আত্–তিবয়ান পাবলিকেশন্স কর্তৃক পরিবেশিত
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১৩ তম পর্ব
==================================================
=====
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১৩ তম পর্ব
==================================================
=====
এতসব কিছু জানার পর একজন বলবেঃ
আমরা জানতে পারলাম জিহাদ হচ্ছে ফার্দুল আ’ইন। এবং কোন অনুমতির প্রয়োজন নাই। তারপরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায়।
৫ম প্রশ্নঃ আমরা কি ঐ সমস্ত মুসলিমদের সাথে একসাথে যুদ্ধ করতে পারি যাদের ইসলামী শিক্ষা অত্যন্ত কম?
এই প্রশ্ন করেছে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি যাদের মধ্যে কেউ কেউ একনিষ্ঠ (Sincere)। আমরা ঐ সব আফগানীদের সঙ্গে মিলিত হয়ে কিভাবে যুদ্ধ করবো যাদের মধ্যে সত্যবাদী লোক বিদ্যমান এবং খারাপ লোক ও বিদ্যমান; সেখানে ধূমপান ও নিসওয়ার (এক প্রকার টোব্যাকো) এর ছড়াছড়ি এবং যার জন্য একজন তার বন্দুক পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়? যারা অন্ধভাবে হানাফী মাযহাব অনুসরণ করে এমন কি কেউ তাবীজও পরে।
শারীয়াহ হুকুম ব্যাখ্যা করার আগে বলতে চাই যে, আমাকে পৃথিবীর একটা এলাকা দেখান যেখানে মুসলিমদের উপর সমস্যা নেই। এই সমস্যা থাকার কারণে আমরা কুফফারদেরকে প্রত্যেক মুসলিম ভূমিতে ছেড়ে দিব?
উত্তরঃ আমরা অবশ্যই যুদ্ধ করব। কারণ যুদ্ধ করতে হয় অনেক বড় ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য। এই মূলনীতিটা উল্লেখ করা আছে আল-আহকাম-আল-আদয়াল-আল-মাদ এর ২৬ নং অধ্যায়: “সকলের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য ব্যক্তিগত ক্ষতি মেনে নেয়া উচিত।”
২৭ নং অধ্যায়: “অনেক বড় ক্ষতি শেষ হতে পারে ছোট ক্ষতি স্বীকার এর মাধ্যমে।”
২৮ নং অধ্যায়: “কেউ ২টি মুনকার এর যেকোন ১টি নিতে বাধ্য হয় তবে যেটি অপেক্ষাকৃত ছোট মুনকার তা গ্রহণ করবে।”
২৯ নং অধ্যায়: “দুটি মুনকারের মধ্যে অপেক্ষাকৃত কম মুনকারটি সর্বপ্রথম গ্রহণ করার নীতি।”
আমাদের অবশ্যই ২টির যেকোন ১টি মুনকার নিতে হবে।
(১) হয় রাশিয়া আফগানিস্তান দখল করবে, অথবা দারুল কুফর এ পরিণত হবে, কুরআন ও ইসলামকে নিষিদ্ধ করবে
অথবা,
(২) গুনাহগার জাতিকে সাথে নিয়ে জিহাদ করতে হবে।
ইবনে তাইমিয়্যাহ্ (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআ’র একটি মূলনীতি হচ্ছে, প্রত্যেক ভাল ও খারাপ মুসলিমের সাথে জিহাদে অংশ গ্রহণ করা। যেমনঃ রসূল ﷺ বলেছেনঃ ‘আল্লাহ্ এই দ্বীনকে খারাপ ব্যক্তি দ্বারা সাহায্য করবেন।’ যদি খারাপ আমীর অথবা পাপী সৈন্য ছাড়া জিহাদ পরিচালনা করা সম্ভব না হয় তখন তার জন্য যেকোন ১টি পথ খোলা আছে। হয় (১) তাদের থেকে দূরে সরে থাকা এবং জিহাদের দায়িত্ব তাদের উপর ছেড়ে দেয়া, সেক্ষেত্রে শত্রুরা হয়ত বাকী মুসলিমদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফেলবে। যা তাদের দ্বীন ও জীবনের জন্য অনেক বড় ক্ষতি বয়ে আনবে। অথবা, খারাপ আমীরের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। এতে অপেক্ষাকৃত বড় ক্ষতি থেকে বাঁচা যাবে। মুসলিমরা যদি সবগুলো আমল চালু করতে না পারে কমপক্ষে যতটুকু সম্ভব আমল চালু করা উচিৎ। এই পরিস্থিতিতে অথবা এই রকম পরিস্থিতিতে এই রকম সিদ্ধান্তই নেয়া উচিৎ। হিদায়াত প্রাপ্ত খলীফাগণ অনেক ‘গাযওয়াতে’ এই রকম করেছেন রসূল ﷺ বলেছেনঃ “ঘোড়ার কপালে কিয়ামাত পর্যন্ত কল্যাণ লেখা আছে প্রতিদান ও গণিমত হিসাবে।” যতক্ষণ তারা মুসলিম থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে একসাথে জিহাদ করা যাবে।”
