আত্–তিবয়ান পাবলিকেশন্স কর্তৃক পরিবেশিত
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১৪ তম পর্ব
==================================================
=====
মুসলিম ভূমিকে প্রতিরক্ষা করা
(ঈমান আনার পর প্রথম ফারদ্)||
- শহীদ শাইখ ড. আব্দুল্লাহ আযযাম (রহিমাহুল্লাহ্)||
এর থেকে = ১৪ তম পর্ব
==================================================
=====
জিহাদের পক্ষে নাযিলকৃত আদেশ সংশ্লিষ্ট দলিল সমূহ
শান্তি চুক্তির অনুমোদনের ব্যাপারে অনেক লেখক ভুল করেছেন। তারা কুরআনের আয়াত নাযিলের ধারাবাহিকতা না মেনে আয়াত উল্লেখ করেছেন। যেখানে তাদের অবশ্যই জিহাদের ব্যাপারে আয়াত নাযিলের ধারাবাহিকতা জানতে হবে। যা হচ্ছে চূড়ান্ত আদেশঃ
إِنَّ عِدَّةَ الشُّهُورِ عِنْدَ اللَّهِ اثْنَا عَشَرَ شَهْرًا فِي كِتَابِ اللَّهِ يَوْمَ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ مِنْهَا أَرْبَعَةٌ حُرُمٌ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ فَلا تَظْلِمُوا فِيهِنَّ أَنْفُسَكُمْ وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
“মুশরিকদের (মুশরিক, মূর্তিপূজক, অগ্নিপূজক, আল্লাহর একত্বে যারা কুফর করে) সাথে সম্মিলিতভাবেযুদ্ধ কর ঠিক যেমন তারা তোমাদের সাথে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করে, এবং জেনে রাখআল্লাহ মুত্তাক্বীদের সাথে আছেন।”
فَإِذَا انْسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاةَ وَآَتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
“…মুশরিকদের যেখানে পাও সেখানে হত্যা কর, তাদেরকে ঘেরাও কর, বন্দী কর এবং তাদের জন্য প্রত্যেক ঘাটি প্রস্তুত রাখ।”
ইবন আল-কাইয়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) যাদ আল মা’য়াদ এ ব্যাখ্যা করেছেন যে, “প্রথম জিহাদের অনুমতি দেয়া হয় হিজরতের পর, পরবর্তীতে আদেশ করা হয় শুধু তাদের বিরুদ্ধে যারা মুসলিমদের আক্রমণ করে এবং পরিশেষে মুশরিকদের বিরুদ্ধে ‘আম’ ভাবে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।”
ইবন-আবিদীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ “জেনে রাখ, জিহাদের আদেশ নাযিল হয়েছে ধারাবাহিকভাবে। রসূল ﷺ-কে প্রথম আদেশ দেয়া হয়েছিল তাবলীগ করার জন্য ও মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার জন্য। মহিমান্বিত আল্লাহ বলেছেন,
فَاصْدَعْ بِمَا تُؤْمَرُ وَأَعْرِضْ عَنِ الْمُشْرِكِينَ
“অতএব তোমাকে যে আদেশ দেয়া হয়েছেতুমি খোলাখুলি জনসম্মুখে তা বলে দাও এবং (এরপরও) যারা (আল্লাহর সাথে) শরীককরে তাদের তুমি উপেক্ষা করো।”
অতঃপর তাদেরকে বিজ্ঞতার সাথে দাওয়াত দেয়ার জন্যঃ
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَنْ ضَلَّ عَنْ سَبِيلِهِ وَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ
“তুমি মানুষকে তোমার রবের পথে আহবান কর হিকমাত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং উহাদের সহিত তর্ক করিবে উত্তম পন্থায়। তোমার রব, তাঁহার পথ ছাড়িয়া কে বিপথগামী হয় সে সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত এবং কাহারা সৎপথে আছে তাহাও তিনি সবিশেষ অবহিত।”
অতঃপর যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছেঃ
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا وَإِنَّ اللَّهَ عَلَى نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ
“যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হইল তাহাদিগকে যাহারা আক্রান্ত হইয়াছে; কারণ তাহাদের প্রতি অত্যাচার করা হইয়াছে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই তাহাদিগকে সাহায্য করিতে সম্যক সক্ষম।”
অতঃপর কাফিররা প্রথম আক্রমণ করলে তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণের আদেশ দেয়া হয়েছেঃ
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
“যাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালঙ্ঘন করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘন কারীগণকে ভালবাসেন না।”
