, হত্যায় সকলেই অংশীদার। সকলের উপরই হত্যার বিধান আরোপ হবে।
        ডাকাত ও রাহজানদের এ শাস্তিগুলো হদের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই কেউ তা মাফ করতে পারবে না। কেননা, হদ আল্লাহর হক। কেউ তা মাফ করার অধিকার রাখে না। তবে এরা যদি পাকড়াও হওয়ার পূর্বেই তাওবা করে নেয় এবং স্বেচ্ছায় ইমামুল মুসলিমীনের কাছে এসে ধরা দেয়, তাহলে আল্লাহর হক তথা হদ মাফ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
        {إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا مِنْ قَبْلِ أَنْ تَقْدِرُوا عَلَيْهِمْ فَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ}
        “তবে তোমরা তাদের পাকড়াও করার পূর্বেই যারা তাওবা করে নেবে, তাদের বিষয়টা ব্যতিক্রম। এরূপ ক্ষেত্রে জেনে রেখ, আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [মায়েদা: ৩৪]
        আল্লাহর হক মাফ হয়ে গেলেও বান্দার হক তাদের উপর বর্তাবে। তখন বান্দার হক হিসেবে লুণ্টিত মাল ফেরত দিতে হবে। কাউকে জখম বা কোন অঙ্গ নষ্ট করে থাকলে তার বদলা নেয়া হবে। কাউকে হত্যা করে থাকলে কেসাস নেয়া হবে।
        রাহাজানিতে আল্লাহর হক ও বান্দার হকের ব্যবধান
        ডাকাত ও রাহজানরা যদি স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করার পূর্বেই ধৃত হয়, তাহলে তাদের শাস্তিগুলো আল্লাহর হক তথা হদের অন্তর্ভুক্ত। আর স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলে তখন তাদের শাস্তি আর আল্লাহর হক তথা হদের অন্তর্ভুক্ত থাকে না। তখন শুধু বান্দার হক তাদের থেকে আদায় করা হবে। এ দুয়ের ব্যবধান এই হবে যে, আত্মসমর্পণের আগে ধৃত হলে তাদের কোন শাস্তি মাফ করা যাবে না। তখন অপরাধের মাত্রা অনুসারে অবশ্যই শাস্তি কায়েম করতে হবে। হত্যা করলে হত্যা করা হবে, লুণ্টন করলে হাত-পা কাটা হবে। কিন্তু স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলে লুণ্টনের সূরতে হাত-পা কাটা হবে না, তবে লুণ্টিত মাল ফিরিয়ে দিতে হবে। অবশ্য মালিক ইচ্ছে করলে মাফও করে দিতে পারে। তদ্রূপ হত্যার সূরতে হত্যা আবশ্যক নয়। এখন সেটা কেসাসে রূপান্তর হবে। তাই নিহত ব্যক্তির ওলীরা ইচ্ছে করলে তাকে হত্যাও করতে পারেন আবার মাফ করলে মাফও করে দিতে পারেন।
        রাহাজানি কিভাবে প্রমাণ হবে?
        রাহাজানি কয়েকভাবে প্রমাণ হবে:
        - যদি রাহজান নিজেই স্বীকার করে যে, সে রাহাজানি করেছে। স্বীকারোক্তি এক বার হলেই যথেষ্ট। যিনার মতো চার বার লাগবে না।
        - যদি দু’জন আদেল পুরুষ সাক্ষ্য দেয় যে, তারা অমুক লোককে স্বচক্ষে রাহাজানি করতে দেখেছে।
        - যদি দু’জন আদেল পুরুষ সাক্ষ্য দেয় যে, অমুক ব্যক্তি তাদের নিকট স্বীকার করেছে যে, সে রাহাজানি করেছে।
        এ তিনো সূরতেই রাহাজানি প্রমাণ হয়ে যাবে এবং রাহাজানের উপর রাহাজানির শাস্তি বর্তাবে।
        বি.দ্র. হদ কায়েমের শর্তাবলী অনেক
        এখানে হদের ব্যাপারে যে আলোচনা করা হয়েছে, তা নিতান্তই সামান্য; নতুবা হদের আলোচনা অনেক বিস্তৃত। প্রতিটি হদ প্রমাণ ও কায়েমের জন্যই অনেক শর্ত নির্ধারিত আছে। সেগুলোর কোন একটা না পাওয়া গেলেও হদ কায়েম করা যাবে না। এখানে আমি হদসমূহের ব্যাপারে একটা মৌলিক ও প্রাথমি ধারণা দিতে চেষ্টা করেছি মাত্র।

        Comment


        • #5
          মাশা আল্লাহ। জাযাকাল্লাহ।

          Comment


          • #6
            প্রিয় আখি, সবগুলো পর্ব পিডিএফ আকারে চাই। দিলে ভালো হয়।
            والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

            Comment


            • #7
              প্রিও আখি খুব জরুরি একটা বিষয়, আল্লাহ আপনাকে দিনের জন্য কবুল করুন আমিন।
              আমি হতে চাই খালেদ বিন ওয়ালিদ (রা এর মত রণকৌশল ও ওমর (রা এর মত কাফেরদের প্রতি কঠোর।

              Comment

              Working...
              X