আত্–তিবয়ান পাবলিকেশন্স কর্তৃক পরিবেশিত
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ৮ম পর্ব
==================================================
=====
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ৮ম পর্ব
==================================================
=====
২য় অধ্যায়ঃ ফিলিস্তীন ও আফগানিস্তানে জিহাদের হুকুম
وَمَا لَكُمْ لا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا
“তোমাদের এ কি হয়েছে, তোমরাআল্লাহর পথে সেসব অসহায় নর-নারী ও (দুস্থ) শিশু সন্তানদের (বাঁচাবার) জন্যেজিহাদ করো না, যারা (নির্যাতনে কাতর হয়ে) ফরিয়াদ করছে, হে আমাদের মালিক!আমাদের জালিমদের এই জনপদ থেকে বের করে (অন্য কোথাও) নিয়ে যাও, অতপর তুমিআমাদের জন্যে তোমার কাছ থেকে একজন অভিভাবক (পাঠিয়ে) দাও, তোমার কাছ থেকেআমাদের জন্যে একজন সাহায্যকারী পাঠাও!”
পূর্ববর্তী অধ্যায়গুলোতে এই বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে যে, যদি কাফিররা মুসলিমদের এক বিঘত জায়গাও দখল করে তবে, তখন ওই জায়গার এবং তার নিকটবর্তী জায়গার মানুষদের উপর জিহাদ ফারদ্ আ’ইন (প্রত্যেকের উপর ফরজ) হয়ে যায়। যদি তারা অস্ত্রের অভাবে অথবা অলসতার কারণে কাফিরদের বের করতে সক্ষম না হয়, তখন জিহাদের এই দায়িত্বটি তার পার্শ্ববর্তী মুসলিমদের উপর বর্তায়, এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে এবং এক পর্যায়ে এটি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত সমস্ত মুসলিমদের উপর জিহাদ করা র্ফাদ আ’ইন হয়ে যায়।
এই পরিস্থিতিতে স্ত্রীর জন্য স্বামীর নিকট থেকে, সন্তানের জন্য পিতামাতার নিকট থেকে, ঋণ গ্রহীতার জন্য ঋণদাতা থেকে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
যদি এক বিঘত পরিমাণের জায়গাও যা এক সময় মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে ছিল, তা কাফিররা দখল করে নেয়। তাহলে সেই জায়গাটুকু যতদিন পর্যন্ত পুনর্দখল না করা হবে ততদিন পর্যন্ত সকল মুসলিমদের ঘাড়ের উপর এই গুনাহের বোঝা ঝুলতে থাকবে।
এই গুনাহ-এর পরিমাণ একজনের ক্ষমতা অথবা সামর্থ্যের ভিত্তিতে হবে। মুসলিমদের আলিমগণ, নেতাগণ এবং দা’য়ীগণ যারা সমাজে সুপরিচিত, তাদের গুনাহ্ সাধারণ জনগণের চেয়ে অনেক বেশি হবে।
বর্তমানে আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ফিলিপাইন, কাশ্মীর, লেবানন, চাঁদ, ভারত, ইরাক ইত্যাদি অঞ্চলগুলিতে জিহাদের উদ্দেশ্যে গমন না করা হবে ঐ সকল পূর্বপুরুষদের চেয়েও বড় গুনাহ্, যারা তাদের জীবদ্দশায় এই অঞ্চলগুলোকে কাফিরদের দখল থেকে মুক্ত করেনি। বর্তমানে আমাদের মনোযোগ দিতে হবে আফগানিস্তান ও ফিলিস্তিনের প্রতি কারণ এখানে সমস্যা বিকট আকার ধারণ করেছে। অধিকন্তু আমাদের শত্রুরা অনেক বেশি ধোঁকাবাজ এবং তারা এই এলাকায় ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সিদ্ধ হস্ত। আমরা যদি এই সমস্যা সমাধান করতে পারতাম তাহলে আমাদের অনেক জটিলতাই কমে যেত। এই অঞ্চল দুটিকে রক্ষা মানে হচ্ছে পুরো উম্মাহকে রক্ষা করা।
আফগানিস্তান থেকে শুরুঃ
আরবদের মধ্য থেকে যার পক্ষে ফিলিস্তিনে জিহাদ করা সম্ভব তার অবশ্যই সেখানে জিহাদ শুরু করা উচিত। যদি তা তার পক্ষে সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই তার আফগানিস্তানে শুরু করা উচিত।
আমি মনে করি, বাকী সমস্ত মুসলিমদের আফগানিস্তান থেকে জিহাদ শুরু করা উচিত। আমাদের মত হচ্ছে, ফিলিস্তিনের পূর্বে আফগানিস্তানে জিহাদ শুরু করা উচিত। এটি অবশ্যই এই কারণে নয় যে, আফগানিস্তান ফিলিস্তিনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বরং ফিলিস্তিনের সমস্যাটা বড় ধরণের সমস্যা। এটি ইসলামী বিশ্বের হৃৎপিণ্ড এবং এটি হচ্ছে একটি বরকতময় ভূমি, কিন্তু কিছু কিছু নির্দিষ্ট কারণে আফগানিস্তান থেকে জিহাদ শুরু করা উচিতঃ
১. আফগানিস্তানের জিহাদ ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে ধাবমান হচ্ছে; যেমনঃ হিন্দুকুশ পর্বতমালায় মুজাহিদীনদের সফলতাই হচ্ছে এই ব্যাপারে সাক্ষী যার উদাহরণ নিকট অতীতে ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় না।