আফগানিস্তানের জিহাদ এর ভিত্তি হচ্ছে ইসলাম এবং ইহার লক্ষ্য হচ্ছে পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। যদি ফিলিস্তিনে মুসলিমরা প্রথম থেকেই যুদ্ধ করত, প্রাথমিক দিকে মুসলিমদের আমল খারাপ থাকা সত্ত্বেও জর্জ হাবাশ, নাইফ হাওয়াতমা, ফাদার কাপিচি এবং তাদের মত অন্যান্যরা আসার আগে তবে ফিলিস্তিন হারাত না। অথচ আফগান জিহাদের সমস্ত নেতারা সলাত পড়ে, রোযা রাখে, এবং অন্যান্য ইবাদাত করে এবং মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেয়। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মুসলিম থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ করা ফার্দ। তাদের আমলের অবস্থা কি রকম তা বিবেচ্য বিষয় নয় যতক্ষণ পর্যন্ত তারা কাফিরদের এবং আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
আশ-শাওকানি বলেছেন, “খারাপ অথবা গুনাহগার মুসলিমদের নিকট থেকে সাহায্য চাওয়া জায়েজ। এই ব্যাপারে সকলে একমত পোষণ করেছেন।”
৬ষ্ঠ প্রশ্নঃ দুর্বল অবস্থায় কি আমরা মুশরিকদের নিকট থেকে সাহায্য চাইতে পারি?
কিছু মানুষ বিশ্বাস করে যে, আফগানিস্তানে জিহাদের জন্য আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে সাহায্য আসে আর ফিলিস্তিনে জিহাদের জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে সাহায্য আসে। এই ধরনের সাহায্য নেয়া হারাম। এই ব্যাপারে ফুকাহাদের ইজমা হয়েছে। এবং এটি জিহাদের উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে দেয়। এই ব্যাপারে অনেক হাদীস দ্বারাই প্রমাণ করে কুফ্ফারদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া নিষেধঃ
তিনি ﷺ বদরের যুদ্ধে একজন মুশরিককে বলেছিলেন, “চলে যাও, আমি কোন মুশরিকের সাহায্য নিবো না”
অন্য হাদিসেঃ “আমরা মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য নেই না।”
হাইসামী “মাজমুয়া আল জাওয়াইদ” কিতাবে বলেছেন আহমদ ও তাবারানী এর বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত। এবং আরেকটি সহীহ বর্ণনা থেকে আসছে যে, “সাফওয়ান বিন উমাইয়্যা কাফির থাকা অবস্থায় রসূল ﷺ-এর সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করেছিল।”
আন-নওবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “সাফওয়ান বিন উমাইয়্যা কে হুনাইনে রসূল ﷺ-এর সাথে দেখা গেছে, অথচ তখন সে কাফির ছিল।” রসূল ﷺ হুনাইনের দিন সাফওয়ান বিন উমাইয়্যার নিকট থেকে বর্ম ধার নিয়েছিলেন। তিনি ﷺ বলেছিলেন, “এই ধার তোমাকে ফেরত দিব।”
সীরাত রচয়িতাদের কাছে বর্ণনাটি মাশহুর যে, ‘ক্বাসমান’ রসূল ﷺ এর সাথে ‘উহুদ’ এ অভিযান করেছিল এবং কাফিরদের তিন জন পতাকাবাহীদের হত্যা করেছিল। তিনি ﷺ বলেছিলেন,“আল্লাহ এই দ্বীনকে কোন খারাপ ব্যক্তি দ্বারাও সাহায্য করেন।”