অতঃপর শর্তের অধীনে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়েছে, নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিক্রম করার পরঃ
فَإِذَا انسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ ۚ فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلٰوةَ وَءَاتَوُا الزَّكٰوةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
“অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হইলে মুশরিকদিগকে যেখানে পাইবে হত্যা করিবে, তাহাদিগকে বন্দী করিবে, অবরোধ করিবে এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাহাদের জন্যওঁৎ পাতিয়া থাকিবে। কিন্তু যদি তাহারা তওবা করে, সলাত কায়েম করে ও যাকাতদেয় তবে তাহাদের পথ ছাড়িয়া দিবে; নিশ্চয়ই আল্লাহ্ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু।”
পরিশেষে সাধারণভাবে সকল কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়ঃ
وَقَاتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَكُمْ وَلا تَعْتَدُوا إِنَّ اللَّهَ لا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
“যাহারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তোমরাও আল্লাহর পথে তাহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর; কিন্তু সীমালঙ্ঘন করিও না। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সীমালঙ্ঘন কারীগণকে ভালবাসেন না।”
এই জন্যই আয়াত নাযিলের ধারাবাহিকতার জ্ঞান অর্জন করা জরুরী। একটি বিষয়ে পরিষ্কার থাকা উচিৎ যে, দাওয়ার প্রাথমিক স্তরের দিকে রাজনৈতিক সমঝোতায় যাওয়া জায়েয নয় যতক্ষণ পর্যন্ত না একটি শক্তিশালী নেতৃত্বের অধীনে এই দাওয়াহ্ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইহার লক্ষ্যকে সংরক্ষণ করা যায়। যদি ইসলামিক দাওয়া প্রাথমিক পর্যায়ে কাফিরদের সাথে সমঝোতা (compromise)-এ রাজী হয় তবে দাওয়ার বিষয়বস্তু কে বিসর্জন (compromise) দিতে হয়, ঘোলাটে হয়ে যায় এবং মানুষের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হয়।
দাওয়ার প্রাথমিক ধাপের জন্য উদাহরণ হচ্ছে মহান সূরাঃ
قُلْ يَا أَيُّهَا الْكَافِرُونَ
لا أَعْبُدُ مَا تَعْبُدُونَ
وَلا أَنْتُمْ عَابِدُونَ مَا أَعْبُدُ
“হে কাফিররা! (আল্লাহ, তাঁর রসূল, একত্ববাদে, ফিরিশতা, কিতাব, কিয়ামাত, ক্বাদর এর সাথেকুফরিকারী) আমি তার ইবাদাত করিনা যার ইবাদাত তোমরা কর। তোমরা যার ইবাদাত করআমি তার ইবাদাত করিনা…।”
এবং প্রাথমিক পর্যায়ে ঈমানদারদের আরেকটি নমুনা হচ্ছে,
أَلَهُمْ أَرْجُلٌ يَمْشُونَ بِهَا أَمْ لَهُمْ أَيْدٍ يَبْطِشُونَ بِهَا أَمْ لَهُمْ أَعْيُنٌ يُبْصِرُونَ بِهَا أَمْ لَهُمْ آَذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا قُلِ ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ كِيدُونِ فَلا تُنْظِرُونِ
إِنَّ وَلِيِّيَ اللَّهُ الَّذِي نَزَّلَ الْكِتَابَ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِينَ
“বল [হে মুহাম্মাদ ﷺ]: ডাক সেই সমস্ত শরীকদের এবং আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর ও আমাকে কোন অবকাশ দিওনা। নিশ্চয়ই আমার ওয়ালী (রক্ষক, সাহায্যকারী, সমর্থনকারী ইত্যাদি) হচ্ছে সেই আল্লাহ যিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং সৎকর্মশীলদের রক্ষা করে থাকেন।”
আমাদেরকে অবশ্যই দাওয়া প্রকাশ করতে হবে ও কাফিরদের কানে পৌছাতে হবে। দায়ীদেরকে অবশ্যই উঁচু গলায় বলতে হবে যতক্ষণ না তাদেরকে পরীক্ষা করা হয় যাতে তাদের আত্মা সবর অনুযায়ী পরিক্ষিত হতে পারে। এটা হয়েছিল রসূল ﷺ-ও তার সাহাবাদের সাথে মক্কায়। কিন্তু যখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তখন কেউ আর চুক্তি করতে (কাফিরদের সাথে) বাধা দিতে পারবে না।
আরও পড়ুন
১৩ তম পর্ব -------------------------------------------------------------------------------------------- ১৫ তম পর্ব