২. আফগানিস্তানের জিহাদে যে পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে তা সুস্পষ্ট এবং তার ভিত্তি হচ্ছেঃ ‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ্’’ এবং এই জিহাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ‘আল্লাহর কালিমাকে সবচেয়ে উঁচু করা’। আফগান ইসলামিক ইউনিয়ন এর সংবিধানের দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে আছে “আমাদের একতার লক্ষ্য হচ্ছে আফগানিস্তানে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।” তৃতীয় অনুচ্ছেদে আছে, “আমাদের লক্ষ্য নেয়া হয়েছে আল্লাহর বাণী ‘…বিধান দিবার অধিকার কেবল আল্লাহরই…’ [সূরা ইউসূফঃ ৪০] থেকে।” অর্থাৎ শাসন-কর্তৃত্ব চলবে শুধুমাত্র বিশ্ব জাহানের প্রতিপালকের।
৩. প্রথম থেকেই মুসলিমরা আফগানিস্তানের জিহাদকে নিয়ন্ত্রণ করে আসছে, যারা বর্তমানে আফগানিস্তানে জিহাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলনের সন্তান, আলিম এবং কুরআনের ক্বারী। অথচ ফিলিস্তিনের নেতৃত্বের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের লোক বিদ্যমান, তাদের মধ্যে রয়েছে একনিষ্ঠ মুসলিম, কম্যুনিস্ট, জাতীয়তাবাদী, মডার্ন মুসলিম। তারা মিলিত হয়ে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ পতাকা উত্তোলন করে আছে।
৪. আফগানিস্তানের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত মুজাহিদীনদের নিয়ন্ত্রণে আছে। তারা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাফির দেশগুলো থেকে সাহায্যের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আসছে, যেখানে ফিলিস্তিন সম্পূর্ণভাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল, যারা ফিলিস্তিনের জরুরী প্রয়োজনের সময় সাহায্য বন্ধ করে রাখে। তারা আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সময় নিজেদের চেহারা লুকিয়ে রাখে। সেখানের পরিস্থিতি শক্তিশালী দেশগুলোর খেলার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে। এই দেশগুলো মুসলিমের ভূমি, জনগণ, ইজ্জত নিয়ে জুয়া খেলছে এবং ক্ষতি করছে, যাতে ফিলিস্তিনের সামরিক শক্তি শেষ হয়ে যায়।
৫. আফগানিস্তানের তিন হাজার কিলোমিটার উন্মুক্ত সীমানা বিদ্যমান এবং এখানের গোত্রগুলো রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, এটা মুজাহিদীনদের জন্য নিজেকে রক্ষা করার বর্মের মত। অথচ ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। সীমানাগুলি বন্ধ, মুসলিমদের হাতগুলি বন্ধ এবং প্রশাসনের গোয়েন্দারা সর্বক্ষণ গোয়েন্দাগিরি করছে, যাতে কেউ সীমানা লঙ্ঘন করে ইহুদীদের হত্যা করতে না পারে।
ইমাম আশ-শাফিঈ (রহিমাহুল্লাহ্) বলেছেনঃ “যদি এমন কোন পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যেখানে বিভিন্ন ধরণের শত্রু বিদ্যমান, এক শত্রু আর এক শত্রুর তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী তখন ইমামের উচিত সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী শত্রুর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া। যদি ইমামের অবস্থান অনেক দূরে হয় তবুও এটি গ্রহণযোগ্য। এটি এই কারণে, ইহা প্রমাণিত হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছায় তুমি ভীত নয় এবং যেন অন্যের জন্য অনুসরণযোগ্য উদাহরণ হয়। এই সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয় ভিত্তিতে নেয়া যেতে পারে, যা প্রয়োজনের সময় জায়েয তা হয়তো অন্য সময়ে জায়েয নয়, এই ধরণের পরিস্থিতি রসূল ﷺ এর সময়ে ঘটেছিল যখন তিনি ﷺ শুনলেন হারিস আবি দিরার তাঁর (ﷺ) বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য জড় হচ্ছে। তখন তিনি (ﷺ) হারিসের চেয়ে নিকটবর্তী শত্রু থাকা সত্ত্বেও হারিসকে আক্রমণ করলেন। অধিকন্তু তিনি খবর পেলেন খালিদ বিন আবি সুগলান বিন সুহ তাঁর (ﷺ)-এর বিরুদ্ধে শক্তি জড় করছে, তখন তিনি ইবনু আন্নিসকে পাঠালেন হত্যা করার জন্য, যদিও তার চাইতে নিকটবর্তী শত্রু বিদ্যমান ছিল।”
৬. আফগানিস্তানের মানুষ তাদের শক্তি এবং গর্বের ব্যাপারে বিখ্যাত, মনে হয় যেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এখানের পাহাড় এবং ভূমিকে জিহাদের জন্য তৈরি করে রেখেছেন।
আরও পড়ুন
Comment