অনুরূপভাবে বিপরীতধর্মী হাদীস থাকায় আলিমরা এই বিষয়ে মতপার্থক্য করেছেন। মুশরিকদের কাছে সাহায্য চাওয়া প্রাথমিকভাবে হারাম ছিল কিন্তু পরে তা ‘রহিত’ হয়ে যায়। আল-হাফিয আল তালখীস এ বলেছেন, “এটাই হচ্ছে সবচেয়ে উত্তম সামঞ্জস্য এবং আশ-শাফিঈ (রহিমাহুল্লাহ) ইহা একমত পোষণ করেছেন।
ফিক্বহ এর বড় চারজন ইমাম একমত পোষণ করেছেন যে, কাফিরদের নিকট থেকে সাহায্য চাওয়া কিছু শর্তের ভিত্তিতে জায়েজ।
(১) ইসলাম এর শাসন অবশ্যই মুশরিকদের চাইতে উপরে থাকতে হবে। অর্থাৎ ইসলামের শক্তি মুশরিকদের মিলিত শক্তির চাইতে বেশি থাকতে হবে যাদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া হচ্ছে। এবং সেটা ইচ্ছে যখন কুফ্ফাররা মুসলিমদের বিরুদ্ধে একত্রে যুদ্ধ করছে।
(২) কুফফারদেরকে অবশ্যই মুসলিমদের সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকতে হবে এবং মুসলিমদের অবশ্যই তাদের বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে নিরাপদ থাকতে হবে এবং ইহা তাদের ব্যবহার দেখে বুঝা যাবে।
(৩) মুসলিমদের যদি সাহায্য অত্যাবশ্যকীয় হয় অথবা কুফ্ফার সাহায্যের কথা নিজ থেকে বলে।
বিভিন্ন মাযহাবের রায়
হানাফী রায়ঃ
মুহাম্মাদ বিন আল হাসান (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ
“এটা গ্রহণযোগ্য যে, যদি কোন মুসলিম, মুশরিকদের নিকট থেকে সাহায্য গ্রহণ করে কিন্তু ইসলামের শক্তি অবশ্যই বেশী থাকতে হবে।”
জাসসাস (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠ বলেছেন, “যুদ্ধের ক্ষেত্রে মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য নেয়া জায়েজ যখন এই সাহায্যের কারণে ইসলামের বিজয় হয়।”
মালিকী রায়ঃ
ইবন-আল কাসিম (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “এটা আমার অভিমত নয় যে, মুশরিকদের সাহায্য নেয়া যাবে যতক্ষণ না তারা দাসের ভূমিকা পালন করে সাহায্য করে। তখন কোন অসুবিধা নাই তাদের সাহায্য নেয়ার ব্যাপারে।”
ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, “এটা আমার মত নয় যে মুশরিকদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য নেয়া যাবে যতক্ষণ না তারা দাসের ভূমিকায় সাহায্য করে।”
শাফিঈ রায়ঃ
আর রামলি (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “ইমাম অথবা নায়েবে ইমাম কুফ্ফারদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে পারে যদিও তারা ‘আহলুল হারব’ হয়, যদি তিনি জানেন যে কাফিররা আমাদের সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখে এবং শর্ত হচ্ছে তাদের সাহায্য আমাদের দরকার যুদ্ধের জন্য কারণ আমাদের সংখ্যা কম।”
হাম্বলী রায়ঃ
ইবন-আল-কুদামা (রহিমাহুল্লাহ)বলেছেনঃ “ইমাম আহমাদ এর মত হচ্ছে, মুশরিকদের থেকে যুদ্ধের ক্ষেত্রে সাহায্য চাওয়া জায়েজ এবং তারা ‘গাণীমাহর’ অংশ পাবে যদি তারা ইমামের অধীনে যুদ্ধ করে। তিনি অধিকাংশের মতের বাইরে গিয়েছেন যারা ‘গাণীমাহর অংশ দেয়ার (মুশরিকদের) ব্যাপারে সমর্থন করেননি’।”
আরও পড়ুন
১২ ৩ম পর্ব -------------------------------------------------------------------------------------------- ১৪ তম পর্ব
Comment